Friday, March 30, 2018

সাত বছরে আত্মসাৎ ৩০ হাজার কোটি টাকা

অন্য দেশে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নজিরবিহীন শাস্তির বিধানে
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাসদাকের সাবেক চেয়ারম্যান 
বার্নার্ড মেডফের শেয়ারবাজারে আর্থিক কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়, 
তাঁকে গ্রেপ্তার করে ২০০৯ সালের জুন মাসে বিচারে 
৭১ বয়সী এ ব্যবসায়ীকে ১৫০ বছর জেল দেওয়ার পাশাপাশি
১৭০ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়।
অথচ এ ধরনের অপরাধে শাস্তির নজির নেই বাংলাদেশে। 
গত সাত বছরে ছয়টি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিতে 
৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি চুরি বা আত্মসাৎ হয়েছে। 
এ অর্থ দিয়েই অনায়াসে একটি পদ্মা সেতু তৈরি করা যায়।
বড় এসব আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে 
বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ।
শুধু শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতেই 
লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হয়েছে। 
রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া বিভিন্ন ব্যাংকের
পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের একটি অংশ
ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতে সহযোগিতা করে 
নিজেরা লাভবান হয়েছেন।
এজন্য ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো এই প্রভাবশালীদের
রাজনৈতিকভাবে ছাড় দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
একটি কেলেঙ্কারিরও বিচার হয়নি।
সাজা পাননি অভিযুক্তদের কেউ। 
প্রাথমিক তদন্তের পর বছরের পর বছর মামলা চলছে,
অভিযুক্তদের কেউ জেলে আছেন,
কেউবা চিকিৎসার নামে হাসপাতালে, 
অনেকে জামিনও পেয়েছেন।
২০০৯ সনে দেশে দ্বিতীয়বারের মতো শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির 
তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের হিসাবে 
অন্তত: ১৫ হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন
সাধারণ বিনিয়োগকারীগন। 
এরপর ২০১২ সনের সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে 
অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। 
জনতা ব্যাংকের বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারিতে 
অর্থ আত্মসাৎ করা হয় ১১০০ কোটি টাকা। 
২০১৩ সনের বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে 
আত্মসাৎ করা হয় আরও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা,
এ ছাড়া বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণন কোম্পানি ডেসটিনির 
অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা,
এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের কারও সাজা হয়নি।
হল-মার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক(এমডি)
তানভীর মাহমুদ জেলে থাকলেও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান 
জেসমিন ইসলাম জামিনে আছেন। 
ডেসটিনির সভাপতি রফিকুল আমীন আটক হলেও 
অসুস্থতার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে আছেন। 
আর বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু
এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই?
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান,
অপ্রতুল জামানতের বিপরীতে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে 
ঋণ মঞ্জুরিতে সহযোগিতা দিয়ে
টাকা হাতিয়ে রূপালী ব্যাংক থেকে বেনিটেক্স লিমিটেড,
মাদার টেক্সটাইল মিলস ও মাদারীপুর স্পিনিং মিলস 
নিয়েছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। 
আবার বহুতল ভবন নির্মাণের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে 
অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৩শ কোটি টাকা ঋণ নেয় মুন গ্রুপ। 
সবশেষে লাইসেন্স পাওয়া ফারমার্স ব্যাংকও 
অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ৪শ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে।
সবশেষ আর্থিক কেলেঙ্কারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি
৮ কোটি ১০ লাখ ডলার,টাকার অঙ্কে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। 
স্বয়ংক্রিয় লেনদেন ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ বা হ্যাক করে 
এই রিজার্ভ চুরির ঘটনা এখনো বিশ্বজুড়ে অন্যতম আলোচিত।
অর্থের পরিমাণ তুলনামূলক কম হলেও 
সবচেয়ে বেশি তোলপাড় হয়েছে রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়েই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির কারণেই 
দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন 
সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, 
সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দুই ডেপুটি গভর্নরকেও।
তবে যারা অপরাধী,তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি।
শুধু বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে বরখাস্ত,বদলি নয়; 
অপরাধের দায়ের শাস্তি দিতে হবে। 
এ ছাড়া সৎ,দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের 
সঠিক জায়গায় বসাতে হবে।
রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে 
সদস্য নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের যোগ্যতা নিয়ে 
যে প্রশ্ন,সন্দেহ রয়েছে,তা নিরোসনে 
ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে 
বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্ত অবস্থানে নিতে হবে।
ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ থাকলে
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলতে পারতেন না,
তিন বা চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি বড় কিছু নয়!! 

