Saturday, September 23, 2017

নৌকা স্কুল : বিশ্বের ১০ মডেল স্কুলের একটি 

ভবিষ্যতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সন্তানরা বন্যাপ্রবণ এলাকায় কীভাবে স্কুলে যাবে? এই সমস্যার সমাধানে একজন বাংলাদেশি স্থপতির উদ্ভাবন জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে জীবন এগিয়ে নেওয়ার সহনশীল 'নৌকা স্কুল' এখন বিশ্বে সমাদৃত। এ স্কুলে দেশের বন্যায় প্লাবিত প্রত্যন্ত এলাকার শিশুরা ইন্টারনেট ও সৌরবিদ্যুৎ সংবলিত শিক্ষা সুবিধা পাচ্ছে। গত সপ্তাহে এই 'নৌকা স্কুল' বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা সিএনএনের জরিপে 'বিশ্বের অন্যতম ১০টি উদ্ভাবনীমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা'র একটি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। 
বাংলাদেশের তরুণ স্থপতি মোহাম্মদ রেজওয়ানের নৌকার মধ্যে তৈরি 'ভাসমান স্কুল' এখন বিশ্ব মডেল স্কুল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকির মুখে থাকা ভারত, চীন, কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়াসহ আরও অনেক দেশে চালু হয়েছে মোহাম্মদ রেজওয়ানের মডেলের এই ভাসমান স্কুল। ১৬টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক স্থপতি মোহাম্মদ রেজওয়ান। তার প্রকল্পকে ঘিরে নির্মিত হয়েছে দুটি তথ্যচিত্র। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মুখে থাকা আরও অনেক দেশে চালু হয়েছে এই নৌকা স্কুল। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, স্ট্নোভেনিয়ার মতো উম্নত দেশের প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে যুক্ত হয়েছে এই স্কুল। অসাধারণ উদ্ভাবন নৌকার মধ্যে তৈরি এই ভাসমান স্কুল নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে তথ্যচিত্র 'ইজি লাইক ওয়াটার'।
আফ্রিকা, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বন্যাপ্রবণ এলাকায় বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উম্নয়ন সংগঠনগুলো মোহাম্মদ রেজোয়ানের নৌকা স্কুলের ধারণা অনুসরণ করছে। ফলে নাইজেরিয়া, জাম্বিয়া, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তানের বেশ কিছু অঞ্চলে শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ সহজ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও অন্যান্য সংগঠন রেজোয়ানের উদ্ভাবিত এই নৌকা স্কুলের মডেলের অনুকরণে হাওর ও বিলে শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা প্রদান করছে।
সিএনএনের মতে, বাংলাদেশের উদ্ভাবিত সৌরশক্তিসম্পম্ন ভাসমান স্কুল সমগ্র বিশ্বে একটি নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। প্রতিদিন সকালে প্রাথমিক স্কুলগুলো বিভিম্ন গ্রামে যায় এবং শিশুদের বাড়ির সামনে থেকে নৌকায় তুলে নেয়। তারপর নৌকাটি একটি জায়গায় দাঁড়ায় এবং ৩০ জন শিশুকে নৌকার ভেতরেই শিক্ষা প্রদান করে। স্কুলগুলোতে একটি ল্যাপটপ, শত শত বই থাকে এবং সোলার প্যানেল থেকে উৎপম্ন বিদ্যুতের মাধ্যমে নৌকার ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলো চালানো হয়।
প্রায় প্রতি বছরই মৌসুমি বন্যায় বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যা বড় ও দীর্ঘমেয়াদি হলে দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার সবচেয়ে বড় শিকার স্কুলের শিক্ষার্থীরা। বর্ষার সময় দেশের অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি বন্যায় দেশের ২ হাজার ৬৪০টি স্কুল দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকে। এর আগে ২০০৭ সালের বন্যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫ লাখ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্কুল ডুবে যাওয়ার কারণে। বর্ষায় স্কুলে যাওয়ার অধিকাংশ রাস্তা পানিতে তলিয়ে থাকে। অনেক স্কুলের ক্লাসরুমও পানিতে ডুবে থাকে। এর ফলে শুধু স্কুল থেকে নয়, পুরো শিক্ষাজীবন থেকে প্রতি বছর বহু শিক্ষার্থী ছিটকে পড়ে।
চলনবিল নাটোর, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ জেলাজুড়ে বিস্টৃতত একটি বিলের নাম। চলনবিল সংলঘ্ন অঞ্চলগুলো বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় পানিতে ডুবে থাকে। ভৌগোলিকভাবে এমনিতেই বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ এলাকা বর্ষায় বন্যাকবলিত হয়। 
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চলনবিল এলাকার সিধুলাই সেরকমই একটি বন্যাকবলিত গ্রাম। এ গ্রামেরই সল্ফ্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান স্থপতি মোহাম্মদ রেজওয়ান। ১৯৯৮ সালে তরুণ স্থপতি মোহাম্মদ রেজওয়ান প্রথমে নিজ গ্রামে সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। গ্রামটি বন্যাকবলিত। পুরো এলাকা বছরের বেশি সময় বন্যা ও পানিতে ডুবে থাকে। রেজওয়ান চিন্তা করলেন ভাসমান পানিকেই গ্রামের উম্নয়নে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। সে ভাবনা থেকেই তিনি নৌকার মধ্যে স্কুলের নকশা করলেন। স্থাপন করলেন 'ভাসমান স্কুল'। ২০০২ সালে এই স্কুল যাত্রা শুরু করে। সেই যাত্রায় প্রথমে তার সম্বল ছিল স্কলারশিপের মাত্র ২২ হাজার টাকা। ২০০৫ সালে মোহাম্মদ রেজোয়ান একটি অবিশ্বাস্য সুসংবাদ পেলেন। তার দীর্ঘমেয়াদি স্বপ্ন বড় আকারে সম্প্রসারণের জন্য তাকে এক মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্ত পুরস্কারের অর্থ রেজোয়ানের এই ছোট প্রতিষ্ঠানটির কর্মপরিধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, নৌকার কলেবর বৃদ্ধি পায়, সব নৌকায় সৌরবিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেটসহ কম্পিউটার আনা হয়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিটিতে ৫০ হাজার বই ও ১০০টিরও বেশি কম্পিউটার আনা হয়। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতার উদারতায় এখন বাংলাদেশের ভাসমান স্কুলের শিক্ষার্থীরা সৌরশক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে। এই বর্ষা এবং বন্যায় বিধ্বস্ত অঞ্চলেও শিশুরা শিক্ষা সুবিধা পেয়েছে।
'সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা' জাতিসংঘ পরিবেশ পুরস্কারসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করায় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি পায়। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী তারা বছরে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষা, তথ্য, প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। বর্তমানে ২২টি স্কুলের নৌকায় প্রতিদিন তিন শিফটে ১ হাজার ৯৮০ জন ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে।

