Thursday, April 29, 2021

 

ধৈর্য ধারণে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার 


ধৈর্য ধারণে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার

আল কোরআনের ২৫তম সুরা আল ফোরকানের ৬৩ হতে ৭৭ নং আয়াতসমূহে আল্লাহর বিশেষ ও প্রিয় বান্দাদের ১৩টি গুণ ও আলামত বর্ণিত হয়েছে। প্রথম ছয়টি গুণাবলির মধ্যে আনুগত্যের মূলনীতি এবং পরবর্তী গুণাবলিগুলো গোনাহ ও অবাধ্যতা হতে পরিত্রাণ প্রত্যাশার/প্রচেষ্টার নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে।করোনাকালে ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী যে তছনছ চলছে তাতে সবার কাছে এটা প্রতিভাত হচ্ছে যে, কারও কাছে কোনো সম্পদ বা প্রতিপত্তি স্থায়ী নয়। মাহে রমজানে সিয়াম সাধনায় পার্থিব জীবনযাপনের নিত্যতা ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও একই মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। ধন-সম্পদের প্রাচুর্যে ভরা আরাম-আয়েশ উল্লাস ঐশ্বর্যময় জীবনযাপনে চিরন্তন শান্তি নেই। ভোগে নয় ত্যাগেই মুক্তি। এই উপলদ্ধিরও বিকল্প নেই, কৃচ্ছ্রতা সাধনের মধ্যে রয়েছে স্থায়ী পরিতৃপ্তি ও কল্যাণের নিশ্চয়তা। কোরআনুল কারিমে আল্লাহ রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন ‘তোমাদের নিকট যা আছে তা নিঃশেষ হবে এবং আল্লাহর নিকট যা আছে তা স্থায়ী। যারা ধৈর্য ধারণ করে আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে তারা যা করে তা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।’ (সুরা আন নাহল। আয়াত ৯৬- ৯৭)।

আনুগত্যের ছয়টি মূলনীতি : (১) নিজের বিশ্বাস, চিন্তাচেতনা, ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা, আচার-আচরণ ও স্থিরতাকে পালনকর্তার আদেশ ও অভিপ্রায়ের অনুগামী রেখে তার আদেশ-নিষেধ পালনের জন্য সদা উৎকীর্ণ থাকা।

(২) নম্রতাসহকারে চলাফেরা করা চলন-বলন আচার-আচরণে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। গর্বিত অহংকারীর ন্যায় পা না ফেলা। আবার ইচ্ছাকৃতভাবে রোগীদের ন্যায় অতি ধীরেও না চলা। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে না এবং সর্বদাই দুনিয়ার লাভ-লোকসানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকে, সে সর্বদা দুঃখই ভোগ করে। (৩) কথাবার্তায় নিরাপত্তার সঙ্গে সব সময় সচেতন থাকা উচিত। সালামের জবাব দেওয়া, কারও মনে আঘাত লাগতে পারে, বিরূপ ভাব ও সংক্ষোভের উদ্রেক করতে পারে এমন সংলাপ পরিহার করা উচিত। সুবচন ও সুশীল আচরণ কখনই বিতন্ডার জন্ম দেয় না। (৪) ইবাদতে রাত্রি জাগরণ। যে সময় নিদ্রা ও বিশ্রামের সে সময়ে কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও নামাজে দাঁড়ানোর মতো উত্তম কিছুই নেই। তা লোক দেখানোর জন্য নয় এবং নাম যশের আশঙ্কা এখানে নেই।

(৫) দিবা-রাতে ইবাদতে মশগুল হয়েও নিশ্চিন্ত হয়ে কর্মহীন হয়ে বসে না থাকা। আল্লাহকে ভয় করা, জীবিকা অনে¡ষণ ও তার সাহায্য কামনা করা। (৬) ব্যয় করার সময় অপব্যয় না করা, কৃপণতা ও ত্রুটি না করে আয়-ব্যয়ের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। বৈধ ও অনুমোদিত কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাও অপব্যয়ের অন্তর্ভুক্ত। রসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ব্যয় করতে গিয়ে মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করা মানুষের বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। যে ব্যক্তি ব্যয়ের সময় মধ্যবর্তিতা ও সমতার ওপর কায়েম থাকে, সে কখনো ফকির ও অভাবগ্রস্ত হয় না।

গোনাহ ও অবাধ্যতা হতে পরিত্রাণ প্রত্যাশার/প্রচেষ্টার সাত নীতিমালা (৭) শিরক সর্ববৃহৎ গোনাহ। দুনিয়ার ভালোমন্দে কাউকে নিয়ন্ত্রক ভাবাও শিরক। (৮) কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করা এবং ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হওয়া। (৯) তওবা করা। কঠোর অপরাধী যদি তওবা করে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে সৎকর্ম করতে থাকে, তবে আল্লাহ তার মন্দ কর্মসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। (১০) মিথ্যা ও বাতিল মজলিশে যোগ না দেওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া। (১১) যদি কেউ মিথ্যা ও বাতিল মজলিশের নিকটবর্তী হয়ে পড়ে তবে গাম্ভীর্য ও ভদ্রতাসহকারে তা এড়িয়ে বা পরিহার করে চলে যাওয়া উচিত। (১২) আল্লাহর আয়াত ও শরিয়তের বিধানাবলি শুধু পাঠ করা যথেষ্ট নয়, শ্রবণশক্তি ও অনুদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের উচিত এগুলো সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা এবং তদনুযায়ী আমল করা এবং (১৩) নিজ সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। তাদের আল্লাহর আনুগত্যে মশগুল দেখা।

লেখক : ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

সাবেক সচিব ও এনবিআরের প্রাক্তন চেয়ারম্যান।

Tuesday, April 27, 2021


মাগফিরাতের দশ দিন
মুমিনের গুণ অর্জনের সময় রমজান

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর অপার অনুগ্রহে ১৪টি রমজান আমরা পাড়ি দিয়ে এসেছি। আজ ১৫ রমজান। জানি না, মাবুদের রহমতের ছায়ায় কতটা জায়গা করে নিতে পেরেছি। মাগফিরাতের এ সময়েও যদি একনিষ্ঠ সিয়াম সাধনার মাধ্যমে খোদার প্রিয় হতে পারি, তাহলে ধন্য হব আমরা। আল্লাহর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তার প্রিয় বান্দা হওয়ার পদ্ধতি পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার নবি (সা.)-কে অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো মার্জনা করবেন।’ (আল ইমরান : ৩১)। বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শে রয়েছে সমগ্র সৃষ্টি জগতের কল্যাণ ও মুক্তি। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে নবি! আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত করে পাঠিয়েছি।’ (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)। অন্য আয়াতে এসেছে, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহর জীবনের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ; যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় বান্দাদের পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন অজ্ঞ লোকে মূর্খতাসুলভ সম্বোধন করে তখনও তারা সালাম ও শান্তির বাণী বলে। তারা রাত্রি যাপন করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে সেজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এবং তারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত করুন; উহার শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ! নিশ্চয়ই তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসাবে নিকৃষ্ট!’

আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা মধ্যপন্থায় থাকে। তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এসব করে তারা শাস্তি ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে তারা হীনাবস্থায় স্থিত হবে। তবে তারা নয়, যারা তওবা করে ইমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ এদের পাপ পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরমদয়ালু।

যারা তওবা করে ও সৎকর্ম করে, তারা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়। আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয়মর্যাদার সঙ্গে তা উপেক্ষা করে চলে। আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না এবং যারা প্রার্থনা করে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি দান করুন যারা আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর হবে এবং আমাদের মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন।’ এদের প্রতিদান হিসাবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ স্থান, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদের সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সম্ভাষণসহ; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও আবাসন হিসাবে তা কতই উৎকৃষ্ট!’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৩-৭৬)।
এসব আয়াতে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য মোট ১১টি গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে: ১. বিনয়, ২. ধৈর্য ও সহনশীলতা, ৩. তাহাজ্জুদ আদায়, ৪. জাহান্নামের ভয় ও তা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, ৫. অপব্যয় ও কৃপণতা না-করা, ৬. শিরকমুক্ত থাকা, ৭. জেনা ও হত্যার সঙ্গে জড়িত না-হওয়া, ৮. তাওবা করা, ৯. মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা ও অর্থহীন কাজকে এড়িয়ে চলা, ১০. কুরআনের আয়াত অনুধাবন করা ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, ১১. স্ত্রী ও সন্তান যেন আল্লাহর অনুগত হয়-এজন্য তার কাছে প্রার্থনা করা।

আলেমরা বলেন, এ ১১ গুণ রমজানের মাসব্যাপী কর্মশালার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস। এ মাস যেহেতু শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাস, তাই পবিত্র এ মাসে প্রত্যেক রোজাদারকে বর্ণিত গুণাবলির আলোকে আত্মগঠন, আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করা উচিত।

লেখক : মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী,চেয়ারম্যান নদওয়াতুল ওলামা আল আলামিয়া, মদিনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব, লেখক ও গবেষক l

 

ছোলার পুষ্টিগুণ 



পটা ছোলা একটি ডালজাতীয় খাদ্যশস্য। এটি কার্ডিওভাসকুলার পুষ্টিতে ঠাসা। এটি ফাইবার এবং সিয়ামেও পূর্ণ। এটি আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস।শুধু তাই নয় ছোলা ভিটামিন ও  প্রোটিন সমৃদ্ধ যা আমাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতেও সহায়তা করে। এটি এমন একটি খাবার যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। 

ছোলায় আমিষের পরিমাণ মাংস বা মাছের আমিষের পরিমাণের প্রায় সমান। তাই খাদ্য তালিকায় ছোলা থাকলে মাছ-মাংস পরিমাণে কম থাকলেও চলে। আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশে ছোলাকে মাছ বা মাংসের বিকল্প হিসাবেও ভাবা যেতে পারে। ছোলার ডাল, তরকারিতে ছোলা, সেদ্ধ ছোলা ভাজি, ছোলার বেসন, ছোলা ভুনা— নানান উপায়ে ছোলা খাওয়া যায়।

প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় আছে প্রায় ১৭ গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট বা তেল। ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। খাওয়ার পর খুব তাড়াতাড়িই হজম হয়ে গ্লুকোজ হয়ে রক্তে চলে যায় না; বেশ সময় নেয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ছোলার শর্করা ভাল। ছোলার ফ্যাট বা তেলের বেশির ভাগই পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়।

প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ছাড়া ছোলায় আরও আছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় ক্যালসিয়াম আছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১০ মিলিগ্রাম, ও ভিটামিন এ ১৯০ মাইক্রোগ্রাম। এ ছাড়াও আছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফসফরাস ও ম্যাগনেশিয়াম। এ সবই শরীরের জন্য কাজে লাগে। ছোলায় খাদ্য-আঁশও আছে বেশ। এ আঁশ কোষ্ঠ কাঠিন্যে উপকারী। খাবারের আঁশ হজম হয় না। একইভাবে খাদ্যনালী অতিক্রম করতে থাকে। তাই মলের পরিমাণ বাড়ে এবং মল নরম থাকে। এতে কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর হয়। মলত্যাগ করা সহজ হয়। নিয়মিত মলত্যাগ হয়ে যায় বলে ক্ষতিকর জীবাণু খাদ্যনালীতে থাকতে পারে না। ফলে খাদ্যনালীর ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা কমে। খাদ্যের আঁশ রক্তের চর্বি কমাতেও সহায়ক। আরও নানান শারীরিক উপকারিতা আছে খাদ্য-আঁশে। দেরীতে হজম হয়, এরূপ একটি খাবার হচ্ছে ছোলা। ছোলা দীর্ঘক্ষণ ধরে শরীরে শক্তি যোগান দিতে সক্ষম। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলা থেকে প্রায় ৩৬০ ক্যালরিরও বেশি শক্তি পাওয়া যায়। ছোলা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

Monday, April 19, 2021

 

সজনে ডাটা,পাতা,ফুল অনেক উপকারি 

No photo description available.

