Wednesday, October 19, 2016

৪৪ ডিলারশিপ বাতিল, ১১ মামলায় গ্রেফতার ৬

১০ টাকার চালে ১২ অনিয়ম

সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ নিয়ে নানা অনিয়ম চলছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর থেকেই শুরু হওয়া এ অনিয়ম গত দেড় মাসে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। হতদরিদ্রদের মধ্যে বিক্রির জন্য বরাদ্দ দেওয়া এ চাল বিক্রি নিয়ে অন্তত ১২ ধরনের অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে স্বজনপ্রীতির কারণে নির্ধারিত সময়ে তালিকা করতে না পেরে সেপ্টেম্বরে বরাদ্দ চাল যেমন বাতিল হয়েছে; তেমনি অনিয়ম ধরা পড়ায় স্থগিত করা হয়েছে বিক্রি। গাফিলতির কারণে কোনো কোনো জায়গায় চাল বিক্রি শুরুই হয়নি। ডিলার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ যেমন এসেছে, তেমনি এসব প্রভাবশালী নিজেদের সচ্ছল আত্মীয়স্বজনের নামে নির্দ্বিধায় কার্ড করে চাল তুলছেন। অথচ এসব সচ্ছল পরিবারগুলো সে চাল ডিলারের দোকানের সামনেই বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং অনেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন গৃহপালিত প্রাণীদের খাবার হিসেবে। তালিকায় নাম তুলতে যেমন ঘুষ নেওয়া হচ্ছে, তেমনি কম দেওয়া হচ্ছে ওজনে। কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে এসব চাল। পরে ধরা পড়ার ঘটনাও ঘটছে। একটি জায়গায় কার্ডে নাম তোলার জন্য অগ্রিম টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে কার্ড দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সেখানে চাল বিক্রিই বন্ধ করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ফলে এ চাল বিতরণ নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত দেড় মাসে জনপ্রতিনিধিদের ওপর বেশ কিছু হামলার ঘটনা ঘটেছে। জেলা প্রশাসনে অভিযোগের স্তূপ জমেছে। মামলা হচ্ছে। কোথাও ডিলারশিপ বাতিলও হচ্ছে। ক্ষোভ বাড়ছে গরিব মানুষের মধ্যে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে হতদরিদ্রদের চাল বিক্রিকে কেন্দ্র করে এমন অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে।সর্বশেষ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ অনিয়মের কথা স্বীকার করলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। সম্মেলনে জানানো হয়, অনিয়মের কারণে ৪৪ জনের ডিলারশিপ বাতিল ও অনিয়মের অভিযোগে করা ১১টি মামলায় ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এ কর্মসূচি চালুর পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়েছে। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি, করছি, আরো করব। অনিয়মে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। এই চাল হতদরিদ্ররাই পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামে ‘খাদ্যবান্ধব’ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। হতদরিদ্ররা মার্চ, এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর এ পাঁচ মাস ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল কিনতে পারবেন। চাল পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী, বিধবা ও প্রতিবন্ধী নারীদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকেই ১০ টাকা কেজি দরের এ চাল বিতরণ নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকে। ৫ অক্টোবর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। পরে ৯ অক্টোবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনিয়মের প্রতিবেদন যাচাই করতে আট বিভাগের জন্য আটটি তদন্ত দল গঠন করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। অথচ সেই তদন্ত দলের সদস্যদের বিরুদ্ধেই পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ডিলারদের অনিয়ম এবং খাদ্য অধিদফতরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতি। বিশেষ করে ওই দুই কমিটির সদস্যরা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা হওয়ায় প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

No comments:

Post a Comment