Wednesday, September 20, 2017



সত্যিই ভাববার বিষয়
মানুষ সোজা পথে চলতে চায় না,,তাই বাঁকা পথের প্রতি সবারই আগ্রহ বেশি!
যেমন- নূপুরের দাম হাজার টাকা হলেও,তার স্থান পায়ে!
আর মাত্র দুই টাকার টিপের স্থান কপালে!
লবণে কখনো পোকা ধরেনি!
কিন্তুু মিষ্টিতে প্রতিদিনই পোকা ধরে, পিঁপড়াও ছাড়েনা!
মোমবাতি জ্বালিয়ে মৃত মানুষকে স্মরণ করা হয়,
আর মোমবাতি নিভিয়ে জন্মদিন পালন করা হয়!
মদ বিক্রেতাকে কারো কাছে যেতে হয় না,
কিন্তু দুধ বিক্রেতাকে ঘরে ঘরে যেতে হয়!
আমরা সবসময় বলি দুধে পানি মেশাননি তো.....?
কিন্তু মদে নিজেরাই পানি মিশিয়ে খায় মদখোর গুলো!
মানুষকে জানোয়ার বললে ক্ষেপে যায়,আর বাঘ / সিংহ বল্লে খুশি হয়,
অথচ বাঘ,সিংহ এরাও জানোয়ার!!
সংগৃহিত
Image may contain: 1 person, smiling, text

--- ---ইউনিসন নামে ব্রিটেনের অন্যতম বৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালানোর প্রতিবাদে সু চিকে দেয়া আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রত্যাহরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শান্তির জন্য দেয়া নোবেল পুরস্কার সহ বিভিন্ন পুরস্কার কেড়ে নেয়ার দাবিতে বিশ্বে জনমত গড়ে উঠায় প্রথম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ইউনিসন নামে ব্রিটেনের অন্যতম বৃহৎ এই ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের ঘটনা এবং অকার্যকর ভূমিকায় সু চি বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখে পড়ার মধ্যেই এমন ঘোষণা এলো।
গণতন্ত্রের দাবিতে মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী সু চি যখন কারাগারে ছিলের তখন এ পুরস্কার দেয়া হয় তাকে। এমন এক সময় এই ঘোষণা এল যখন কিনা বেশকিছু ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দিয়েছে যে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনের সময় সু চি’কে দেয়া পুরস্কার ও সম্মান পুনর্বিবেচনার কথা ভাবছে তারা।
দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন-ইউনিসন সু চি’কে দেয়া সম্মানসূচক সদস্যপদ স্থগিত করার কথা জানিয়ে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দুর্দশা লাঘবে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে অনুরোধ করেছে।
ইউনিসনের সভাপতি মার্গারেট ম্যা’কি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানকে বলেন, রোহিঙ্গারা যে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে সেটি আতঙ্কজনক। এ প্রেক্ষিতে আমরা অং সান সু চি’র সদস্যপদ স্থগিত করেছি। আমরা আশা করি তিনি আন্তর্জাতিক আহ্বানে সাড়া দেবেন।
এদিকে সু চি’কে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বিরোধী আন্দোলনের সময় দেয়া সম্মানসূচক ডিগ্রি পুনর্বিবেচনার কথা জানিয়েছে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির মুখপাত্র জানান, জাতিসংঘ মিয়ানমারে ‘জাতিগত নিধনের’ কথা উল্লেখ করেছে। রোহিঙ্গা সংকটে সু চি’র ভূমিকায় আমরা হতাশ।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের স্টুডেন্টস ইউনিয়নও জানিয়েছে যে তারা সু চির সম্মানিত প্রেসিডেন্ট পদ প্রত্যাহার করে নেবে। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতির পাশা বলেন, রোহিঙ্গা নির্যাতনে অং সান সু চির বর্তমান অবস্থান ও গণহত্যার পরও নিষ্ক্রিয় থাকায় আমরা তাঁর সম্মানিত প্রেসিডেন্ট পদ ফিরিয়ে নেব।
৩০ বছর ধরে অং সান সু চি যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো, বাথ, কেমব্রিজসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শহর ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকেও তাঁকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে কোন জাতিগত সংখ্যালঘু নিধনের ঘটনা ঘটেনি বলে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে সু চি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের ভয় করি না। কারো ঘাড়ে দায় চাপানো বা দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া মিয়ানমার সরকারের ইচ্ছা নয়। তার এই বক্তব্যের পর আবারও সমালোচনার তীব্রতা বেড়েছে।

জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত চার লাখ ৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। প্রতিদিন গড়ে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসছে।

দুশ্চিন্তা ঝেড়ে মনের যত্ন নিন 

শরীরকে ভালো রাখতে যেমন যত্ন প্রয়োজন, তেমনি আপনার মনকে ভালো রাখতেও চাই নিয়মিত যত্ন। মনকে অবহেলা করে কখনো পরিপূর্ণভাবে ভালো থাকা সম্ভব নয়। মনের যত্ন নেয়ার কিছু উপায় আছে। দুশ্চিন্তাকে সময় না দিলে এটি আপনাকে দিনভর গ্রাস করতেই থাকবে। তাই দুশ্চিন্তা করার জন্য সময় দিন। তবে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের বেশি নয়। এরপর থামুন। এবার চিন্তা করুন—কিভাবে এর থেকে বেরিয়ে আসবেন।
ধ্যান বা মেডিটেশন :  মনের যত্নে ধ্যান বা মেডিটেশন করুন। এটি মনকে ভালো ও নিয়ন্ত্রণে রাখে, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমায়। যেটি আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেটি নিয়ে চিন্তা করবেন না। যেতে দিন। এটা হতে পারে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বা আপনার দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে। যদিও এই ‘যেতে দেয়া বা ছেড়ে দেয়া’ বিষয়টি কঠিন। তবে নিয়মিত এর চর্চা করলে দেখবেন আপনিও পারছেন। আপনারও হালকা লাগছে। ইতিবাচক বই পড়ুন। দেখুন, বড় বড় মানুষ কিভাবে জীবনে নিজেদের চাপ সামলেছেন।
ব্যায়াম করুন :  মন ভালো রাখতে ব্যায়াম করতে পারেন, করতে পারেন কিছু যোগব্যায়ামও। নিয়মিত হাঁটা মানসিক চাপকে কমাতে সাহায্য করে। এতে মন ভালো থাকে। আমাদের চিন্তার অধিকাংশটাই জুড়ে থাকে নেতিবাচক চিন্তা আর দুশ্চিন্তা। তাই ভালো ভাবনাগুলোকে আমরা কাজে লাগাতে পারি না। ভালো ভাবনাকে কাজে লাগান। ইতিবাচক চিন্তা করুন। মানুষ বাঁচে আশা বা স্বপ্নের মধ্য দিয়ে। নিজেকে ভালোবাসুন। ভালোবাসুন অন্যকেও। বেড়াতে যাওয়া, গান শোনা, গান গাওয়া, বই পড়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো—প্রিয় কাজগুলো করুন। এগুলো মনের খোরাক জোগাতে কাজ করবে। মনকে ভালো এবং চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করবে। 
সামাজিকতা একাকিত্ব- মানসিক চাপ ও হতাশা বাড়িয়ে তোলে। তাই পরিবার ও বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। বন্ধু বা আপন কারও সঙ্গে সমস্যা নিয়ে আলাপ করলে সমস্যা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা অনেকটাই কমে আসে।
পর্যাপ্ত ঘুম : ঘুম শরীরের বিশ্রামের পাশাপাশি মানসিকভাবেও শান্তি দেয়। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক সব অগোছালো চিন্তাকে গুছিয়ে নিতে সাহায্য করে। তাই হতাশা কমাতে ভালো মতো ঘুমানো দরকার।