গাছটার বৈজ্ঞানিক নাম Moringa oleifera। ইংরেজিতে এই গাছটিকে বলে ““miracle tree,” “drumstick tree” কিংবা “horseradish tree” । এই গাছে প্রতি গ্রাম পাতায় গাজরের চারগুন বেশি ভিটামিন এ, দুধের চেয়ে ৪ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে ৩ গুণ বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন দইয়ের চেয়ে ২ গুণ বেশি প্রোটিন আছে। চার হাজার বছর ধরে রন্ধন এবং নানা চিকিৎসায় এ গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রায় ৩০০ রকমের অসুখের চিকিৎসা হয় এই গাছটি দ্বারা। দক্ষিণ এশিয়ায় বহু বছর ধরে বাড়ির আনাচে কানাচে, বনে-জঙ্গলে, পুকুরের ধারে এই গাছ হয়ে আসছে। সম্প্রতি সেনেগাল, মালির মতো আফ্রিকান দেশগুলোতে এর চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। চাষও খুব সহজ। গাছের একটা ডাল পুতে দিলেই হলো। এই গাছ বাড়েও খুব দ্রুত। দু’তিন বছরে ফুল দেয়। এর ফুল, পাতা, ফল (ডাটা)-- সব কিছুই সুস্বাদু।
ইচ্ছা করেই লেখাটা শুরু করেছিলাম গাছটার বৈজ্ঞানিক নাম আর ইংরেজি নাম দিয়ে। এতে করে গাছটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। আমাদের দেশে তো আবার গেয়ো যোগি ভিখ পায় না, নিজের জিনিস সম্মান পায় না।
তো এতোক্ষণ যে বিস্ময়র গাছটির গুণগাণ গাইছিলাম তার বাংলা নামটা চেনেন না, এমন লোক কিন্তু এ দেশে নাই। চেনা জিনিসের মূল্য হয়তো আমরা কম দেই, তাই একটু কেতা করে ভূমিকা দিলাম। এবার আসল কথায় আসি এই আহামরি মরিঙ্গা বৃক্ষের বাংলা নাম সজনা বা সজিনা। আজ কিন্তু সারা বিশ্বই এই গাছ নিয়ে মাতামাতি করছে। বড় বড় ল্যাবে গবেষণা করছে, এই গাছের জয় জয়কার চারিদিকে। এর নাম উঠেছে সুপার ফুডের তালিকায়।
আমরা হয়তো কম-বেশি সবাই সজিনা’র ডাল বা তরকারি খেয়েছি। কিন্তু সজনে পাতাও যে শাক হিসাবে খাওয়া যায় এটা সবাই জানি না। তেল-রসুন দিয়ে বাগাড় দেয়া সজনে খেতেই শুধু সুস্বাদু নয় পুষ্টিকরও। সজিনা পাতা ও সজিনাতে প্রচুর আঁশ আছে যা খাদ্যনালি ও অন্ত্রতন্ত্রকে পরিষ্কার করে। বিশেষ করে তৈলাক্ত অনেক খাবার আমরা খাই যার তেল রক্ত নালিতে আটকে থাকে। সেগুলো বের করতে সজিনা সাহায্য করে। সজিনার মধ্যে আইসোথিয়োকাইনেটস (রংড়ঃযরড়পুধহধঃবং) নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে যা গ্যাস্ট্রিক, আলসার এবং গ্যাস্টিক জনিত ক্যানসার ঠেকাতে সহায়তা করে।
পানি বিশুদ্ধ করতে আমরা প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম নানা পদ্ধতি ব্যবহার করি। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে সজিনার দান পানি বিশুদ্ধ করণে সবচেয়ে ভালো প্রাকৃতিক উপায়। উপস্যুলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা সন্দর্ভে বলা হয়েছে, সজিনার দানা পানি দূষণ ঠেকিয়ে দেয়, পানিতে কোন রকম দূষণীয় ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোন উপদান দ্রবীভূত হতে দেয় না। আমেরিকা, নামিবিয়া, ফ্রান্স, বোৎসোয়ানার বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সাথে যৌথ গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে সজিনার আনুবিক্ষণিক প্রোটিন উপাদান পানি বিশুদ্ধকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমি নিজে সেন্ট মার্টিনে আমার এক বন্ধুর রিসোর্টের জলাশয়ে প্রচুর সজনে পাতা ঢেলে উত্তম ফলাফল পেয়েছিলাম। যেমন পানি বিশুদ্ধ করে তেমনি সজিনা শরীরকেও বিশুদ্ধ রাখে। আজকের বিশ্বের নয়া সুপার ফুড সজিনার আজ তারকা খ্যাতি। এই তারকার গুণাগুণ কিছু জেনে রাখলে সুবিধাই হবে। রোগ-শোকের এই কালে সজিনাও উপকারে আসবে।
১. পুষ্টির ভাণ্ডার: লেখার শুরুতেই সজিনার পুষ্টি গুণের কথা বলা হয়েছে। প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এর পাশাপাশি এতে আয়রণও আছে। আয়রণের দিক থেকে এটি পালং শাকের চেয়ে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী।
২. এন্টিঅক্সিডেন্টের খনি : সজিনার পাতাকে এন্টিঅক্সিডেন্টের খনি বলা যায়। এর মধ্যে ভিটামিন সি, বেটা-কেরোটিন, কিউরেকটিন এবং ক্লোরোজেনিক এসিড বিদ্যমান। উল্লেখ্য এই সব উপাদানই মানবদেহের জন্য উপকারী। বিশেষ করে ক্লোরোজেনিক এসিড রক্তেচাপ ও শর্করা কমাতে বিশেষ কাজে দেয়। এশিয়ান প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যান্সার প্রিভেনসন দাবী করছে, সজিনার পাতায় বিদ্যমান এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষ গড়ে উঠতে বাধা দেয়।
৩. ডায়েবেটিস প্রতিরোধক : এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং আইসোথিয়োকাইনেটস নামের উপাদান সমূহ নিয়মিত গ্রহণে ডায়েবেটিস কমে যায়। প্রতিদিন মাত্র ৫০ গ্রাম সজিনার পাতা খেয়ে ডায়বেটিস ২১ শতাংশ হ্রাস পায়। তিন মাস এক চামুচ করে সজিনার পাতার গুড়া খেয়ে ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
৪. তেলেসমাতি : সজিনার বীজের তৈরি তেলে সত্যিই তেলেসমাতি আছে। অন্য যে কোন ভেজিটেবেল অয়েল-এর চেয়ে এর গুণাগুণি বেশি। দীর্ঘ দিনের লিভারের রোগীর যে এ তেল খুব উপকারী। সালাদা বা যে কোন কিছু ভাজার ক্ষেত্রে এ তেল ব্যবহার করা যায়। খাদ্যের গুণাগণ অটুট থাকে। পচনশীল খাবারকে দীর্ঘস্থায়ীত্ব দিতেও সজিনার তেলের তুলনা নাই। বাতের ব্যথা বেদনায় যেমন ব্যবহার করা যায় তেমনি শীতের আর্দ্রতা থেকে ত্বককে রক্ষা করা, রূপচর্চাতেও এ তেল কাজে লাগে।
৫. কোলেস্টেরল কিলার : ঘাতক কোলেস্টেরলকে হত্যা করে সজিনা আপনার হৃদপি-ের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। থাইল্যান্ডে বহু বছর ধরে সজিনাকে হৃদ রোগের ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ৩ মাসের ব্যবহারে এটি কোলেস্টেরল লেভেল অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারে।
৬. আর্সেনিক দূষণ আর নয় : পানিতে আর্সেনিক দূষণ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এই সমস্যা নিরোধে সজিনার বীজ কিংবা পাতা ভূমিকা রাখে। এমনকি আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করতে সজিনা বী জবা পাতা ব্যবহার কার্যকরী।
এই রকম উপকারী এবং সহজে প্রাপ্য সজিনার ব্যবহার এখন আমাদের কাছে সীমিত আকারেই রয়ে গেছে। সজিনা ডাল আর তরকারির পাশাপাশি খুব সহজেই এর কচি পাতা শাক হিসাবে খাওয়া যায়। পালং, মূলা শাকের মতোই এটিকে রান্না করা যায়। এমনকি সালাদেও টমেটো, শসার সাথে সজনে পাতা ব্যবহার করা যায়। যে কোন স্যুপেও কয়েকটি সজিনা পাতা বাড়তি স্বাদ আর পুষ্টি এনে দেবে। পাতা গুড়া বা বীজের তেল অবশ্য আমাদের দেশে ওভাবে ব্যবহৃত হয় না। সজিনার তেল অবশ্য বেশ দামী, অলিভ অয়েলে চেয়ে বেশি দামী। আমরা চাইলে সজিনার তেল ও গুড়াকে বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত করার কথা ভাবতে পারি। ইউনানী ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বহু বছর ধরেই এর ব্যবহার চলে আসছে। আমরা নতুন করে এই সুপার ফুড আর বিস্ময়কর বৃক্ষের কথা ভাবতে পারি।
ও একটা ষড়যন্ত্র আগেই শিখিয়ে দেই। বাংলাদেশে তো ব্যবসায়ী আর মুনাফাখোরের অভাব নাই। এমনকি ফেরিঅলাও যদি জেনে যায়, সজিনার এতো গুণ, সজিনা সুপার ফুড তাহলে তো সাধারণের সাধ্যে আর থাকবে না এই সজিনা সখি। এমনিতেই সিজনেও এর দাম শত টাকা কেজি। তো সজিনার দাম নিয়ে কারসাজি ঠেকানোর আমার ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শ হলো, ঘরে সজিনা লাগান। নিজের জায়গা থাকলে জায়গায় লাগান, না থাকলে টবে। আর সজিনা হয় খুব দ্রুত। নেহাত ভালো দেখে একটা ডাল পুতে দিলেই হয়। সামান্য পানি আর রোদ পেলেই দেখবেন, নিজের হাতের মুঠোয় সুপার ফুড।
আরেকটা গোপন কথা, সজিনার ডালে দুটুকরা কাঁচা আম আর একটু ফোঁড়নও কিন্তু মারাত্মক। এ রেসিপি কিন্তু বিদেশি গবেষকরাও জানে না। সরিষাবাটা দিয়ে সজিনাও জিভ আর পেটের জন্য উপকারী, মনের জন্যও বটে। সত্যি বলছি, সজিনা আমার মনকেও আপ্লুত করে। তো, হয়ে যাক, একটু সজিনা ডাল। সেহেরিতে মন্দ লাগবে না।
শুভ রাত।
ইফতারি জার্নাল, মুম রহমান

Wednesday, April 14, 2021

 

