মিরাজের রাজকীয় অভিষেকে বাংলাদেশের দারুণ দিন
এমন একটা দিনের কথা কি ম্যাচটা শুরুর আগে ভাবতে পেরেছিলেন কেউ? বারবার টেস্টে বাংলাদেশের বোলিং দুর্বলতার কথাই উঠে আসছিল আলোচনায়। কিন্তু টিনএজার মেহেদি হাসান মিরাজ টেস্ট অভিষেকেই যে কাণ্ড করলেন তাতে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনটা স্বাগতিক বাংলাদেশেরই। ক্যারিয়ারের প্রথম ইনিংসেই ৫ উইকেট শিকার করেছেন ১৮ বছরের মেহেদি। তাতে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৫৮ রান। দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন ক্রিস ওকস (৩৬) ও আদিল রশিদ (৫)।
মেহেদির বোলিং দেখে ভারত থেকে সেই দেশের সেরা অফ স্পিনার টুইট করেন। এই অফি তো ভালো! আর ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের জন্য মেহেদি এসেছেন সিলেবাসের বাইরের প্রশ্ন হিসেবে। যে প্রশ্নের উত্তর অজানা। চেষ্টা করে যাওয়া যায় তবু। কিন্তু সাফল্য আসে না।অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের অধিনায়ক মেহেদি ম্যাচের দ্বিতীয় ওভার করলেন। টেস্টে নিজের প্রথম ১১ ওভারেই নিলেন ৩ উইকেট। ইংলিশদের টপ অর্ডার ভাঙলেন প্রথম সেশনে। দ্বিতীয় সেশনে প্রতিপক্ষের সেরা স্পিন খেলা ব্যাটসম্যানও তার শিকার। তাতে জুটি ভাঙে। বিপদ বাড়ে প্রতিপক্ষের। আবার তৃতীয় সেশনে দেয়াল তুলে দেওয়া দুই হাফ সেঞ্চুরিয়ানকে তুলে নিয়ে দলকে দেন উৎসবের উপলক্ষ। দিনটাও শেষ হয় মেহেদির বোলিংয়ে। আর দিন শেষে মেহেদির ওপর বোলিংয়ের চাপটা স্পষ্ট। ফিগার ৩৩-৬-৬৪-৫! অবশ্য অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়া দেশের সপ্তম বোলারের রেকর্ডটা এই পরিশ্রম নিশ্চয় মাঠেই ভুলিয়ে দিয়েছে মেহেদিকে।তিন খেলোয়াড়ের টেস্ট অভিষেক এক সাথে। সাব্বির রহমান, মেহেদি ও কামরুল ইসলাম রাব্বি। কামরুল সুবিধা করতে পারেননি পেসে। সাব্বির মূলত ব্যাটসম্যান। অল-রাউন্ডার মেহেদি প্রথম সুযোগেই বোলিং জাদুতে আটকেছেন ইংলিশদের।
স্পিনবান্ধব উইকেট। কিন্তু প্রথম দিনেই স্পিনারদের এতটা বন্ধু হবে ভাবা যায়নি। দিনের ৭ উইকেটই স্পিনারদের। দুটি দেশের সেরা বোলার সাকিবের। আসলে স্পিনেই কাবু ইংলিশরা। শুরুটা মেহেদির হাতে। ম্যাচের দশম ওভার। মেহেদির পঞ্চম। তার বাঁক খাওয়া বল বুঝতে না পেরে বোল্ড অভিষিক্ত বেন ডাকেট (১৪)। টানা তিন ওভারে তিন আঘাত টাইগারদের। সাকিব তুলে নেন এই ম্যাচেই ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ টেস্ট খেলার রেকর্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুককে (৪)। ১৮ রানে ২ উইকেট নেই। ২১ রানে পড়ে তৃতীয়টি। গ্যারি ব্যালান্স (১) এসেই মেহেদির শিকার।এরপর যথার্থই টেস্ট খেলে মঈন আলি ও জো রুট প্রতিরোধ গড়েন। লাঞ্চে যান ৩ উইকেটে ৮১ রান নিয়ে। লাঞ্চের পরের ওভারেই রোমাঞ্চ। সাকিবের তিন বলে দুবার আউট হয়ে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মঈন। লাঞ্চের আগেই তাই হয়েছে। সাকিবের ৬ বলের মধ্যে ৩বার রিভিউ বাঁচিয়েছে তাকে। আম্পায়াররাও স্পিনে বিভ্রান্ত! মোট ৫টি রিভিউ বাঁচিয়েছে মঈনকে।কিন্তু লাঞ্চের পর খেলা দ্বিতীয় বলেই জো রুট (৪০) আউট। তিনি মেহেদির তৃতীয় শিকার হলে ভাঙে মঈনের সাথে তার ৬২ রানের জুটি। এরপর সাকিব বোল্ড করে দেন বেন স্টোকসকে (১৮)। কিন্তু মঈনের সাথে এবার জুটি বাধেন জনি বেয়ারস্টো। তাইজুল ইসলামের বলে সাব্বির রহমান ফেললেন ১৩ রানে থাকা বেয়ারস্টোর ক্যাচ। মূল্যটা দিতে হয়েছে। ৫ উইকেটে ১৭৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করে ইংল্যান্ড।
শেষ সেশনে দুই আঘাত। দুই সেট ব্যাটসম্যান আউট। দুবারই শিকারীর নাম মেহেদি। ১৭০ বলে ৬৮ রান করা মঈন শেষ পর্যন্ত মেহেদির স্পিনে হার মেনে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দেন। বেয়ারস্টো দিনটা শেষই করে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে ৫২ রানে বোল্ড করে দিয়ে তা হতে দেননি মেহেদি। ভাঙে ৮৮ রানের জুটি। এরপর মেহেদিও সাফল্য পায়নি। বাংলাদেশও না। তারপরও মেহেদির বীরত্বে কাটানো দিনটায় স্বস্তিই পেল বাংলাদেশ। যদিও ইংল্যান্ড দলেও তিন স্পিনার। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদেরও স্পিনের সামনে পরীক্ষা দেওয়ার সময় এলো বলে!
No comments:
Post a Comment