Monday, October 30, 2017

বাসের রাস্তাতেই ‘স্মার্ট ট্রেন’ চলবে

বাসের রাস্তাতেই চলতে সক্ষম হাই-টেক স্মার্ট ট্রেন তৈরি করা হয়েছে চীনে। চীনের জুঝৌ প্রদেশে ট্রায়াল রান করেও দেখা হয়েছে এর। এই নতুন যাতায়াত ব্যবস্থা বাসের থেকে বেশি কার্যকরী এবং ট্রাম ব্যবস্থার চেয়ে খরচ অনেক কম। আগামী বসন্ত থেকেই চীনের রাস্তায় চলতে শুরু করবে নতুন এই ট্র্যাকহীন রেল। ভবিষ্যতে ট্রেনটি চালকহীন অবস্থাতেই চলবে বলেও জানানো হয়েছে।
চীনা শহর জুঝৌতে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে ভবিষ্যতের অত্যাধুনিক ট্রেন। এটির ট্র্যাক নেই। নির্দিষ্টি লাইনে যাতায়াত করে না। নিজের মতো করে জায়গা দিয়ে যেতে পারে। জুঝৌয়ের ব্যস্ত রাস্তায় এই ট্রেন চালানো হয়েছে। ব্যস্ত রাস্তায় লাইনহীন ট্রেন দেখে অবাক সবাই। দেখতে অনেকটা ট্রামের মতো হলেও এর কোনো নির্দিষ্ট ট্র্যাক নেই। নিজের মতো করে রাস্তায় চলছে।
নতুন এই স্মার্ট ট্রেনে একসঙ্গে ৩০০ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। এই ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। শহরের মধ্যে এই গতি যথেষ্টই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ছাড়াও নতুন এই স্মার্ট ট্রেনটিতে সেন্সরের মাধ্যমে থামবে, চালু হবে। যার ফলে যাতায়াতকে সহজ করার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী পরিবহনে খরচও কমবে বলে জানিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি।