মুমিনের ছয় বৈশিষ্ট্য 


মুমিনের ছয় বৈশিষ্ট্য

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মুমিনের বহু গুণাবলি বর্ণনা করেছেন। পার্থিব জীবনে আল্লাহর নির্দেশনামতে সুখ-শান্তি লাভের পাশাপাশি পরকালেও যেন অফুরন্ত শান্তি লাভ করা যায়। এখানে পবিত্র কোরআনের সুরা মুমিনুন-এ বর্ণিত উল্লিখিত মুমিনদের কয়েকটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো।

মুমিনের ছয় বৈশিষ্ট্য

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশ্যই মুমিনরা সফলকাম হয়েছে। যারা নিজেদের নামাজে বিনয়াবনত। যারা অসার কাজ থেকে বিরত থাকে। যারা জাকাত আদায় করে। যারা নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে; নিজেদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসীরা ছাড়া, এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর তারা ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হবে। এবং যারা নিজেদের আমানত ও অঙ্গীকার পালন করে। যারা নামাজ আদায়ে যত্নবান থাকে। তারাই উত্তরাধীকারী হবে জান্নাতুল ফেরদাউসের, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১-১১)।

এক. নামাজে একাগ্রতা : উসমান বিন আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নামাজের সময় হলে একজন মুসলিম সুন্দর করে অজু করে একাগ্রচিত্তে রুকুসহ নামাজ আদায় করলে তাঁর অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করা হয়। যদি সে কবিরা গুনাহ না করে। আর এমনটি তার পুরো জীবনে হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৮)।

দুই. অসার কাজ পরিহার : সব ধরনের অনর্থক কাজকর্ম থেকে বেঁচে থাকা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। গালি দেওয়া, মন্দ কথা বলা, পাপকর্ম ও শিরকসহ সময় নষ্ট হয় এ ধরনের সব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা (মুমিন) অসার কাজের সম্মুখীন হলে আত্মসম্মান রক্ষা করে চলে যায়।’ (সুরা ফোরকান, আয়াত : ৭১)।

তিন. জাকাতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন : আবু মালেক আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, পবিত্র ঈমানের অংশ। আল্লাহামদুলিল্লাহ (আখেরাতের) দাঁড়িপাল্লা ভরপুর করবে। সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ আসমান ও জমিনের মধ্যভাগ পূর্ণ করে। নামাজ নূরের মতো। দানের মাধ্যমে (ঈমানের) প্রমাণ মেলে। ধৈর্য জ্যোতির সমতুল্য। কোরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। মানুষ সকাল করে নিজেকে বিক্রয় করে। অতঃপর নিজেকে রক্ষা করে কিংবা ধ্বংস করে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৩)।

চার. লজ্জাস্থানের সুরক্ষা : আধ্যাত্মিক ও দৈহিক পবিত্রতা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। শরিয়তে নিষিদ্ধ পন্থায় নিজের জৈবিক কামনা-বাসনা পূরণ করা থেকে বিরত থাকা মুমিনের অন্যতম পরিচয়। এ ছাড়া হারাম পন্থা থেকে নিজের অন্তরকে রক্ষা করাও জরুরি। নতুবা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি মুমিনদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টিবনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সুরক্ষা করে। তা তাদের জন্য  পবিত্রতর, তারা যা করে আল্লাহ এ সম্পর্কে অবগত।’ (সুরা নূর, আয়াত : ৩০)।

পাঁচ. আমানত ও অঙ্গীকার পূরণ করা : মুমিন নিজের অঙ্গীকার পূরণ করে এবং অন্যের গচ্ছিত সম্পদ যথাযথভাবে আদায় করে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মুনাফিকের তিনটি বৈশিষ্ট্য : কথা বললে মিথ্যা বলে, অঙ্গীকার করলে পূরণ করে না, আমানত দেওয়া হলে এর অন্যায় ব্যবহার করে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩)।

ছয়. নামাজের প্রতি যত্নবান : মুমিন নামাজের প্রতি সর্বদা যত্নবান থাকে। যেন যথাসময়ে নামাজ আদায় করতে পারে। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করি, সবচেয়ে উত্তম কোন কাজ? তিনি বলেন, যথাসময়ে নামাজ আদায় করা। আমি বললাম, অতঃপর কোন কাজ? তিনি বলেন, মা-বাবার সঙ্গে সদাচার। আমি বললাম, অতঃপর কোন কাজ? তিনি বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আমি তাঁর কাছে আরো জানতে চাইলে তিনি আরো বলতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২৭)।

লেখকঃমুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ

 

রাজপরিবার:ব্রিটেনের যেসব মানুষ রাজতন্ত্র

সমর্থন করে না 

রাজপরিবার: ব্রিটেনের যেসব মানুষ রাজতন্ত্র সমর্থন করে না

প্রিন্স ফিলিপ মারা যাওয়ার পর সারা পৃথিবীর মানুষ শোক প্রকাশ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে রাজপরিবারের প্রতিও সমর্থন জানিয়েছেন অনেকে। প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে শোকাহত ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রতি বহু মানুষের সহানুভূতি থাকলেও, ব্রিটেনের সব মানুষ কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজতন্ত্রের পক্ষে নয়। প্রশ্ন করা হলে বেশিরভাগ মানুষ বলেন, তারা একটি রাজপরিবারের যে ঐতিহ্য এবং প্রতীকী তাৎপর্য, সেটিকে গুরুত্ব দেন। এটি না থাকলে তারা দুঃখ পাবেন। কিন্তু ব্রিটিশ জনগণের এক বিরাট অংশ আবার সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান দেখতে চান।

গতমাসে জরিপ সংস্থা ইউগভ একটি জরিপ চালিয়ে দেখেছে ব্রিটেনের ৬৩ শতাংশ মানুষ চায় ভবিষ্যতেও যেন রাজতন্ত্র অব্যাহত থাকে। কিন্তু প্রতি চারজনে একজন বলেছেন, তারা একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান চান। এই জরিপে প্রতি দশজনে একজন এই বিষয়ে কোন পক্ষেই মতামত দেননি।

ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বয়স এখন ৯৪ বছর। গত প্রায় এক হাজার বছর ধরে কোন না কোন ভাবে ব্রিটেনে তাদের শাসন চালু আছে। মাঝখানে একবারই মাত্র এতে ছেদ ঘটেছিল, সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের পাঁচ বছর। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাজপরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা বিতর্ক শুরু হয়েছে। ব্রিটেনে রাজা বা রানির বেশ কিছু সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেমন পার্লামেন্টের তৈরি আইনে সই করা, প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা এবং পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকা। কিন্তু রাজতন্ত্রের অনেক ক্ষমতাই এখন খর্ব করা হয়েছে। রানি এলিজাবেথ একই সঙ্গে কমনওয়েলথের সদস্য ৫৪টি দেশেরও রানি, যে জোটটি গড়ে উঠেছে একসময়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন দেশগুলোকে নিয়ে। "আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের আর রাজতন্ত্রের দরকার নেই। আমি বুঝতে পারি না এটা রেখে লাভটা কি। এটা আসলে ভিন্ন একটা সময় আর উপনিবেশবাদের একটা ঘোর ছাড়া আর কিছু নয়," বলছেন ডার্বির বাসিন্দা কার্সটেন জনসন, যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

