চেতনায় ভাসানী
১৭ নভেম্বর ১৯৭৬ শোক এবং বেদনাবিধুর একটি দিন। এ দিনের শোক ব্যক্তি বিশেষের একার নয়, সামষ্টিক। এ দিনে এদেশের অগণিত মানুষকে শোক বিহ্বল করে চিরবিদায় নেন মেহনতী, শ্রমজীবী, নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের কাণ্ডারী, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমৃত্যু আপসহীন সংগ্রামী মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। তার মৃত্যুর ৪০ বছর পূর্ণ হলো। সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে নিম্নবিত্ত এক কৃষক পরিবারে তার জন্ম। শৈশবেই পিতৃ-মাতৃ স্নেহ বঞ্চিত-অনাথ চেগা মিয়া চাচার আশ্রিত এবং চাচাই তাকে প্রতিপালন করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি বেশি দূর এগোতে পারেননি। পরে ভর্তি হন মাদ্রাসা শিক্ষায়। ভারতের দেওবন্দ থেকে শিক্ষা সমাপ্ত শেষে সময়কে অতিক্রম করে মানব মুক্তির সুকঠিন সংগ্রামে যুক্ত হয়েছিলেন। এবং সে অবস্থানে আমৃত্যু অবিচল থেকেছেন। তার অসীম সাহস আর নির্ভীক চেতনালব্ধ আপোসহীন-সংগ্রামী রাজনীতি আতঙ্কিত করেছিল স্থানীয় সামন্তদের যেমন, তেমনি সাম্রাজ্যবাদী চক্রকেও। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আপসহীন-অবিচল সংগ্রামে আমৃত্যু সক্রিয় ছিলেন। কখনো ছন্দপতন ঘটেনি। জনগণের মুক্তি সংগ্রামে সারা জীবন অকুতোভয় মওলানা ভাসানী। কখনো বিচ্যুতির নজির রেখে যাননি।
ব্রিটিশ ভারতে ইংরেজ শাসকদের অনুগত-আজ্ঞাবহ সামন্ত জমিদারদের বিরুদ্ধে নানা কর্মকাণ্ডের কারণে নিজ পৈতৃক ভূমি হতে বিতাড়িত চেগা মিয়ার নতুন আশ্রয় হয় আসামের ধুবড়ির নিকটবর্তী ভাসান চর। সেখানেও সামন্তবিরোধী লড়াই থেমে থাকেনি। ভাসান চরের দারিদ্র্যপীড়িত কৃষক-শ্রমজীবী মানুষদের সংগঠিত করে জোতদার-সামন্তদের বিরুদ্ধে সফল আন্দোলনে চেগা মিয়া হয়ে ওঠেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। সেই থেকে পৈতৃক চেগা মিয়া নামটি ছাপিয়ে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী নামে পরিচিতি লাভ করেন।
আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। করেছেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনও। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পূর্ববাংলায় ফিরে আসেন এবং দ্রুত মোহ ভঙ্গে মুসলিম লীগ ত্যাগ করে তারই নেতৃত্বে গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের অপশাসন এবং শোষণের বিরুদ্ধে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী নেতৃত্ব দিয়েছেন। জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেছেন, তবে আপস-সমঝোতার নজির রেখে যাননি। আন্দোলনেই মুক্তি সম্ভব, অন্য উপায়ে নয়—এই সত্য তিনি সারা জীবন ধারণ করেছেন। ক্ষমতার রাজনীতির শৃঙ্খল মুক্ত ছিলেন বলে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সারা জীবন অবিচল ছিলেন।
১৯৫৭ সালে বক্তৃতা মঞ্চ থেকে পাকিস্তানি পক্ষ ত্যাগে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। বৈষম্যপূর্ণ পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর অধীনে পূর্ববাংলার মানুষদের থাকা সম্ভব নয়, এই সত্যটি তিনি তখনই উপলব্ধি করেছিলেন। ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি রাষ্ট্র কাঠামো থেকে পৃথক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম। কিন্তু এই স্বাধীনতা সব মানুষের অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। সে কারণে স্বাধীন দেশে তার সংগ্রাম থেমে যায়নি। ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তার মতাদর্শিক অবস্থানের সামান্য পরিবর্তন ঘটেনি। এই শাসকশ্রেণিকে পরাভূত করা ব্যতীত জনগণের মুক্তি সম্ভব নয়; এই সত্যটি তার ন্যায় অন্য কেউ তখনো বোঝেনি। তাই আমৃত্যু সে পথেই অবিচল থেকেছেন।
ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক চুক্তি এবং যুদ্ধজোটবিরোধী আওয়ামী লীগের অবস্থান ছিল স্পষ্ট। অথচ হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ামাত্র দলীয় নীতি-সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক চুক্তি এবং যুদ্ধজোটের পক্ষাবলম্বনের কারণে দলীয় সভাপতি ভাসানী চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন আহ্বান করেন। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী সোহ্রাওয়ার্দীও মঞ্চে ছিলেন। সোহ্রাওয়ার্দীকে উদ্দেশ করে ভাষণে ভাসানী বলেছিলেন, ‘আমার জান যায় যাবে, আমি যুদ্ধজোটের বিরোধিতা করবই। আমাকে কেউ মানাতে চাইলেও মানব না। কবর থেকে চেঁচিয়ে উঠব, না-না ওই সর্বনাশা যুদ্ধজোটের পক্ষে আমি থাকব না।’ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত শেখ মুজিব নিজ মুক্তির দাবিতে দেশজুড়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জেল থেকে পত্র লিখেছিলেন অন্য কাউকে নয়, ভাসানীকে। তিনি জানতেন একমাত্র ভাসানীর পক্ষেই তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব। ভাসানীর নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে সামরিক শাসক আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকের বাতাবরণে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কৌশল এঁটেছিলেন। প্যারোলে মুক্তি এবং আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিতে শেখ মুজিবকে ভাসানী বারবার নিষেধ করেছিলেন। প্যারোলে মুক্তির বিরোধিতা করে ভাসানী বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘মুজিব তুমি প্যারোলে মুক্তি নেবে না। প্রয়োজনে আমরা কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করব।’ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভাসানী নির্বাচনে অংশ না নিয়ে একদিকে আওয়ামী লীগের বিজয় সহজ করেছিলেন, পাশাপাশি আমাদের জাতীয় ঐক্যের পথকে সুগম করেছিলেন। নিজেদের মধ্যে ভোটযুদ্ধে বিভেদ-দ্বন্দ্বের সুযোগ পাকিস্তানি শাসকদের হাতে তুলে দেননি। যার সুফল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের প্রতিফলন লক্ষ করা গেছে। পাকিস্তানিদের কুমতলব ভাসানী উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলেই শেখ মুজিবের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘মুজিব তুমি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশা ত্যাগ কর। তোমাকে ওরা প্রধানমন্ত্রী হতে দেবে না।’ দূরদর্শিতায় ভাসানী ছিলেন অসাধারণ। ভাসানীর আশঙ্কা কখনো বিফল হয়নি। তেমন অজস্র ঘটনা ও প্রমাণ আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে রয়েছে। যা বিস্মৃত হবে না।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ। তাজউদ্দীনের অস্থায়ী সরকারকে রক্ষায় তাজউদ্দীনের অনুরোধে দিল্লি থেকে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় কলকাতায় উড়ে এসে ভাসানী যোগ দিয়েছিলেন এবং সেই সুবাদে রক্ষা করেছিলেন যেমন তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন সরকারকে-তেমনি চলমান মুক্তিযুদ্ধকেও। তাজউদ্দীন আহমদের সরকার রক্ষায় মওলানা ভাসানী কলকাতায় মাত্র একবারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত হয়ে তাজউদ্দীনের সরকারের ওপর তার সমর্থন ব্যক্ত করেছিলেন। খন্দকার মোশতাক দিল্লিস্থ মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে পাকিস্তানের সঙ্গে আপস-সমঝোতার উদ্যোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিনাশে ভূমিকা পালনের কারণে তাজউদ্দীন দ্রুত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
