Tuesday, September 28, 2021

 

ঘাতকব্যাধি হৃদরোগ প্রতিরোধের উপায়

ঘাতকব্যাধি হৃদরোগ প্রতিরোধের উপায়

আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর বুধবার বিশ্ব হার্ট দিবস। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হবে এ দিনটি। গত ১৮ মাসে ভয়াবহ কভিডে সারা বিশ্ব হারিয়েছে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের জীবন। আর গত ১৮ মাসে হৃদরোগ ও রক্তনালির রোগে বিশ্ব হারিয়েছে ২ কোটি ৭৯ লাখ মানুষের জীবন। 

কার্ডিওভাসকুলার রোগের এই নীরব মহামারীর আঘাত প্রায়ই আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। হৃদরোগের ক্ষেত্রে ঘটনার ঘনঘটা দৃশ্যমান হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত হৃদরোগ ও রক্তনালীর জটিলতায় সবচেয়ে বেশি (সব মৃত্যুর ৩১%) মানুষ মারা যায়। প্রতি বছর সারা বিশ্বে ৫২ কোটি মানুষ এ রোগে ভুগছে। গত এক বছরে বাংলাদেশে ১ লাখ ১২ হাজার মৃত্যুর ৪০ হাজারই মারা গেছে হৃদরোগ ও রক্তনালির জটিলতায়।

প্রতিরোধের উপায় কী?
প্রথমেই বলে রাখি, হৃদরোগ সংক্রান্ত জটিলতা শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিরোধযোগ্য। বাকি ২০ ভাগ চিকিৎসাযোগ্য কিন্তু ব্যয়বহুল। আক্রান্ত হলে জীবনের কর্মক্ষমতা, শরীরের উৎপাদনক্ষমতা উল্লেখযোগ্যহারে কমিয়ে দেয়। তাহলে যেটি ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিরোধযোগ্য সেদিকেই মনোযোগ দিতে হবে সবার আগে।

সবার আগে সচেতন সংকল্প
সবার আগে আপনাকে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হবে, আপনি এই রোগকে প্রতিরোধ করতে চান কিনা। আপনার মাইন্ডসেট পরিবর্তন করুন। দায়সারা গোছের সিদ্ধান্ত চাই না। দৃঢ় সংকল্প করুন। আগামীকাল থেকে নয়, আজকে থেকেও নয়। এখন থেকে করুন। আপনি প্রস্তুত? যদি হ্যাঁ হয়, তবে আপনার কাজ ইতিমধ্যে ৫০% হয়ে গেল!

বাকি ৩০% অর্জনে কী কী করবেন?
ওজন কমান, ব্যায়াম করুন : শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলুন। গুগল সার্চ করে জেনে নিন আপনার উচ্চতায় আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত। উচ্চতা আর ওজনের অনুপাত করে নড়ফু সধংং রহফবী বা ইগও বের করে নিন। (দেখুন Google BMI Calculator)। আমাদের আদর্শ BMI হলো ১৯ থেকে ২৪.৯। এর নিচে হলে কম ওজন আর ২৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত হলো স্থূলতা বা obesity, ৩০-এর বেশি হলে বলি মারাত্মক স্থূলতা (বা morbid obesit)। ওজন বাড়ানো কঠিন কাজ নয়। কোনো রোগ না থাকলে খাদ্য গ্রহণ বাড়ালেই ওজন বেড়ে যাবে। মূলত সমস্যা হলো ওজন কমানো। ওজন কমানোর দুটি উপায় আছে- 

ক) প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো শর্করা জাতীয় খাবার নিয়ন্ত্রণ করা। ভাত, আলু, চিনি, মিষ্টি, মিষ্টান্ন, চাল ইত্যাদি যাবতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে। পরিমাণ মতো চর্বি, পর্যাপ্ত মাছ, সাদা মাংস (মুরগি), কুসুমসহ একটি ডিম, ইচ্ছে মতো শাকসবজি, সালাদ, পরিমিত তাজা ফল এবং কমপক্ষে দুই লিটার পানি খেতে পারবেন। 

খ) ওজন কমানোর দ্বিতীয় কিন্তু কম কার্যকর পদ্ধতি হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। খোলা জায়গায় সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট জোরে জোরে হাঁটবেন যাতে শরীরে ঘাম ঝরে পড়ে এবং হার্টবিট ১২০ পর্যন্ত ওঠে। শুধু হাঁটাচলা বা ব্যায়ামে ওজন তেমন একটা না কমলেও তা হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালিকে সতেজ রাখে, ব্লকমুক্ত রাখে, প্রেসার ও ডায়াবেটিস কমায়, কোলেস্টেরল কমায় এবং মনকে সতেজ রাখে।

উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন 

উচ্চরক্তচাপ বা হাই প্রেসার হলো এক নীরব ঘাতক। নীরব এজন্য যে, ৯০% ক্ষেত্রে সে কোনো উপসর্গ বা কষ্ট দেয় না। অনেক রোগী ২০০/১০০ প্রেসার নিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যেহেতু তার কোনো কষ্ট হচ্ছে না তাই চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন না। অন্য কোনো কারণে চেকআপের সময় প্রেসার ধরা পড়লেও রোগী সেটা তত গুরুত্ব সহকারে নিতে চান না। অনেকে ওষুধ শুরু করলেও পরে তা ছেড়ে দেন। কারণ হাই প্রেসারে তার তো কোনো অসুবিধা হচ্ছে না! মনে রাখতে হবে উচ্চ রক্তচাপ ক্রমাগত বহাল থাকলে তা হার্ট, কিডনি, ব্রেন, চোখের রেটিনা এবং পায়ের রক্তনালিসহ সারা শরীরের ক্ষতি করবে। যখন উপসর্গ দেখা দিবে তখন দেখা গেল ওই সব অঙ্গ ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তাই উপসর্গের অপেক্ষায় না থেকে হাই প্রেসারের চিকিৎসা করুন। নিজে নিজে ওষুধ বন্ধ করবেন না। ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করুন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন
বয়স ৩০ হলেই ডায়াবেটিস চেক করুন। বছরে একবার চেক করুন। একটা স্যাম্পলে অনেক সময় প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। তাই কমপক্ষে দুটো স্যাম্পল (যেমন নাশতার ২ ঘণ্টা পরের সুগার এবং তিন মাসের গড় সুগার জানতে HbA1C) পরীক্ষা করুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই টেস্টই যথেষ্ট।

ডায়াবেটিস হলে কী করবেন?
ডায়াবেটিস মেটাবলিক কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ। অর্থ হলো এটি শুধু মেটাবলিক বা হরমোনাল সমস্যা নয়। এটি শরীরের সব রক্তনালিকে আক্রান্ত করে। তাই হার্টের সঙ্গে এটি সরাসরি যুক্ত। এর গুরুত্ব তাই অনেক বেশি। ডায়াবেটিসের মাত্রার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসার ধরন। তবে প্রথম ধাপ হলো ডায়েট এবং ব্যায়াম। এ পদ্ধতিতে সুগার নিয়ন্ত্রণ না হলে ওষুধ প্রয়োজন হয়। প্রথমে খাবার বড়ি তারপর ইনসুলিন। সুগার কত রাখবেন? খালি পেটে ৬ থেকে ৭ এবং খাবার দুই ঘণ্টা পর ৭ থেকে ৯, তবে কোনোভাবে ১০-এর উপরে নয়। তিন মাসের গড় HbA1C অবশ্যই ৭-এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। 

ধূমপানসহ তামাকজাত দ্রব্য পরিবার 
যে কোনো তামাক, জর্দা, গুল, বিড়ি, সিগারেট বর্জন করুন। তামাক শুধু হৃদরোগ, স্ট্রোক সৃষ্টি করে না; নানান ক্যান্সার, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদির কারণও সে। এছাড়া এলকোহল ছেড়ে দিন। এটি প্রেসার বাড়ায়। রক্তের চর্বি ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধি করে হার্ট অ্যাটাক, প্যানক্রিয়াটাইটিসসহ নানা অপকর্ম ঘটায়।
 
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করুন
অনেকে হাই কোলেস্টেরলের ওষুধ শুরু করে কিছুদিন পর নিজে নিজে বন্ধ করে দেন। এমনকি কোনো কোনো ডাক্তার সাহেবকেও দেখেছি বুঝে না বুঝে চর্বির ওষুধ বন্ধ করে দেন। এটি মারাত্মক একটি ভুল। হাই কোলেস্টেরল নিজেই ডায়াবেটিসের মতো একটি দীর্ঘস্থায়ী, সম্ভবত আজীবন সঙ্গী একটি সমস্যা। রক্তনালিতে ব্লক তৈরির মূল উপাদান হলো চর্বি। তাই সুগার কন্ট্রোল করার মতো চর্বিও সারা জীবন কন্ট্রোল করতে হবে।

দুটো ওষুধ কখনো বন্ধ করবেন না
যাদের একবার হৃদরোগ, রক্তনালিতে ব্লক ধরা পড়েছে, হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, ব্রেন স্ট্রোক করেছে তারা দুটো ওষুধ সারাজীবন খেয়ে যাবেন। একটি হলো কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ (statin), আর দ্বিতীয়টি হলো রক্ত পাতলা করার ওষুধ (যেমন Aspirin, clopidogrel)। শুধু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে বিশেষ ক্ষেত্রে সাময়িক স্থগিত রাখা যেতে পারে।

ডায়াবেটিসে কোলেস্টেরলের ওষুধ
যাদের একবার ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে তাদের বয়স চল্লিশ বা বেশি হলে সারাজীবন কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ কমবেশি খেয়ে যেতে হবে। এমনকি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা যাই থাকুক না কেন অনির্দিষ্টকালের মতো স্ট্যাটিন খেতে হবে।