"রানি এলিজাবেথ যখন সিংহাসনে আসীন হলেন, আপনি যদি সেই সময়টার কথা ভাবেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার খুব বেশিদিন পরের ঘটনা নয়, তখন কমনওয়েলথ সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা অবস্থায় ছিল। এটি ছিল আসলে অনেকটাই সাম্রাজ্যের ব্যাপার, অন্তত এখনকার তুলনায়।" "সরকার চালানোর জন্য আমাদের নির্বাচিত লোকজন আছে, কাজেই আমি তো বুঝতে পারি না আমাদের রাজতন্ত্র কেন দরকার," বলছেন এই নারী। "কাগজে-কলমে রানিকে সবকিছু সই করতে হয়, কিন্তু আসলে তিনি তো কেবল আলংকারিক প্রধান- আর তাকে পোষার খরচটাও তো কম নয়।"

২০২০ সাল রাজপরিবারের পেছনে ব্রিটেনের করদাতাদের সাড়ে নয় কোটি ডলার খরচ হয়েছে, রাজপরিবারের পক্ষ থেকেই দেয়া হয়েছে এই তথ্য। এটি এযাবতকালের সর্বোচ্চ ব্যয়। রাজপরিবারের পেছনে ব্যয় করা এই অর্থকে বলা হয় 'রাজকীয় মঞ্জুরি', রাণীর কাজ-কর্ম এবং তার পরিবারের ব্যয়, রাজপরিবারের ভ্রমণ এবং রাজপ্রাসাদগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ নির্বাহ করা হয় এই তহবিল থেকে। বাকিংহাম প্রাসাদের সাম্প্রতিক সংস্কার এবং প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের সাবেক নিবাস ফ্রগমোর কটেজের উন্নয়ন কাজও এই তহবিলের অর্থ দিয়ে করা হয়েছে। "করদাতাদের অর্থ দিয়ে কিন্তু রাজপরিবারের দূরসম্পর্কের সদস্যদেরও সহায়তা করা হয়, কারণ তাদের উপাধি-বলে তারা কোন একটা কাজ বা দায়িত্ব পান, এক ধরনের সুরক্ষা পান। কিন্তু তারা আসলে দেশের জন্য কি করেন? আমি বলছি না যে তারা একেবারেই কিছু করেন না। কিন্তু তারা এমন বিশেষ কি করেন যা অন্য কেউ করতে পারবেন না? কেবল রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত কাউকেই করতে হবে," বলছেন কার্সটেন।

"রানি এলিজাবেথ অনেকদিন রাজত্ব করেছেন এবং তিনি বেশ মর্যাদার সঙ্গেই কাজটা করেছেন। তাকে একজন চমৎকার মানুষ বলেই মনে হয়। কিন্তু আমি এখন পর্যটক আকর্ষণ ছাড়া রাজতন্ত্রের আর কোন প্রয়োজন দেখতে পাই না। আর যে পর্যটকরা বাকিংহাম প্রাসাদ দেখতে চান, রাজতন্ত্র না থাকলেও তারা সেটা দেখতে যেতে পারবেন।"রানি এবং তার নিজের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে বলা হয় 'ওয়ার্কিং রয়্যালস', অর্থাৎ তারা প্রত্যেকেই কাজ করেন। যুক্তরাজ্যে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা বছরে দুই হাজারের বেশি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তারা নানা ধরনের অনুষ্ঠান এবং দাতব্য কাজের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী করা এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখায় ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা হয়। "আমার দৃষ্টিতে রাজপরিবার যেন খুবই সুবিধাভোগী কিছু আমলা, যারা জন্মসূত্রেই তাদের কাজটা পেয়ে গেছেন এবং যাদের সেই পদ থেকে সরানো যাবে না," বলছেন স্যামি নাইট। তার জন্ম কানাডায় এবং বেড়ে উঠেছেন সেখানে, কিন্তু স্যামি এখন ব্রিটিশ নাগরিক। তার বিশ্বাস ভবিষ্যতের যুক্তরাজ্য বা কমনওয়েলথে রাজতন্ত্রের কোন স্থান নেই। "আমার মতে, রানি মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজতন্ত্রের মৃত্যু ঘটবে। রাজতন্ত্রের কী হলো সেটা নিয়ে আমি ভাবি না, তবে আমি মনে করি ব্যক্তিগতভাবে রানি একজন অসাধারণ মানুষ। প্রিন্স ফিলিপ যে মারা গেছেন সেজন্য আমি দুঃখিত, কারণ রানি এখন একদম একা।"রানি এবং ডিউক অব এডিনবারা যে কাজ করেছেন, আমি তার প্রশংসা করি। তারা অসাধারণ জীবন কাটিয়েছেন। আমার মনে হয় তাদের বয়স সত্ত্বেও জনসেবায় তারা অসাধারণ আত্মত্যাগ করেছেন।"কিন্তু রাজপরিবারের তরুণ সদস্যদের আমি মোটেই পছন্দ করি না। ব্রিটেনে এখন একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগের সময় এসেছে।"

রাজপরিবারের ব্যাপারে চালানো জরিপটির তথ্য যদি বয়স-ভেদে ভাগ করা হয়, তাহলে দেখা যায় বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে একটা বিরাট ফারাক আছে। যাদের বয়স ১৮ হতে ২৪, তাদের মধ্যে রাজতন্ত্রের পক্ষে সমর্থন সবচেয়ে কম, আবার যাদের বয়স ৬৫ বা তার বেশি, তাদের একটা বিরাট অংশই রাজপরিবারকে টিকিয়ে রাখার পক্ষে। ব্রিটেনের বিভিন্ন অংশের মধ্যেও রাজপরিবারের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গিতে বড় ধরনের তারতম্য দেখা যাচ্ছে এই জরিপে। স্কটল্যান্ডের মাত্র অর্ধেক মানুষ রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। ব্রিটেনের কোন একটি অঞ্চলে রাজপরিবারের ব্যাপারে এত কম সমর্থন আর দেখা যায়নি।"একজন স্কটিশ হিসেবে রাজতন্ত্রকে আমার খুবই দূরবর্তী এবং ভিনদেশি একটা ব্যাপার বলে মনে হয়," বলছেন একজন শিশু-যত্ন কর্মী ম্যাথিউ বার্টন-ওয়েবস্টার। "যদি ওদের কেউ একজন মারা যায়, তখন, অথবা আমাদের পাউন্ডের নোট দেখেই কেবল আমাদের মনে পড়ে যে রাজতন্ত্র বলে কিছু আছে।"তারা নিজেদেরকে স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকার মালিকানার উপাধি দেয়, এখানে তাদের ব্যক্তিগত জমিদারিতে ছুটি কাটাতে আসে। কিন্তু তারা এখানে এর বিনিময়ে কিছু দেয় বলে মনে হয় না। তারা আসলে একটি অর্থহীন ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান এবং ঐতিহ্য, যেটি থেকে তারা নিজেরা ছাড়া আর কেউ ফায়দা পায় না।"অনেকে রাজতন্ত্রের আংশিক সংস্কারের পক্ষে যেখানে কেবল রানি এবং তার সাক্ষাৎ উত্তরাধিকারীরাই জায়গা পাবেন।

তবে সবাই রাজতন্ত্র পুরোপুরি বিলোপের পক্ষে নন। একজন অবসরপ্রাপ্ত রাজনৈতিক পরামর্শক স্টিফেন এলিসন বরং আংশিক সাংবিধানিক সংস্কারের পক্ষে।"রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা যে ঐতিহ্য এবং ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন, আমি আসলে সেটা পছন্দ করি। কিন্তু রাজপরিবারে গৌণ সদস্যের সংখ্যা খুব বেশি," বলছেন তিনি।

বিবিসি বাংলা

Sunday, April 11, 2021

 

