এবার গবেষণাগারেই তৈরি হলো কৃত্রিম জীবন!
শিগগিরই কৃত্রিম উপায়ে মানুষের জন্ম দেওয়া সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন। মানুষের জন্মের জন্য এখন আর শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর ওপর নির্ভর করতে হবে না। মানবদেহের যেকোনো কোষ থেকে হয়তো একজন মানুষের জন্ম হতে পারে। শুধু স্টেম সেল ব্যবহার করে এই প্রথম ইঁদুরের ভ্রুণ তৈরিতে সাফল্যের পর বিজ্ঞানীদের মধ্যে এই বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়েছে। যুক্তরাজ্যে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে এই ভ্রুণটি তৈরি করেছেন। এই গবেষণায় ইঁদুরের দুই ধরনের স্টেম সেল ব্যবহার করা হয়েছে। জীবন্ত এই ভ্রুণটি তৈরি করতে সময় লেগেছে মাত্র চার দিন।
বলা হচ্ছে, বিশ্বে এ ধরনের বৈজ্ঞানিক সাফল্য এটিই প্রথম। কোনো ধরনের শুক্রাণু বা ডিম্বাণু ছাড়াই বিজ্ঞানীরা এই প্রথম জীবন্ত ভ্রুণ তৈরি করলেন। এর অর্থ হলো কোনো মানুষের জন্মের জন্য এখন আর শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর ওপর নির্ভর করতে হবে না। মানবদেহের যেকোনো কোষ থেকে হয়তো একজন মানুষের জন্ম হতে পারে।
এই গবেষণাকে জীব-প্রকৌশলের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। কারণ বিজ্ঞানীরা হয়তো কোনো একসময় এই একই উপায়ে ল্যাবরেটরিতে মানুষের ভ্রুণ তৈরি করতেও সক্ষম হবেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই আবিষ্কারের ফলে মানবজীবনের একেবারে প্রাথমিক ধাপের বিষয়ে অনেক কিছু জানা সম্ভব হবে। তারা জানতে পারবেন কেন কোন কোন মানুষ গর্ভধারণ করতে পারে না বা করলেও শেষ পর্যন্ত সেটি ব্যর্থ হয়। তবে এ রকম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলে সেটা বিতর্কের মুখে পড়তে পারে, কারণ এখানে অনেক নীতিনৈতিকতার বিষয়ও জড়িত। কিংস কলেজের অধ্যাপক ড. ডাস্কো ইলিচ বলেছেন, এটা একটা দারুণ ঘটনা। গবেষণাগারে জীবনের প্রথম ধাপটি আবিষ্কারের অর্থ হচ্ছে বিজ্ঞানের খুবই অগ্রসর এক অর্জন। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা আইভিএফ চিকিৎসার সময় যেসব ভ্রুণ অব্যবহৃত থেকে যায় সেগুলো নিয়ে গবেষণা করতে পারেন। তবে এসবের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল এবং ১৪ দিন পর এসব ভ্রুণ ধ্বংস করে ফেলতে হয়।
বজ্ঞানীরা বলছেন, কৃত্রিম উপায়ে ল্যাবরেটরিতে বহুসংখ্যক ভ্রুণ তৈরি করতে পারার অর্থ হলো এখন এই গবেষণা আরো দ্রুত গতিতে অগ্রসর হবে। পাশাপাশি নীতিনৈতিকতার যেসব সীমাবদ্ধতা আছে সেগুলোও হয়তো কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
গবেষণায় নেতৃত্ব : ‘আমরা মনে করি ১৪ দিন শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই আমরা অনেক কিছু করে ফেলতে পারব। ইঁদুরের স্টেম সেল থেকে যেভাবে ভ্রুণ তৈরি করা হয়েছে সেই একই উপায়ে মানুষের স্টেম সেল থেকেও মানবভ্রুণ তৈরি করা যেতে পারে,’ বলেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাগডালিনা জেনরিকা-গোয়েৎস। তিনিই এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা খুবই আশাবাদী যে এর ফলে আমরা হয়তো মানবভ্রুণের বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পর্যায় সম্পর্কে আরো ভালোভাবে জানতে পারব। এই বিকাশ কিভাবে ঘটে সেটা জানতে পারলে এটাও বুঝতে পারব যে অনেক সময়ে এই ভ্রুণ শেষ পর্যন্ত কেন ব্যর্থ হয়ে যায়।’ প্রযুক্তির সাহায্যে ইঁদুরের স্টেম সেলের জিনে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে এই কৃত্রিম ভ্রুণ তৈরি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে ট্রফোব্লাস্ট স্টেম সেল, যা স্বাভাবিক গর্ভধারণের প্রক্রিয়ার সময় প্লেসেন্টাতে তৈরি হয়। এর আগেও ল্যাবরেটরিতে ভ্রুণ তৈরির চেষ্টা করে বিজ্ঞানীরা ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু এবার বিজ্ঞানীরা দেখলেন, ট্রফোব্লাস্ট স্টেম সেল ব্যবহারের কারণে এই দুটো সেলের মধ্যে যোগাযোগ হয় এবং এই দুটো কোষ মিলেই সিদ্ধান্ত নেয় তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে এবং তখনই সেটা সফল হয়। নারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা নিয়ে গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে ব্রিটেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম ক্লোন করা প্রাণী ডলি নামের একটি ভেড়ার জন্ম দিয়েছিল।
No comments:
Post a Comment