Wednesday, February 15, 2017

জয়-পরাজয় বড় নয়

নির্বাচনে গিয়ে নতুন ইসিকে দেখতে চায় বিএনপি

রাষ্ট্রপতি গঠিত নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) নিয়ে বিতর্ক তুলেছে বিএনপি। সিইসিকে সরাসরি সরকারদলীয় আমলা বলে অভিযুক্ত করেছে। এমনকি অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধেও কমবেশি আপত্তি রয়েছে দলের। অথচ সেই সিইসির অধীনে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকারের বেশ কিছু নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে দলটি। ফলে এই নির্বাচন দুই পক্ষের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মুখোমুখি অবস্থান নেওয়া কোনো পক্ষই এসব নির্বাচনে কাউকে ন্যূনতম ছাড় দিতে চাইবে না।
আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় উপজেলা ও মে মাসে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে নতুন ইসির প্রথম পরীক্ষা হিসেবেই দেখছে বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনে না গেলেও অতীতের সব স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে দলটি। অবশ্য এসব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পেছনে দুটি অঙ্ক কষছে বিএনপি। দলীয় সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনের জন্য মাঠ প্রস্তুতি এবং ভঙ্গুর সংগঠনকে চাঙা রাখতেই সামনের সব ধরনের নির্বাচনে প্রার্থী দেবে দল। এর বাইরে আলোচনায় থাকা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে মোকাবিলা করতে চায় বিএনপি। অন্যদিকে জয়-পরাজয়ের কথা অতটা বিবেচনায় না নিয়ে এসব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ইসির নিরপেক্ষতার পরীক্ষা নিতে চায় দলটি। এর জন্য নির্বাচনগুলোতে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনী মাঠে শক্ত অবস্থান নেবে তারা। নিরপেক্ষতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে পরবর্তীতে সেটিকে ইস্যু করে সামনে কর্মসূচিও নির্ধারণ করতে পারে বিএনপি।
দলের নেতাদের মতে, বর্তমান সিইসি সরকার সমর্থক একজন আমলা। সরকার দলের পছন্দের আমলাকে দিয়ে নতুন যে নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রপতি করেছেন, তা সদ্য বিদায় নেওয়া কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন থেকেও খারাপ হতে পারে বলে ধারণা তাদের। দলের নেতারা আরো মনে করছেন, সরকার তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতেই এমন কমিশন করেছে। তার পরও বিএনপি বর্তমান ইসিকে প্রত্যাখ্যান করেনি। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করেই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ইস্যুতে মাঠে নামতে চায় বিএনপি।
দলীয় সূত্র আরো জানায়, সামনের স্থানীয় নির্বাচন এতটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ইসির মেজাজ দেখতেই প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। তাছাড়া দলীয় প্রতীকের নির্বাচন হওয়ায় তা কোনোভাবেই বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড়তে চায় না দলটি। যদিও দলটির নেতারা মনে করছেন, গত স্থানীয় নির্বাচনগুলো যেভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এর থেকে বেরিয়ে এসে ভালো নির্বাচন নতুন কমিশন দিতে পারবে না। ফলে নির্বাচনে অংশ নিলে ইসির পরীক্ষা হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সে দিনও পত্রপত্রিকায় দেখলাম ফেনীর এক সংসদ সদস্যের দেওয়া বক্তৃতায় বলেছেন, তারা সারা দেশে ফেনীর স্টাইলে নির্বাচন দেখতে চায়। এ কথাগুলোর বিপরীতে বর্তমান ইসি কেমন পারফরম্যান্স দেখায়, তাই দেখার বিষয়।
এই নেতা আরো বলেন, ‘বিএনপি এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত স্থানীয় সব নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। কিন্তু সবগুলো নির্বাচনেই ইসি পক্ষপাতিত্ব করেছে। নির্লজ্জভাবে সরকারের পক্ষ নিয়েছে। বিদায়ী ইসি নির্বাচনের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে অনাস্থা তৈরি করেছে। নতুন ইসিকে প্রথমেই সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। মানুষকে ভোট প্রদানে উৎসাহ দিতে হবে। আমরা সামনে কিছু নির্বাচন ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন পর্যবেক্ষণ করতে চাই। যদিও আমরা ভালো কিছু আশা করতে পারছি না।’
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, আগামী ৬ মার্চ ১৮ উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হবে। এর মধ্যে তিনটিতে চেয়ারম্যানসহ সব পদে এবং ১৫টি উপজেলা পরিষদের কোনোটিতে চেয়ারম্যান পদে আবার কোনোটিতে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। সিলেটের ওসমানীনগর, খাগড়াছড়ির গুইমারা ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। এ ছাড়া বরিশালের বানারীপাড়া ও গৌরনদী, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কুমিল্লা সদর, পাবনার সুজানগর, কুড়িগ্রাম সদর ও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে শুধু চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। নাটোরের বড়াইগ্রাম, নীলফামারীর জলঢাকা, সাতক্ষীরার কলারোয়া, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে এবং পাবনার ঈশ্বরদী ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে। মামলা, মৃত্যুসহ নানা কারণে এসব উপজেলায় বিভিন্ন পদে নির্বাচন হয়নি। তফসিল অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ১৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
এ ছাড়া আগামী ২২ মার্চ গাইবান্ধা-১ আসনে উপনির্বাচন করার সিডিউল রয়েছে কমিশনের। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম নিহত হওয়ায় এ আসনটি শূন্য হয়। এর বাইরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা আসনেও উপনির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। অবশ্য বিএনপি সংসদীয় কোনো আসনের উপনির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী নয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের আরো বেশ কয়েকটি সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। স্থানীয় নির্বাচনের বাইরে দেশের বড় বড় সিটি নির্বাচনগুলোয় মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি। সেই চিন্তা থেকেই বিএনপি নির্বাচনগুলোতে অংশ নিচ্ছে ও গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি। বর্তমান সরকারের অধীনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম এবং সদ্য অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি বাদে সবকটিতে জয়ও পেয়েছে বিএনপি। দলের অভিযোগ, যে সিটি নির্বাচনগুলোতে বিএনপি হেরেছে, সেগুলোতে সরকারের ইচ্ছায় কমিশন নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়ম করেছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে সব স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছি, কিন্তু দেশবাসী লক্ষ করেছে নির্বাচনের নামে তামাশা করেছে সদ্য বিদায়ী ইসি। এবারও যে সেই রকম কিছুই হয়তো হতে যাচ্ছে। তার পরও নির্বাচনে থাকবে বিএনপি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে নির্বাচন ভালো ভূমিকা রাখে। তাছাড়া সারা দেশের অধিকাংশ জেলা ও থানায় নতুন নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। যেসব জায়গায় এখনো কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি, সেখানে শিগগিরই দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচনেও।লেখক: বদরুল আলম মজুমদার

No comments:

Post a Comment