মাথা ব্যথা দূর করার কিছু সহজ উপায় 


মাথা ব্যথা দূর করার কিছু সহজ উপায়

রোগ হিসেবে আমরা মাথাব্যথাকে তেমন একটা গুরুত্ব না দিলেও এটি কিন্তু বেশ যন্ত্রণার একটি বিষয়। ছোট বড় প্রায় সকলেই নানা কারণে বিভিন্ন সময় মাথাব্যথায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সাধারণত ঘুমের ঘাটতি, ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা, মাইগ্রেন ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে মাথাব্যথা। কিন্তু খুব সহজে কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে এই মাথাব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আসুন জানি কীভাবে মুক্ত হবেন এই ব্যথা থেকে।

১. আদা

আদার অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান মাথা ব্যথা কমাতে ভূমিকা রাখে। আদার উপকারী উপাদানসমূহ রক্ত প্রবাহ ঠিক রেখে মাথাব্যথায় দ্রুত আরাম দেয়। মাথাব্যথা শুরুর সাথে সাথে আদা চা খেতে পারেন, ব্যথা কমে যাবে।

২. পানি পান করুন

একচুমুক পানি পানও আপনাকে এক মিনিটের মধ্যে মাথা ব্যথা সারাতে কাজে দেবে। যখন আমাদের শরীর আর্দ্র হতে থাকে তখন ব্যথা ধীরে ধীরে কমে।

৩. লেবু

ঝটপট মাথাব্যথা সারিয়ে তুলতে লেবুর তুলনা হয় না। ব্যথা শুরু হওয়ার সাথে সাথে আপনি যদি গরম পানির সাথে লেবু মিশিয়ে খান তাহলে মাথাব্যথা দ্রুত কমে আসবে। আপনি যদি লেবু পেস্ট করে কপালে লাগান তাতেও মাথা ব্যথা কমবে আর সাথে খেতে পারেন এক কাপ লেবু চা।

৪. লবঙ্গ

কিছু লবঙ্গ তাওয়ার মধ্যে গরম করে নিন। গরম লবঙ্গ একটি রুমালের মধ্যে নিন। এক মিনিট এর ঘ্রাণ নিন এবং দেখুন মাথা ব্যথা চলে গেছে। 

৫. মিষ্টিকুমড়ার বিচি খান

মিষ্টি কুমড়ার বিচি ভেজে খেলে মাথাব্যথার সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারণ মিষ্টি কুমড়ার বিচিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট যা মাথাব্যথা উপশমে কাজ করে থাকে।

৬. কাঠবাদাম খাওয়ার অভ্যাস রাখুন

অনেক সময় আবহাওয়া, ধুলোবালির কারণে মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়, আবার অনেক সময় মানসিক চাপের কারণেও মাথা ব্যথা শুরু হয়। এই ধরনের ব্যথা কমানোর জন্য একমুঠো বা দুইমুঠো কাঠবাদাম চিবিয়ে খান। কাঠবাদামে রয়েছে ‘স্যালিসিন’ যা ম্যথাব্যথা উপশমে কাজ করে রবং দ্রুত ব্যথা নিরাময় করে।

৭. পান পাতা

পান পাতার প্রাকৃতিক মাথা ঠান্ডাকারী উপাদান মুহূর্তেই মাথা ব্যথা সারিয়ে তুলতে কার্যকারী অবদান রাখে। মাথাব্যথা সারাতে ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে তাজা দেখে তিন থেকে চারটি পান পাতা নিয়ে মোলায়েম করে ছেঁচে কপালে লাগিয়ে রাখুন। আধা ঘণ্টার মধ্যে এটি আপনাকে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি দেবে।

৮. লবণযুক্ত আপেল

ব্যথা যদি বেশি হয় তবে এই ঘরোয়া পদ্ধতিটি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এক টুকরো আপেল চিবুতে পারেন। তবে এতে একটু লবণ ছিটিয়ে নেবেন। এটা দ্রুত ব্যথা মুক্ত করতে সাহায্য করবে। 

৯. হাসি খুশি মন

অনেকেই হয় তো বিশ্বাস করবেন না, তবে মনকে যদি ইতিবাচক এবং ভালো বিষয়ের দিকে নিয়ে যান তবে মাথা ব্যথা ৬০ সেকেন্ডেই দূর হবে। চেষ্টা করেই দেখুন না!

১০. পেপারমিন্ট 

মাথাব্যথা সারিয়ে তোলার আরো একটি কার্যকরী উপায় হলো কপালে পেপারমিন্ট মালিশ করা আর ঘাড়ে সামান্য পেপারমিণ্ট মালিশ করা। এরূপে করেই দেখুন মাথাব্যথা একদম সেরে যাবে।

১১. আইসব্যাগ

বাজারে নানা আকারের অনেক আইসব্যাগ কিনতে পাওয়া যায়। একটি আইসব্যাগে বরফ ভরে নিয়ে তা মাথার ওপরে অর্থাৎ ঠিক মাথার তালুতে খানিকক্ষণ ধরে রাখুন। দেখবেন মাথা ব্যথা উপশম হচ্ছে।

 

শরীরের ছাঁকনি 'কিডনি' পরিষ্কার ও সুস্থ রাখবেন যেভাবে 

শরীরের ছাঁকনি 'কিডনি' পরিষ্কার ও সুস্থ রাখবেন যেভাবে

কিডনি শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিডনি সুস্থ রাখতে একজন মানুষের দৈনিক ৮ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। কারণ কিডনির প্রধান কাজ হলো দেহ থেকে বর্জ্য এবং ক্ষতিকর টক্সিন উপাদান বের করে ইলেকট্রোলাইটস এবং অন্যান্য তরলের ভারসাম্য রক্ষা করা।

কিডনি পরিষ্কার ও সুরক্ষিত রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় নিয়মিত সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে। শাকসবজি ও ফল খেলে কিডনি নিজেকেই নিজে পরিষ্কার রাখে। বেশিরভাগ সবুজ সবজিতে ভিটামিন সি, কে, ফাইবার ও ফলিক এসিড থাকে। এগুলো রক্তচাপ কমায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং কিডনি সুস্থ রাখে।

কিছু ভেষজ উপাদান ও খাবারের মাধ্যমেও কিডনি পরিষ্কার করা যায়। বিটের জুস, তরমুজ, লেবুর রস, ক্র্যানবেরি জুস, আপেলের জুস্কু, মড়োর বীজ ইত্যাদি কিডনিতে পাথর জমার আশঙ্কাও কমিয়ে দেয়।

এছাড়াও এলার্জি থেকে ত্বককে রক্ষা করা ত্বককে পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি কিডনির সুরক্ষা রাখে  হলুদ। নিয়মিত হলুদ খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। এতে থাকা কারকুমিনে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান কিডনি রোগ ও পাথর জমা হওয়া রোধ করে।

গবেষণায় জানা যায়, প্রতিদিনের রান্নায় অন্যান্য তেলের চেয়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে অলিক এসিড, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ফ্যাটি এসিড আছে যা কিডনি সুস্থ রাখার পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।

রসুন ইনফ্লেমেটোরি এবং কোলেস্টেরল কমাতে অনেক বেশি কার্যকরী। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আছে যা দেহের প্রদাহ দূর করে থাকে। তবে রান্না করে খেলে এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় না। ভাল হয় সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন খাওয়া, এটি হার্টের পাশাপাশি কিডনিও ভাল রাখে।

লেবুর শরবত ও আদা কিডনিকে ভাল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। লেবু কিডনিতে জমা হওয়া পাথর ভাঙ্গতে ও ক্রিস্টালদের পরস্পরের জোড়া লাগতে বাধা দেয়। নিয়মিত কাঁচা আদা, আদার গুড়া কিংবা জুস 'শরীরের ছাঁকনি' কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে। 