সরাসরি চিকিৎসার অংশ ২০%
প্রতিরোধের পালা শেষ হলে বা আগেই আক্রান্ত হয়ে পড়লে যথাযথ চিকিৎসা তো শুরু করতে হবে। সেখানে ইসিজি, ইটিটি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, এনজিওগ্রাম, রিং বা এনজিওপ্লাস্টি, ওপেনহার্ট বা বাইপাস সার্জারিসহ নানান ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যাপার চলে আসবে। 

লেখক : সিনিয়র কনসালটেন্ট, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ধানমণ্ডি।


Wednesday, August 11, 2021

 

আবেগ যখন বিবেকহীন

হানিফ সংকেত

আবেগ যখন বিবেকহীনএকসময় বাংলাদেশে টিভি বলতে ছিল শুধু বিটিভি বা বাংলাদেশ টেলিভিশন। তারপর আকাশ সংস্কৃতির বিস্তৃতির যুগে হুজুগে এবং নানান সুযোগে সৃষ্টি হয়েছে অনেক চ্যানেল। আর এসব চ্যানেলের পর্দা ভরাতে প্রচার হচ্ছে অনেক খবর, অনেক অনুষ্ঠান, অনেক নাটক। সৃষ্টি হচ্ছে অনেক নাট্যকার, ডিরেক্টর, অ্যাক্টর, কন্ডাক্টর আর নিউজের জন্য শত শত রিপোর্টার। টিভি চ্যানেলের সংখ্যা যতই বেড়েছে, আশঙ্কাজনকভাবে নাটকের মান ততই কমেছে। নাটকের পাশাপাশি রাশি রাশি মানহীন অনুষ্ঠান কোন মানদন্ডে চলে তার মানে বোঝা কঠিন। নাটকের নায়ক-নায়িকাদের গর্বিত উচ্চারণ চ্যালেঞ্জিং নাটকে চ্যালেঞ্জিং চরিত্র। এসব চ্যালেঞ্জিং নাটক দেখে ‘চ্যালেঞ্জ’ শব্দটিও এর গুরুত্ব হারাতে বসেছে। এখন আবার একক নাটকের যুগ নেই, চলে সিরিয়াল-মেগা সিরিয়াল। এক পর্ব থেকে শুরু করে কয়েক শ কিংবা যত চান তত পর্ব গর্বের সঙ্গে অনেকেই করে থাকেন। একসময় এক ঘণ্টার একটি নাটক একটু বড় হলেই সেটাকে টেলিফিল্ম নাম দিয়ে চালানো হতো। এরপর টেলিফিল্মকে টেনেটুনে ফিল্মে রূপান্তর করা হলো। ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার নাম দিয়ে শুরু হলো প্রদর্শন। তবে এসব প্রদর্শনে দর্শকের সেভাবে দর্শন না থাকলেও অর্থের আকর্ষণ থাকে প্রবল। ইদানীং এ সিরিজ নাটক ঈদকেও আক্রমণ করেছে। টেলিফিল্ম-মার্কা নাটকগুলোকে ভেঙে কয়েক টুকরা করে ছয় থেকে আট পর্ব বানিয়ে চ্যানেলগুলোয় চালান করে দেওয়া হয় ‘ঈদের বিশেষ ধারাবাহিক’ নাম দিয়ে। এখানে শিল্পী, নির্মাতা এবং চ্যানেল পয়সা পেলেও ১২টা বাজে দর্শকের। ঈদের ব্যস্ততম সময়ে কেউ যদি নাটকের একটি পর্ব না দেখে থাকেন তাহলে গল্পের কিছুই বুঝতে পারবেন না। তখন ভরসা ইউটিউব। কিন্তু ঈদের সময় টিভিতে সবাই মিলে সপরিবারে নাটক দেখার যে আনন্দ তা আর থাকে না। বলা যায়, চ্যানেলের নাট্যাকাশে এখন দুর্যোগের ঘনঘটা। চলছে শিডিউল বেচাকেনার নাটক। ভর করেছে পিঁয়াজ-রসুনের মতো সিন্ডিকেট আর এজেন্সির উৎপাত। কিছু নির্বোধ পরিচালকের বিচরণ, মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিল্পীর সিন্ডিকেটে নাট্যবাজার নিয়ন্ত্রণ।

টেলিভিশনের পাশাপাশি এখন ইউটিউবের জন্যও নাটক বানান প্রযোজক, পরিচালক এবং মিডিয়া ব্যবসায়ীরা। উদ্দেশ্য সংস্কৃতি সেবা নয়, ব্যবসা। ভিউ এবং ভাইরাল। এদের কারণেই নাটক এখন মেধাহীনদের হাতে চলে যাচ্ছে। যাদের কোনো পরিমিতিবোধ নেই। উপযুক্ত শিক্ষা নেই। নাটকে কী বলতে হবে, কতটুকু বলতে হবে, কী বলতে হবে না- সেই বোধটাই নেই। তাই জরুরি হচ্ছে পরিচালকের এ সম্পর্কিত জ্ঞান এবং সমাজ ও দেশের প্রতি দায়বোধ। আর তখনই সম্ভব সেলফ সেন্সরশিপ। যেটা এখনকার নাটকের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। এখন এজেন্সির কাছে চাঙ্ক বিক্রি করার কারণে চ্যানেলগুলোর প্রিভিউ করার সুযোগও থাকে না। শুধু টিভিতে একবার প্রচারের স্বত্ব দেওয়া হয়। এরপর সরাসরি চলে যায় ইউটিউবে। দু-তিন বার বিক্রির কারণে সিন্ডিকেটের শিল্পীদেরও লাভ হয়। এরা নাটকের কিংবা বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। অনেকে বিষয়ই বোঝেন না। রাত জাগা পাখির মতো মধ্যরাত কিংবা ভোররাত পর্যন্ত শুটিং করে সকালে ঝিমুতে ঝিমুতে গাড়িতে করে বাড়িতে ফেরেন। দুপুরের পর কিংবা সন্ধ্যায় এদের শিফট শুরু হয়। এদের নির্দেশনা অনুযায়ী নাটক নির্মাণের জন্য ক্যামেরাম্যাননির্ভর কিছু পরিচালক থাকেন।

টেলিভিশনের সেই সোনালি যুগ থাকলে এখনকার এ সিন্ডিকেট-মার্কা শিল্পীরা কখনই আবদুল্লাহ আল মামুন, আতিকুল হক চৌধুরী কিংবা মোস্তফা কামাল সৈয়দের নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পেতেন না। কারণ তারা গল্পনির্ভর নাটক করতেন, শিল্পীনির্ভর নয়। নাটকের প্রয়োজনে যাকে দরকার তাকেই নিতেন। লোকে বলত এটা আবদুল্লাহ আল মামুনের নাটক কিংবা আতিকুল হক চৌধুরীর নাটক। শিল্পীর নামে নাটক চলত না।

আর এখন এ সিন্ডিকেট-মার্কা শিল্পীরা নায়ক-নায়িকা মিলে দ্বৈত শিফট দিয়ে নিজেরাই খেটেখুটে নাটক বানিয়ে নেন। তারপর ওই কোম্পানিগুলো টিকটক, ফেসবুকসহ নানাবিধ ওটিটি প্ল্যাটফরমে দিয়ে ফেসবুকে নিজস্ব কমেন্ট বাহিনী লাগিয়ে দেয়। যাদের কমেন্টে বোঝানো হয়- এদের মার্কেট এখন চড়া। চটুল এবং সুড়সুড়ি দেওয়া সংলাপের কারণে একশ্রেণির দর্শকের কাছে এই সিন্ডিকেট-শিল্পীদের কদর রয়েছে। আর এদের কারণেই এসব নাটকের ভিউও হয়। আর এজেন্সিও ঝাঁপিয়ে পড়ে ভিউ লক্ষ্য করে। মূলত এদের নাটকের মান নির্ধারিত হয় ইউটিউবের ভিউর মাধ্যমে। অথচ ‘ভিউ’ই যে নাটকের মান নির্ধারণের একমাত্র মাপকাঠি নয় সেই বোধটাও এদের নেই। একটি শাড়ির দোকানে অনেক কাস্টমারই শাড়ি দেখেন কিন্তু কেনেন একজন। আগে যারা  শাড়িটিকে ভিউ করেছেন তারা কেউ-ই পছন্দ করেননি, তাই কেনেননি। অর্থাৎ ভিউ মানেই পছন্দ নয়- এ বিষয়টিও এদের মস্তিষ্কে নেই। চিত্তানন্দে এরা আত্মহারা। আর হবেনই বা না কেন, এদের পেছনে বানরনাচের মতো ডুগডুগি বাজানোর লোকের অভাব নেই। কিছু পত্রিকার অনলাইনে হামেশাই এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। চুক্তিটা যেন এমন ‘তোমরা আমাদের জন্য করবে- আমরা তোমাদের জন্য করব’, কিন্তু ওইসব অনুষ্ঠানের মন্তব্যের ঘরে যেসব কমেন্ট আসে তা নিজের লোক দিয়ে মুছেও বোধহয় শেষ করতে পারে না, দু-একটি থেকেই যায়। তার পরও লজ্জা হয় না।