Saturday, October 28, 2017

রোহিঙ্গাদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ  

নিরাপত্তা ঝুঁকির শঙ্কা 


শুরুতেই মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ওপর সতর্ক নজর রাখছে বাংলাদেশ। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মানবিক সহায়তার পাশাপাশি এসব শরণার্থীকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের অধিকার লড়াইয়ে থাকার দাবিদার আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ (এআরএসএ) মিয়ানমারের সশস্ত্র গেরিলা সদস্যরা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে নজর রাখা হয়েছে। তেমনি এসব রোহিঙ্গা যাতে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে ও তাদের উসকে দিয়ে বা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে কেউ কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্ক ব্যবস্থা। এজন্য ত্রাণ দিতে আসা এনজিওসহ বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের ওপর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। নিরাপত্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই গঠন করেছে রোহিঙ্গা সেল। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এ সেল কাজ করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও বিজিবি সদর দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এমন অবস্থার মধ্যে গত শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের হামলায় চার বাংলাদেশি আহত ও আটক দুই রোহিঙ্গার কাছে অস্ত্র পাওয়া গেছে। গতকাল কক্সবাজারের রামুতে এক রোহিঙ্গা যুবকের হামলায় এক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই রোহিঙ্গা যুবক তার ফুফুকে সঙ্গে নিয়ে দেড় মাস আগে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এছাড়া আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আরো কিছু বিচ্ছিন্ন বিশৃঙ্খল ঘটনায় দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় ঝুঁকির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আটক দুই রোহিঙ্গার কাছে থাকা একনলা বন্দুক, এলজি, চারটি কার্তুজ ও দুটি কার্তুজের খোলা খোসা কোথা থেকে এলো, কে বা কারা দিল—তা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসনও। আটক রোহিঙ্গারা দুজনেই শিবিরে নতুন এসেছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাইলাউ মারমা।
এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের রোহিঙ্গা গবেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, এত সতর্ক অবস্থা ও কঠোর নজরদারির মধ্যেও রোহিঙ্গাদের হাতে অস্ত্র আসার বিষয়টি ভীষণ উদ্বেগের। এর একমাত্র সমাধান যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। কিন্তু অবস্থা যেখানে দাঁড়িয়েছে, মনে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সময় লাগবে। সুতরাং এখনই সরকারকে রোহিঙ্গাদের ওপর আরো বেশি নজরদারি বাড়াতে হবে। ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ পদ্ধতিতে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্যাম্প করে সেখানে রাখতে হবে। ক্যাম্পে সতর্ক পাহারা বসাতে হবে যাতে কেউ সহজেই সেখানে ঢুকতে ও সেখান থেকে বেরুতে না পারে। বাউন্ডারি দিতে হবে। প্রত্যেক ক্যাম্পের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে আলাদা কমিটি করতে হবে। আশ্রিত সব রোহিঙ্গার বায়োমেট্রিক নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে খুব সতর্কতার সঙ্গে এ ইস্যুকে মোকাবিলা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। ‘নতুবা এসব রোহিঙ্গা ভবিষ্যতে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে’ বলেও মন্তব্য করেন তারা।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর আরো সতর্ক ও কঠোর নজর দেওয়া দরকার। গত দুই মাসে নতুন রোহিঙ্গারা এলেও রোহিঙ্গা সংকট বহু বছরের। এসব রোহিঙ্গা দুই ধরনের সংকটে রয়েছে। মিয়ানমারে নির্যাতন, বাংলাদেশে আশ্রিত। এরা বহু বছরের নির্যাতিত। চোখের সামনে স্বজনের নির্মম মৃত্যু ও নির্যাতন দেখেছে। বাড়িঘর পুড়তে দেখেছে। নিরুপায় হয়ে নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে। সুতরাং এদের ভেতর এক ধরনের ক্ষোভ থাকবেই। সেখান থেকে তারা এক দিন প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টাও করবে। এসব রোহিঙ্গা এই দেশ থেকে মিয়ানমারে গোপন হামলা চালালে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। সীমান্তে শান্তি বিঘিœত হবে। উত্তেজনা দেখা দেবে। তখন এসব রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। সুতরাং সেদিকটা এখনই ভাবা দরকার।
অবশ্য আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিএমপি কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে তাদের জঙ্গিবাদের দিকে টানতে না পারে সে ব্যাপারে নজরদারি রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সবাই আমরা সতর্ক রয়েছি। মিয়ানমারে যে মানবিক বিপর্যয় চলছে তার সুযোগ নিয়ে কোনো মহল যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।’