মওলানা ভাসানীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে প্রকৃত শত্রুকে তিনি যথার্থই চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। চিহ্নিত এই শত্রু অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদবিরোধী তার অনড় অবস্থান সে প্রমাণই দেয়। বৈষম্যপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্রের অবসানে সারা জীবন লড়েছেন। আত্মসমর্পণ করেননি। নিজ দলের বর্ণচোরা চরম সুবিধাবাদী ডানপন্থীদের দৌরাত্ম্যে প্রকৃত বামেরা দলে টিকতে না পেরে ভাসানীকে ডানপন্থী-সুবিধাবাদীদের হাতে ছেড়ে-একলা ফেলে জনবিচ্ছিন্ন গোপন রাজনীতিতে চলে যায়। সে কারণে একার পক্ষে ভাসানীর কাক্সিক্ষত সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ন্যাপেও ভাসানী আজীবন থাকেননি। ন্যাপের সুবিধাবাদী চক্রের মতলব আঁচ করেই ন্যাপ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
অসুস্থ ভাসানীকে দেখতে পিজি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রয়াত ফজলে লোহানী তার বিদেশিনী স্ত্রীসহ বসে ভাসানীর সঙ্গে আলাপ করছিলেন। তখন দেশে ক্যু পাল্টা ক্যু চলছিল। ভাসানী গভীর উদ্বেগে বলেছিলেন, ‘দেশে একের পর এক মিলিটারি ক্যু-হত্যা চলছে। আমাদের চুপ করে বসে থাকা যাবে না। আমাদের অবশ্যই কিছু করতে হবে।’ সামরিক শাসনামলে মানুষের গণতান্ত্রিক সব অধিকার হরণ করা হয়েছিল। জনমত সংগঠিত করার উদ্দেশ্যেই ভাসানী ফারাক্কা লংমার্চের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অনেকেরই ধারণা সামরিক শাসকের স্বার্থরক্ষায় ফারাক্কা মিছিল করেছিলেন তিনি। এটা মোটেও সত্য নয়। ফারাক্কা মিছিলকে উপলক্ষ করে জনসম্পৃক্তি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সামরিক শাসনামলে জনগণের কাছে যাওয়ার এছাড়া বিকল্প উপায় তখন ছিল না। ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের পর দেশকে পুঁজিবাদী ধারায় প্রত্যাবর্তনের চক্রান্তে সাম্রাজ্যবাদী চক্র তাদের অনুগত সামরিক শাসকের মাধ্যমে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একমাত্র অন্তরায় ছিলেন মওলানা ভাসানী। তাই ভাসানীর দল ভাঙার কৌশল অবলম্বন, ভাসানীকে একা এবং একঘরে করার কুমতলব আঁটা হয়েছিল। সেসব উদ্যোগ বা কুমতলব সফল হয়েছিল বলেই দলবিহীন একা কষ্টে-হতাশায় বিপন্ন অবস্থায় ভাসানী মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ভাসানীর মৃত্যুর পর তার দলের সিংহভাগ নেতা সামরিক সরকারে যোগ দেয়। তাদের বিলীন হয়ে যাওয়ার কাহিনি তো কারো অজানা নেই।
১৭ নভেম্বর ১৯৭৬ সম্ভবত রাত সোয়া ৮টায় ভাসানীর মৃত্যু সংবাদ শোনামাত্র ছুটে যাই ঢাকা মেডিক্যালের তিন তলার পরিচিত কেবিনে। করিডোরে উৎসুক মানুষ আর ভাসানীর অনুসারীদের ভিড়। ভিড় ঠেলে কেবিনের দরজায় ধাক্কা দেই। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। দরজা খোলা মাত্র ভেতরে ঢুকে দেখি চিরশয়নে নিথর ভাসানী। গণমাধ্যমের ফটো সাংবাদিকদের ছবি তোলার হিড়িক। শব ট্রলিতে উঠিয়ে নিচে রওনার প্রাক্কালে ট্রলি ধরতে অনেকে ঝাঁপিয়ে পড়ায় ট্রলির পেছনের দিক খুলে বিশ্রী অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। ভ্যাগিস পারভেজ ভাই (বাংলা একাডেমির সামনের সড়কে গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত ইউপিপি নেতা) দ্রুত ঝাঁপিয়ে ট্রলির পেছনের অংশ তুলে না ধরলে কেলেঙ্কারি ঘটে যেত। ট্রলি ঠিক করে নিচের আউটডোরের বিশাল বারান্দায় শব রাখা হলো। রাত ১০টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বর লোকে-লোকারণ্য। সামরিক শাসনের সেই ক্রান্তিকালে অত রাতে কেউ ঘরের বাইরে থাকার সাহস করত না। কিন্তু সেদিনের রাতটি হাজারো মানুষের সরব উপস্থিতি-আহাজারিতে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছিল।