Sunday, August 21, 2016

মারাই গেল বোমায় আহত ওমরানের ভাই

তখনও বেঁচে আলি দাকনিশ। আলেপ্পোর হাসপাতালে। ওমরান দাকনিশকে এখন এক ডাকে চেনে গোটা বিশ্ব। দিন কয়েক আগে অ্যাম্বুল্যান্সের কমলা চেয়ারে বসা রক্তাক্ত একরত্তির মুখটা নিয়ে সংবাদমাধ্যম আর সোশ্যাল মিডিয়ায় কম হইচই হয়নি। ওমরানদের আলেপ্পোর বাড়িতে বোমা পড়েছিল গত বুধবার। তাতে আহত হয়েছিল তার গোটা পরিবার। পাঁচ বছরের ওমরানকে বাঁচানো গেলেও মারা গেল তার দশ বছরের দাদা আলি দাকনিশ। একটি ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা এ খবর জানিয়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল আলির। তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি তাকে।
আলি দাকনিশের মতো ওমরদের গল্পটাও প্রায় এক। বারো বছরের ওমর আর তার চেয়ে এক বছরের বড় মুফেদাহ। চাচার অ্যাপার্টমেন্টের সিঁড়িতে কম্বল বিছিয়ে শুয়েছিল দুই ভাই। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার আলেপ্পো শহরের রাস্তা থেকে কাকার বাড়ির সিঁড়িটুকু সুরক্ষিত বলে মনে হয়েছিল তাদের। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজন হঠাৎই খোঁজ পান তাদের। তাঁরাই দুই ভাইকে তুলে দেন আসমার হালাবির হাতে।গোটা আলেপ্পোয় মাত্র একটাই অনাথ আশ্রম আছে। হালাবি আর তাঁর স্ত্রী-ই চালান সেটি। ওমরদের মতো অজস্র স্বজন-হারানো শিশুর আশ্রয় এখন ওই অনাথ আশ্রম। হালাবি জানাচ্ছেন, আলেপ্পোর মাথার উপর দিয়ে যতই যুদ্ধ-বিমান যাক না কেন, আশ্রমের কচিকাঁচারা কিন্তু সেখানে নিরুপোদ্রবে ঘুমোতে পারে। ওমরদের মতো কোনও শিশুকে যাতে তাদের আত্মীয়ের বাড়ির সিঁড়িতে আশ্রয় নিতে না-হয়, তাই মাটির তলায় দোতলা জুড়ে এক বিশাল জায়গায় শিশুদের থাকা-খাওয়া-শোয়ার ব্যবস্থা করেছেন হালাবি। আলেপ্পোর সেই মাটির তলার অনাথ আশ্রমে তাই নিশ্চিন্তে বড় হচ্ছে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ার শৈশব।
সম্প্রতি এক রুশ বিমান-হামলায় পিতৃহারা হয়েছিল ওমররা। ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও। সব দেখেশুনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন তাদের মা। প্রথমে দুই শিশুর ঠাঁই হয়েছিল এক চাচার বাড়ি। কিন্তু চাচাই তাদের হাতে ভিক্ষাপাত্র ধরিয়েছিল। দিনের বেলা ভিক্ষা করে বেড়ালেও রাতে রাস্তায় শুতে ভয় পেত ছেলে দু’টো। তাই চাচার বাড়ির সিঁড়িতেই রোজ রাতে ঘুমোতে তারা।সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে উদ্ধার হওয়া ওমরান দাকনিশের বড় ভাই ১০বছর বয়সী আলী দাকনিশ বোমা হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, ১৭ আগস্ট ওই বোমা হামলার কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে আলীর মৃত্যু হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়া সলিডারিটি ক্যাম্পেইন জানিয়েছে, রুশ বিমান হামলায় দাকনিশ পরিবারের বাড়িটি বিধ্বস্ত হয়।সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের দখলে থাকা এলাকাগুলোতে রাশিয়া এবং সিরিয়ার সরকারি বাহিনী যুদ্ধ বিমান থেকে হামলা চালাচ্ছে। তবে ওমরান দাকনিশের বাড়িতে হামলার কথা অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

বিমান হামলায় বিধ্বস্ত একটি বাড়ির ধূলা ময়লা থেকে পাঁচবছর বয়সী ওমরানকে রক্তাক্ত ও আহত অবস্থায় বের করে আনা হয়। তার সেই ছবি ও ভিডিও আলেপ্পো শহরে আটকে পড়া বেসামরিক মানুষদের দু:খ-দুর্দশার প্রতীকী চিত্র হয়ে উঠেছে, যা সারা বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, রক্তাক্ত সারাগায়ে ধূলি মাখা ভীত শিশু ওমরান একটি অ্যাম্বুলেন্সের সিটে বসে রয়েছে, একটু পরেই সে নিজের মুখে হাত বুলিয়ে রক্ত দেখতে পেয়ে চমকে ওঠে। এই ভিডিও আর ছবি প্রকাশ করে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা ।
একসময়কার শিল্প ও বাণিজ্য নগরী হিসেবে খ্যাত আলেপ্পোতে কয়েক সপ্তাহ ধরেই সিরিয়ান বিদ্রোহী আর সরকারি বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। সহিংসতায় কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

No comments:

Post a Comment