এমন পরিস্থিতিতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে-জানতে কথা হয় দেশের কয়েকজন সাবেক কূটনীতিক, গবেষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকের সঙ্গে। কক্সবাজারে বালুখালী ক্যাম্পে দুই দিন থাকার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ক্যাম্পে দেখেছি উঠতি বয়সী রোহিঙ্গা ছেলেরা ভীষণ বেপরোয়া, উচ্ছৃঙ্খল ও সাহসী। তারা যা কিছু করতে পারে। স্থানীয় লোকজন আতঙ্কে আছে। এভাবে চলতে থাকলে সামাজিক অপরাধের পাশাপাশি দুর্বৃত্তায়ন বাড়বে। সুতরাং আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পে রাখতে হবে। ক্যাম্পে সতর্ক নজর রাখতে হবে যাতে কেউ সহজেই ঢুকতে বা বেরুতে না পারে। কঠিন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তা না হলে বহু ধরনের অপরাধ সৃষ্টি হতে পারে। তারা একসময় টিকে থাকার কারণেই স্থানীয়দের সঙ্গে নানা ধরনের দ্বন্দ্বে লিপ্ত হবে। জমি দখল করবে। গরু-বাছুর কেড়ে নেবে। এ রকম অভিযোগ ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে।
এই রোহিঙ্গাদের নানা গোষ্ঠী ব্যবহার করতে পারে উল্লেখ করে এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, উগ্র মৌলবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠী বিপদের সুযোগ নিয়ে জিহাদি তন্ত্রে নেওয়ার চেষ্টা করবে। বিপথে নিতে উদ্বুদ্ধ করবে। তাদের তৎপরতা ও অপতৎপরতা বন্ধ করতে না পারলে নানামুখী বিপদ দেখা দেবে। স্থানীয়দের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দিতে পারে। রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে পারেন। কারণ তাদের উসকানি বা ইন্ধনদাতার অভাব নেই। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ঝুঁকি তো বটেই, বহুমুখী বিপদের আশঙ্কাও রয়েছে। সুতরাং জরুরি ভিত্তিতে শতভাগ নিবন্ধন করে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। যে কয়েকটা ক্যাম্প প্রয়োজন সেখানে আলাদা করে রাখতে হবে। প্রত্যেক ক্যাম্পের জন্য আলাদা কমিটি করতে হবে। ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল’ পদ্ধতিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর (অব.) ইমদাদুল ইসলাম বলেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, যত দিন না তাদের মিয়ানমারের ফেরত পাঠানো যায়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমারকে ফেরত নিতে বাধ্য করতে হবে। এ ছাড়া এ সংকটের আর কোনো সমাধান নেই। এই কূটনীতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, সরকার যথেষ্ট সতর্ক। রোহিঙ্গাদের ওপর কড়া নজরদারিও রেখেছে। বড় কথা হলো সরকার এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে কোনো উসকানি, উৎসাহ বা ইন্ধন দিচ্ছে না। কারণ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সরকার উত্তেজনা চায় না। শান্তিপূর্ণভাবেই সমাধান চায়। আশ্রিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে জড়াক, তা সরকার চায় না ও সে ব্যাপারে কোনো ইন্ধনও দিচ্ছে না। এর উদাহরণ হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারে গিয়ে জিরো টলারেন্স-সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারকে বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের কোনো ধরনের ইন্ধন দিচ্ছে না। তারা যেন দ্রুত ফিরিয়ে নেয়। নতুবা ইন্ধন দেওয়ার লোকের অভাব হবে না।
এই বিশ্লেষক বলেন, ভূ-প্রাকৃতিক কৌশলগত কারণেই নানা মহল নিজ নিজ স্বার্থে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের চেষ্টা চালাতে পারে। জাতিসংঘ আগেই বলেছে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দেরি হলে আরাকান রাজ্য মিলিট্যান্সির জন্য উর্বর ভূমি হবে। উগ্রবাদ জঙ্গিবাদ জন্ম নিতে পারে। রোহিঙ্গারা ব্যবহৃত হতে পারেন। কারণ ইয়ং জেনারেশনের মধ্যে তাদের ওপর নির্যাতনের কারণে এক ধরনের উগ্র চেতনাবোধের জন্ম নেবে। তারা নির্যাতিত। চোখের সামনে স্বজনদের হত্যা হতে দেখেছেন। ঘরবাড়ি পুড়েছে। ভেতরে এক ধরনের ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। সেখানে ইন্ধন দেওয়ার লোকের অভাব হবে না।
‘তবে সরকার যতই সতর্ক বা নিরাপত্তাব্যবস্থা নেক না কেন-ভূকৌশলগত স্বার্থ যাদের আছে, তারা এই রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের চেষ্টা করবেই। যদি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে দেরি হয়, তাহলে এসব আশ্রিত রোহিঙ্গার মধ্যে এক ধরনের মিয়ানমারের বিরুদ্ধে উগ্রচেতনাবোধ আসবে। কেউ না কেউ তাদের উসকে দেবে। তারা সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেবে। বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাঝুঁকির মুখে পড়বে। সুতরাং এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে হবে। সেটাই সমস্যার সমাধান’ উল্লেখ করেন মেজর (অব.) ইমদাদুল ইসলাম। তবে তিনি এ কথাও বলেন, রোহিঙ্গাদের কাছে এখন অস্ত্র থাকার কথা নয়। অস্ত্র নিয়ে প্রবেশও কঠিন। সুতরাং বালুখালীতে যে অস্ত্র পাওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটি কোনো পক্ষের কোনো চক্রান্ত কি না-সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শরণার্থী গবেষক জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার দীর্ঘদিনের জন্য আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা ইতোমধ্যেই দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে এই রোহিঙ্গাদের জড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ইয়াবাসহ সমুদ্রপথে আসা মাদকদ্রব্য পাচার বেড়েছে। এমনও হতে পারে, এই রোহিঙ্গারাই এই দেশে থেকে এক দিন মিয়ানমারে, এমনকি ভারতেও হামলা চালাতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধান করতেই হবে।
লেখক: প্রতীক ইজাজ  