Saturday, September 9, 2017

কয়েকটি মন খারাপ করা ঘটনা 

রোহিঙ্গা শিশু

আগস্ট মাসটি মনে হয় সত্যিই বাংলাদেশের জন্য অশুভ একটা মাস। কীভাবে কীভাবে জানি এই মাসটিতে শুধু মন খারাপ করা ঘটনা ঘটতে থাকে। দুঃসময় নিশ্চয়ই এক সময় কেটে যাবে। তারপরও যখন ঠিক এই সময়টির ভেতর দিয়ে যেতে হয়, তখন মন খারাপ হয়ে যায়।
শুরু হয়েছে বন্যা দিয়ে। বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেল, মাঠেঘাটে পানি, স্কুলে পানি, বাড়ির ভেতর পানি। আমরা যারা পুরো সময়টা শুকনো মাটিতে কাটিয়েছি, তারা নিশ্চয়ই কল্পনাও করতে পারি না, পানিতে ডুবে যাওয়া এলাকায় দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সময় কাটাতে কেমন লাগে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে বসে আছি, কখন বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাবে, দেশের মানুষ আবার আগের জীবনে ফিরে যাবে।
শুধু যে নদীর পানির ঢলে বন্যা হয়েছে তা নয়, ঢাকা শহরের অনেক জায়গা জলাবদ্ধতার কারণে পানিতে ডুবে আছে। মানুষজন সেই পানি ভেঙে যাতায়াত করছে, ধরেই নিয়েছে এটাই জীবন। যারা থাকে তারা গরিব মানুষ, সাধারণ মানুষ; তাই তাদের কণ্ঠস্বর খুব বেশি দূর যেতে পারে না। তারা মেনেই নিয়েছে, এভাবে বেঁচে থাকতে হবে।
প্রতি বছরই বন্যার একটা সময় আসে এবং প্রতি বছরই আমি এক ধরনের বিস্ময় নিয়ে চিন্তা করি, কোনো একটি রহস্যময় কারণে আমাদের বাংলা ভাষায় 'বন্যা' শব্দটি কিন্তু নেতিবাচক নয়। যদি এটা নেতিবাচক শব্দ হতো, তাহলে আমাদের দেশের বাবা-মায়েরা কিন্তু তাদের মেয়েদের নাম কখনোই বন্যা রাখতেন না! কখনও কোনো মানুষের নাম খরা, ভূমিকম্প বা ঘূর্ণিঝড় হতে দেখিনি; কিন্তু বন্যা নামটি যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং মিষ্টি একটি নাম।
মনে হয় এ দেশের মানুষ বন্যার পানিতে বেঁচে থাকার পদ্ধতি বহু বছর থেকে জানে। ব্যাপারটি টের পাওয়া গেছে টেক্সাসের বন্যা দেখে। আমাদের দেশের পত্রপত্রিকায় সাদা চামড়ার মানুষের জন্য মায়া মনে হয় একটু বেশি। তাই দেশে বসে টেক্সাসের বন্যার খুঁটিনাটি আমরা জেনে গেছি। দেশটি যে এ রকম দুর্যোগ সামলাতে পারে না, সেটি খুবই স্পষ্ট। যে বিষয়টি আমার চোখে আলাদাভাবে পড়েছে সেটি হচ্ছে, বন্যাকালীন কারফিউ। সেই দেশে বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর মানুষজন বাড়িঘর লুট করতে শুরু করল এবং সেটা বন্ধ করার জন্য কারফিউ জারি করতে হলো! বন্যার সময় আমাদের দেশে হাজারো রকমের সমস্যা হয়; কিন্তু বাড়িঘর রক্ষা করার জন্য কারফিউ দিতে হয়, সেটি কখনও শুনিনি!
আমেরিকার জন্য এটি অবশ্য নতুন কিছু নয়। একবার নিউইয়র্ক শহরে কয়েক ঘণ্টার জন্য ব্ল্যাকআউট হয়েছিল। তখন পুরো শহর লুটপাট হয়ে গিয়েছিল। আমাদের দেশে ব্ল্যাকআউট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ভাগ্যিস আমরা এখনও আমেরিকান কায়দা-কানুনে দিন কাটানো শিখিনি।
২.
আগস্ট মাসের মন খারাপ করা বড় ঘটনাটি সবাই জানে। রূপা নামের একটা কলেজছাত্রীকে বাসের ভেতর ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, হেলপার সবাই মিলে গণধর্ষণ করে এক ধরনের পৈশাচিক নিষ্ঠুরতায় হত্যা করেছে। প্রথম যেদিন খবরটি পত্রিকায় বের হয়েছে, আমি দেখেও না দেখার ভান করে চোখ সরিয়ে নিয়েছি। আমি দুর্বল প্রকৃতির মানুষ। এ ধরনের খবরগুলো আমি সহ্য করতে পারি না; তাই সেগুলো থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে চাই। কিন্তু মানুষ উটপাখি নয় যে, বালুর ভেতর মুখ গুঁজে রাখলেই পৃথিবীর সব নিষ্ঠুরতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে। তাই ধীরে ধীরে আমাকেও রূপা নামের এই অল্প বয়সী কলেজছাত্রীর ঘটনাটি আমাকে জানতে হয়েছে।
