গ্রীষ্মের শুরুতেই ডায়রিয়ার প্রকোপ
ঘণ্টায় কলেরা হাসপাতালে ২৪ রোগী ভর্তি
চলছে গ্রীষ্মের দাবদাহ। আর সেই গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে রাজধানীসহ সারা দেশে। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ এবং পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। গরমের তীব্রতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) বা কলেরা হাসপাতালেই প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছে ২৪ জন রোগী। ফলে রোগীর উপচে পড়া ভিড়ে ভেতরে জায়গা দিতে না পেরে বাইরে তাঁবু টাঙিয়ে চিকিৎসা সেবার প্রস্তুতি চলছে। এভাবে চললে শিগগিরই ছাড়িয়ে যাবে রোগী ভর্তির আগের সব রেকর্ড।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন রাজধানীর কলেরা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে ডায়রিয়া-কলেরার উদ্বেগজনক চিত্র। কেন্দ্রের বাইরে উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছেন রোগীর স্বজনরা। কেউ পায়চারী করছেন, কেউবা ছুটছেন এদিক-ওদিক। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু ও নারী-পুরুষের মিছিলে তাদের স্বজনরাও যেন দিশাহারা। হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকা আর কর্মচারীরা হিমশিম খাচ্ছেন রোগী সেবা আর তাদের স্বজনের ভিড় সামলাতে।
হাসপাতালের করিডরে কথা হয় ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে আসা জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, সাড়ে তিন বছরের ছেলে তামিম দুপুরে কাঁঠাল খেয়েছিল। রাতেই শুরু হয় পাতলা পায়খানা আর বমি। দুই দিন আগে ভালুকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তাররা ঢাকায় কলেরা হাসপাতালে পাঠান। এখন অবস্থা একটু ভালো।
৯ মাসের মেয়ে মৌরীকে নিয়ে উত্তরা থেকে এসেছেন অবদুর রহমান। আর ১০ বছরের নেহাকে নিয়ে এসেছেন তার বাবা মো. পারভেজ। দুজনেই জানান, দুই দিন আগে গরমে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় তাদের মেয়ে। এরপর ঘরোয়া চিকিৎসার পর তাদের আনা হয় হাসপাতালে।
বাবা আবদুল কুদ্দুসকে নিয়ে এসেছেন বাবু নামের একজন। তিনি জানান, প্রচ- গরমে তার বাবা রাস্তার ধারের শরবত খেয়েছিলেন। এর পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় বরিশাল থেকে আসা গৃহবধূ আসমার সঙ্গে। তিনি জানান, গত সোমবার সকাল থেকে দেড় বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে এখানে আছেন। এর আগে রোববার বাড়িতে বমি শুরু হয়, সঙ্গে খিঁচুনি ও পাতলা পায়খানা। স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শে মেয়েকে কলেরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এদিকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতার রোগীরা চিকিৎসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অনেকটা সুস্থ হয়ে যায়। তখন হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ এ রোগীর ছুটি দিয়ে দেয়।
কলেরা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ থেকে ৯ মে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬১০, ৫৮৭, ৫৭৬ জন ও ২৩৮ জন। প্রতিদিন গড়ে ৬০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে এ হাসপাতালে। এসব রোগীরা ডায়রিয়া-আমাশয়সহ পানিবাহিত রোগ হাম, জলবসন্ত, টাইফয়েড ও জন্ডিস আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত বছরগুলোর তুলনায় এই হার বেশি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় লোকজন রাস্তার ঠা-া খাবার বিশেষ করে শরবত ও নানা ধরনের পানীয় পান করছে। গরমের এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা উৎস থেকে সংগ্রহ করা পানির সঙ্গে নোংরা পানি দিয়ে তৈরি বরফ মেশানো শরবতের নামে এসব বিষাক্ত পানীয় খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন অনেকেই।
রাস্তায় পানীয় শরবত প্রসঙ্গে আইসিডিডিআরবি বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা বলছেন, এসব অস্বাস্থ্যকর শরবত খেয়ে ডায়রিয়া, হাম, জলবসন্ত, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি এবং সি’সহ পেটের নানারকম রোগ দেখা দিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে লিভার ও কিডনির। পানীয়টাকে মুখরোচক করার জন্য ব্যবসায়ীরা এতে যোগ করেন নানা রকম রং আর স্যাকারিন। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের প্রধান নার্স মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘কলেরা কট (ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের জন্য বিশেষ বিছানা) রোগীর জন্য ভালো। আমরা রোগীর সংখ্যা বাড়লে এ শয্যাগুলো ব্যবহার করি। রোগী বাড়লে আমরা আমাদের সাধ্যমতো সেবা দিতে চেষ্টা করি। রোগীর ভিড়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বারান্দায়ও বসানো হচ্ছে কলেরা কট।’
এসব বিষয়ে কথা হয় হাসপাতালটির ডায়রিয়াল ডিজিজ ইউনিটের প্রধান ও আইসিডিডিআরবির প্রধান চিকিৎসক ডা. আজহারুল ইসলাম খানের সঙ্গে। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে আমরা প্রস্তুত। কলেরা কটের মাধ্যমে ৬৫০ জন রোগীকে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বারান্দায় চিকিৎসা দিতে পারি। রোগীর সংখ্যা বেশি হলে তাঁবু টাঙিয়ে চিকিৎসা চলবে।’ রোগী মৃত্যুর হার সম্পর্কে তিনি জানান, ডায়রিয়াজনিত কারণে কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। মৃত্যুর হার ০.১ শতাংশ। তবে ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতার কোনো রোগী এখানে এলে মারা যায় না।