আশ্বাসেই বিশ্বাস 

আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস করেই চলতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আশ্বাসটা দিচ্ছে কে? জবাবে বলতে হয়, ‘মিয়ানমার সরকার’। জবাবকে ‘অর্ধসত্য’ বলা যেতে পারে, পুরোটা নয়। কেননা, পৃথিবীতে মিয়ানমার সরকার সম্ভবত একমাত্র ব্যতিক্রমী সরকার, যেখানে পার্লামেন্টের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে সীমিত। এখানে সেনাবাহিনীই সর্বক্ষমতার উৎস।
গত ১২ অক্টোবর অং সান সু চি ও সে দেশের সেনাপ্রধান রোহিঙ্গা ইস্যুতে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। সেদিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সু চি বলেছেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কিন্তু সেনাপ্রধান ছিলেন বিপরীত মেরুতে। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের বাসিন্দা নয়। এমনকি রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের জনগোষ্ঠীও নয়। তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যাকে অতিরঞ্জিত বলে অভিহিত করেছেন। এমনকি রোহিঙ্গাদের পরিচয়কে অস্বীকার করে বলেছেন, ‘ওরা বাঙালি’।
প্রথম দফা বৈঠকের তিন সপ্তাহ পর গত মঙ্গল ও বুধবার বৈঠকে একইভাবে আশ্বাস পাওয়া গেলেও সীমান্তের ওপার থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসা থেমে থাকেনি। তবে একই সময়ে অনুষ্ঠিত দুই পক্ষের বৈঠকে সু চি বলেছেন, বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নিতে তার সরকার কাজ শুরু করেছে। কফি আনান কমিশন বাস্তবায়নেও তার সরকার কাজ করছে। এ ধরনের আশ্বাস একবার নয়, একাধিকবার পাওয়া গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সু চির বক্তব্যের বিপরীত।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রমতে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিলেও মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করেননি। দুই দেশের সমানসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে এ কমিটি গঠন হবে বলা হলেও প্রতিনিধিদের মধ্যে কারা থাকবেন, সে ব্যাপারে কিছুই বলেনি মিয়ানমার। মতবিরোধ দেখা দিয়েছে কফি আনান কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়ন নিয়েও। আসাদুজ্জামান খান রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি জানালে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, মিয়ানমারে কোনো নির্যাতন হচ্ছে না। রোহিঙ্গারা নিজেরাই চলে যাচ্ছে। আসাদুজ্জামান খান রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে চাইলে তাতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি সীমান্তে মাইন পুঁতে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, এ কাজ তারা করেনি। অন্য কেউ করেছে।
রোহিঙ্গা নির্যাতন প্রশ্নে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়লেও মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী তাদের রোহিঙ্গা নির্মূল অভিযান থেকে এক পাও পিছিয়ে আসেনি। যদিও মুখে তারা আশ্বাসের বাণী প্রচার অব্যাহত রেখেছে। যে অশ্বাসের ওপর ভরসা করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। আর এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এ বাস্তবতাকে সামনে রেখে আমাদের ভাবনাকে ঢেলে সাজাতে হবে।

Friday, October 27, 2017

কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা

স্পেন থেকে পুরোপুরি পৃথক হতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে কাতালোনিয়া। শুক্রবার কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে স্বাধীনতা ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাহয় যখন কাতালোনিয়ায় প্রত্যক্ষ শাসন জারির কথা বলছিলেন, তার কিছুক্ষণের মধ্যেই কাতালান পার্লামেন্ট স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে রায় দিল। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কাতালোনিয়া আঞ্চলিক পার্লামেন্টে স্বাধীনতার পক্ষে ৭০ ভাগ ভোট পড়ে। বিপক্ষে পড়ে ১০ ভোট। পার্লামেন্টের বিরোধী দল এই ভোট বর্জন করে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী রাহয় বলেন, গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে কাতালোনিয়ায় প্রত্যক্ষ শাসন চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এর আগে কেন্দ্রের বাধা উপেক্ষা করে ১ অক্টোবর গণভোটের আয়োজন করা হয় কাতালোনিয়ায়। এতে ৯০ শতাংশ ভোটার কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেন। স্পেন সরকার এই গণভোটকে বেআইনি ও অসাংবিধানিক হিসেবে অভিহিত করে এসেছে।
গত ২১ অক্টোবর কাতালোনিয়া সরকারকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী সরকার’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্পেন সরকার। আঞ্চলিক সরকার যাতে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে না পরে, সে লক্ষ্যে স্পেনের মন্ত্রিসভা ওই সরকার বাতিলের পক্ষে মত দেয়। তখন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নের আঞ্চলিক নেতা কার্লোস পুজেমন একপক্ষীয় এবং আইনবহির্ভূতভাবে গণভোটের আয়োজন করেছিলেন। এর পাশাপাশি ওই অঞ্চলে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় কাতালোনিয়া আঞ্চলিক সরকারের প্রধান কার্লোস পুজেমন এ সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক অভ্যুত্থান ও স্পেনের সাবেক স্বৈরাচার ফ্রাঙ্কো-পরবর্তী সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক অনাচার বলে উল্লেখ করেন।
স্পেনের সংবিধানে কোনো বিদ্রোহী অঞ্চলের কর্তৃত্ব নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে কেন্দ্রকে। এর পর থেকেই কাতালোনিয়ায় প্রত্যক্ষ শাসন চালু করার কথা ভাবছিল স্পেনের সরকার। স্পেনের বিত্তশালী অঞ্চল কাতালোনিয়া। জনসংখ্যা ৭৫ লাখ। এর রাজধানী বার্সেলোনা। অঞ্চলটির নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে। পাঁচ বছর ধরেই স্বাধীনতার কথা উঠছে। তবে ২০১৫ সালে কাতালোনিয়ার প্রাদেশিক পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান সেখানকার স্বাধীনতাকামীরা। নির্বাচনের ওই ফলের মধ্য দিয়ে স্পেন থেকে পৃথক হয়ে নতুন রাষ্ট্র গঠনের পথে এগিয়ে যায় কাতালোনিয়া।