ঘটনাটি জেনেছি; কিন্তু যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তারা কেমন করে এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটাতে পারে—সেই বিষয়টি কোনোভাবেই বুঝতে পারি না। বিচ্ছিন্নভাবে একজন বা দু'জন মানুষ যারা বিকৃত এক ধরনের মানসিকতা নিয়ে মানসিক রোগী হিসেবে বড় হয়েছে, তারা কোনো ধরনের অপরাধবোধ ছাড়াই এ রকম ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাতে পারে কিংবা ঘটিয়ে আনন্দ পায়, সেটা আমরা জানি। কিন্তু একেবারেই পারিবারিক কয়েকজন মানুষ মিলে এ ধরনের নিষ্ঠুরতা করতে পারে, সেটা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না।
তবে কি আমাদের মেনে নিতে হবে, এ রকম ঘটনা সবসময়ই ঘটছে এবং যারা ঘটাচ্ছে তারা বেশিরভাগ সময়ই পার পেয়ে যাচ্ছে। তাই সমাজের এক শ্রেণির মানুষ এটাকে খুবই সহজ-স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নিয়েছে? আমরা শুধু একটি-দুটি ঘটনার কথা জানি। তাই সমাজের আসল ছবিটি আমাদের চোখের আড়ালে রয়ে গেছে? যেগুলোর কথা পত্রপত্রিকায় আসে, সেগুলোরও কি বিচার হয়? অপরাধী শাস্তি পায়? এ দেশের অনেক বড় আলোড়িত ঘটনা হচ্ছে তনু হত্যাকাণ্ড। ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল বলে কি কখনও তনুর হত্যাকারীর বিচার হয়নি? হবে না?
আমাদের ডিকশনারিতে গণধর্ষণ শব্দটি ছিল না (কী কুৎসিত একটি শব্দ, লিখতে গিয়ে কলম সরতে চায় না)। আমরা শুধু পাকিস্তানে এই ঘটনা ঘটার খবর পেতাম এবং শুনে হতবাক হয়ে যেতাম। কীভাবে কীভাবে জানি এই ঘটনাটি বাংলাদেশেও ঘটতে শুরু করেছে। এখন এটি একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিলি্লতে একটা বাসের ভেতরে একটি মেয়েকে এভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছিল। ঠিক তার পরপরই আমাদের দেশের বাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে শুরু করল। নৃশংসতা কি অনুকরণ করতে হয়? এটা কি একটা শেখার বিষয়? মনোবিজ্ঞানীরা কি এটা নিয়ে গবেষণা করে বিষয়গুলো আমাদের বোঝাতে পারবেন?
আজকাল খবরের কাগজগুলো খোলা যায় না। মনে হয় পুরো খবরের কাগজটাই বুঝি ধর্ষণের খবর দিয়ে বোঝাই। ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগের নেতাদের ধর্ষণ, নানার নাতনিকে ধর্ষণ, ঈদের দিনে আনন্দোৎসবে ধর্ষণ, বান্ধবীকে ধর্ষণ, স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণ, কম বয়সী শিশুকে ধর্ষণ—শুধু খবরের শিরোনাম পড়েই একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে যাবে।
আমি মনোবিজ্ঞান বা সমাজবিজ্ঞানের মানুষ নই। তাই বিচ্ছিন্ন একজন মানুষ বা একটি সমাজ কীভাবে অন্যায় করে কিংবা অন্যায়কে প্রতিহত করে, সেটা জানি না। কিন্তু কিছু বিষয় সবসময়ই আমাকে বিভ্রান্ত করে এসেছে। আমি একবার এক মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে গিয়েছি। নামাজ শেষে ইমাম দোয়া করতে করতে এক সময় বললেন, যারা এই দোয়ায় শামিল হয়েছে তাদের সবার 'গোনা' যেন 'সওয়াবে' পরিণত করে দেওয়া হয়। আমি রীতিমতো চমকে উঠলাম। কারণ সত্যিই যদি একদিন শুধু দোয়া করে জীবনের সব পাপকে পুণ্যে পাল্টে দেওয়া যায়, তাহলে সেটা কি মানুষকে অন্যায় করতে প্রলুব্ধ করবে না? সারা জীবন খুন-জখম, চুরি-চামারি, অত্যাচার-অনাচার, ধর্ষণ করে জীবনের শেষ প্রান্তে কোনো একটা প্রক্রিয়ায় যদি তার সব পাপকে পুণ্যে পরিণত করে ফেলা যায়, সেটি নিশ্চয়ই অনেক পুণ্য লাভের সবচেয়ে শর্টকাট পদ্ধতি। ধর্মের এই ব্যাখ্যা সমাজের কত গভীরে, কত ব্যাপকভাবে প্রবেশ করেছে, আমি জানি না। সেটি এ দেশের মানুষের চিন্তা-ভাবনার জগৎকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে, সে সম্পর্কেও আমার কোনো ধারণা নেই (আমি অবশ্য পারিবারিকভাবে ধর্মের অনেক সুন্দর এবং মানবিক একটা ব্যাখ্যা শুনে বড় হয়েছি। আমি জেনে এসেছি, প্রত্যেকটা মানুষের ওপর খোদার একটা হক আছে এবং মানুষেরও একটা হক আছে। খোদার হক পালন না করলে, খোদার কাছে কান্নাকাটি করে মাফ চাইলে, খোদা চাইলে মাফ করে দিতেও পারেন। কিন্তু মানুষের হক পালন না করলে সেই মানুষটি যতক্ষণ পর্যন্ত মাফ না করবে, ততক্ষণ কোনো মুক্তি নেই! ধর্মের এই ব্যাখ্যাতে সারা জীবন পাপ করে শেষ বয়সে সব পাপকে পুণ্যে পাল্টে দেওয়া কিংবা পাপকে মুছে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই!)।