আগে বিজ্ঞ সমালোচকরা প্রতিটি শিল্পীর অভিনয়, বাচনভঙ্গি, উচ্চারণ, সেট, আবহ সংগীত সবকিছু নিয়েই সমালোচনা লিখতেন। যা দেখে শিল্পীরা সাবধান হতেন, শিখতে পারতেন। আর এখন চ্যানেলের মার্কেটিং বিভাগের মতো কিছু কিছু সাংবাদিকও ইউটিউবের ভিউ দেখে রিভিউ লেখেন। যে নাটকের যত ভিউ সেই নাটক নাকি তত হিট। এ-জাতীয় ভিউসর্বস্ব হিট নাটকের একটি হচ্ছে ‘ঘটনা সত্যি’ নামের অঘটন। যে নাটকের মূল বক্তব্য সত্য নয় মিথ্যা। এ নাটকটি প্রচারিত হওয়ার পর সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছেন, নিন্দা জানিয়েছেন, শাস্তির দাবি তুলেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করেছেন নানান মন্তব্য। নাটকটি সম্পর্কে এসব ক্ষুব্ধ মন্তব্যের কিছু শব্দ হলো- অনাকাক্সিক্ষত, আপত্তিকর, কুৎসিত, নোংরা, দায়িত্বহীন, মহা অন্যায়, নিন্দনীয়। কেউ লিখেছেন- শিল্পীসমাজ লজ্জিত, কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ, ক্ষমার অযোগ্য। প্রশ্ন উঠেছে- এসব নাটক বানান কারা, এদের উদ্দেশ্য কী, এদের যোগ্যতা নির্ধারণ করে কে? এসব নাটক চালান কারা, কীভাবে চালান, তাদের আদৌ মানদন্ড নির্ধারণের কোনো ব্যবস্থা আছে কি না, নাকি ব্যবসাই মূল বিষয়? এসব নাটকের শিল্পীর ভূমিকা কী, শুধুই কি অভিনয় করা? ভিউ দেখেই আত্মতৃপ্তি? এদের যোগ্যতা বা মেধা কতটুকু? এদের নাটকে মা-বাবার চরিত্র দেখা যায় না কারণ মা-বাবা থাকলে পুরো নাটকে তাদের খুনসুটি করার সুযোগ থাকে না। আবার এরা নিজেরাও মা-বাবা হতে চান না। চরিত্রের প্রয়োজনেও এদের কোনো সন্তান থাকতে পারবে না। তাহলে ললিপপ-মার্কা ইমেজ থাকে না। অথচ এদের বেশির ভাগের ঘরেই ‘স্কুল গোয়িং’ ছেলেমেয়ে আছে। নিজেদের যতটা কচি বোঝাতে চান তারা ততটা কচি নন। এ শিল্পীরা দায় এড়ান কীভাবে?

সব মহলেই একটি কথা উচ্চারিত হচ্ছে- নাটক এখন দায়িত্বজ্ঞানহীন, মেধাহীন, বিবেকহীনদের হাতে চলে যাচ্ছে। আবেগ যখন বিবেকহীন হয়- তাদের কাছ থেকে কী আশা করা যায়? শুধু পরিচালক বা শিল্পীই নন- যে চ্যানেলে এ নাটক প্রচারিত হয়েছে সেখানে তো অনেক কান্ডজ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তা আছেন, তারাই বা কোন যুক্তিতে এ ধরনের একটি নাটক চালালেন?

অটিজম বলতে অনেকে মানসিক রোগ বোঝালেও এটা মূলত এক ধরনের স্নায়বিক বিকাশগত সমস্যা। এ সমস্যাকে ইংরেজিতে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বলা হয়। কেউ বলেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বা স্পেশাল চাইল্ড। অটিজমে আক্রান্তরা সামাজিক আচরণে দুর্বল হয়। এরা কারও চোখের দিকে সরাসরি তাকায় না। এরা অনেক জ্ঞানীও হয়। এরা রাগলে অভিযোগ করতে পারে না। কষ্ট পেলে প্রকাশ করতে পারে না। আত্মযন্ত্রণায় ভুগতে থাকে। তাই প্রত্যেক মা-বাবাকেই থাকতে হয় নানান চাপে। মানসিক, আর্থিক, পারিবারিক আর সামাজিক চাপ তো আছেই। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে আমি এ অটিজম আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিলাম। একজন প্রতিবন্ধী শিশুকে সমাজের আর দশটা শিশুর মতো করে গড়ে তুলতে একজন মায়ের যে কতটা শ্রম দিতে হয় তা আমি এ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। সর্বশেষ প্রতিবেদনটি ছিল ‘পিএফডিএ ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার’-এর। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সাজিদা রাহমান ড্যানি- যিনি তার স্নায়বিক প্রতিবন্ধী শিশুটিকে নিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর সংগ্রাম করেছেন। তারপর নিজের শিশুর পাশাপাশি অন্য শিশুদের জন্য গড়ে তুলেছেন এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কারণ আমাদের দেশে স্নায়বিক প্রতিবন্ধীদের জন্য সঠিক পরিচর্যার কোনো ব্যবস্থা নেই। নিজের সন্তান নিয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর সংগ্রাম করে তিনি বুঝেছেন সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ বা তৈরি করলে এ শিশুরাও পরিবারে, সমাজে বোঝা না হয়ে অংশীদার হতে পারে। তিনিও বিশ্বাস করেন- এ শিশুরা ডিজ্যাবলড নয়, ডিফরেন্টলি অ্যাবল। মায়ের কঠোর সাধনায় ড্যানির ২৫ বছর বয়স্ক সন্তান সিয়াম এখন চাকরি করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ১১তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছে। আমি দেখেছি এ সেন্টারে মা’দের করুণ অবস্থা, সংগ্রামের জীবন। অটিজম শিশুর কারণে অনেক মা-ই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। অনেক মা উচ্চশিক্ষিত হয়েও বাচ্চার কারণে চাকরি/ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছেন।

প্রতিটি অটিজম আক্রান্ত শিশুর মা-বাবার একটাই চিন্তা- মা-বাবা বা অভিভাবকের মৃত্যু হলে ওরা কোথায় যাবে? কার চোখে চোখ রেখে কথা বলবে, সেই চিন্তায় একজন মা যখন অস্থির থাকেন, সন্তানের জন্য ভালোবাসা চান, সহযোগিতা চান তখন সবার মতো সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষগুলোরও সমাজের নানান ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার এ শিশুদের শারীরিক -মানসিক নিরাপত্তার জন্য সচেতনতা তৈরির কাজে বেশি বেশি করে এগিয়ে আসা উচিত। কারণ এ প্রতিবন্ধী শিশুরা অনেক সময় ব্যঙ্গ, বিদ্রƒপ, উত্ত্যক্তের শিকার হয়, অনেকেই তাদের সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন করে। যা করা হয়েছে তথাকথিত নাটক ‘ঘটনা সত্যি’তে। তাই ‘ঘটনা সত্যি’ নাটকে যে বার্তা দেওয়া হয়েছে তা কেউ মেনে নিতে পারেননি।

একটি নাটক তৈরি হয়ে প্রচার হওয়া পর্যন্ত অনেক ধাপ পেরোতে হয়। নাট্যকারের লেখা, পরিচালকের দেখা, শিল্পীদের পড়া, শুটিং করা, সম্পাদনা ও মিউজিক করতে গিয়ে বারবার দেখা, সিন্ডিকেট-শিল্পীদের দেখিয়ে ছাড়পত্র নেওয়া, এরপর চ্যানেলের প্রিভিউ কমিটি কিংবা কর্তৃপক্ষ দেখে তা প্রচার করা। প্রশ্ন হচ্ছে, এত ধাপেও কারোরই কি বিষয়টি নজরে পড়েনি? চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বলেছেন তারা বিতর্কিত ভয়েস ওভার ফেলে দিয়েছেন অর্থাৎ নাটকটি তারা প্রিভিউ করেছেন। যদি করেই থাকেন তাহলে কি তারা নাটকটি দেখে বুঝতে পারেননি, নাটকটিতে কী বার্তা যাচ্ছে? নার্স এসে কোন ধরনের চাইল্ডের কথা বলেছে? নাটকের শেষে নায়িকা চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে কী সংলাপ বলেছে?

প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন করার সুবাদে আমার সঙ্গে বেশ কজন প্রতিবন্ধী শিশুর মায়ের কথা হয়েছে। ফেসবুক লাইভে এসেও তারা বলেছেন, এ ব্যাপারে ক্ষমা চাওয়া বা ক্ষমা করার মতো অবস্থা নেই। কারণ ‘ঘটনা সত্যি’ নাটকে একটি ভয়ংকর বার্তা দেওয়া হয়েছে, যে বার্তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজারো মায়ের কান্না। অটিস্টিক যুবক সিয়ামের মা সাজিদা রাহমান ড্যানি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই বক্তব্য মানহানিকর। এতগুলো ধাপ পার হয়ে প্রচারিত নাটকে এমন স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল বিষয়টি কি কারোরই নজরে পড়ল না!’