Monday, October 23, 2017

‘মানুষকে পশুর মতো মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে সু চি’


মিয়ানমারে গণহত্যা ও সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত নাগরিক কমিশন’র সদস্যরা বলেছেন- অং সান সু চি’র ভূমিকা মানবতাবিরোধী। সু চি মানুষকে পশুর মতো জবাই করে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছে। জীব-জন্তু ও জানোয়ারদের যেভাবে ব্যবহার করা হয়, তার চেয়েও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে তারা। আসলে তারাই জানে কেন এই মানুষগুলোর উপর নির্মম অত্যাচার করেছে। এই রকম নিষ্ঠুর অত্যাচার পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই হয়েছে। নাগরিক কমিশন দুই দিন ধরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে রোববার সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কমিশনের সদস্যসচিব ও সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তিনি বলেন, আমরা চাই মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে আনান কমিশনের রিপোর্ট দেয়ার পরও বিশ্ব দরবারে আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে ৫ দফা দাবি পেশ করেছেন, সেই পাঁচ দফা দাবি যেন বাস্তবায়িত হয়। এবং সমস্যা সমাধানে আমরাও চেষ্টা করে যাবো। এক দেশের বিপদ এভাবে আমাদের বহন করা সম্ভব নয়। আমরা বিশ্ববাসীর মাধ্যমে অনুরোধ জানাবো মিয়ানমার যেন তাদের নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ফিরিয়ে নেয়। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বার্মায় গণহত্যা এবং সন্ত্রাস দমনে এই নাগরিক কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনের ৫১ জন সদস্য রয়েছে। কমিশনের সচিবালয়ে রয়েছে ১০১ জন সদস্য। এটি একান্ত তদন্ত কমিশন। এই কমিশন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রিত ১০ হাজার রোহিঙ্গাদের জবানবন্দি রেকর্ড করবে।পরে এই জবানবন্দী, জাতীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার বক্তব্য, বাংলাদেশ ও বার্মার বিভিন্ন সরকারি দলিলপত্রের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরী করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন- কমিশনের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুল হুদা, বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল আনোয়ার, মেজর জেনারেল(অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী সিকদার, মমতাজ লতিফ, সমাজকর্মী ও মানবাধিকার কর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস। এছাড়াও শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী ছেলে আসীফ মুনীর, শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী চম্পা, মানবাধিকার কর্মী আরমা দত্ত, ব্যারিস্টার বিব বড়ুয়া, ব্যারিস্টার তাপস কুমার বল, শহীদ পরিবারের সন্তান তৌহিদ রেজা নূরসহ নাগরিক কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৮ লাখ ৮৯ হাজার রোহিঙ্গা : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মতে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে মোট ৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ জন। মিয়ানমার সরকারের দাবি, গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যের অন্তত ৩০টি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। এরপর সেখানে সেনা অভিযান শুরু হলে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের পথে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জায়গায় হাজারো রোহিঙ্গা আটকা পড়ে। তবে সুযোগ বুঝে তারা এখন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সহিংসতার পরে নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৫ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গা। রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে ৩ লাখ ৭ হাজার ৫০০ জন রোহিঙ্গা। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ জন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
হাজার মাইল পথ পায়ে হেঁটে রোহিঙ্গারা টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। অনেক পথ হাঁটার কারণে অনেকে এখন নানা রোগে ভুগছেন। ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থার জন্য সহায়তা করছে। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও ওষুধ সরবরাহও করছে তারা। এখন রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ইউএনএইচসিআর-এর ১৮২ জন স্টাফ কাজ করছে।
শর্ত দিয়ে হলেও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবি যুক্তরাষ্ট্রের : যুক্তরাষ্ট্র চায়, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ফেরাতে মিয়ানমার শর্ত নির্ধারণ করুক। রাখাইনে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সহিংসতা ছড়াতে ‘মানবিক বিপর্যয়’কে যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেদিক বিবেচনা করেই এই শর্ত নির্ধারণের কথা বলছে দেশটি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্যাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন। ভারতীয় সরকারি সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শর্ত আরোপ করে হলেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানিয়ে দেন তিনি। গত আগস্টের শেষের দিকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দেশটির সেনাবাহিনীর কঠোর অভিযানে অন্তত ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে। মিয়ানমার এই রোহিঙ্গাদের দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘু হিসাবে স্বীকার করে না। এর পরিবর্তে নেইপিদো বলছে, তারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী; যারা রাখাইনে বসবাস করছে।
‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ও নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়। কারণ সেখানে এমন মানুষ আছে যারা এই মানবিক বিপর্যয়কে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর উপায় হিসাবে ব্যবহার করতে পারে; তারপর সহিংসতা উসকে দিতে পারে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সুতরাং শরণার্থীদের ফেরাতে শর্ত নির্ধারণ করাটা মিয়ানমারের জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ ভয়াবহ মানবিক ভোগান্তি লাঘবে এবং শিশুদের শিক্ষা ও তাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করার জন্য সব ব্যবস্থা করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে, রোববার যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া রাখাইন সংকটে জীবন-রক্ষাকারী জরুরি সহায়তার জন্য প্রায় ৪ কোটি মার্কিন ডলার সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, সর্বশেষ এ অর্থসহ চলতি বছরে মিয়ানমারের উদ্বাস্তুদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা ১০৪ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তা রাখাইন সংকটে মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, আমরা মারাত্মক এ মানবিক সংকটে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করছি। মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছাতে যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশ সরকারের ধারাবাহিক পদক্ষেপের প্রতি সম্মান জানাচ্ছি। রাখাইন প্রদেশে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারের অঙ্গীকার শিগগিরই বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফেরার অনুমতি দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
রোহিঙ্গা সংকটের আলোচনায় মিয়ানমার গেলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যে ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে মিয়ানমারের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ১টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে মিয়ানমারের উদ্দেশে প্রতিনিধিদলটি রওনা করে বলে বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পরিদর্শক ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন। এ সফরে রোহিঙ্গা সংকট অবসানের বিষয়ে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে আলোচনা করার কথা রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিজিবির মহাপরিচালক, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই দলে থাকছেন।
মন্ত্রীর সফরে সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু। আর রাখাইন থেকে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার মধ্যে এ সফরে তাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা শুরুর পর গত দুমাসে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার মধ্যে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিশেষ দূত দেশটির দপ্তরবিষয়কমন্ত্রী উ কিয়া তিন্ত সোয়ে গত ১ অক্টোবর ঢাকায় এসেছিলেন।
বেসামরিক প্রশাসনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সমাধান চান সু চি : রাখাইন সংকট নিরসনে বেসামরিক প্রশাসনের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সমাধান চান মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। অন্তত এমনটাই মনে করছেন এ অঞ্চলে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সাবেক বার্তা সম্পাদক মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ ল্যারি জাগান। গতকাল সোমবার মিয়ানমার টাইমসে প্রকাশিত নিজের কলামেই এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন জাগান।
কলামে তিনি লিখেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংকট নিরসনে সরকারের নতুন কৌশলগত পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রীয় পরামর্শক অং সান সু চি। এর পরিকল্পনার আওতায় ‘ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ ফর হিউম্যানিটেরিয়োন অ্যাসিস্ট্যান্স, রিসেটেলমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে ইন রাখাইন স্টেট’ নামে বেসামরিক নেতৃত্বাধীন একটি সংস্থা গঠন করা হয়েছে, যে সংস্থাকে সহায়তা দেবে বিদেশিরা। এই সংস্থা শরণার্থীদের ত্রাণ সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি তাদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের বিষয়টি দেখভাল করবে। গত ১২ অক্টোবর জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে এ রূপরেখা ঘোষণা করেন সু চি।
জাগানের মতে, রাখাইন সংকট নিরসনে গত ২৪ আগস্ট দেওয়া কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনকে ঘিরে সরকারের দীর্ঘ-প্রতিশ্রুত রোডম্যাপ অবশেষে প্রকাশ করলেন সু চি। তিনি যে সংস্থা গঠনের কথা বলেছেন সেই কমিটি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন তদারকি করবে, যা নেতৃত্বে থাকবে সু চি নিজেই। কলামে তিনি লিখেছেন, রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে হামলা পর সেখানে নতুন করে সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে গত আট সপ্তাহে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই পরিস্থিতিকে জাতিসংঘ বর্ণনা করেছে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট হিসেবে।
জাগানের মতে, ছয় সপ্তাহের বেশি আগে কফি আনান তার প্রতিবেদন দাখিল করার পর পশ্চিম রাখাইনের সংঘাত-জর্জরিত এলাকার সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও অবিশ্বাসের মূল কারণ দূর করা এবং সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করছে মিয়ানমার সরকার।
কলামে উল্লেখ করা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীরা তাদের দুর্দশার জন্য দেশটির সেনাবাহিনীকে দায়ী করে বলছে, সেনাবাহিনীই ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দিয়ে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করেছে এবং রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চলাকালে শত শত মানুষের মৃত্যুর জন্য সেনাবাহিনীই দায়ী। এছাড়া পালিয়ে যাওয়া অনেক মুসলমান নারীর অভিযোগ মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা তাদের ধর্ষণ করেছে। তবে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সু চি অত্যন্ত সচেতনভাবে সেনাবাহিনীর সমালোচনা, এমনকি সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উল্লেখ করা থেকেও বিরত ছিলেন।
জাগান লিখেছেন, এ নিয়ে মিয়ানমারের বাইরে থেকে যেসব মতামত আসছে তার সারাংশ হচ্ছে সু চি সেনাবাহিনীর পটেকেই রয়েছেন। তবে এই মতামতের বিপরীতে বলা যায়, সু চির এই অবস্থানের অর্থ এই নয় যে তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ভিড়ে গেছেন।

Saturday, October 21, 2017

জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রকৃতির বৈরী আবহাওয়ার কবলে দেশ !

খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪০লখ টন কমার আশঙ্কা


বর্ষা ঋতু বিদায় নিয়েছে দুই মাস আগেই। শরৎ শেষ। এখন হেমন্ত চলছে। অথচ ভারী বৃষ্টিপাত এই হেমন্তে ভরা বর্ষাকেও হার মানিয়েছে। গত দুদিনে (শুক্র ও শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত) রাজধানীতে ২৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরমধ্যে শনিবার হয়েছে ২২৩ মিলিমিটার। এরআগে বর্ষার শুরুতে গত ১২-১৩ জুন ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় ঢাকায়। ১৩ জুলাই ১০৩ মিলিমিটারের রেকর্ড বৃষ্টি হয়। পরের মাস গত ৪ আগস্ট ঢাকায় তিন ঘণ্টায় ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ওই বৃষ্টি ছিল স্বল্প সময়ের বিবেচনায় গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এরআগে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে ঢাকায় তিন ঘণ্টায় ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড ছিল। কেবল ভারী বৃষ্টিপাত নয়, এ বছর এপ্রিল ও মে মাসে মারুথা ও মোরা নামে দুটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এর বাইরে নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকবার। তার মধ্যে দুই দফা নিম্নচাপে প্রবল বর্ষণে পাহাড়ে ভূমিধসে মৃত্যু হয় দেড় শতাধিক মানুষের। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আগাম বন্যায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবার। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমের মানুষকেও ভুগতে হয়েছে। বিশেষ করে গত জুলাই-আগস্টে হাওড় অঞ্চলে অকস্মাৎ বন্যা এবং ভারী বর্ষণে পানিতে তলিয়ে যায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম। সেইসঙ্গে বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর গত বছর তিনেক ধরেই বেড়ে গেছে।
এমনকি অক্টোবরের শুরুতেই টানা চার-পাঁচ দিন রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করেছে। সাধারণত গ্রীষ্মে এ ধরনের গরম অনুভূত হলেও এবার সেপ্টেম্বরের শরতে একটি বড় সময় ধরে প্রায় গ্রীষ্মের গরম অনুভূত হয়েছে।
কেবল এ বছরই নয়, দেশে হঠাৎ করেই বদলে যাওয়া আবহাওয়ার এমন বৈরী আচরণ চলছে গত ৩০ বছর ধরেই। ভারী বৃষ্টিপাত ও মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা তো বটেই, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অস্বাভাবিক মাত্রায় বজ্রপাত, অতি ভারী বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা, ভূমিধসের মতো একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন পেয়ে বসেছে বাংলাদেশকে। এর ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে, নতুন নতুন দুর্যোগ বাড়ছে, রোগবালাইয়ের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে আর বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুতও হচ্ছে।
কিন্তু আবহাওয়ার কেন এমন বদলে যাওয়া এবং এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগই বা কেন—জানতে চাইলে গবেষকরা একে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হিসেবে দেখছেন। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মনুষ্যসৃষ্ট আচরণ ও পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খেয়ে চলতে না পারাকেও দায়ী করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে নগর ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের জন্য অন্তত ৫০ বছরের তথ্য পর্যালোচনা করতে হবে। প্রকৃতির এই বৈরী আচরণকে হুট করেই ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব’ বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না। কিছু প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু সবক্ষেত্রে নয়। সে সময় বাংলাদেশে ঠিক আসেনি এখনো। দেশে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে, এর বেশিরভাগই মনুষ্যসৃষ্ট। ভারী বৃষ্টিপাত হবে। কিন্তু তা থেকে যে জলাবদ্ধতা, সেটা হচ্ছে পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশন না থাকায়। শহর ডুবে যাচ্ছে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরের শেষের দিকেও নি¤œচাপ দেখা দিতে পারে। তা থেকে বৃষ্টিপাত হবে। কিন্তু সে পানি কেন সরবে না? জলাবদ্ধতা কেন হবে? কারণ মিরপুর থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত যে খাল, সেটা দখল হয়ে গেছে। আমরা পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারছি না। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অপরিকল্পিত আবাসন গড়ছি। সড়ক নির্মাণ করছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জোর দিচ্ছি না। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা থাকবে। কিন্তু উচ্চ তাপমাত্রা হচ্ছে গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে। রাজধানীতে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং হাতিরঝিল ছাড়া কোথাও খোলা জায়গা নেই, সবুজ নেই। গাছ লাগাচ্ছি না। কেটে ফেলছি। ফলে বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। এসবই হচ্ছে মানুষের কারণে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরিবেশ ও উৎস ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও ভূগোল বিভাগ পৃথক পৃথক গবেষণায় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ৩০ বছরে বাংলাদেশ ১৮৫ বার চরম বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়েছে, যা বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ। দুই বছর আগেও বিশ্বে বিরূপ আবহাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে থাকা দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল চতুর্থ। আর বৈরী আবহাওয়ার কারণে মানুষের মৃত্যু হওয়ার দিক থেকে তৃতীয় দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ।
আন্তর্জাতিক ও দেশের বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে অসময়ের বৃষ্টির কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। একই কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও গড় তাপমাত্রা বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এই শতকের মধ্যে তাপমাত্রা গড়ে দেড় থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। এর ফলে বছরে বোরো ও আমন ধানের উৎপাদন ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে। প্রায় ৪০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন কমতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই শতকের মধ্যে দেশের ১৯টি জেলার প্রায় ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এর ফলে প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। লবণাক্ত এলাকা দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে। লবণাক্ততা আরো বাড়ছে। নতুন করে বজ্রপাতে মৃত্যু বাড়ছে। এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত মারা গেছে ১৭০ জন। গত সাত বছরে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৭৬০ জনের। এ বছর ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে ১০০ বছরের মধ্যে বড় বন্যার রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে বেশি বেশি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। আর তা সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে বাংলাদেশে। ১৯৭১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি চার থেকে পাঁচ বছর পরপর বড় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানত। ২০০৭ সালের পর প্রতি দুই বছর পরপর দেশে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী। কিন্তু ঢাকায় আবহাওয়ার বৈরী আচরণের জন্য দায়ী অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও যানবাহন। তা ছাড়া শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (এসি) ব্যবহার বেড়ে গেছে। এসি ব্যবহারের ফলে কক্ষের ভেতর ঠান্ডা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাইরে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এটি কমাতে হবে। গাছপালা কমে যাচ্ছে। একটি আদর্শ নগরীতে ২৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে গাছপালা, পার্ক, আদর্শ ছায়াযুক্ত স্থান থাকতে হবে। কিন্তু ঢাকায় পাঁচ শতাংশও ছায়াশীতল স্থান নেই। একই অবস্থা গোটা দেশে। আমরাই পরিবেশকে নষ্ট করছি। পরিবর্তিত জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাবের দিকে দেশকে ঠেলে দিচ্ছি। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা করতে হলে আমাদের আইনের শাসনের সঙ্গে বিজ্ঞান ও মানুষের হাজার বছরের অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে পরিকল্পনা করতে হবে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রাজিল, ভারত, রাশিয়া তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ কমাচ্ছে না, বরং বাড়াচ্ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। তারা আরো বলছেন, প্রতিনিয়তই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে। এর প্রভাবে আগে যেসব জায়গায় জোয়ারের পানি উঠত না, সেসব অঞ্চল এখন প্লাবিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নাম সবার শীর্ষে।
পরিবর্তিত জলবায়ু থেকে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত এবং কেনই বা এমন দুর্যোগের মুখে বারবার পড়ছে বাংলাদেশ-জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ রিয়াজ আহম্মেদ বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। আমরা অনেক দেশের কাছেই এখন মডেল। তবে দুর্যোগ মোকাবেলায় আরো গবেষণা দরকার। কেন জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু কতটা, সেটার গবেষণা লাগবে। কারণ এবার হাওরে যে অকস্মাৎ বন্যা, সেটা গত ৫০-৬০ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম এত আগে হলো। একই কারণে পাহাড় ধসছে। প্রাকৃতিক সবুজ কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের যেসব বহির্প্রকাশ, সেগুলো জানতে গবেষণা দরকার। তবে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বাড়ছে। এমনিতেই বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। দুর্যোগের স্বরূপ জানতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি রাখতে হবে ব্যক্তি পর্যায় পর্যন্ত। তবেই দুর্যোগ থেকে রক্ষা সম্ভব।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আক্তার মাহমুদের মতে, প্রাকৃতিকভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি বাংলাদেশের নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ ছোট দেশ। মানুষ বেশি। প্রত্যেক দুর্যোগ মোকাবিলায় আলাদা কাঠামো দরকার। নদী, পাহাড়, বনভূমিসহ যেসব প্রাকৃতিক অঞ্চল রয়েছে, সেগুলোর প্রাকৃতিক অবস্থা ধরে রাখতে হবে। জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা ও কাঠামো দরকার। সে অনুযায়ী প্রাকৃতিকে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।