যারা রূপা মেয়েটির ওপর এই নৃশংস অত্যাচার করেছে, তাদের সবাইকে ধরা হয়েছে। তাদের বাবা-মায়েরাও তীব্র অপরাধবোধে ভুগছেন। বলেছেন, তাদের সত্যিকারের শাস্তি হওয়া উচিত। তাদের কী শাস্তি হবে আমরা জানি না। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে যাবে কি-না, সেটাও আমরা জানি না। ছাত্রলীগের ছেলেরা প্রকাশ্যে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তারপরও যারা ধরা পড়েছে তাদের ফাঁসির আদেশ মওকুফ হয়ে গেছে। কয়েক বছরের ভেতরেই তারা নিশ্চয়ই আরও বড় নেতা হিসেবে বের হয়ে আসবে! কাজেই রূপার হত্যাকারীদের ভবিষ্যৎ কী আমরা জানি না। জেলহাজতে বসে বসে তারা কী ভাবে, তাদের বিবেক দংশন করে কি-না কিংবা কোনো রকম অপরাধবোধে ভোগে কি-না, সে সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। কিছু অনুমানও করতে পারি না।
কিন্তু মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে রূপার মনে কী ভাবনা কাজ করেছিল, সেটি আমরা কল্পনা করতে পারি। কম বয়সী এই মেয়েটির বুকের ভেতর নিশ্চয়ই ছিল গভীর হতাশা এবং এই বিশাল পৃথিবীর ওপর তীব্র অভিমান। এই দেশ, এই রাষ্ট্রযন্ত্র, এই সমাজ কোনো কিছু তাকে রক্ষা করতে পারল না—কী ভয়ঙ্কর একটি কষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়ে তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হলো!
আমি সেই কষ্টটুকুর কথা কল্পনাও করতে পারি না।
৩.
আগস্ট মাসের আরও একটি মন খারাপ করা ঘটনা হচ্ছে আমাদের পাশের দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার। রোহিঙ্গা চরমপন্থিরা পুলিশ-মিলিটারি ক্যাম্প আক্রমণ করার পর তার প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গা মানুষদের ওপর। বাংলাদেশে পাঁচ লাখ থেকেও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে এক দশক থেকে বেশি সময় ধরে বসবাস করছে। গত কয়েকদিনে রোহিঙ্গাদের ওপর রীতিমতো গণহত্যা শুরু হওয়ার পর প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে ছুটে এসেছে। এটি অনেক বড় একটি ঘটনা। সারা পৃথিবীতে এটা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। আমরা জানি, এসব নিয়ে তোলপাড় হয়; কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু হয় না। রোহিঙ্গাদের নিয়েও হৈচৈ হবে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউ আর দায়িত্ব নেবে না। এই অসহায় মানুষগুলোকে অসহায়ভাবে এ দেশে মানবেতর জীবন কাটাতে হবে। একাত্তরের পর বিহারিরা পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে কত যুগ জেনেভা ক্যাম্পে কাটিয়ে দিয়েছে, মনে আছে?
এই রোহিঙ্গাদের মৃত্যুর উপত্যকায় ফিরিয়ে না দিয়ে মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে দেখে আমি একটুখানি শান্তি পাচ্ছি। আমি কিছুতেই ১৯৭১-এর ঘটনা ভুলতে পারি না। এ দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। যদি ভারতবর্ষ তখন আমাদের আশ্রয় না দিত, তাহলে আমাদের কী হতো? ১৯৭১ সালে আগরতলার মোট জনসংখ্যা থেকে বাংলাদেশের শরণার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল।
সেই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে মৃত্যুভয়ে কাতর অসহায় মানুষদের একটুখানি আশ্রয় দেওয়া অনেকখানি বড় কাজ। মানুষ হিসেবে অন্য মানুষদের জন্য সেটা যদি না করি, তাহলে কেমন করে হবে?
যে নোবেল কমিটি মিয়ানমারের জননেত্রী অং সান সু চিকে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দিয়েছিল, এখন তারা মাথা চাপড়াচ্ছে কি-না সেটি আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে। 

লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল;অধ্যাপক,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল l

Thursday, September 7, 2017

অর্ধকোটি হতদরিদ্র মানুষ নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় 

সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচির আওতা বাড়িয়েছে। অতিরিক্ত ১০ লাখ হতদরিদ্র মানুষকে আর্থিক সহায়তা দিতে তাদেরকে এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানোর ফলে সরকারের এই উচ্চাভিলাষী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুফলভোগীর সংখ্যা ৫৬ লাখ ৭০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ৪ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বাস্তবিকই এই সব হতদরিদ্র মানুষের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় সরকার বয়স্ক, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত নারী, প্রতিবন্ধী, দুস্থ ও দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারী, চা বাগানের শ্রমিক, হিজড়া, দলিত ও ভবঘুরে সম্প্রদায় এবং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
এছাড়াও দেশব্যাপী ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস), ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি), ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ), টেস্ট রিলিফ (টিআর), কাজের বিনিময়ে খাদ্য এবং প্রোগ্রাম ফর ফ্রেন্ডলী ফুড-এর মতো অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিও পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মাসে ১০ লাখ অতিদরিদ্র নারীকে ৩০ কিলোগ্রাম করে চাল এবং আট লাখ অতিদরিদ্র মা’কে মাতৃত্বকালীন ভাতা দিচ্ছে। এছাড়াও মন্ত্রণালয় ৩৫ উপজেলাতে দরিদ্র মানুষের মাঝে পুষ্টিকর চাল বিতরণ করছে।
সমাজ সেবা বিভাগের মাধ্যমে সরকার বয়স্ক ভাতা বাবদ ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই খাতে ৩৫ লাখ দরিদ্র মানুষ মাসে ৫শ’ টাকা করে পাচ্ছে। ১২ লাখ ৬৫ হাজার বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্ত নারীর জন্য ৭৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখান থেকে প্রতিটি নারী মাসে ৫০০টাকা করে ভাতা পাবেন। ৮ লাখ ২৫ হাজার প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য ৬৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এখান থেকে প্রত্যেকে ৬০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। এছাড়াও সরকার ৮০ হাজার শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখেছে।
এছাড়াও চলতি বছরের শেষ নাগাদ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সহায়তা প্রয়োজন- এমন সকল হতদরিদ্র মানুষকে সনাক্ত করার লক্ষ্যে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) এর আওতায় একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেইজ প্রস্তুত করা হবে।

Tuesday, September 5, 2017

কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে ফিরছেন?

--- ---
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ফের আওয়ামী লীগে ফিরে আসছেন অথবা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দিচ্ছে এমন আলোচনা শোনা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। হঠাৎ করে কাদের সিদ্দিকীর আওয়ামী লীগে ফিরে আসার গুঞ্জনের পেছনে কয়েকটি কারণও দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দীর্ঘ একযুগ পর গত ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন কাদের সিদ্দিকী। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরে শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রায় এক ঘন্টা কথা বলেন কাদের সিদ্দিকী। শেখ রেহানা এসময় উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী নাসরিন কাদের সিদ্দিকী, ছেলে দীপ সিদ্দিকী ও মেয়ে খুশি সিদ্দিকী। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য শেখ হাসিনা ও শেখ শেখ রেহানা কাদের সিদ্দিকীকে ধন্যবাদ জানান। এসময় আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেখানে। এছাড়া ১৬ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় সাংস্কৃতিকমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর যে কবিতাটি আবৃত্তি করেন তাতে একাধিকবার উচ্চারিত হয় কাদের সিদ্দিকীর নাম। শেখ হাসিনার সঙ্গে একযুগ পর কাদের সিদ্দিকীর সাক্ষাত এবং শোক দিবসের আলোচনাসভায় তার নাম বারবার উচ্চারিত হওয়ায় বিষয়টি আনন্দিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনাসহ সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে নেতিবাচক সমালোচনা করে ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার হয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। এরপর নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন তিনি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সমালোচনা করলেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেননি কাদের সিদ্দিকী। মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছিল টাঙ্গাইলের সিদ্দিকী পরিবার। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ, অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়া, দীর্ঘ দিন নির্বাসনে থাকা, ৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগ রাজনীতি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে সিদ্দিকী পরিবার।

রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে বঙ্গোপসাগরে আসছে ‘দ্য ফিনিক্স’

   

