পাখিদের সারি বেধে ওড়ার রহস্য
প্রাণিজগৎ বড়ই বিচিত্র। তাদের আচার-আচরণও বেশ অদ্ভুত ধরনের। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে পরিযায়ী পাখির কথা। সাধারণত সরল রেখায় উড়ে যাওয়া পরিযায়ী পাখিগুলো ইংরেজি অক্ষর ‘ভি’ আকৃতির বিন্যাস তৈরি করে ওড়ে। এ ধরনের বিন্যাসে সবার আগে একটি পাখি অবস্থান করে এবং তার পেছনে একে একে বাকি পাখিগুলো অবস্থান করে উড়তে থাকে। কেন পাখিরা এমন নিয়মে ওড়ে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরাও গবেষণা করেছেন অনেক।
সাধারণত দলবদ্ধ পরিযায়ী পাখির ওড়ার এ ধরনের বিন্যাসের দুটি তত্ত্ব প্রচলিত আছে। একটি হচ্ছে বাতাসের ফ্লুইড ডায়নামিক্স মেনে চলে শক্তি বাঁচানো। সামনের পাখিটির উড্ডয়নের ফলে বাতাসে যেই ভোর্টেক্স তৈরি হয় তা পেছনের পাখিগুলো কাজে লাগায়, ফলে তাতের ওড়ার জন্য শক্তি অপেক্ষাকৃত কম খরচ হয়। অন্য তত্ত্বটি হচ্ছে, এ ধরনের বিন্যাসের ফলে পাখিগুলো পরস্পরের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, তবে এই তত্ত্বগুলোর দুটি একই সঙ্গে প্রযোজ্য হতে পারে। দুই তত্ত্বের কোনটি বেশি তাৎপর্যপূর্ণ তা নির্ভর করে বিভিন্ন সূচকের ওপর। যেমন—কোন ঋতুতে পাখিগুলো উড়ছে, কিংবা ঝাঁকের মধ্যে কী পরিমাণ পাখি আছে বা কী উদ্দেশ্যে তারা উড়ছে ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, স্থানীয়ভাবে খাবার সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে উড্ডয়নের সময় শক্তি সংরক্ষণের ভূমিকা গৌণ, বরং এই সময় পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা বা একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানোই তখন মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অপরদিকে, দীর্ঘ দূরত্বে ভ্রমণের ক্ষেত্রে যোগাযোগ অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। বরং এই সময় দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে প্রয়োজনীয় শক্তি যতটা সম্ভব ধরে রাখাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্লুইড ডায়নামিক্স এবং শক্তি তরঙ্গ বিন্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়টি গবেষণার পর গণনা করে দেখা গেছে যে, পাখিগুলো ওড়ার সময় ঠিক কোন অবস্থানে থাকলে উড়তে গিয়ে তাদের শক্তি সবচেয়ে কম খরচ হবে তা মেনে চলে। পাখির প্রকৃত ঝাঁকে অবস্থানের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই এদের অপেক্ষাকৃত শক্তি বাঁচিয়ে চলা অবস্থাতেই পাওয়া যায়, তবে সবক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শক্তির বিন্যাসে এরা থাকে না। গবেষণায় পাখিগুলোর অবস্থানকে কতগুলো ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। কিছু পাখির অবস্থান শক্তির সর্বনিম্ন বিন্যাসের জন্য যে অবস্থান প্রযোজ্য তাতে। কিছু পাখি ঠিক এই সর্বনিম্ন শক্তি অবস্থানে থাকে না, বরং এরা দৃষ্টির মাধ্যমে অন্যদের দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য যে অবস্থান ভালো অপেক্ষাকৃত সেই অবস্থানে থাকে। অন্য কিছু পাখি—যারা এই দুই অবস্থানের কোনোটিতেই পুরোপুরি দক্ষ নয়, তারা একটি মাঝামাঝি অবস্থান মেনে চলে যেন উভয় ধরনের সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নেতৃত্বদানকারী পাখির অবস্থান সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়, তবে কত দ্রুত তা হয় এবং এর মূল উদ্দেশ্য কী—সেসব নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হয়নি। গবেষকরা বলছেন, মাটি থেকে এদের ঝাঁকের দিকে দীর্ঘ সময়ে ও দূরত্বে পর্যবেক্ষণ করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অনুমাননির্ভর তথ্য অনুযায়ী নেতৃত্বদানকারী পাখি নির্ভর করে বয়স, অভিজ্ঞতা, লিঙ্গ, পরিস্থিতি এবং সামাজিক মর্যাদার ওপর, কিন্তু গবেষকরা এখনো বুঝে উঠতে পারেননি, তারা কীভাবে এসব পরীক্ষা করে নিশ্চিত হবেন। কিছু বিজ্ঞানী ক্ষুদে বিমানের পাশাপাশি এসব পাখিকে উড়তে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যাতে বিমানগুলোকে এদের পাশাপাশি চালিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা যায়; হয়তোবা এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরো বিস্তারিত জানা যাবে—এমনটাই আশা করছেন গবেষকরা।
সূত্র: বিজ্ঞানপত্রিকা
সূত্র: বিজ্ঞানপত্রিকা
No comments:
Post a Comment