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও এলেন সামরিক শাসকের নিয়োগপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সায়েম। প্রধান সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া। সায়েম সাহেব ফাতেহা পাঠ করে পরদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করে গেলেন। রাত বাড়ছে, কিন্তু দর্শনার্থীদের ভিড় কমছে না। দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে লাশ বারান্দার মাঝ থেকে সরিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব পাশে আনা হয়। যেন সারিবদ্ধ মানুষ লাইন ধরে মৃত ভাসানীকে দেখতে পারে। রাত ২টার দিকে দর্শনার্থী কমে এলে মরদেহ বারান্দার পশ্চিম দিকে নিয়ে চারদিকে কাপড় টাঙিয়ে শেষ গোসলের আয়োজন করা হয়। গোসলে অংশ নেওয়া মৌলভীর সঙ্গে আমি নিজেও যোগ দেই। ভোরের পূর্বে ট্রাক এলো। মরদেহ এবং বরফের চাঁই তুলে রওনা হলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে। ভাসানীর মরদেহ রাখা হলো টিএসসি অডিটরিয়ামের পূর্ব-উত্তর কোণে। অন্ধকার কেটে ভোরের আকাশে আলো ফোটামাত্র নেমে আসে অগণিত মানুষের ঢল। শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের লাইন দ্রুত দীর্ঘতর হয়ে যায়। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু দর্শনার্থী কমছে না। ক্রমেই মানুষের ঢল বাড়ছেই। সকাল সাড়ে ৯টায় প্রয়াত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবীরের সঙ্গে এলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী প্রয়াত ভূপেন হাজারিকা। আলমগীর কবীরের সীমানা পেরিয়ে ছবির সঙ্গীতের কাজে তখন তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। ভূপেন হাজারিকা আসামের অধিবাসী। মওলানা ভাসানী দীর্ঘকাল আসামে ছিলেন। ভাসানী ও তার রাজনীতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ভূপেনের ছিল বলেই অকপটে জানিয়েছিলেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভাসানীর অনড় অবস্থানের কারণে ভাসানীর প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধার কথা। ভারতবর্ষের বড় মাপের শীর্ষ জাতীয়তাবাদী নেতাদের থেকে ভাসানীকে সহজে চেনা যায় তার রাজনীতির কারণেই। মেহনতী-শোষিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে আজীবন লড়েছেন তিনি। বিচ্যুত হননি কখনো। মওলানা ভাসানী সম্পর্কে ভূপেনের মূল্যায়ন গান্ধীকেও ছাড়িয়ে যায়।
সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল জনসমুদ্রে জানাজা শেষে ট্রাকযোগে লাশ হেলিপোর্টে রওনা হলে আমরা গাড়িতে রওনা হলাম সন্তোষ অভিমুখে। সন্তোষে দাফন শেষে বিকেলে আবার ঢাকার পথে রওনা হই। মওলানা ভাসানী কেবল সাম্রাজ্যবাদবিরোধীই ছিলেন না, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়তায় কীভাবে লড়তে হয়, সে শিক্ষাও দিয়ে গেছেন। তার রাজনৈতিক জীবন বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা জরুরি। কেননা আগামী প্রজন্মের পক্ষেই সম্ভব ভাসানীর আজন্ম আকাঙ্ক্ষিত শ্রেণিহীন-বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রামকে এগিয়ে নেওয়া। ভাসানী এবং তার রাজনৈতিক দৃঢ় অবস্থান নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরে মিথ্যা-বানোয়াট ইতিহাসের বিরুদ্ধে প্রকৃত ইতিহাস উন্মোচন করা অপরিহার্য কর্তব্য বলেই মনে করি।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত
No comments:
Post a Comment