প্রচারের পর বিষয়টি টেলিভিশন-সংশ্লিষ্ট কিছু সংগঠনের নজরে পড়লেও কেউ কেউ এটাকে ‘আপত্তিকর বার্তা’ ও ‘দায়িত্বহীনতার’ পরিচয় উল্লেখ করে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছে। যে কারণে তা অনেকের কাছেই দায়সারা মনে হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু একটি শক্তিশালী চ্যানেল এর সঙ্গে জড়িত এবং ব্যবসার স্বার্থে অনেক পরিচালক-প্রযোজকেরই এ সিন্ডিকেট-শিল্পীদের প্রয়োজন, তাই কেউ কেউ আবার ‘ভুলবশত করেছে’ বলে ক্ষমা করার পক্ষেই মত দিয়েছেন। কিন্তু যাদের ভুলের কারণে এ নাটকটি ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে এবং ডাউনলোড করে ‘ভিউ’ পেতে অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন নামে আপলোড করছে, আর এসব যখন সেই মায়েরা এবং তাদের আত্মীয়-পরিজন দেখছেন তাদের মানসিক অবস্থা কী হচ্ছে তা কি কেউ ভেবেছে? এ শিল্পী-কলাকুশলীরা কত হাজার হাজার প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ের মা-বাবা-ভাই-বোনকে মানসিকভাবে আঘাত দিয়েছেন তা কি তারা ভেবে দেখেছেন? এ প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় একজন অভিনেত্রী লিখেছেন- ‘পার পেয়ে যাওয়া তদের জীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে গিয়েছে। তবে এবার সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।’ এ ভিউ কামানো উদ্ভট -কদর্য নাটকটির এ বার্তা প্রদানের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধেই শাস্তির দাবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ প্রায় সব মহলেই। একজন শিল্পী যথার্থই লিখেছেন- ‘শিল্পী হওয়া তো দূরের কথা, ভিউ আর ফলোয়ারের পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমরা বোধহয় মানুষও হতে পারলাম না।’

শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনেও অনেকের সন্তানও এ স্নায়বিক বিকাশগত সমস্যায় আক্রান্ত কিংবা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। তারাও দেশের প্রচলিত আইনে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। বিশিষ্ট অভিনেতা মঞ্চসারথি আতাউর রহমান তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন- ‘মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানেরা আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের সন্তান। তারাই সবচেয়ে সৃজনশীল এবং দেশপ্রেমিক। স্টিফেন হকিং যৌবনকাল থেকে দৈহিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়েও বিশ্বের সেরা থিওরিটিক্যাল পদার্থবিদ। কেবল ক্ষমা চাইলে হবে না। যারা ওদেরকে পাপের ফল হিসেবে নাটক/চলচ্চিত্রে রূপায়ণ করেছে, আমি দেশের আইন অনুযায়ী ওদের শাস্তি দাবি করি।’

প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩-এর ৩৭ (৪) ধারা অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধের শাস্তি অনধিক তিন বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। সুতরাং আইন যেখানে আছে সেখানে মাফ চাওয়ার গুরুত্ব কতখানি? আমরা ভুলে যাই কোমলমতি বিশেষ এ শিশুদের শারীরিক/মানসিক সীমাবদ্ধতার কারণে নয় বরং তাদের ও তাদের পরিবারের প্রতি সমাজের এ ধরনের নেতিবাচক মনোভাবের কারণেই এরা কষ্ট পায়। ‘ভুলবশত’, ‘অসাবধানতাবশত’, ‘আবেগের বশে’ বলে কেউ কেউ বিষয়টিকে ক্ষমা করার আওতায় নিয়ে আসতে চাইলেও আমাদের নাটকের মান রক্ষার স্বার্থে বিষয়টিকে ক্ষমার আওতায় নয়, বরং আইনের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হচ্ছে যৌক্তিক। আইন থাকা সত্ত্বেও তা প্রয়োগ না করে ভুল স্বীকার বা মাফ চাইলেই যদি পরিত্রাণ পাওয়া যায় তাহলে ভবিষ্যতে এ ভুল অনেকেই করবে। আমরা কি সে পথ উন্মোচন করব? নাকি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব? তাই দাবি উঠেছে- এদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। তাতে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের মায়েরা কিছুটা হলেও শান্তি পাবেন।

পাদটীকা : আর একটি কথা, আমাদের দেশে কোনো কোনো ঘটনা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, শুরু হয় লাইভের প্রতিযোগিতা, চলে ব্রেকিং নিউজ, উত্তপ্ত হয়ে ওঠে টকশোগুলো। তারপর আরেকটি নতুন ঘটনায় চাপা পড়ে যায় সব। শুরু হয় নতুন ঘটনার লাইভ। ঘটনা মিথ্যার ‘ঘটনা সত্যি’ নাটকের এ নিন্দনীয় ঘটনাটিও যাতে মৌ-পিয়াসা-পরীদের ঘটনায় চাপা পড়ে না যায় এ অনুরোধ রইল। চিত্রনায়িকা পরীমণি আটকের ঘটনার পর এ নায়িকার রসালো গল্পই যেন বেশ কিছু চ্যানেলের প্রধান সংবাদপণ্য হয়ে উঠেছে। ব্রেকিং নিউজ এবং সরাসরির ছড়াছড়ি। এখানেও ভিউ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা লক্ষণীয়। আর বিবেকবোধসম্পন্ন কিছু কিছু চ্যানেলে এ বিষয়ে কোনো উল্লাস বা বাড়াবাড়ি লক্ষ্য করা যায়নি। তাদের কাছে প্রধান খবর ছিল করোনা এবং ডেঙ্গু রোগীদের ভয়াবহ চিত্র। যে করোনা মহামারীতে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, আর এটাই হচ্ছে বিবেকের আবেগ।

লেখক : গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পরিবেশ ও সমাজ উন্নয়নকর্মী।

Monday, June 28, 2021

Know about this Hero before you talk. This Hero does not have a record of corruption, only contributions to the people & Nation.

May be an image of 3 people

ড. জাফরুল্লাহ সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ
★ চট্টগ্রামের ছেলে জাফরুল্লাহর বাবার শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন।
★ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করার পর ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। ছাত্র থাকা অবস্থাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজের দুর্নীতির বিরুদ্ধে করেছিলেন সংবাদ সম্মেলন।
★ ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম. বি. বি. এস শেষ করার পর ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল কলেজ অব সার্জনস থেকে FRCS প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্ব শেষ না হতেই দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসেন।
★পাকিস্থানি বাহিনীর নির্মমতার প্রতিবাদে লন্ডনের হাইডপার্কে যে কয়জন বাঙ্গালী পাসপোর্ট ছিড়ে আগুন ধরিয়ে রাষ্ট্রবিহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছিল তাদের একজন ড. জাফরুল্লাহ।
★মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তার জন্য বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী প্রবাসী বাঙ্গালীদের কাছ থেকে ১০ লাখ পাউন্ড চাঁদা যোগাড় করেছিলেন। তিনি কাজটি করেছিলেন ড. জাফরুল্লাহর পরামর্শে।
★ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম " একাত্তরের দিনগুলি" বইয়ের ১৬১ ও ১৬২ পৃষ্ঠায় ড. জাফরুল্লাহ ও ডা. মোবিনের পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে লিখেন।
★আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ড. জাফরুল্লাহ ২ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের সহযোগিতায় আগরতলার বিশ্রামঘরের মেলাঘরে গড়ে তুলেছিলেন ৪৮০ শয্যা বিশিষ্ট প্রথম ফিল্ড হসপিটাল " বাংলাদেশ হসপিটাল"
★হসপিটালটিতে পর্যাপ্ত নার্স না থাকায় ড. জাফরুল্লাহ নিজে নারী স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ দেন।
★দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ড. জাফরুল্লাহ গ্রামে গিয়ে শুরু করেন স্বাস্থ্যযুদ্ধ। ফিল্ড হাসপাতালটিকেই কুমিল্লাতে স্বাধীন দেশের প্রথম হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলেন। পরবর্তীতে ঢাকার ইস্কাটনে হাসপাতালটি পুনঃস্থাপিত হয়। কিন্তু গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু রুপে গড়ে তোলার জন্যে " চলো গ্রামে যাই" স্লোগান নিয়ে হাসপাতালটিকে ঢাকার অদূরে সাভারে " গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র" নামে স্থানান্তর করা হয়।
★ হাসপাতালটিকে " গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র" নামে নামকরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাভারে হাসপাতালটির জন্য ৩১ একর জমিও বরাদ্দ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
★ সম্পূর্ণ অলাভজনক এই এই গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ড. জাফরুল্লাহ ১৯৭৭ সালে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখায় স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
★ড. জাফরুল্লাহ বাকশালে যোগ দিতে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধ যেমন উপেক্ষা করেছিলেন, তেমনি জিয়াউর রহমানের দেয়া মন্ত্রীত্বের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ৪ পৃষ্ঠার একটি চিঠির মাধ্যমে। ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এরশাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবও!
★ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পর তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান ১৯৮২ সালের জাতীয় ঔষুধ নীতি। স্বাধীনতার পর স্বাস্থ্যখাতে যেটাকে বিবেচনা করা সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হিসেবে। তাঁর প্রচেষ্টায় আমদানি ওষুধের সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২২৫-এ। বর্তমানে ৯০ শতাংশ ওষুধই দেশে তৈরি হচ্ছে এবং বাংলাদেশ একটি ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে এই মানুষটির অবদান বিশাল।
★ড. জাফরুল্লাহ স্বাস্থ্যনীতির সাথে জড়িত থাকায় বি. এম. এর স্বার্থে আঘাত লাগে। তাই বি. এম. এ ১৯৯২ সালে তাঁর সদস্যপদ বাতিল করে। বিনা বিচারে ড. জাফরুল্লাহর ফাঁসি চেয়ে পোস্টারও সাঁটায় তারা।
আমরা ড. জাফরউল্লাহকে না চিনলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকই চিনেছে এই লোকটাকে। বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় "ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো" ঘোষণা করে ড. জাফরুল্লাহকে।
মুক্তিযুদ্ধ করেও, গণমানুষের জন্য কাজ করেও ড. জাফরুল্লাহরা হন বিতর্কিত। কারন, উনারা চাটুকারিতা করতে জানেন না, দালালী করতে জানেন না, জানেন না তেল দিতে!
নষ্ট রাজনীতির বিভাজনে থাকা তরুণ প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ, এই মানুষটাকে যদি সম্মানিত করতে নাও পারি, অন্ততপক্ষে যেন ছোট না করি।

Wednesday, June 9, 2021

 

যে কারণে খাবেন দারুচিনি ও মেথি চা

যে কারণে খাবেন দারুচিনি ও মেথি চা

বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে শরীরের প্রতিরোধ শক্তি বাড়ানো। সেক্ষেত্রে ভেষজ উপাদানগুলো অধিক কার্যকরী। এই পানীয় নিয়মিত পান করলে শরীরের পরিবর্তন নিজেই লক্ষ্য করবেন।

