বিশ্বব্যাংক বনাম মাটিরব্যাংক
বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবেই অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসা একটি দেশ। নিজেদের ভাষার অধিকার, কথা বলার অধিকার থেকে শুরু করে মানুষের সম্মানভাবে বেঁচে থাকার পথ মসৃণ করে এমন প্রত্যেকটি অধিকার এ দেশের মানুষকে অর্জন করে নিতে হয়েছে।
কখনো সংগ্রামে, কখনো বুকের তাজা রক্তে, কখনো সম্ভ্রমে কিংবা কখনো অত্যাচারী লালচোখের সামনে কোদাল, কাস্তে, লাঙল জোয়াল, কলম, প্ল্যাকার্ড, লাশ কাদে নিয়ে মিছিলের মাধ্যমে মুক্তির অর্জন কিংবা অধিকারের চারাগাছ বপন করা হয়েছে।
এতো সংগ্রাম এতো রক্ত, এতো ত্যাগের অর্জনে আমরা যখন বারবার এগিয়ে যাই কিংবা অধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি চূড়ান্ত অর্থনৈতিক মুক্তির দিকে, তখন আমরা দেখেছি আমাদের এ দেশীয় কিছু বাস্টার্ড আর বহিঃশত্রু অপশক্তি নানান ষড়যন্ত্র এবং অন্ধকারের কালো হাতগুলো লর্ডক্লাইভের সেই জংধরা ভোতা খঞ্জরটি ব্যবহার করে যাচ্ছে বাঙালির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক মুক্তি রুখে দেয়ার জন্য।
পাকিস্তানি এ দেশীয় দোসররা এখনো জীবিত, এখনো বীরদর্পে রাজনীতি করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উন্নতি এবং অগ্রগতিতে তাদের অনেক জ্বালা। তাদের যে জ্বলে এটা আমরা সর্বশেষ দেখতে পেয়েছি বিশ্বব্যাংক সাজানো ষড়যন্ত্রের তথাকথিত কেলেঙ্কারিতে। দেশীয় বেঈমানদের কথায় পরে আসি, আগে বিদেশ ঘুরে আসি। আমরা দেখেছি কিভাবে সেদিন বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে উলঙ্গ করার চেষ্টা করা হয়েছিল! বলা হয়েছিল যে পদ্মাসেতু প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতি হয়েছে! আরও বলা হয়েছিল যে, কোন একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ করা হয়েছে আর এই অভিযোগে পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন বাতিল করেছিল বিশ্বব্যাংক!
আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনারা (বিশ্বব্যাংক) সেদিন কি এই অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করেছিলেন? কোনোরকম বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত করেছিলেন? এই অভিযোগগুলোর একটি অভিযোগের প্রমাণ দিতে পেরেছিলেন? যদি তা না হয় তবে কিসের ভিত্তিতে সেদিন এই অভিযোগগুলো করেছিলেন? কেন? আপনারা কারা (তৎকালীন বিশ্বব্যাংক প্রশাসন)? আপনারা আবার তারা নয়তো কিংবা তাদের উত্তরসূরি নয়তো যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার নগ্ন বিরোধিতা করেছিল?
আপনারা আবার তারা নয়তো যারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মে দুঃখ পেয়েছিল? আপনারা আবার তারা নয়তো যারা বাংলাদেশের মুক্তিকামী অসহায় মানুষের উপর নির্মম গণহত্যা হওয়ার পরও যখন বিশ্বমানবতা হতবাক তখন আপনারা আরেক দফা গণহত্যা চালাতে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিলেন আপনারা আবার তারা ননতো?
‘পদ্মাসেতু প্রকল্পে কোনোরকম অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়নি’ কানাডার আদালতের এমন রায়ের পর আজ আপনাদেরকে (বিশ্বব্যাংক) জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো ঐতিহাসিক শত্রুতার চক্ষুশূলতায় আপনারা এমন কলঙ্কের কালিমায় বাংলাদেশের সকল সবুজকে রক্তাক্ত করতে চেয়েছেন? অথবা যদি তা-ই না হয়ে থাকে তবে কাদের ইন্ধনে, ঠিক কত টাকার বিনিময়ে একটি দেশ, দেশের সরকার, একজন শেখ হাসিনা, একজন মশিউর রহমান, একজন আবুল হোসেন এবং একটি দেশের ষোল কোটি জনগণকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিলেন? তারা কারা? আপনাদেরকে আজ বিশ্বদরবারে তাদের নাম বলতে হবে। এবং বাংলাদেশে এসে কানধরে উঠবস করে ক্ষমা চাইতে হবে বাংলাদেশের জনগণের কাছে। একএক করে এ দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের নাম বলতে হবে যে তারা ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনুছ। ইউনুছ সাহেব আপনি বাংলাদেশের অসহায় হত দরিদ্র মানুষের রক্তচোষে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আজ সেই দেশের মানুষের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্র করেন!