ডা. আজহারুল ইসলাম খান আরো বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষ মূলত বিশুদ্ধ পানির সংকটে থাকে। তারাই সাধারণত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই বেশি গরমে যেমন বেশি করে পানি খেতে হবে, তেমনি ওই পানি যদি বিশুদ্ধ বা নিরাপদ না হয়, সেই জীবন রক্ষাকারী পানিই তখন জীবন নাশের কারণ হতে পারে।’
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন রাজধানীর কলেরা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে ডায়রিয়া-কলেরার উদ্বেগজনক চিত্র। কেন্দ্রের বাইরে উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছেন রোগীর স্বজনরা। কেউ পায়চারী করছেন, কেউবা ছুটছেন এদিক-ওদিক। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু ও নারী-পুরুষের মিছিলে তাদের স্বজনরাও যেন দিশাহারা। হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকা আর কর্মচারীরা হিমশিম খাচ্ছেন রোগী সেবা আর তাদের স্বজনের ভিড় সামলাতে।
হাসপাতালের করিডরে কথা হয় ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে আসা জামাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, সাড়ে তিন বছরের ছেলে তামিম দুপুরে কাঁঠাল খেয়েছিল। রাতেই শুরু হয় পাতলা পায়খানা আর বমি। দুই দিন আগে ভালুকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তাররা ঢাকায় কলেরা হাসপাতালে পাঠান। এখন অবস্থা একটু ভালো।
৯ মাসের মেয়ে মৌরীকে নিয়ে উত্তরা থেকে এসেছেন অবদুর রহমান। আর ১০ বছরের নেহাকে নিয়ে এসেছেন তার বাবা মো. পারভেজ। দুজনেই জানান, দুই দিন আগে গরমে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় তাদের মেয়ে। এরপর ঘরোয়া চিকিৎসার পর তাদের আনা হয় হাসপাতালে।
বাবা আবদুল কুদ্দুসকে নিয়ে এসেছেন বাবু নামের একজন। তিনি জানান, প্রচ- গরমে তার বাবা রাস্তার ধারের শরবত খেয়েছিলেন। এর পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
হাসপাতালের ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় বরিশাল থেকে আসা গৃহবধূ আসমার সঙ্গে। তিনি জানান, গত সোমবার সকাল থেকে দেড় বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে এখানে আছেন। এর আগে রোববার বাড়িতে বমি শুরু হয়, সঙ্গে খিঁচুনি ও পাতলা পায়খানা। স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শে মেয়েকে কলেরা হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এদিকে হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতার রোগীরা চিকিৎসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অনেকটা সুস্থ হয়ে যায়। তখন হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ এ রোগীর ছুটি দিয়ে দেয়।
কলেরা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ থেকে ৯ মে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬১০, ৫৮৭, ৫৭৬ জন ও ২৩৮ জন। প্রতিদিন গড়ে ৬০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে এ হাসপাতালে। এসব রোগীরা ডায়রিয়া-আমাশয়সহ পানিবাহিত রোগ হাম, জলবসন্ত, টাইফয়েড ও জন্ডিস আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গত বছরগুলোর তুলনায় এই হার বেশি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় লোকজন রাস্তার ঠা-া খাবার বিশেষ করে শরবত ও নানা ধরনের পানীয় পান করছে। গরমের এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা উৎস থেকে সংগ্রহ করা পানির সঙ্গে নোংরা পানি দিয়ে তৈরি বরফ মেশানো শরবতের নামে এসব বিষাক্ত পানীয় খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন অনেকেই।
রাস্তায় পানীয় শরবত প্রসঙ্গে আইসিডিডিআরবি বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা বলছেন, এসব অস্বাস্থ্যকর শরবত খেয়ে ডায়রিয়া, হাম, জলবসন্ত, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-বি এবং সি’সহ পেটের নানারকম রোগ দেখা দিচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে লিভার ও কিডনির। পানীয়টাকে মুখরোচক করার জন্য ব্যবসায়ীরা এতে যোগ করেন নানা রকম রং আর স্যাকারিন। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের প্রধান নার্স মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ‘কলেরা কট (ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের জন্য বিশেষ বিছানা) রোগীর জন্য ভালো। আমরা রোগীর সংখ্যা বাড়লে এ শয্যাগুলো ব্যবহার করি। রোগী বাড়লে আমরা আমাদের সাধ্যমতো সেবা দিতে চেষ্টা করি। রোগীর ভিড়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বারান্দায়ও বসানো হচ্ছে কলেরা কট।’
এসব বিষয়ে কথা হয় হাসপাতালটির ডায়রিয়াল ডিজিজ ইউনিটের প্রধান ও আইসিডিডিআরবির প্রধান চিকিৎসক ডা. আজহারুল ইসলাম খানের সঙ্গে। প্রতিদিনের সংবাদকে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ছে। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে আমরা প্রস্তুত। কলেরা কটের মাধ্যমে ৬৫০ জন রোগীকে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও বারান্দায় চিকিৎসা দিতে পারি। রোগীর সংখ্যা বেশি হলে তাঁবু টাঙিয়ে চিকিৎসা চলবে।’ রোগী মৃত্যুর হার সম্পর্কে তিনি জানান, ডায়রিয়াজনিত কারণে কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। মৃত্যুর হার ০.১ শতাংশ। তবে ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতার কোনো রোগী এখানে এলে মারা যায় না।
ডা. আজহারুল ইসলাম খান আরো বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষ মূলত বিশুদ্ধ পানির সংকটে থাকে। তারাই সাধারণত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। তাই বেশি গরমে যেমন বেশি করে পানি খেতে হবে, তেমনি ওই পানি যদি বিশুদ্ধ বা নিরাপদ না হয়, সেই জীবন রক্ষাকারী পানিই তখন জীবন নাশের কারণ হতে পারে।’
No comments:
Post a Comment