দারুচিনি চা
মেটাবলিজম বাড়াতে দারুণ কার্যকরি এই মসলা। এতে একইসঙ্গে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিবায়োটিক গুণাবলী রয়েছে। দারুচিনি চা দারুণ ডিটক্স হিসেবেও কাজ করে। এ কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া দিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট রেখে দিন। ঘুমানোর অন্তত আধাঘণ্টা আগে পান করুন এই চা।

মেথি চা
মেথি পাতায় পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পাওয়া যায়। রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ ও হাড়কে শক্তিশালী করার জন্য এ চা বেশ উপকারী। নিয়মিত মেথি চা পান করলে কিডনিতে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহে সহায়তা করে। যা কিডনির পাথরের মতো সমস্যা দূর করতে কার্যকর।

অ্যাসিডিটি বা হজমের যাবতীয় সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে মেথি চা। এছাড়াও মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা পেট পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূরে রাখতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চা খেতে পারলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সেই সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে।

মেথি চা তৈরী করতে প্রথমে ১ চামচ মেথি গুঁড়ো নিন। দেড় কাপ ফুটন্ত গরম পানিতে ওই গুঁড়ো মিশিয়ে দিন। এর সঙ্গে ১ চামচ মধু মেশাতে পারেন। চাইলে এর সঙ্গে চা পাতা বা তুলসি পাতাও মেশাতে পারেন। সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে দিয়ে ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এবার ছেঁকে নিয়ে সামান্য ঠান্ডা করে পান করুন।

Thursday, May 20, 2021

 

‘মনের জোর’ বাড়ে যেসব কাজে 

)

‘মনের জোর’ বাড়ে যেসব কাজে


মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার জন্য নিজের মনকেই সবার আগে স্থির করতে হবে। কিন্তু অনেকেই মনের জোড় না বাড়িয়ে নিজের ভাগ্যকেই দোষারোপ করতে থাকেন। তবে ভাগ্যকে দোষারোপ না করে নিজের মনের জোর বাড়াতে চেষ্টা করুন। এবার দেখে নিন কীভাবে নিজের মনের জোর বাড়িয়ে সফলতাকে আপনার সঙ্গী করবেন...

১. নিজের প্রতি দুঃখিত না হওয়া

নিজের প্রতি কখনোই দুঃখিত বোধ করবেন না। নিজেকে আহারে, বলার কোনও দরকার নেই এতে আপনার সময়ই নষ্ট হবে। আখেরে আপনার কোনো লাভ হবে না। সেখান থেকে উঠে দাঁড়ান। কাজে দেবে।

২. লক্ষ্যে স্থির হওয়া

আপনার পাশে যদি কেউ না দাঁড়ায় তাহলে ভয় পাবেন না। নিজেই নিজের সব থেকে বড় লাঠি হয়ে দাঁড়ান। যদি কেউ আপনার সঙ্গে চলতে না চায় তাহলে একলাই চলুন। সাফল্য পাওয়ার পর কারোর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে না।

৩. পরিবর্তনকে ভয় না পাওয়া

আপনার রোজকার জীবনে যদি কোনও পরিবর্তন ঘটে তাহলে ভয় পাবেন না। জানবেন, সব পরিবর্তন আপনার প্রতি এক একটা চ্যালেঞ্জ। তাই ভয় না পেয়ে পরিবর্তনকে আপন করে নিন।

৪. পছন্দ না হওয়া কাজ না করা

ধরুন এমন কাজ যা আপনার ঠিক পছন্দ নয়। তাই আপনি ঠিক পারবেন না। এমনকি আপনার মনে কাজের প্রতি অতটা কনফিডেন্ট নেই। তখন সেই কাজ না করাই ভালো। যে কাজ আপনি মন থেকে ভালোবাসেন সেই কাজ করুন।
 
৫. অন্যের কথার গুরুত্ব না দেওয়া

কে কী বলল তাতে আপনার কী! কারোর কথায় গুরুত্ব দেওয়া ছেড়ে দিন। নিজের জীবন কীভাবে কাটাবেন, কী কাজ করে ভালো থাকবেন, তা একান্ত আপনার সিদ্ধান্ত। আপনার জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব অন্য কারোর হাতে কখনোই দেবেন না।

৬. একই ভুল বারবার না করা

একই ভুল বারবার করার কোনও মানেই হয় না। বারবার একই ভুল করতে থাকলে আস্তে আস্তে নিজের মনোবল ভেঙে যাবে। তাই একই ভুল বারবার না করে ধীরে সুস্থে কাজ করুন।

৭. প্রথমবার সফল হতে না পেরে ভেঙে পড়া

যদি প্রথমবার সফল হতে না পারেন, তাহলে আবার চেষ্টা করুন। দেখুন, চেষ্টা না করলে কেউই কখনও সফল হতে পারে না। তাই প্রথমবার যদি কোনোভাবে সফল হতে না পারেন, তাহলে ভেঙে না পড়ে, শক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ান।

 

 

২৪ বছর আগে করোনা মহামারীর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে অন্ধ নারী

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভবিষ্যৎ বক্তা মানা হয় ১৬০০ শতকের পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিদ নস্ট্রাদামুসকে। ১৫৫৫ সালে তিনি মোট ৯৪২টি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁর বেশির ভাগই মিলে গেছে বলে দাবি করা হয়ে থাকে। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীর ভাষা ও ইঙ্গিত নিয়ে বিতর্ক থাকলেও এখনো তাঁকে নিয়ে চর্চা হয়। আর সেই ধারাবাহিকতায় আধুনিক বিশ্ব খুঁজে পেয়েছে আরেক নস্ট্রাদামুসকে। তাঁকে বলা হয় এ যুগের নস্ট্রাদামুস। তিনি বুলগেরীয় নারী ভ্যাঞ্জেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা। অন্ধ এই নারী বাবা ভাঙ্গা নামে বিখ্যাত। ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারের হামলার কথা তিনি বলে গেছেন ১৯৮৯ সালেই। জলবায়ু পরিবর্তন, ২০০৪ সালের সুনামি এমনকি সর্বশেষ মহামারী করোনার ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন তিনি। এ ভষ্যিদ্বাণীগুলো তাঁকে বিখ্যাত করে তুলেছে। এখনো তাঁকে নিয়ে হচ্ছে নানা আলোচনা। সাধারণ ভ্যাঞ্জেলিয়ার গল্প.......


২৪ বছর আগে করোনা মহামারীর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে অন্ধ নারী

শৈশবে ভেঞ্জেলিয়া নীল চোখ ও সোনালি চুলের অধিকারী ছিলেন। তাঁর বাবা অভ্যন্তরীণ ম্যাসেডোনীয় বিপ্লবী সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বুলগেরীয় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ভ্যাঞ্জেলিয়ার মা শৈশবেই  মৃত্যুবরণ করায় তাঁর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ফলে সৎ মায়ের আশ্রয়ে পালিত হন ভ্যাঞ্জেলিয়া।বাবা ভাঙ্গা নামে পরিচিত হলেও পৃথিবী কাঁপানো এই অন্ধ মহিলার নাম ভেঞ্জেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা। বুলগেরিয়ার রহস্যময় আধ্যাত্মিক ক্ষমতাসম্পন্ন এই নারীকে বলা হয় এ যুগের নস্ট্রাদামুস। তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন বুলগেরিয়ার কুজহু পার্বত্য অঞ্চলের রুপিটি নামক স্থানে। তাঁর জন্ম ১৯১১ সালের ৩১ জানুয়ারি উসমানীয় সাম্রাজ্যের (বর্তমান ম্যাসেডোনিয়া প্রজাতন্ত্র) স্ট্রোমিকাতে। এ অঞ্চলটি প্রথম বলকান যুদ্ধের সময় বুলগেরিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়। ভ্যাঞ্জেলিয়া ছোটবেলা থেকেই স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন। এমনকি জন্মের পরও অনেকক্ষণ কোনো সাড়া-শব্দ ছিল না তাঁর। তখনকার স্থানীয় ঐতিহ্য অনুসারে, একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পর যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া না যায় যে, শিশুটি বেঁচে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর নাম রাখা হয় না। একটু সময় নিয়ে শিশু ভ্যাঞ্জেলিয়া যখন কেঁদে উঠল তখন ধাত্রী রাস্তায় বেরিয়ে এলেন। রীতি অনুযায়ী অপরিচিত আগন্তুকের কাছে তাঁর নাম রাখার অনুরোধ করলেন ধাত্রী। অপরিচিত সেই ব্যক্তিটি শিশুটির নাম অ্যান্ড্রোমাহা রাখতে চাইলেন। কিন্তু এই নামটি গ্রিক নামের সঙ্গে খুব বেশি মিল থাকায় প্রত্যাখ্যাত হলো। এরপর আরেকজন অপরিচিত ব্যক্তি ভেঞ্জেলিয়া নাম রাখার জন্য প্রস্তাব করলেন। এই নামটিও গ্রিক নামের সঙ্গে মিলে যায়। এর মধ্যে একটা বুলগেরীয় ভাব থাকায় সেটি গৃহীত হলো। শেষ পর্যন্ত শিশুটির নাম রাখা হয় ভেঞ্জেলিয়া প্যানদেভা দিমিত্রোভা।

অসহায় সেই মেয়েটি

কথিত আছে, ভেঞ্জেলিয়ার বয়স যখন মাত্র ১২ বছর, তখন সে তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে খেলায় মত্ত থাকা অবস্থায় এক ভয়ানক ঝড়ের কবলে পড়ে। সেই ঝড় ভেঞ্জেলিয়াকে উড়িয়ে নিয়ে যায় বহুদূর। কয়েক দিন পর যখন তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়, তখন দেখা গেল তাঁর উভয় চোখের অবস্থাই খুব খারাপ। অক্ষিকোটরে ধুলাবালু ও ময়লা ঢুকে তাঁর চোখের ওপর জমে শক্ত আবরণ তৈরি করে ফেলেছে! এ অসহায় মেয়েটির দরিদ্র পরিবারের সামর্থ্য ছিল না তাঁকে উন্নত চিকিৎসা করানোর। ফলে ভাগ্যের নির্মম পরিণতি মেনে নিয়ে তাঁকে আজীবনের জন্য অন্ধত্ব বরণ করে নিতে হয়।