এছাড়াও অনিয়মিত জীবনযাপন এবং ভুল খাবারের কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে  এবং খাবারে কাঁচা বা অতিরিক্ত লবণ কম খেতে হবে। রক্তচাপ ও সুগার লেভেল স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। ধূমপান ছাড়াও বেশি মাত্রায় মদ ও ক্যাফেইন পান থেকে বিরত থাকতে হবে।

Saturday, April 10, 2021

 

লাউ খেলে ৫ উপকার  

লাউ খেলে ৫ উপকার

শরীরকে নানা রোগ থেকে মুক্ত রাখতে লাউয়ের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। গবেষণা বলছে, লাউয়ের ভিতরে মজুদ রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি, বি এবং ডি, সেই সঙ্গে ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফোলেট, আয়রন এবং পটাশিয়াম, যা নানাবিধ রোগের হাত থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে আরও নানা উপকারে লাগে শরীরের। 

কী কী উপকারিতা? জেনে নেওয়া যাক তাহলে-

লাউয়ের মধ্যে কোলন নামের এক ধরনের নিউরো ট্রান্সমিটার রয়েছে। যা শরীরে স্ট্রেস লেভেল কমাতে সাহায্য করে। এমনকি বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। 

গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, লাউয়ের রস ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত খেলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে দীর্ঘক্ষণ খিদে পায় না। 

বহুদিন ধরে পেটের রোগে কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে, সেটা দূর করতেও সাহায্য করে লাউ।  লাউয়ের রস, বা তরকারি শরীর দীর্ঘক্ষণ হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। 

রাতে ভাল করে ঘুম হয় না। স্ট্রেস এবং টেনশন এর অন্যতম কারণ বলেই জানাচ্ছেন ডাক্তাররা। লাউয়ের রস বা তরকারি ভাল ঘুম হতে সাহায্য করবে বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। 

লাউয়ের রস নিয়মিত খেলে, প্রাণহীন, রুক্ষ ত্বকের সমস্যা কমবে। এতে কিছুদিনের মধ্যেই ত্বক ঝকঝকে, উজ্জ্বল দেখাবে। এমনকি ব্রণ, ব্রেকআউটসের সমস্যাও দূর করবে। 

Friday, April 9, 2021


প্রিন্স ফিলিপের জীবনের যে ১০টি চমকপ্রদ তথ্য


প্রিন্স ফিলিপের জীবনের যে ১০টি চমকপ্রদ তথ্য
বিয়ের কিছুদিন আগে ১৯৪৭ সালে বাকিংহাম প্রাসাদে প্রিন্স ফিলিপ এবং প্রিন্সেস এলিজাবেথ

প্রিন্স ফিলিপ ছিলেন গ্রিসের এক রাজপরিবারের সন্তান। অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তার পরিবারকে। আশ্রয় মেলে ইংল্যান্ডে। নৌবাহিনীর ক্যাডেট হিসেবে মন জয় করেন ইংল্যান্ডের ভবিষ্যত রানি প্রিন্সেস এলিজাবেথের। 

তার জীবনের ১০টি চমকপ্রদ তথ্য-

১.প্রিন্স ফিলিপের জন্ম গ্রিসের এক রাজপরিবারে। তার বাবা ছিলেন প্রিন্স অ্যান্ড্রু। হেলেনস এর রাজা প্রথম জর্জের ছেলে। আর মা ছিলেন ব্যাটেনবার্গের প্রিন্সেস অ্যালিস। ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের মাউন্টব্যাটেনরা ছিলেন তার মায়ের দিকের আত্মীয়।

২. প্রিন্স ফিলিপের জন্ম সনদে লেখা জন্ম তারিখ আর প্রকৃত জন্ম তারিখ এক নয়। জন্ম সনদে প্রিন্স ফিলিপের জন্ম তারিখ লেখা আছে ১৯২১ সালের ২৮ মে। যদিও তিনি জন্ম গ্রহণ করেন ১৯২১ সালের ১০ জুন। এই গরমিলের কারণ গ্রিসে তখনো পর্যন্ত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হতো না।

৩. ১৯২২ সালে গ্রিসে এক অভ্যুত্থানের পর রাজপরিবার তাদের ক্ষমতা হারায়। বিপ্লবীরা তাদের সেখান থেকে নির্বাসনে পাঠায়। ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে পুরো পরিবারকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন ফ্রান্সে।

৪. প্রিন্স ফিলিপের মা পরবর্তী জীবনে স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাকে একটি মানসিক রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। মায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল খুবই ক্ষীণ।

৫. প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে প্রিন্সেস এলিজাবেথের প্রথম দেখা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে। তখন প্রিন্সেস এলিজাবেথের বয়স মাত্র ১৩। রাজা ষষ্ঠ জর্জ এসেছিলেন ডার্টমুথ কলেজ সফরে। সঙ্গে প্রিন্সেস এলিজাবেথ এবং প্রিন্সেস মার্গারেট। তখন প্রিন্স ফিলিপ সেখানে নৌবাহিনীর এক তরুণ ক্যাডেট। এই দুজনকে দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয় প্রিন্স ফিলিপের ওপর। সুদর্শন প্রিন্স ফিলিপ এই সময় প্রিন্সেস এলিজাবেথের মনে গভীর ছাপ রাখতে সক্ষম হন। এরপর দুজনের মধ্যে প্রেম এবং চিঠি চালাচালি শুরু হয়। প্রিন্স ফিলিপ বেশ কয়েকবার রাজপরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য আমন্ত্রিত হন। সেসময় প্রিন্সেস এলিজাবেথের ড্রেসিং টেবিলে শোভা পেত প্রিন্স ফিলিপের ছবি।

৬. ১৯৪৩ সালে প্রিন্স ফিলিপ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিন্সেস এলিজাবেথকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাদের বিয়েতে রাজপরিবারের কেউ কেউ আপত্তি তুলেছিলেন। প্রিন্স ফিলিপকে 'রুক্ষ এবং অভদ্র' বলেও বর্ণনা করেছিলেন এরা। গোল বেধেছিল জাতীয়তা নিয়েও। তাদের এনগেজমেন্টের আগে প্রিন্স ফিলিপকে তার গ্রিসের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করতে হয় এবং ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণের পর তিনি তার নাম পাল্টে মাউন্টব্যাটেন রাখেন। এটি ছিল তার মামাদের দিকের পদবি।

৭. প্রিন্স ফিলিপ এবং প্রিন্সেস এলিজাবেথের বিয়ে হয় ২০ নভেম্বর ১৯৪৭ সালে। তাদের বিয়ের পর অভিনন্দন জানিয়ে বাকিংহাম প্রাসাদে এসেছিল দশ হাজারের বেশি টেলিগ্রাম। সারা দুনিয়া থেকে পাঠানো হয় প্রায় আড়াই হাজার উপহার। ভারত থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছিল মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর হাতে বোনা সুতা দিয়ে তৈরি এক লেস, যার উপর লেখা ছিল ‘জয় হিন্দ’।

৮. প্রিন্স ফিলিপ প্রকৃতি এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণে তার কাজের জন্য পরিচিত। কিন্তু ১৯৬১ সালে ভারত সফরে গিয়ে তিনি একটি বাঘ শিকার করেন এবং তারপর আবার সেই বাঘের সঙ্গে ছবিও তুলেছিলেন। এ নিয়ে সেসময় তীব্র বিতর্ক হয়েছিল।

৯. প্রিন্স ফিলিপ নানা সময়ে মুখ ফসকে এমন সব মন্তব্য করেছেন, যার জন্য তাকে এবং রাজপরিবারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। ১৯৮৬ সালে রানির সঙ্গে এক সরকারি সফরে চীন গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে চীনা মেয়েদের 'কুতকুতে চোখওয়ালা' বলে মন্তব্য করেন। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে এক আদিবাসী ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'তোমরা কি এখনো একজন আরেকজনের দিকে বর্শা নিক্ষেপ করো?'