Sunday, October 8, 2017

আইসিএএন শান্তিতে নোবেল পেল যে কারণে! 

পরমাণু অস্ত্র তৈরি বিশ্বের জন্য কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ, এবং দুর্ঘটনাবশত এর ব্যবহার পরিবেশ ও মানব সমাজের জন্য কতোটা বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে তা বোঝাতে কাজ করছে। বলা হচ্ছে, পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে অসামান্য ভূমিকা রাখার জন্যই এবছর নোবেল কমিটি আইসিএএন’কে শান্তিতে পুরস্কার দেয়ার জন্য নির্বাচিত করে। ২০১৭ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে আন্তর্জাতিক প্রচারণা সংস্থা আইসিএএন। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে আজ থেকে ১০ বছর আগে সংস্থাটির জন্ম। সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণে প্রচারণা চালিয়ে আসছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সংস্থাটির সদরদপ্তর অবস্থিত।
পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচীর কারণে গোটা বিশ্বে যে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে, সেই উপলব্ধি থেকেই সংস্থাটির জন্ম। বিশ্বের সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে তৈরি জোটভিত্তিক সংস্থাটি পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোকে এর ভয়াবহতার দিকগুলো সামনে আনে। সেই সঙ্গে একটি কার্যকর পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি তৈরি ও তা বহাল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আইসিএএন (International Campaign to Abolish Nuclear Weapons) ২০০৭ সালে আত্মপ্রকাশ করে। মোট ১০১টি দেশের ৪৬৮টি সংস্থার সমন্বয়ে তৈরি আইসিএএন বিশ্বব্যাপী পরমাণু অস্ত্র উৎপাদন বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
ইউকিপিডিয়ার তথ্যে বলা হয়েছে, পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের পেছনে বিশ্ব মানবতার দিকটি তুলে ধরতে বিভিন্ন দেশে প্রচার চালিয়েছে সংস্থাটি। ফলে পরমাণু অস্ত্রের ক্ষতিকর দিকটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে অলাভজনক বেসরকারি সংস্থাটি সফলতা পেয়েছে।
পরমাণু অস্ত্র মানব সভ্যতা এবং পরিবেশের জন্য কতোটা বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে সেজন্য সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী প্রচারণা চালায়। এছাড়া মানব স্বাস্থ্যের জন্য পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচী কতোটা বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে সেজন্যে তথ্যবহুল প্রচারণাও চালানো হয়। এছাড়া, পরমাণুর ক্ষতিকর বিক্রিয়া পরিবেশে কতোটা দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ ফল ডেকে আনবে সে ব্যাপারেও স্বোচ্চার হয় সংস্থাটি। তাদের এই উদ্যোগ উন্নত রাষ্ট্রগুলোর নজর কাড়ে।
ল্যান্ড মাইন বিরোধী সংগঠন International Campaign to Ban Landmines’ এর সফলতা দেখে সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতারা অনুপ্রাণিত হন। সেভাবেই এই সংগঠনটিকে সৃষ্টি করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে কাজ শুরু করলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অংশগ্রহণের ফলে এটি আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করে। আত্মপ্রকাশের পর থেকে জাতিসংঘে পরমাণু বিষয়ক বিভিন্ন নীতিমালাসহ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের পেছনে সংস্থাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
অবশ্য ইরান কিংবা উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচী সম্পর্কে সংস্থাটির ভূমিকা স্পষ্ট নয়।  