সেই ঝড় থেকেই অদ্ভুত ক্ষমতা

অন্ধ হওয়ার পর ভেঞ্জেলিয়া এক অদ্ভুত দাবি করে বসলেন। তিনি জানালেন, প্রলয়ঙ্করী ঝড়টি যখন তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে গেল, যখন সে তাঁর দৃষ্টি হারাল, সে বুঝতে পারল তাঁর মধ্যে ভর করেছে অদ্ভুত কোনো ক্ষমতা। যেন সে তাঁর দৈবদৃষ্টি দিয়ে দেখতে পাচ্ছে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে। শুধু তাই নয়, তাঁর মধ্যে নাকি রয়েছে-স্পর্শের মাধ্যমে মানুষকে সুস্থ করে তোলার ক্ষমতা! ১৯২৫ সালে জেমুন শহরে ভাঙ্গাকে একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয় যেখানে তাঁকে ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠদান করা হয়। সেখানেই তিনি পিয়ানো বাজানো, বুনন, রান্না ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর শিক্ষা নেন। এই বিদ্যালয়ে তিনি তিন বছর অবস্থান করেন। সে সময়ই তাঁর সৎমা মৃত্যুবরণ করলে তিনি তাঁর সৎ ছোট ভাইদের দেখাশোনার জন্য বাড়ি ফিরে আসেন।

ভ্যাঞ্জেলিয়া থেকে বাবা ভাঙ্গা

এরপর দেখা গেল সত্যি সত্যি ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন ভ্যাঞ্জেলিয়া। এমনকি স্থানীয়দের মধ্যে এমন বিশ্বাস প্রগাঢ় হয়ে উঠল যে, ভ্যাঞ্জেলিয়ার স্পর্শে জটিল সব রোগও ভালো হয়ে যায়। ফলে ভ্যাঞ্জেলিয়া বুলগেরীয়দের কাছে হয়ে ওঠেন ‘বাবা ভাঙ্গা’ (Baba Vanga)। বুলগেরিয়ান ভাষায় ‘বাবা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘দাদিমা’ বা ‘জ্ঞানী মহিলা’। বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যৎ দর্শন ও মানুষকে সুস্থ করে তোলার ক্ষমতার কারণেই এরূপ নামকরণ। অন্যদিকে আস্তে আস্তে তাঁর এই ক্ষমতার কথা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ভবিষ্যৎ বলার এমন ক্ষমতার কারণে তিনি উপাধি পান ‘বলকানের নস্ট্রাদামুস’। আবার অনেকের কাছে ‘এ যুগের নস্ট্রাদামুস’। ১৯৯৬ সালে ৮৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা বাবা ভাঙ্গার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বিপুল লোক সমাগম ঘটে। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁর পেটরিচের বাড়িটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয় এবং ২০০৮ সালে তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তিনি চলে গেলেও তাঁর বাণী এখনো মানুষের কাছে উৎসাহের বিষয় হয়ে আছে। তাই তাঁর কথাগুলোকে আরও ১০০০ বছর মানুষকে ভাবাতে থাকবে,  কারণ তিনি ৫০৭৯ সাল পর্যন্ত ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।

মিলে যাওয়া ভবিষ্যদ্বাণীগুলো

বিশ্বজুড়ে বাবা ভাঙ্গাকে নিয়ে এত আলোচনার মূল কারণ হচ্ছে অদ্ভুতভাবে মিলে যাওয়া তার বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী সেখান থেকেই কয়েকটির  কথা আলোচনা করা যাক

Bangladesh Pratidin

টুইন টাওয়ারে হামলা

বাবা ভাঙ্গার সবচেয়ে সাড়া জাগানো ভবিষ্যদ্বাণী মানা হয় যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনাটিকে। বলা হয়ে থাকে বাবা ভাঙ্গা ১৯৮৯ সালেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীটি ছিল এরকম- Horror, horror! The American brethren will fall after being attacked by the steel birds.The wolves will be howling in a bush and Bangladesh Pratidininnocent blood will gush.এর অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায় অনেকটা এরকম- ‘ইস্পাত নির্মিত (ধাতব) পাখিদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর আমেরিকান ভ্রাতাদের পতন ঘটবে। নেকড়েরা ঝোঁপের আড়াল থেকে চিৎকার করতে থাকবে, আর নিরীহদের রক্ত ঝরবে।’

এখানে ইস্পাতনির্মিত পাখি বলতে ‘বিমান’কে বোঝানো হয়েছে। আর Brethren শব্দের অর্থটা বিস্তৃত বা ভাই। এখানে এটি জোড়া টাওয়ার বা টুইন টাওয়ারকে বোঝানো হয়েছে। অন্যদিকে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীতে যেহেতু Bush শব্দটির উল্লেখ আছে, তাই সেটিকে কাকতাল না ভেবে, বরং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে মেলানো হয়।

কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন প্রেসিডেন্ট

বাবা ভাঙ্গা ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হবেন একজন আফ্রিকান-আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গ। আশ্চর্যজনক ভাবে বারাক ওবামা একজন আফ্রিকান-আমেরিকান এবং তিনিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট!

ভয়ঙ্কর সুনামি

Bangladesh Pratidinবাবা ভাঙ্গা ১৯৫০ সালে বলেছিলেন-A huge wave will cover a big coast covered with people and towns, and everything will disappear beneath the water.‘মানুষ ও বসতিতে পরিপূর্ণ এক সমুদ্রতীরে বিশাল বড় এক ঢেউ আছড়ে পড়বে এবং সবকিছু পানির নিচে তলিয়ে যাবে।’

বলা হয়ে থাকে এখানে বাবা ভাঙ্গা ২০০৪ সালে ঘটে যাওয়া বক্সিং ডে, অর্থাৎ বড়দিনের পরদিন (২৬ ডিসেম্বর) এর সুনামির কথা বলেছেন। সেদিন ভারত মহাসাগরের তলদেশে এক ভয়ানক ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল, যার মাত্রা ছিল প্রায় ৯.১! এর ফলে প্রবল শক্তিশালী সুনামি। এই সুনামি যখন ইন্দোনেশিয়ায় আছড়ে পড়ে, তখন পানিস্তম্ভের উচ্চতা ছিল প্রায় ১০০ ফুট। আক্ষরিক অর্থে কিছুই দাঁড়াতে পারেনি এই বিশাল জলরাশির শক্তির সামনে। প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন

বাবা ভাঙ্গা বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন-‘শীতল অঞ্চলগুলো উষ্ণ হয়ে উঠবে এবং আগ্নেয়গিরিরা জেগে উঠবে। সবকিছু বরফের মতো গলে যাবে।’ এই ভবিষ্যদ্বাণীটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে মিলে যায়। বাবা ভাঙ্গা এখানে সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন।

আইএসের উত্থান

বাবা ভাঙ্গা বহু আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ২০১০ সালের দিকে সিরিয়াতে এক ‘বৃহত্তর মুসলিম যুদ্ধ’ শুরু হবে। এতে এক ‘চরমপন্থি মুসলিম শক্তির’ উত্থান ঘটবে এবং তারা ইউরোপ আক্রমণ করবে। আইএসের উত্থানের ঘটনা এবং ইউরোপের কয়েকটি স্থানে তাদের অনুসারীদের হামলার ঘটনাকে ওই ভবিষ্যদ্বাণীর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়।

ব্রেক্সিট প্রসঙ্গ

বাবা ভাঙ্গার গুরুত্বপূর্ণ একটি ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, ২০১৬ সালে ইউরোপের পতন হবে। বাবা ভাঙ্গার অনুসারীদের দাবি এখানে ‘পতন’ বলতে ইউরোপের ‘ঐক্য বিনষ্ট হওয়া’র কথা বুঝিয়েছেন। ব্রেক্সিট বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাটির কথাই কি বাবা ভাঙ্গা বোঝাতে চেয়েছিলেন?

পরাশক্তি চীন

চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি প্রসঙ্গেও ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে গেছেন বাবা ভাঙ্গা। তিনি বলেছেন, ২০১৮ সালের মধ্যে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে নতুন পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বের বুকে আবির্ভূত হবে।

আরও ভবিষ্যদ্বাণী

২০০০ সালের ১২ আগস্ট, রাশিয়ার উত্তরে ব্যারেন্ট সাগরের বুকে রুশ নৌবাহিনীর একটি পারমাণবিক-শক্তিচালিত সাবমেরিন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এবং ডুবে যায়। এটির নাম ছিল ‘কুর্স্ক’। জানা যায়, এই দুর্ঘটনার বিষয়ে বাবা ভাঙ্গা একদম সময় উল্লেখ করে সতর্ক করে দিয়েছিলেন! তিনি সে সময় ১৯৯৯ বা ২০০০ সালের দিকে এমনটি ঘটার উল্লেখ করেছিলেন। এ ছাড়াও তিনি সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক জোসেফ স্ট্যালিনের মৃত্যুর দিনক্ষণ, চেরনোবিল নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপর্যয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন এবং রাশিয়ার শাসক হিসেবে পুতিনের উত্থানের ব্যাপারেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন  বলে শ্রুতি আছে।

করোনার কথা ২৪ বছর আগেই বলে গেছেন বাবা ভাঙ্গা

গোটা বিশ্ব এখন লড়াই করছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সঙ্গে। এ নিয়ে নাকি অনেক বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন বাবা ভাঙ্গা। এই খবর প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। 

Bangladesh Pratidinডেইলি স্টার ইউকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাবা ভাঙ্গা ১৯৯৬ সালেই করোনাভাইরাসের ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। তার মৃত্যুর আগে ৮৪ বছর বয়সে সবাইকে মরণঘাতী এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন বাবা ভাঙ্গা। বাবা ভাঙ্গার সঙ্গে ওই সময় সাক্ষাৎ করা এক নারীর দাবি, তিনি সে সময় দাবি করেছেন করোনায় সবাই আক্রান্ত হবেন। ৭৩ বছর বয়সী এই নারীর নাম নেশকা স্টেফানোভা। নেশকার দাবি বাবা ভাঙ্গা একটা মহামারীর কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন `Neshka, the Corona will be all over us’.