--- ---
বাংলাদেশ সীমান্তে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে আসছে দ্য মাইগ্র্যান্ট অফশোর এইড স্টেশন নামের সংস্থার পক্ষ থেকে ‘দ্য ফিনিক্স’ নামের উদ্ধারকারী জাহাজ।
রাখাইনের সেনা অভিযান থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ সীমান্তে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় জাহাজটি পাঠানো হয়েছে। ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে পাড়ি দেয়া অভিবাসীদের উদ্ধারেও নিয়োজিত দ্য মাইগ্র্যান্ট অফশোর এইড স্টেশন নামের এ সংস্থাটি।
গ্রিক পুরাণে বর্ণিত ফিনিক্স নামের এক ‘অগ্নিপাখি’র জীবনচক্র আবর্তিত হয় হাজার বছর ধরে। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈশ্বরের প্রতিনিধি প্রাণ কাড়তে আসলেই ফিনিক্স নিজের বাসা নিজেই আগুন জ্বালিয়ে সেখান থেকেই আবার পুনর্জন্ম নিত।
এবার যেন মৃত্যুপথযাত্রী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে সেই নবজীবন দিতে মিয়ানমার সীমান্তে আসছে তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, দ্য ফিনিক্স নামের উদ্ধারকারী জাহাজের মাধ্যমে এতদিন সংস্থাটি অন্তত ৪০ হাজার অভিবাসীকে সাগর থেকে উদ্ধার করেছে।
‘দ্য মাইগ্র্যান্ট অফশোর এইড স্টেশন’, ২০১৪ থেকে ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে অভিবাসীদের উদ্ধারের কাজ করে আসছে, এবার তারা তাদের কাজের স্থান পরিবর্তন করতে চলেছে।এতদিন তারা মূলত লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে পাড়ি দেয়া অভিবাসীদের বাঁচাতে কাজ করে এসেছে। মাল্টা থেকে সংস্থাটি তাদের উদ্ধারকারী জাহাজকে পাঠাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে। উদ্দেশ্য মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের বাঁচানো।
গত মাস থেকে আবারো মিয়ানমার সরকার রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা মুসলিম গোষ্ঠীর ওপর সেনা অভিযান শুরু করে। তার পরপরই পর গত দশদিনে জাতিসংঘের হিসেবে ৯০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এমন পরিসংখ্যানই সংগঠনটিকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে এনেছে বলে জানানো হয়।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের উদ্ধারকারী জাহাজটির প্রায় তিন সপ্তাহের মতো সময় লাগবে মিয়ানমারের কাছে পৌছতে। আর সেখান গিয়ে তারা রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে যতদূর সম্ভব মানবিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সাহায্য দিতে চায়। একইসাথে তাদের জন্যে অঞ্চলটিতে স্বচ্ছতা, সমর্থন ও জবাবদিহিতার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরিতেও ভূমিকা রাখতে চায়।

রাতারগুলে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ 

রাতালগুল আর পর্যটকের চাপ নিতে পারছে না। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল, বাগবাড়ি ও পূর্ব মহেশখেড় এলাকার ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের বন রাতারগুল। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এ বনে হিজল করচসহ ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও নয় প্রজাতির উভচর প্রাণীর রয়েছে। কিন্তু পর্যটকের অবাধ যাতায়াতের কারণে দিন দিন বনের প্রাণী রক্ষার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট (মিঠাপানির জলাবন) রাতারগুলে পর্যটকদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ। পর্যটকদের জন্য অনলাইনে টিকেটিং ও প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক পর্যটক প্রবেশ করতে পারবে এমন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, যা বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুনিরুল ইসলাম। এ ছাড়া সপ্তাহে দুই দিন বনে প্রবেশ বন্ধ রাখার কথাও বনবিভাগ ভাবছে বলে জানান তিনি।
মুনিরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের অবাধ যাতায়াতের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে রাতারগুলের জীববৈচিত্র্য। বন ছেড়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। এ অবস্থায় প্রাণীদের বসবাস নিরাপদ করতে বনের ওপর মানুষের চাপ কমানো জরুরি। এ জন্য বনে মানুষের ধারণ ক্ষমতা নির্ণয়ের কাজ চলছে। বনের আকার আয়তনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিন কতজন পটর্যটককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে তা বন গবেষণা ইনস্টিটিউট ঠিক করবে বলে জানান তিনি। তবে কবে নাগাদ এ পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে তা জানাননি বন কর্মকর্তা মনিরুল।
বনে বাফারজোন ও কোরজোন চিহ্নিত করে শুধু বাফারজোন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রেখে বন ও বন্য প্রাণীর আবাসস্থল কোরজোনে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে বলেও জানান সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুনিরুল। দীর্ঘ দিন ধরে রাতারগুলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় পর্যটক নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন সিলেটের পরিবেশবাদীরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, মানুষের অবাধ যাতায়াতের কারণে ধ্বংসের মুখে পড়েছিল দেশের একমাত্র মিঠাপানির বনটি। বন রক্ষায় পদক্ষেপ নিতেও এ বনকে পর্যটন কেন্দ্র না করতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। শেষ পর্যন্ত বনবিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে শুনে ভালো লাগছে।
সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সিলেটের প্রধান নির্বাহী আবদুল হাই আল হাদী বলেন, ‘রাতারগুলের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় বনবিভাগের এ উদ্যোগ প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এ বনের অস্তিত্ব রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।’