চোর কাহিনী
গরীব মানুষের
ঈমান নেই,এদের বুক পিঠ কিছুই পাওয়া যায় না।
এধরণের মন্তব্যের
তীব্র প্রতিবাদকারী আমি আজ উপলব্ধি করতে
পারছি, উক্তিগুলো
তিক্ত অভজ্ঞতারই অভিব্যক্তি।মানুষের কল্যাণে
চেষ্টা করেও আনন্দ
পাই।এধরণের চেষ্টা যদি গরীব মানুষের
পিছনে লাগাতে
পারি সেজন্যে বারতি আত্মতৃপ্তির অনুভূতি পেয়ে
খুব উপভোগ্য মনে
হয়।
দিন দশেক আগের
ঘটনা বলছি,সকালের নাস্তার টেবিলে বসেই আমি
বাসার অনতি দূরে
অহেতুক জটলা ও জনসমাগমের হেতু বোঝার জন্য
কৌতুহল বসত: সেদিকে
মনযোগ দিয়েছি।জানতে পারলাম এক চোর
ধরা পড়েছে, সমাজকর্তারা
সেই চোরকে বেদম পেটাচ্ছে।চোরের বয়স
১৮-২০বৎসরের মত।একপর্যায়ে
এই চোরের হাটু ও পায়ের গীরার
মধ্যবর্তী স্থল
ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্তে আমি দ্বিমত পোষন করি।চোরকে
পুলিশে দেওয়ার
প্রস্তাব করলে কন্ঠভোটে সেটা নাকচ হয়ে যায়।এবান
আমি পাল্টা প্রস্তাব
দিলাম যে,চোর যেহেতু নেশাগ্রস্থ এবং কম বয়সী
তাকে সংশোধনের
সুযোগ দেওয়া উচিৎ।আমি এই চোরকে এলাকায়
না রাখার জন্য
তাকে মাদকাশক্ত সংশোধনাগারে পাঠানোর দায়িত্ব
নিলাম।চোর এলাকা
ছাড়া হবে কেবল এই সর্তেই পেটোয়া গ্রুপের
লোকেরা রাজি হয়ে
তাকে আমার হাতে ছেড়ে দিলেন।আমি সেদিন
প্রচূর সময় ব্যয়
করে সরকারি খরচে এক নামকরা মাদকাশক্ত
সংশোধনাগারে তার
আশ্রয় ঠিক করে দিলাম।পরে চোরের বাবা-মা
নিজেরাই তাদের
ছেলেকে সেখানে পৌঁছে দেয়।কয়েকদিন তাদের মূখে
আমার খুব প্রশংসা
শুনলাম।আমারও বেশ ভাল লাগলো এধরণের একটি
কাজ করার জন্য।আজ
হঠাৎ একটা ফোন এলো।অপর প্রান্ত থেকে ক্ষুব্ধ
প্রতিক্রিয়া শুনছি,দশ
দিনের মাথায় সেই চোরের অবিভাবক বেড়িয়েছে।
নিজেকে তার বাব-মায়েরও
অবিভাবক দাবি করে অনতিবিলম্বে এই
চোরকে তার কাছে
ফিরিয়ে দেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে।এরপর আমি
চোরের বাবার সন্ধাণ
করে ডেকে নিয়ে ফোনের প্রসঙ্গ তুলতেই দেখলাম,
লোকটি ভিন্ন সুরে
কথা বলছে।তার অভিযোগ,আমি তাদেরকে সিদ্ধান্ত
নেয়ার জন্য যথেষ্ঠ
সময় দেইনি।সেখানে তাদের ছেলের সাথে দেখা করা
যাচ্ছে না।এর
থেকে জেলে রাখলেও তারা ছেলেকে দেখে আসতে পারতো।
এখন সে তার ছেলেকে
অনতিবিলম্বে নিরাময়কেন্দ্র থেকে ছেড়ে দিতে বলছে।
আমি হতভম্ব হয়ে
গেলাম।সেই চোরকে মাদকাশক্ত নিরাময় কেন্দ্রে রাখার
দিনটিকে মূহুর্তেই
স্মরণ করলাম।এই কেন্দ্রের পরিচালকের প্রশ্নের জবাবে
সেদিন আমি চোরের
সত্যিকারের পরিচয় দিয়েছিলাম।উত্তরে মন্তব্যের সুরে
তিনি বলেছিলেন,আপনি
কার জন্যে এসব করছেন?এধরণের গরীব মানুষের
বুক নেই পীঠও
নেই।এরাই একদিন আপনাকে দোষারোপ করতে ছাড়বে না।
No comments:
Post a Comment