 নেশকা বলেন, তখন তিনি বাবা ভাঙ্গার কথার মানে বুঝতে পারেননি। এখন যখন সারা বিশ্ব করোনার সঙ্গে লড়াই করছে, তখন তিনি এ যুগের নস্ট্রাদামুসের বলা সেই কথা মনে করলেন। সেই সঙ্গে সবাইকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেছেন বলেই মুখ খুলেছেন।

সত্য-মিথ্যা  বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল

বাবা ভাঙ্গার এই অলৌকিক ক্ষমতা-ভবিষ্যদ্বাণী  ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সম্ভবত এটাই যে,  এগুলো বিশ্বাস করা উচিতনাকি না?

 

বলা হয়ে থাকে বাবা ভাঙ্গার করা ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশই নাকি পুরোপুরি মিলে গেছে। কিন্তু এ ধরনের দাবির সত্যিকার কোনো ভিত্তি নেই। এটা সত্য যে, বাবা ভাঙ্গা বেশ চমকপ্রদ কতগুলো ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যেগুলো মিলে গেছে। কিন্তু ৮০ শতাংশ মিলে যাওয়া দাবিটি সঠিক নয়। এ ধরনের দাবি কিংবা তথ্য প্রকাশ পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও একপাক্ষিক। হয় অন্ধ ভক্তশ্রেণি এ ধরনের তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে, নতুবা নির্দিষ্টি উদ্দেশে কেউ এসব তথ্যকে সত্য প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেBangladesh Pratidinন। মজার ব্যাপার হলো এই দলের লোকেরা যে কথাগুলো মিলে যায়নি, সেগুলোর কথা একদমই মুখে আনেন না। বাবা ভাঙ্গাকে নিয়ে অনলাইন ভিডিও বা পোর্টালের স্টোরিগুলো অধিকাংশই একপেশে এবং বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা। বাবা ভাঙ্গা কেমন করে ভবিষ্যদ্বাণী করতেন? এ নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাবে না হয়তো। তবে বাবা ভাঙ্গা নিজেই বলেছেন, তাঁকে ভিনগ্রহের প্রাণী বা এই জাতীয় কোনো সত্তারা ভবিষ্যৎ দেখতে কিংবা অতিন্দ্রীয় কোনো কিছু বুঝতে সাহায্য করে!

তাঁর খ্যাতি বাড়তে বাড়তে এক সময় এমন পর্যায়ে চলে গেল যে, বাল্টিক অঞ্চলের আশপাশে এবং সারা বিশ্বের অনেক স্থান থেকেই তাঁর সাক্ষাতে লোক আসতে লাগল। সেসব লোকদের মধ্যে নানা দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদসহ অসংখ্য প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বও রয়েছেন। রয়েছেন বুলগেরিয়ার জার তৃতীয় বরিস ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ-ও! এ থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় তাঁর জনপ্রিয়তা ও প্রভাব কোন পর্যায়ে ছিল।

বুলগেরিয়ান রাজপরিবারের সঙ্গে বাবা ভাঙ্গার সম্পর্ক ছিল বেশ ভালো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বুলগেরিয়ায় সমাজতন্ত্র কায়েমের পর কমিউনিস্ট নেতাদের পরামর্শক হিসেবে বাবা ভাঙ্গাকে নিয়োগ করা হয়। এটি পুরোটাই কৌশলগত। কমিউনিস্টরা তখন বাবা ভাঙ্গার ‘তথাকথিত’ ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, এসবের কারণেই আরও বেশি খ্যাতি লাভ করেন বাবা ভাঙ্গা। তিনি কী আসলেই অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ছিলেন, নাকি শুধুই কমিউনিস্টদের হাতের পুতুল- এ নিয়ে প্রচুর বিতর্ক থাকলেও বাবা ভাঙ্গা নিঃসন্দেহে অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর আশপাশে দারুণ প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয়েছিলেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সিরিয়াসলি বিশ্বাসের যেমন কারণ নেই তেমনি একেবারে অবহেলারও সুযোগ নেই।  এ নিয়ে আলোচনা হতেই পারে!

যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো মেলেনি

বিশ্বজুড়ে বাবা ভাঙ্গার ওই বাণীগুলো নিয়েই আলোচনা বেশি হয় যেগুলো মিলে গেছে বা কাছাকাছি গেছে তবে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী কিন্তু অনেকবারই ভুল প্রমাণিত হয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা তুলনামূলকভাবে কম হলেও সত্য  লুকানোর কোনো সুযোগ নেই

১৯৯৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল

বাবা ভাঙ্গা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে যে দুটি দল খেলবে তাদের আদ্যক্ষর হবে ‘বি’। কিন্তু ব্রাজিলের ক্ষেত্রে কথাটি মিলে গেলেও বুলগেরিয়া সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ায় তার কথা পুরোপুরি ফলেনি।

পারমাণবিক যুদ্ধ

বাবা ভাঙ্গার অনুমান ছিল ২০১০ সালের আগে পরে বা কাছাকাছি সময়ে পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ২০১০ পেরিয়ে এখন চলছে ২০২১। তার সেই ভবিষ্যদ্বাণী এতটুকুও মেলেনি।

ইউরোপের পতন

বাবা ভাঙ্গা অনুমান মতে, ২০১৬ নাগাদ ‘মুসলিম চরমপন্থি শক্তি’ কর্তৃক ইউরোপে রাসায়নিক হামলা সংঘটিত হওয়ার কথা। আর এটি ধীরে ধীরে ইউরোপের জনবসতি কমাতে থাকবে। এমনকি ইউরোপে ‘কোনো প্রকার প্রাণের অস্তিত্ব’ থাকবে না বলেও দাবি করেছিলেন বাবা ভাঙ্গা। অথচ আইএস বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর দ্বারা এমন কোনো হামলাও ঘটল না, আবার ইউরোপও বহাল তবিয়তেই আছে।

উত্তরসূরি ফরাসি বালিকা

বাবা ভাঙ্গা মৃত্যুর আগে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছিলেন যে, তার মৃত্যুর পর ১০ বছর বয়সী এক ফরাসি দৃষ্টিহীন বালিকা তার এই ঐশ্বরিক ক্ষমতা লাভ করবে এবং মানুষ দ্রুতই সে মেয়েটির পরিচয় জানতে পারবে। কিন্তু এ ধরনের কারও কথাই জানা যায়নি।

বাবা ভাঙ্গা প্রচুর বিষয় নিয়ে নিজের গণনা বা অনুমানের কথা বলে গেছেন। সেগুলোর অনেকগুলো বাস্তবের সঙ্গে মেলেনি। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে বাবা ভাঙ্গার যে কথাগুলো ভুল প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কেউ সাধারণত আলোচনা করতে চায় না। এমনকি বিশ্ব মিডিয়াতেও বারবার ঘুরে ফিরে বাবা ভাঙ্গার মিলে যাওয়া ঘটনাগুলোকেই তুলে ধরা হয়েছে। অমিলের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে শতভাগ ঐশ্বরিক ক্ষমতা তাঁর ছিল না।

তাঁর চোখে আগামীর বিশ্ব

আগামীর পৃথিবী নিয়ে বছর ধরে ধরে বাবা ভাঙ্গা বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন পৃথিবীর ভবিষ্য নিয়ে যদি আপনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ থাকে তাহলে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন  নিশ্চিত চমকে উঠবেন!

২০২৫-২০২৮

পৃথিবীর বুক থেকে দুর্ভিক্ষ দূরীভূত হবে। মানবজাতি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।

২০২৩

পৃথিবীর কক্ষপথে পরিবর্তন আসবে। 

২০৩৩-২০৪৫

পোলার আইস ক্যাপ, অর্থাৎ দুই মেরুতে জমা বরফ পুরোপুরি গলে যাবে। 

২০২৮

জ্বালানির নতুন উৎসের সন্ধানে মানুষ শুক্রগ্রহে যাবে।

২০৪৩

ইউরোপে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। আর তার রাজধানী হবে রোম। মুসলমানদের শাসনে বিশ্ব অর্থনীতি গতি পাবে।

২০৪৬

মানুষ অঙ্গ ক্লোনিং বা স্টেমসেল গবেষণায় অনেক উন্নতি লাভ করে কৃত্রিমভাবে অঙ্গ তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করবে।

২০৬৬

মসজিদে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র একটি অস্ত্র ব্যবহার করবে যেটা হঠাৎ তাপমাত্রা কমিয়ে দেবে। 

২০৭৬

পৃথিবীতে কমিউনিজম বা সাম্যবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এবং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। 

২০৮৪

নতুন করে সৃষ্টি হবে প্রকৃতির।

২০৮৮-২০৯৭

এক নতুন ধরনের অসুখ ছড়াবে যাতে মানুষ খুব তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাবে। ২০৯৭-এর মধ্যে সেই অসুখের অ্যান্টিডোজ খুঁজে পাবে মানুষ।

 ২১০০

কৃত্রিম সূর্যের দ্বারা রাতকে আলোকিত করা হবে। তখন সর্বদাই পৃথিবীর বুকে দিন থাকবে, কখনো আঁধার নামবে না।

