Sunday, May 14, 2017

নিরাপত্তাহীনতায় কম্পিউটার!

এতদিন শুনেছি, মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে মানুষকে জিম্মি করে। আর এখন ইন্টারনেটকে ম্যাল্ওয়্যার করে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ চাইছে হ্যাকাররা। ঘটনাটি ঘটেছে ইউরোপ, ল্যাতিন আমেরিকা ও এশিয়াজুড়ে। মুক্তিপণের টাকা না পেলে হ্যাকাররা বিশ্বের কোটি কোটি কম্পিউটার অকেজো করে দেবে। বিশ্বের ১০০টি দেশ এই হামলার শিকার হয়েছে। এবারকার এই হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা। মুক্তিপণ না দিলে কম্পিউটারের সবকিছুই গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে হ্যাকাররা। 
একসময় কম্পিউটার ছিল স্বপ্নের ডানাকাটা পরী। এখন তা অনেকটাই ডাইনির মতো। ইন্টারনেটকে গ্রহণ করা বা নেওয়া এবং তা ফেরত দেওয়ার কর্মটিই মূলত কম্পিউটার অথবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করা হয়। আজকের বাস্তবতায় সেই ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনায় দেখা দিয়েছে মহাদুর্যোগ। বিশ্বজুড়ে চলছে সাইবার হামলা এবং মুক্তিপণ আদায়ের আগ্রাসী কৌশল। দক্ষিণ কোরীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইনফরমেশন সিকিউরিটির অধ্যাপক লিম জং-ইন বলেছেন, হ্যাকাররা যদি ব্যাংক এবং বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন গণ-অবকাঠামোর ওপর হামলা শুরু করে, তাহলে বিশ্বের জন্য এটা হবে ভয়ংকর লঙ্কাকা-, যা দুটি দেশকে সাইবারযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
হ্যাকাররা সাধারণত দুইভাবে এই হামলা পরিচালনা করে থাকে। প্রথমত, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এর সৌন্দর্যহানির মধ্য দিয়ে। এতে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের অ্যাপিয়ারেন্স বদলে যায়। ফলে ওয়েবসাইটটির নিয়মিত ট্রাফিক আশঙ্কাজনক হারে কমে যায়। এছাড়া অন্য একটি উপায়ে হামলা চালানো হয়, যাকে ‘ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনাই্য়াল অব সার্ভিস’ (ডিডস) নামে অভিহিত করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন অনলাইন সার্ভিসের প্রাপ্যতায় ব্যাঘাত ঘটানো হয়। তবে এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় যে, বস্তুর বিকাশের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভালো এবং খারাপের; অথবা বলা যায়, পজিটিভ ও নেগেটিভের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ভেতর দিয়েই হয়ে থাকে। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো কারণ নেই। অন্য সবার মতো ইন্টারনেটেরও দুটি দিক আছে, যার একটি হলো গঠনমূলক এবং অপরটি ধ্বংসাত্মক। গঠনমূলক দিকটি সবাইকে সমৃদ্ধ করবে। অন্যটি নিজেকে, সমাজকে, রাষ্ট্র, জাতি ও বিশ্ব সমাজব্যবস্থাকে ধ্বংসের শেষ সীমায় নিয়ে দাঁড় করাবে। এর আলামত অথবা নমুনা ইতোমধ্যে আমরা হাতেনাতে পেতে শুরু করেছি। তবু বলতে হয়, আমাদের জ্ঞানের পরিধিকে প্রসারিত করার জন্য ইন্টারনেটের যথাযথ ব্যবহার প্রয়োজন।
আমরা মনে করি, এই হামলা এখানেই শেষ নয়, আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। সুতরাং একে মোকাবিলা করাটাই এখন জরুরি। আর এ কারণেই দেশে দেশে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করে বিশ্বের মানব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবে হ্যাকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। নিজেদের মাঝে হানহানি বন্ধ করে দাঁড়াতে হবে হ্যাকারদের বিরুদ্ধে। অন্যথায় মানুষের হাতেই ধ্বংস হবে সুন্দর এই পৃথিবী।

No comments:

Post a Comment