১০. বাবা হিসেবে প্রিন্স ফিলিপ নাকি ছিলেন বেশ কড়া মেজাজের। বাবার ধমক খেয়ে ছোটবেলায় প্রিন্স চার্লসকে প্রকাশ্যে কাঁদতেও নাকি দেখা গেছে। পুত্রবধূ প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে তার ব্যবহার নিয়েও অনেক রকম কথা চালু ছিল। ডায়ানার প্রেমিক ডোডি আল ফায়েদের বাবা মোহাম্মদ আল ফায়েদ অভিযোগ করেছিলেন ডায়ানাকে প্রিন্স ফিলিপের নির্দেশে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই অভিযোগের কোনো সত্যতাই পাওয়া যায়নি সরকারি তদন্তে। বরং পরবর্তীকালে রাজপরিবারের তরফে প্রকাশ করা প্রিন্সেস ডায়ানার কিছু চিঠিতে বরং দুজনের মধ্যে চমৎকার সম্পর্কেরই প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব চিঠিতে প্রিন্সেস ডায়ানা প্রিন্স ফিলিপকে ‘ডিয়ার পা’বলে সম্বোধন করেন।

বিবিসি বাংলা’র প্রতিবেদন

Sunday, April 4, 2021

 

কেউ কথা শোনে না 

তবে কথা না শোনার পিছনে টাকা-পয়সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমি খেয়াল করে দেখেছি মাসের বেতন পাওয়ার পর থেকেই আমি কানে কম শুনতে থাকি...


কেউ কথা শোনে না
আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ, কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আফসোস করে গেছেন, ৩৩ বছর কাটলেও নাকি কেউ কথা রাখেনি। আর এখন আমাদের আফসোস, করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা উঠলেই মনে হয়, কেউ কথা শোনে না। স্বাস্থ্যবিধি ছাড়াও অন্যান্য প্রসঙ্গে অনেকেই কথা শুনলেও উল্টোভাবে শোনে। ডানে বললে বামে যায়, সামনে বললে পেছনে যায়। এ না শোনা বা উল্টো শোনার কারণে কত বিপদ যে হয়, বলে শেষ করা যাবে না। আমার এক বড়ভাই গতকাল দুঃখ করে বললেন, আগে মনে করতাম শুধু বাচ্চারাই বুঝি কথা শোনে না। কিন্তু এখন দেখি শুধু বাচ্চারা না, বাচ্চার মায়েরাও কথা শোনে না। আমি অবাক হয়ে বললাম, তার মানে আপনি ভাবীকে দোষারোপ করছেন? এটা কিন্তু ঠিক না ভাই। ভাবীকে দোষারোপ করবেন তো বাসায় রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে যাবে। তখন কী করবেন? বড়ভাই বললেন, রান্নাবান্না বন্ধ হলে হোক। তবু সত্যটা আমি প্রকাশ করবই। কারণ, তোর ভাবী আসলেই কথা শোনে না। আমি বললাম, একটু উদাহরণ দিন তো শুনি উনি মূলত কী করেন। বড়ভাই বললেন, আমি ওইদিন তোর ভাবীকে বললাম বিদেশি সিরিয়াল দেখা যাবে না। সে কোনো কথা বলল না। আমি ভাবলাম আমার কথা বুঝি মেনে নিয়েছে। কিন্তু একটু পরেই দেখি বসে সিরিয়াল দেখছে। আমি বললাম, কী ব্যাপার, তোমাকে না সিরিয়াল দেখতে নিষেধ করেছি? তোর ভাবী কী বলে জানিস? বলে তোমাকেও তো আমি অনেকবার খেলা দেখতে নিষেধ করেছি। তাও তো তুমি বসে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা খেলা দেখ। আমি রেগে বললাম, খেলা দেখা আর বিদেশি সিরিয়াল দেখা কি এক? তোর ভাবী কী বলে জানিস? বলে, অবশ্যই এক। কারণ, সবসময় বাংলাদেশের খেলা থাকে না। বিদেশিদের খেলাই বেশিরভাগ সময় থাকে। তো বিদেশি সিরিয়াল আর বিদেশি প্লেয়ারদের খেলা, ব্যস, সমান সমান।

আমার এক বন্ধু বলল, সত্যি কেউ কথা শোনে না। আমি বললাম, কী রকম? বন্ধু বলল, আমার প্রেমিকাকে বলেছিলাম আমাকে যাতে ‘বাবু’ বলে না ডাকে। কারণ, ‘বাবু’ ডাকটাই কেমন ন্যাকান্যাকা লাগে। অথচ সে আমার কথা শোনেনি। আমাকে সে এখনো ‘বাবু’ বলেই ডাকে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কারণ কী। বাবু বলে ডাকতে নিষেধ করার পরও কেন ডাকছ? সে বলে কি, যেহেতু নবজাতক বাচ্চাদের সঙ্গে তোমার একটা মিল আছে, তাই তোমাকে বাবু ডাকতেই পারি। আমি বললাম, কী ধরনের মিল? সে বলল, ছোট বাচ্চাদের মাথায়ও চুল কম থাকে, তোমার মাথায়ও চুল কম। এটা বলেই সে আমার মাথার ক্যাপ টেনে খুলে ফেলল।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আপনার ভাবী একদমই কথা শোনে না। আমি বললাম তরকারিতে ঝাল বেশি করে দেওয়ার জন্য, আর সে কম কম করে দেয়। ভাত খেয়ে একদম মজা পাই না। আমি বললাম, ভাত খেয়ে মজা না পেলে সেটা সমস্যাই বটে। কিন্তু আপনি বলার পরও ভাবী তরকারিতে ঝাল কেন দেয় না, একটু জানতে পারি? প্রতিবেশী বললেন, জানতে তো অবশ্যই পারেন। কিন্তু জানাতে একটু লজ্জা পাচ্ছি, এই আরকি। আমি বললাম, লজ্জার কিছু নেই। আপনি বলেন। প্রতিবেশী বললেন, আমার বউ মনে করে সে দেখতে খুবই মিষ্টি। তাই তরকারিতে ঝাল দিলেও নাকি সেটা ঝাল থাকে না। মিষ্টি হয়ে যায়। কী উদ্ভট কথা বলেন তো দেখি!

আমার এক বন্ধুকে দুই দিন আগে বললাম, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন জারি করা হয়, কিন্তু মানুষ শোনে না। কারণটা কী বল তো! বন্ধু বলল, সবই প্রযুক্তির কুফল।  কানে যদি হেডফোন লাগানো থাকে তাহলে কেউ কি কিছু শোনে? আর হেডফোন তো প্রযুক্তিরই অংশ, নাকি?

তবে কথা না শোনার পেছনে টাকা-পয়সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমি খেয়াল করে দেখেছি মাসের বেতন পাওয়ার পর থেকেই আমি কানে কম শুনতে থাকি। ঘরের বাজার, নানারকম বিল প্রদান, বাকির টাকা ফেরত দেওয়া ইত্যাদি খরচের কথা উঠলেই কানে কম শুনতে পাই। তখন অনেকেই বলতে শুরু করে আমি নাকি কথা শুনি না। সে বললে বলুক। এত শুনে পারা যাবে? কানেরও বিশ্রাম প্রয়োজন। তাকে মাঝে মধ্যে বিশ্রাম দেই আরকি!

লেখকঃইকবাল খন্দকার