২১০০-২১৩০

মানুষ জীবন্ত রোবট হয়ে যাবে। এই আধা রোবট-আধা মানুষদের বলা হবে ‘সাইবর্গ’ বা ‘সাইবর্স’।

২১৩০

মানুষ সমুদ্রের নিচে বসতি স্থাপন করে বসবাস করার সক্ষমতা অর্জন করবে। ভিনগ্রহের প্রাণীদের সহায়তা বা প্রযুক্তির সাহায্যে করা হবে কাজটি।

২১৫৪-২২০০

এ সময়ের মধ্যে প্রাণীরাও আধা-মানুষে পরিণত হবে।

২১৭০

বিশ্বে খরা দেখা দেবে।

২১৭০-২২৫৬

মানুষ মঙ্গলগ্রহে উপনিবেশ স্থাপন করবে। 

২২৬২-২৩০৪

মানুষ টাইম-ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমণ করার সক্ষমতা অর্জন করবে।

২১৯৫

সাগরের পানির নিচে শহর গড়ে উঠবে।

২১৯৬

এশিয়া ও ইউরোপের মানুষ একসঙ্গে মিলে নতুন এক জাতের মানুষ তৈরি হবে।

২৪৮০

দুটো কৃত্রিম সূর্যের মুখোমুখি সংঘর্ষ হবে। পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসবে।

৩০০৫

মঙ্গলগ্রহে বিশ্বযুদ্ধ হবে।

৩০১০

চাঁদে একটি ধূমকেতু আছড়ে পড়বে।

৩৭৯৭

পৃথিবী নামক গ্রহের কোনো কিছুই টিকে থাকবে না, সবই ধ্বংস হয়ে যাবে।

৪৩০২-৪৬৭৪

মানুষ অমরত্ব লাভ করবে এবং বহির্জাগতিক কোনো প্রাণী বা এলিয়েনদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। মহাবিশ্বের জনসংখ্যা তখন হবে প্রায় ৩৪০ বিলিয়ন।

Tuesday, May 11, 2021

 

থানকুনি পাতার ১০টি জাদুকরী উপকারিতা 

থানকুনি পাতার ১০টি জাদুকরী উপকারিতা

থানকুনি পাতা। আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। এর ল্যাটিন নাম centella aciatica। গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতার ব্যবহার আদি আমল থেকেই চলে আসছে। ছোট্ট প্রায় গোলাকৃতি পাতার মধ্যে রয়েছে ওষুধি সব গুণ। থানকুনি পাতার রস রোগ নিরাময়ে অতুলনীয়।প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বহু রোগের উপশম হয় এর ভেষজ গুণ থেকে। খাদ্য উপায়ে এর সরাসরি গ্রহণ রোগ নিরাময়ে থানকুনি যথার্থ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। অঞ্চলভেদে থানকুনি পাতাকে আদামনি, তিতুরা, টেয়া, মানকি, থানকুনি, আদাগুনগুনি, ঢোলামানি, থুলকুড়ি, মানামানি, ধূলাবেগুন, নামে ডাকা হয়। তবে বর্তমানে থানকুনি বললে সবাই চেনে।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কেউ যদি নিয়মিত থানকুনি পাতা খাওয়া শুরু করে, তাহলে মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন ধরুন...

১. চুল পড়ার হার কমে: 
নানা সময়ে হওয়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সপ্তাহে ২-৩ বার থানকুনি পাতা খেলে স্কাল্পের ভেতরে পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়। ফলে চুল পড়ার মাত্রা কমতে শুরু করে। চুল পড়ার হার কমাতে আরেকভাবেও থানকুনি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন। কীভাবে? পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা নিয়ে তা থেঁতো করে নিতে হবে। তারপর তার সঙ্গে পরিমাণ মতো তুলসি পাতা এবং আমলা মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। সবশেষে পেস্টটা চুলে লাগিয়ে নিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। ১০ মিনিট পরে ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে চুলটা। প্রসঙ্গত, সপ্তাহে কম করে ২ বার এইভাবে চুলের পরিচর্যা করলেই দেখবেন কেল্লা ফতে!

২. টক্সিক উপাদানেরা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়: 
নানাভাবে সারা দিন ধরে একাধিক ক্ষতিকর টক্সিন আমাদের শরীরে, রক্তে প্রবেশ করে। এইসব বিষেদের যদি সময় থাকতে থাকতে শরীর থেকে বের করে দেওয়া না যায়, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ! আর এই কাজটি করে থাকে থানকুনি পাতা। কীভাবে করে? এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে অল্প পরিমাণ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানগুলি বেরিয়ে যায়। ফলে একাধিক রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়।

৩. ক্ষতের চিকিৎসা করে: 
থানকুনি পাতা শরীরে উপস্থিত স্পেয়োনিনস এবং অন্যান্য উপকারি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো এবার থেকে কোথাও কেটে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অল্প করে থানকুনি পাতা বেঁটে লাগিয়ে দেবেন। দেখবেন নিমেষে কষ্ট কমে যাবে।

৪. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: 
থানকুনি পাতা হজম ক্ষমতারও উন্নতি হবে। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে থানকুনি পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে টিক মতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না।

৫. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: 
থানকুনি পাতায় উপস্থিত অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্য়াটি অ্যাসিড এবং ফাইটোকেমিকাল ত্বকের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি দূর করার পাশাপাশি বলিরেখা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্কিনের ঔজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে কম বয়সে ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কমে।

৬. আমাশয়ের মতো সমস্যা দূর হয়: 
এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে থানকুনি পাতা খেতে হবে। এমনটা টানা ৭ দিন যদি করতে পারেন, তাহলেই কেল্লাফতে! এই ধরনের সমস্যা কমাতে আরেকভাবেও থানকুনি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন। প্রথমে পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা বেটে নিন। তারপর সেই রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মেশান। এই মিশ্রনটি দু চামচ করে, দিনে দুবার খেলেই দেখবেন কষ্ট কমে যাবে।

৭. পেটের রোগের চিকিৎসায় কাজে আসে: 
অল্প পরিমাণ আম গাছের ছালের সঙ্গে ১ টা আনারসের পাতা, হলুদের রস এবং পরিমাণ মতো থানকুনি পাতা ভাল করে মিশিয়ে ভাল করে বেটে নিন। এই মিশ্রনটি নিয়মিত খেলে অল্প দিনেই যে কোনও ধরনের পেটের অসুখ সেরে যায়। সেই সঙ্গে ক্রিমির প্রকোপও কমে।

৮. কাশির প্রকোপ কমে: 
২ চামচ থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে অল্প করে চিনি মিশিয়ে খেলে সঙ্গে সঙ্গে কাশি কমে যায়। আর যদি এক সপ্তাহ খেতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে কাশির কোনও চিহ্নই থাকবে না।

৯. জ্বরের প্রকোপ কমে: 
সিজন চেঞ্জের সময় যারা প্রায়শই জ্বরের ধাক্কায় কাবু হয়ে পারেন, তাদের তো থানকুনি পাতা খাওয়া মাস্ট! কারণ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে যে জ্বরের সময় ১ চামচ থানকুনি এবং ১ চামচ শিউলি পাতার রস মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে অল্প সময়েই জ্বর সেরা যায়। সেই সঙ্গে শারীরিক দুর্বলতাও কমে।

১০. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়: 
অসময়ে খাওয়ার কারণে ফেঁসেছেন গ্যাস্ট্রিকের জালে? নো প্রবেলম! থানকুনি পাতা কিনে আনুন বাজার থেকে। তাহলেই দেখবেন সমস্যা একেবারে হাতের মধ্যে চলে আসবে। আসলে এক্ষেত্রে একটা ঘরোয়া চিকিৎসা দারুন কাজে আসে। কী সেই চিকিৎসা? হাফ লিটার দুধে ২৫০ গ্রাম মিশ্রি এবং অল্প পরিমাণে থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে একটা মিশ্রন তৈরি করে ফেলুন। তারপর সেই মিশ্রন থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে প্রতিদিন সকালে খাওয়া শুরু করুন। এমনটা এক সপ্তাহ করলেই দেখবেন উপকার মিলবে।

 

লেটুস পাতার গুণাগুণ 

লেটুস পাতার গুণাগুণ

লেটুস পাতা। আমরা সবাই প্রায় এই পাতাটি চিনি। ইতিহাসবিদরা বলেন, এই সবুজ পাতাটির চাষ প্রথম মিশরীয়রা শুরু করেছিল। তারা এই পাতাটি শাক হিসেবে চাষ করতেন। এমনকি এই পাতার বীজ থেকে তেলও বের করা হত। যদিও পরে এই লেটুস পাতার চাষ গ্রীক ও রোমানরা শুরু করে।

লেটুস পাতার আরেক নাম হল আইসবার্গ লেটুস। এই অদ্ভুদ নামের কারণ হল লেটুস বা যে কোনও শাক ফ্রিজে না রাখা হলে তা নষ্ট হয় যেত। বিংশ শতাব্দীতে সব জায়গায় ফ্রিজ পাওয়া যেত না। তাই ক্যালিফোর্নিয়ার লোকেরা বরফের মাধ্যমে শাকগুলি সংরক্ষণ করত। তখন থেকেই এর নাম আইসবার্গ। 

লেটুস পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। এই পাতার মধ্যে থাকে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি-৬, আয়রন, পটাসিয়াম।

লেটুস পাতা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। কারণ এর মধ্যে বিটা ক্যারোটিন ও লুটিনের মত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। এই ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলি ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি হ্রাস করে।

লেটুস পাতা ঘুমাতে সাহায্য করে। আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে লেটুস পাতা খান তাহলে আপনি অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়বেন। কারণ এর মধ্যে ল্যাকট্যাক্যারিয়াম নামক একটি উপাদান থাকে যা ঘুমাতে সাহায্য করে।