Thursday, March 15, 2018

বিমানবন্দর নয় এ যেন মৃত্যুফাঁদ

ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা বাংলাদেশ, নেপালসহ বিশ্বব্যাপী আলোচিত ও সমালোচিত হচ্ছে। শোকাবহ করেছে সর্বস্তরের মানুষকে। শোক জানিয়েছে জাতিসংঘ, বাংলাদেশ, নেপাল, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংগঠন। ঢাকা থেকে কেবিন ক্রুসহ ৭১ জন যাত্রী নিয়ে নেপালের উদ্দেশে আকাশে উড়েছিল বিমানটি। একপক্ষের মতে, ১২ মার্চ দুপুর প্রায় ২টায় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন এয়ারপোর্টের কন্ট্রোল রুমের ভুল নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তের কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। পাইলটসহ নিহত হন ৫১ জন।
হিমালয়কন্যা নেপালের এই ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে বিমান দুর্ঘটনা এই প্রথম নয়। ভয়ংকর অতীত আজো ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে আছে। এ যেন এক মৃত্যুফাঁদ। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর পাহাড়ের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা এই বিমানবন্দর বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী। ১৯৫৬ সাল থেকে ১২ মার্চ ২০১৮ দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত মোট ১০টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে। কন্ট্রোল রুমের ভুল নির্দেশনা ও বৈরী আবহাওয়া প্রায় সব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরই পাইলটকেই দোষারোপ করেন।
৩১ জুলাই ১৯৯২ সালে থাই এয়ারওয়েজের একটি এয়ারবাস অবতরণ করার জন্য বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১১৩ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন। একই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি এয়ারলাইনস বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হন ১৬৭ জন। ৭ জুলাই ১৯৯৯ সালে লুফ?টহানজা কার্গো বোয়িং ৭২৭ আকাশে ওড়ার পাঁচ মিনিট পড়ে চম্পাদেবী পর্বতে বিধ্বস্ত হয়। ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালে নিকন এয়ার ফ্লাইট ১২৮ পোখারা থেকে কাঠমান্ডু যাওয়ার সময় বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ১০ যাত্রী এবং ৫ জন ক্রু সবাই নিহত হন এই দুর্ঘটনায়।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে সীতা এয়ার ফ্লাইটের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৯ জন। ২০১৬ সালে নেপালের বিমান ভেঙে মৃত্যু হয় ১৮ জন যাত্রীর। ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তের আগ পর্যন্ত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে টারা এয়ারল্যান্স বিমান দুর্ঘটনায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
সর্বশেষ ১২ মার্চ বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান ইউএস কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট সংলগ্ন ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় কেবিন ক্রু, পাইলটসহ নিহত হন ৫১ জন। যার বেশির ভাগই বাংলাদেশি। ক্রমাগত বিমান দুর্ঘটনা নেপাল এয়ারলাইনসকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কন্ট্রোল রুমে থাকা কর্মকর্তাদের উদাসীনতা কিংবা সেখানকার আবহাওয়াগত সমস্যার কারণেই দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। নেপাল গণমাধ্যম এ দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য কমিটি গঠন করেছে। শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে দেশটির সরকার।
নেপাল সরকারের প্রতি আহ্বান, কেবল শোক ও দুঃখ প্রকাশের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে এয়ারপোর্টটির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে এখন মনোযোগী হওয়ার সময় এসেছে। বিশ্বের শোকার্ত মানুষের আর্তির দিকে তাকিয়ে নেপাল সরকার নিশ্চয়ই সে আর্তির প্রতি মনোযোগী হবেন—এটাই প্রত্যাশা।

Sunday, March 4, 2018


বিএনপির নতুন সরকার পদ্ধতির কাঠামো
সহায়ক সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় নির্বাচন দাবির পাশাপাশি নতুন সরকার পদ্ধতির কাঠামো অনেকটা মিয়ানমার সরকার ব্যবস্থার আদলে প্রতিনিয়ত চলছে যাচাই-বাছাই।তাতে কখনো নতুন কিছু যুক্ত হচ্ছে,কখনো কিছু বাদ পড়ছে।যতদিন এটি বাস্তবায়ন না হবে ততদিন বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সহায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনও চালিয়ে যাবে। এরমধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ১২ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবং ১০ মার্চ খুলনায় সমাবেশ করবে।পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও।খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৮টি মামলা রয়েছে,এরমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা ৫টি মামলার মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্র্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদাকে ৫ বছরের এবং তার জ্যেষ্ঠপুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য আসামির ১০ বছরের জেল দিয়েছেন আদালত।
সহায়ক সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের দাবির পাশাপাশি একটি বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে বিএনপি নেতাদের মুখে মুখে। আর সেই বিকল্প প্রস্তাবটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকার গঠন করে পরবর্তী ১০ বছর বাংলাদেশ শাসন। তবে সেটি অবশ্যই হবে সংবিধান সংশোধন করার পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে।নির্বাচনের আগে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য (সমান) আনা হবে।প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির পদ থাকবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। অন্যান্য মন্ত্রীও আওয়ামী লীগ বিএনপির মধ্যে সমানভাবে বণ্টন হবে। আসন সংখ্যা অনুযায়ী মন্ত্রীত্বের ভাগ পাবে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও। অর্থাৎ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন যে দলই পাক না কেন সরকার গঠন হবে প্রধান দুই দলের নেতৃত্বেই।তবে এখনও প্রস্তাবটি প্রাথমিক পর্যায়েই আছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে না কি এ ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়েছে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো। বিশেষ করে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।তিনটি দেশই চায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় মিলেই বাংলাদেশ শাসন করুক।তাতে উভয় দলের রাজনৈতিক সহিংসতা কমবে এবং দেশ হবে সমৃদ্ধ।বিএনপি নেতারা বলেন,তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার এই প্রস্তাবে আপত্তি নেই।এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি থাকলেই তা সম্ভব হবে,নইলে নয়। তারা বলেন, সংসদীয় এ পদ্ধতি কেবল ১০ বছরের জন্য এবং এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে ক্ষতি নেই। নেতারা বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রগুলো নতুন এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে দুই দলের শীর্ষ পর্যায়েই যোগাযোগ করছে। নতুন প্রস্তাবে আওয়ামী লীগ সম্মত হলেই খালেদা জিয়ার জামিন হবে এমন কি মামলা থেকেও খালাস পাওয়া সহজ হয়ে যাবে বলে তাদের প্রত্যাশা।