আপনারা ঋণ না দিলেও আমরা হেরে যাই না। আমরা নিজেদের কষ্টে অর্জিত মাটির শরীরের ঘামেভেজা অর্থ দিয়ে পদ্মাসেতু তৈরি করতে পারি। এটা আমরা দেখিয়েছি। বিশ্বব্যাংকের চেয়ে আমাদের মাটির ব্যাংক শক্তিশালী। আমাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাসের মাটির ব্যাংক বিজয়ী
আপনি যদি এই ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে থাকেন তবে আপনি রাষ্ট্রদ্রোহী। আপনি বাংলাদেশের শত্রু। এই রাষ্ট্রদ্রোহী আপনাকে আর আপনার নোবেল না মার্বেল বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করি। বিশ্বব্যাংককে আজ বলতে হবে তারা কতো টাকার বিনিময়ে, কাদের ইন্ধনে এমন কলঙ্কিত অভিযোগটি করেছিলেন? তারা তারা নয়তো যারা তাদের সরকারে থাকা অবস্থায় তিন তিনবার বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নশিপ এনে দিয়ে হেট্রিক করিয়ে সেরাদের সেরা হয়েছিল! তারা কি তাদের প্রতিপক্ষ সরকারকে তাদের মতো সেরাদের সেরা (!) উপাধিটি এনে দিতে চেয়েছিল?
তারা তারা নয়তো যারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব জলাঞ্জলি দিয়ে, এ দেশের মানুষের আত্মসম্মানকে পায়ে ঠেলে দিয়ে, বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ চেয়ে একটি বিদেশি পত্রিকাকে চিঠি লিখেছিল? তারা তারা নয়তো যারা এদেশের রাজাকার যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীদের বাঁচাতে এই ষড়যন্ত্রের অংশ হয়েছিল? যদি তারা হয়ে থাকে তবে তাদের বলছি বেগম খালেদা জিয়া আপনি আপনার প্রতিপক্ষ দলের ঝাল বাংলাদেশের সাধারণ অসহায় নিপীড়িত মানুষের সঙ্গে দেখাতে পারেন না! শেখ হাসিনাকে পরাস্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে পারেন না! তাহলে আপনাকে বলতে চাই, আপনি বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। আর যারা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলামেলা করে আপনাকে প্রত্যাখ্যান করি।
বিশ্বব্যাংককে বলতে হবে আর কারা কারা ছিল বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী তাদের সঙ্গে কারা কারা ছিল। অবশ্যই বলতে হবে তাদেরকে। এখন আসি তথাকথিত সুশীল সমাজের কাছে। আপনারা যারা বিশ্বব্যাংক এবং তাদের এ দেশীয় দোসর ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে কোনরকম প্রমাণ ছাড়া নেচেছিলেন তারা আজ কি বলবেন?
বাংলাদেশের কিছু মানুষ আপনাদের কথার উপর আস্থা রেখে বিশ্বাস করেছিল যে, সুশীলরা যেহেতু বলছে তবে হয়তো দুর্নীতি হয়েছে! কিন্তু আজ যখন দেখেছে যে, আপনারা নাচুনে বুড়ি তখন আর আমাদের কথা সাধারণ বিশ্বাস করবে না। আপনাদেরকে একটি কথা মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা আপনার ব্যক্তিগত শত্রু হতে পারে। শেখ হাসিনার মতের সঙ্গে আপনার মতের দ্বিমত থাকতেই পারে। শেখ হাসিনা এবং তার মতকে আপনি পরাস্ত করতে চাইতেই পারেন। এটা গণতন্ত্রের অংশ। কিন্তু শেখ হাসিনা এবং তার মতকে পরাস্ত করতে গিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্যোদয়ের উন্নয়নে পথে যেন বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে নাতো! আপনার তৈরি বাঁশ সাধারণ উপর দিয়ে যাচ্ছে নাতো। কই আজ যখন প্রমাণ হয়েছে যে, কোনরকম অনিয়ম হয়নি তখন আপনার কোন নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে না!
এতো বড় ষড়যন্ত্র কেন আপনাদের আমাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক? জবাবগুলো দিতে হবে বিশ্বব্যাংককে। আপনারা কি মনে করেছিলেন আপনারা ষড়যন্ত্র করলে বাংলাদেশ থেমে যাবে? বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হবে না? স্বপ্নের পদ্মাসেতু থেমে থাকবে? আপনারা আকাশে তাকিয়ে বিজয় দেখেছিলেন। না আপনারা ভুল করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে অন্যায় করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন আমরা আর আপনাদের ধারধারি না। আপনারা ঋণ না দিলেও আমরা হেরে যাই না। ভিক্ষুকের মতো আপনাদের মুখ চেয়ে বসে থাকি না। আমরা নিজেদের কষ্টে অর্জিত মাটির শরীরের ঘামেভেজা অর্থ দিয়ে পদ্মাসেতু তৈরি করতে পারি। এটা আমরা দেখিয়েছি। বিশ্বব্যাংকের চেয়ে আমাদের মাটির ব্যাংক শক্তিশালী। আমাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাসের মাটির ব্যাংক বিজয়ী।লেখক: জালাল সুমন আহমেদ; কবি ও প্রাবন্ধিক।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিকজালাল সুমন আহমেদ
No comments:
Post a Comment