ব্লু ইকোনমি অথরিটি গঠনের সুপারিশ 

বর্তমানে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমা এলাকায় সম্পদ আহরণ ও উত্তোলন করতে পারে বাংলাদেশ। যেখানে সমুদ্র সম্পদ নির্ভর ব্লু  ইকোনমির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। কমিটির পক্ষ থেকে সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও উত্তোলন সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের সুপারিশ করে ‘ব্লু  ইকোনমি অথরিটি’ গঠনের বিধান রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এজন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সমুদ্রসীমায় খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের মাধ্যমে দেশের বিশাল সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে দ্রুত ব্লু  ইকোনমি অথরিটি গঠনের সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে নতুন আইন প্রণয়নের জন্য বলা হয়েছে। 
এদিকে কমিটির বৈঠকে নীতিমালা অমান্য করে কনডেনসেট সরবরাহের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া কনডেনসেটের অপব্যবহার ও দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির মুখোমুখী করার উদ্যোগ নিতে বলা হয়। এজন্য আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে জানানো হয়, এখন বাংলাদেশের সমুদ্র এলাকা এখন ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার, যা দেশের আয়তনের প্রায় ৮২ শতাংশ। এই সমুদ্র এলাকায় মৎস্য সম্পদ, তেল-গ্যাস ও অন্যান্য মূল্যবান খনিজ সম্পদ আহরণ এবং সমুদ্র পরিবহন-সুবিধা বাড়িয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। বাংলাদেশের এই ‘ব্লু ইকোনমির’ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে গত ফেব্রুয়ারিতে অস্থায়ী ব্লু ইকোনমি সেল গঠন করা হয়েছে। ব্লু ইকোনমির সঙ্গে সরকারের ১৭টি মন্ত্রণালয় এবং ১২টি সংস্থা জড়িত।
বৈঠকে জানানো হয়, এই সেলটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন একটি অস্থায়ী সেল। এর আইনগত কর্তৃত্ব না থাকায় এই সেলের সিদ্ধান্ত মানার ক্ষেত্রে অন্যদের আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। অস্থায়ী হওয়ায় এই সেলকে কোনো আর্থিক বরাদ্দও দেওয়া হয় না। তাই এই সেলকে স্থায়ী করা বা আইনের মাধ্যমে একটি ব্লু ইকোনমি কর্তৃপক্ষ গঠন করা যেতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় কমিটি এ ধরনের একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করার সুপারিশ করে।

Monday, October 2, 2017

স্বাধীনতার অধিকার আদায় করেছে কাতালানবাসী 


স্পেন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে দেশটির কাতালান অঞ্চলে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুলিশি সহিংসতার মধ্যে শেষ হওয়া গণভোটে কাতালানবাসীর স্বাধীনতার অধিকার আদায় হয়েছে বলে দাবি করেছে অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসিত সরকার। স্থানীয় সময় গত রোববার স্পেন থেকে কাতালানের স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট আয়োজন করে কাতালানের স্থানীয় সরকার। স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে ভোট শুরু হওয়ার আগেই কেন্দ্রগুলো দখল করে নেয় পুলিশ। ভোটকেন্দ্রগুলোতে কাতালানবাসীকে প্রবেশে বাধা দিতে মাঠে নামে দাঙ্গা পুলিশ। তাদের ছোড়া রাবার বুলেট ও লাঠিপেটায় আহত হয় অনেকে। কাতালান সরকারের মুখপাত্র জরদি তুরুল বলেন, কাতালানে রোববার মোট ভোট দিয়েছেন ৫৩ লাখ। এখন পর্যন্ত ২২ লাখ ব্যালট পেপার গণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ স্বাধীনতার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন। তুরুল আরো বলেন, পুলিশি বাধা না এলে ভোটদাতার সংখ্যা আরো বেশি হতো। সহিংসতার কারণে কমপক্ষে সাত লাখ ৭০ হাজার ভোটার ভোট দিতে আসেননি। কাতালান সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববারের পুলিশি সহিংসতায় কমপক্ষে ৮০০ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া ৪০০টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, দুই হাজার ৩০০টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৯২টি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। কাতালানের প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুইদেমন বলেন, ‘বাধার মুখেও কাতালানবাসী স্বাধীনতার অধিকার আদায় করেছে। আমরা সবকিছু জানার, সম্মান ও পরিচিতি পাওয়ার অধিকার আদায় করেছি।’
এদিকে রোববার রাতেই একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমি একটি কথাই পরিষ্কারভাবে বলতে পারি, আজ কাতালানে তাদের স্ব-স্বীকৃত গণভোট অনুষ্ঠিত হয়নি।’
কাতালান স্পেনের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঙ্গরাজ্য। পাঁচ বছর ধরে স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে আসছিল তারা। এ দাবিতে গত রোববার গণভোটের আয়োজন করে কাতালানের আঞ্চলিক সরকার। তবে স্পেন সরকার এই ভোট বন্ধের অঙ্গীকার করে। দেশটির সর্বোচ্চ আদালতও এই ভোটকে অবৈধ ঘোষণা করে। এত কিছুর পরও স্বাধীন কাতালানের জন্য ভোট দিতে আসেন কাতালানরা। ভোট শুরুর আগেই শুক্রবার থেকে ভোটকেন্দ্রগুলোর দখল নিয়ে নেন স্বাধীন কাতালোনিয়ার সমর্থকরা। এসব ভোটকেন্দ্র খোলা রাখার জন্যই তাঁদের এ উদ্যোগ। কোথাও কোথাও ভোটকেন্দ্রের সামনে ট্রাক্টর বসিয়ে রাখেন কৃষকরা। যেন পুলিশ সেখানে প্রবেশ করতে না পারে। আবার কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রের দরজা খুলে ফেলা হয়েছে, যাতে করে স্পেন সরকার এসব কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে না পারে।