সফল তারুণ্যে বৈশিষ্ট্য
একজন সফল তরুণ উদ্যোক্তার কিছু সুনির্দিষ্ট গুণাবলি তাকে তার সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।বিল গেটস, স্টিভ জবস, টমাস এডিসন, লি কে সিং, রিচার্ড ব্রান সন, লরেন্স জে ইলিসন, মাইকেল ডেল, হেনরি ফর্ড, ওয়াল্ট ডিসনে, জুকারবার্গ, ডেব্যি ফিল্ডস—এমন অনেকের নাম এখন তরুণদের কাছে উদ্যোক্তা থেকে আইকন হিসেবে পরিচিত। শুধু উদ্যম, তারুণ্য, স্বপ্নই কি তাদের এই সফলতার স্বাদ দিয়েছে। বিল গেটস তার সফলতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা তরুণ ছিলাম, তবে আমাদের সঙ্গে ছিল সঠিক দিকনির্দেশনা, ভালো আইডিয়া এবং প্রচণ্ড উদ্দীপনা।’
প্রচণ্ড মানসিক শক্তি ও নিয়ন্ত্রিত আবেগ : নিজের কাজের প্রতি আবেগী এবং প্রচ- মানসিক দৃঢ়তা সফলতার পূর্ব শর্ত। এ বিষয়ে অ্যালিকো ড্যানগোটের একটি চমৎকার মন্তব্য আছে, ‘আবেগ তাই, যা আমাকে সামনে নিয়ে যায়। কাজের প্রতি আমার আবেগই আমাকে রাত ২টায় বিছানায় এবং ভোর ৬টায় ঘুম থেকে কাজের দিকে মনোনিবেশ করতে তাড়িত করে।’
দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন : একজন সফল উদ্যোক্তা দায়িত্ব এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভালোবাসে। কোনো ভুল হলে সে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় এবং সহকর্মীর ওপর দোষ চাপাতে পছন্দ করে না। এ প্রসঙ্গে স্টিভ জবসের একটি উক্তি হলো—‘কখনও নতুন কাজ শুরু করেছ, ভুল হতেই পারে। সবচেয়ে ভালো, ভুল কাটিয়ে উঠতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং কাজের প্রতি মনোনিবেশ করা।’
নিজের প্রতি বিশ্বাস : নিজের প্রতি বিশ্বাস এবং আস্থাশীল হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সে বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। সব বাধা অতিক্রম করেই আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে। বিশ্বাসের অভাব হলে কোনো কিছুই সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।
অধ্যবসায় ও নিয়মানুবর্তিতা : কাজের প্রতি অটল থাকা, ধারাবাহিকভাবে কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান হওয়া, কাজে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করাই একজন সফল উদ্যোক্তার লক্ষ্য। সফল হতে হলে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে দৃষ্টি রাখা : একজন সফল উদ্যোক্তা তার লক্ষ্যের প্রতি স্থির থাকেন এবং লক্ষ্য মাথায় রেখে সুনির্দিষ্ট কিছু কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্যবিহীন কোনো কাজেই সফলতা আসে না।
ধৈর্যশীল হওয়া : প্রতিটি কোম্পানিকেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। একজন সফল উদ্যোক্তা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধৈর্যশীল থাকে এবং খুব শান্ত স্বভাবে পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা : জে পাওয়েল গেটির একটি উক্তি আছে—‘আপনাকে অবশ্যই আপনার নিজস্ব এবং লোনের অর্থ দিয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। ঝুঁকি ব্যবসায়কে চালিয়ে নেয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
সুকৌশলী : আজকের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যবসায় ভালো করতে হলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কোন সময় কিভাবে ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে হয়, কখন কী পণ্য বাজারে চাহিদা তৈরি করে, অন্য কোম্পানি থেকে কিভাবে আলাদা হওয়া যায়—এসব বিষয়ে কৌশলী হতে হয়।
দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন : একজন সফল উদ্যোক্তা তার ব্যক্তিগত অবস্থানের প্রতি অনেক বেশি সতর্ক থাকেন। এ সম্পর্কে ওয়ারেন বাফেটের একটি উক্তি হলো—‘সুনাম অর্জন করতে হয়তো বিশ বছর লাগে, কিন্তু মাত্র পাঁচ মিনিটেই তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। কেউ যদি এভাবে চিন্তা করে, তবে সে আলাদা কিছু করবে।’
চাপ নেয়ার মানসিকতা : ব্যবসায়ে ঝামেলা থাকবেই, তবে সেই ঝামেলাকে একজন সফল উদ্যোক্তা সহজভাবে মোকাবিলা করেন। কাজ ও অন্যান্য চাপের মধ্য দিয়ে ধীরস্থির হয়ে সফলভাবে এগিয়ে যান যিনি, তিনিই একজন সফল উদ্যোক্তা।
ভুলের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না : কাজে প্রাথমিক অবস্থায় ভুল হতেই পারে, কিন্তু একজন সফল উদ্যোক্তা একই ভুল একাধিকবার করেন না। এ সম্পর্কে হেনরি ফর্ডের একটি উক্তি আছে—‘ভুল শুধু কিছুক্ষণ থমকে থাকা, এটা একটি সুযোগ বুদ্ধিমানের মতো আবার নতুন করে শুরু করা।’
পরিতৃপ্ত থাকা : একজন সফল উদ্যোক্তা অনেক সুসময়-দুঃসময়ের মধ্যে থেকেই পরিতৃপ্তি খুঁজে নেন এবং এগিয়ে যান। সফল হতে হলে নিজের কাজের প্রতি পরিতৃপ্ত থাকতে হবে। এই গুণাবলিগুলো যদি একজন উদ্যোক্তা আয়ত্ত করতে পারে, তবে তার সাফল্য সুনিশ্চিত।
No comments:
Post a Comment