দাম বাড়ছে চাল চিনি ও ভোজ্যতেলের
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে চাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। পণ্যগুলোর দরবৃদ্ধিতে চাপ পড়ছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর। অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েক মাস আগে রোজার ঈদের সময়ও রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ছিল ২০-২২ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৩৬ টাকায়। অর্থাত্ এ সময়ের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ১৪-১৫ টাকা। ওই সময় রাজধানীতে খুচরায় প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছিল ২৫-২৮ টাকায়। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮-৪০ টাকায়। অর্থাত্ একই সময়ে খুচরায় পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ১২-১৩ টাকা। অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে অন্যান্য চালের দামও। অথচ বাজারে চালের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছেন পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, সরকারের চাল ক্রয় ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির সুযোগ নিতে অস্বাভাবিকহারে পণ্যটির দাম বাড়িয়েছেন মিল মালিকরা। অতিরিক্ত মুনাফা করতে গিয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে তারা পণ্যটির দাম বাড়িয়ে এনেছেন দ্বিগুণের কাছাকাছি।
চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) বাজেটে স্থানীয় কৃষকদের লাভবান করতে চালের আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি বাড়ানো হয়। এ কারণে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছেন অনেকেই। এরই সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু মিল মালিকরা।
বর্তমানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৯০ টাকায়। এ হিসাবে পণ্যটির কেজিপ্রতি মূল্য দাঁড়ায় ৬৬ টাকা ৪৫ পয়সায়। এর আগে চিনির বাজার এভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছিল সর্বশেষ ২০১১ সালে।
গত বছরও রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছিল ৩০-৩১ টাকায়। এরপর সরকার দুই দফায় ১৩-১৮ টাকা শুল্ক বাড়ানোয় ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে পণ্যটির দাম। রাজধানীর খুচরা বাজারে বর্তমানে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০-৭২ টাকায়।
জানা গেছে, স্থানীয় মিলগুলো রক্ষার জন্য বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অনুরোধে পণ্যটির আমদানিতে এ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। ওই সময় চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের গুদামে পণ্যটির বিপুল পরিমাণ মজুদ থাকলেও বর্তমানে তা নেই। এ অবস্থায় চিনি ও উত্পাদন কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে সরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের অনেকেই পণ্যটির দরবৃৃদ্ধির জন্য বেসরকারি মিল মালিকদের দায়ী করছেন। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দেশের বেসরকারি চিনির মিল মালিকরা রাতারাতি ধনী হওয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে বাজারে প্রকৃতের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে চিনি বিক্রি করছেন তারা। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেয়া উচিত।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে দেশে পরিবেশক পর্যায়ে চিনির মূল্য হ্রাস পেলেও খুচরায় কমেনি। বর্তমানে বাজারে পরিবেশক পর্যায়ে প্রতি মণ চিনি ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে পরিবেশক পর্যায়ে পণ্যটির দাম পড়ে প্রতি কেজি ৬১ টাকা ৬৩ পয়সা।
প্রসঙ্গত, দেশের বাজারে চিনির বার্ষিক চাহিদার ৯০ ভাগই পূরণ করছে বেসরকারি মিলগুলো। বাকিটা পূরণ হচ্ছে সরকারি মিলগুলো থেকে।
চাল ও চিনির মতো ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। রাজধানীর বাজারে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম আড়াই মাসের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দেশে পণ্যটির দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
দুই মাস আগেও রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় প্রতি কেজি সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৮০-৮২ টাকায়। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯২ টাকায়। একইভাবে ৭০-৭২ টাকা কেজির সুপার পাম ৭৮-৮০ টাকায় ও ৬৭-৬৮ টাকা কেজির পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৭৬-৭৭ টাকায়।
ভোজ্যতেলের দরবৃদ্ধির এ প্রবণতা সবচেয়ে প্রকট পাইকারিতে। রাজধানীর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮-৮৯ টাকায়। এছাড়া সুপার পাম ৭৬-৭৭ ও পাম অয়েল ৭৪-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে সব ধরনের ভোজ্যতেলের বার্ষিক সম্মিলিত চাহিদা প্রায় ১৫-১৮ লাখ টন। বিপুল পরিমাণ চাহিদার বিপরীতে দেশে এ ধরনের পণ্য উত্পাদন হচ্ছে মাত্র ২-৪ লাখ টন। ভোজ্যতেলের চাহিদার অধিকাংশই পূরণ করা হচ্ছে বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে ভোজ্যতেল ও তেলবীজের মোট আমদানি ছিল ৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকার। পরের দুই অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৮ হাজার ৩৩৬ কোটি ও ১৪ হাজার ৪৭১ কোটি টাকায়। এছাড়া ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪-তে ১৩ হাজার ৮৪৬ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১২ হাজার ৪০৬ কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে।
No comments:
Post a Comment