ভারতীয় ভাইয়ের হাতে রাখি অনলাইনে
--------------------------------------------------
সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধা নিছকই স্বপ্ন। কিন্তু নিজের পছন্দ করা রাখি ভাইয়ের হাতে পৌঁছে দেওয়া এখন আর তেমন শক্ত কাজ নয়। মুঠোয় ধরা মোবাইল বা মাউসের এক ক্লিক নিমেষেই সব দূরত্ব ঘুচিয়ে দেবে নেট দুনিয়ার মাধ্যমে।

গত কয়েক বছর ধরেই চলছে অনলাইন সংস্থা মারফত রাখি পাঠানোর রমরমা ব্যবসা। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, প্রতি বছর প্রায় ৩০% হারে বাড়ছে বিক্রি। ভারতীয় বোনেদের রাখি কেনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়ছে তার বিনিময়ে ভাইদের উপহার কেনার হুজুগ। রাখির দাম ১৯৯ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকারও বেশি ছুঁয়ে ফেলেছে। পাল্টা উপহারও মিলবে সব রকম পকেটের ধার অনুযায়ী। আর এই রাখি ও রাখির জন্য উপহারের প্যাকেজে ভর করেই ব্যবসা করছে ছোট-বড় বিভিন্ন অনলাইন সংস্থা। তালিকায় আছে, রাখিবাজার ডট কম, রাখি ডট রিডিফ-এর মতো বিশেষ অনলাইন বিপণি থেকে শুরু করে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, শপ ক্লুজের মতো নেটে কেনাকাটার বাজারও।বিশেষজ্ঞদের দাবি, নেট দুনিয়ায় রাখির এই কদর মোটেই ছকেবাঁধা নয়। গত কয়েক বছর ধরেই উপহারের বিক্রিবাটায় দখল বাড়াচ্ছে অনলাইন বাজার। আর সেই ধারা মেনেই রাখির বিক্রি বাড়ছে লাফিয়ে। কারণ, দাম কম হোক বা বেশি, ভিড় ঠেলে দোকানে দোকানে না-ঘুরে ল্যাপটপ বা মোবাইলের পর্দায় কেনাকাটা সারছেন অনেকেই। বিশেষত নয়া প্রজন্মের এই ‘হাই-টেক’ বাজারেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৫০০% হারে বাড়ছে ‘গিফ‌্ট কার্ড’ দেওয়ার চল। যে-ভাবে বদলে যাচ্ছে কেনাকাটার ধরন, ঠিক সে ভাবেই পাল্টে যাচ্ছে উপহার দেওয়ার রীতি। যাঁকে উপহার দেওয়া হচ্ছে, তিনি পাচ্ছেন নিজের সুবিধা মতো সময়ে পছন্দের জিনিস বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাও, যা এনে দিচ্ছে ‘গিফ‌্ট কার্ড’। নির্দিষ্ট দামের কার্ড ব্যবহার করে উপহার প্রাপক অনায়াসে জিনিস কিনে নিতে পারেন যে কোনও সময়ে।
আর এই পরিবর্তনের হাত ধরেই ভারতের ৩০০০ কোটি ডলার মূল্যের উপহারের বাজারে দখল বাড়াচ্ছে নেট দুনিয়া। আপাতত অনলাইন উপহারের বাজারের আয়তন ৪০ কোটি ডলার। এর মধ্যে উৎসবের উপহার বিক্রির অঙ্ক সাড়ে ৭ কোটি ডলার। পারস্পরিক উপহার দেওয়ার পরিমাণ ২০ কোটি ডলার, কর্পোরেট উপহার এখন আড়াই কোটি ডলার।

বাজার ও ব্যবসার টানে অনলাইন উপহারের দুনিয়ায় ভিড় জমাচ্ছে স্টার্ট-আপ (সদ্য তৈরি) সংস্থাগুলিও। গিফট্ কার্ডের ব্যবহার যে প্রযুক্তির দৌলতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, সেই প্রযুক্তির মঞ্চ তৈরি করেছে ‘কুইকসিলভার’ নামে একটি স্টার্ট-আপ। আপাতত গিফট ভাউচার ও কার্ডের সংগঠিত বাজারের মাপ ৩০০০ কোটি টাকা। এই বাজারে প্রযুক্তি জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে কুইসিলভার শীর্ষে। সংস্থার ব্যবসায়িক সম্ভাবনা আঁচ করে লগ্নি করেছে অ্যামাজনের মতো প্রথম সারির ই-কমার্স সংস্থা। একই ভাবে ব্যবসার টানে তৈরি হয়েছে ফাইভ টু সেভেন নামে আর একটি সংস্থা, যারা মূলত কর্পোরেট উপহারের বাজারে কাজ করে। ইতোমধ্যেই তাদের উপহার সামগ্রীর সংখ্যা ৫০০০ ছুঁয়ে ফেলেছে।