এধরণের কথা এই প্রথম, তা কিন্তু নয়। গণতন্ত্রের রক্ষক হিসেবে পরিচিত যে প্রতিষ্ঠানগুলি, তারা বার বার ক্ষমতাসীনের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সংস্থান যে চিরন্তন, সে মূল্যবোধ এ দেশে যথেষ্ট মজবুত বলেই প্রমাণিত হয়েছে। তার মধ্যেও কিন্তু বার বার বিরোধী স্বরের বিনাশাকাঙ্খা মাথাচাড়া দিয়েছে।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কখনও বিরোধী স্বরের বিনাশ চায় না, সংরক্ষণই চায়। বিরোধীর শিবিরে যতক্ষণ বেঁচে থাকে নির্ভীক সমালোচনার অধিকারবোধ, ততক্ষণই গণতন্ত্রের আয়ুষ্কাল। যে নাগরিক চিন্তার রাজ্যে ক্ষমতাসীনের বিপরীত মেরুতে, তাঁর অধিকারের মৃত্যু আসলে গণতান্ত্রিক চেতনার মৃত্যু। এই বোধ ভারতীয়ত্বে যথেষ্টই বিদ্যমান। কিন্তু রাজনৈতিক দাপটেও এক অনাকাঙ্খিত শ্লাঘার নিহিতি রয়েছে। দাপট দেখিয়ে বিরোধী কণ্ঠস্বরকে নুইয়ে দেওয়ার মধ্যে প্রভুত্ব আস্বাদনের আহ্লাদ রয়েছে। উপমহাদেশের অন্যান্য রাজত্বেও এই প্রবণতার উপস্থিতি আমরা লক্ষ্য করেছি। তাতে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা কী ভাবে বার বার ধাক্কা খেয়েছে, তাও আমরা দেখেছি। তা সত্ত্বেও সতর্ক হতে পারিনি কেউ।
ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের পারিপার্শ্বিকতায় অগণতান্ত্রিক মরুবালুরাশি। মাঝে ভারত গণতন্ত্রের সযত্নলালিত এক মরূদ্যান। গৌরবের মহিমান্বিত অস্তিত্ব সেই সত্যেই নিহিত। ভুলে যাচ্ছিলাম আমরা সে কথা। সকলে না ভুললেও অনেকেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আরও এক বার মনে করিয়ে দিল। আরও এক বার স্পষ্ট বাখ্যায় জানিয়ে দিল, প্রতিবাদ, বিরোধিতা, সমালোচনা গণতন্ত্রের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য।
১৯৬২ সালেও এমনই সতর্কবার্তা শোনা গিয়েছিল বিচারবিভাগের সর্বোচ্চ পীঠস্থানটি থেকে। ক্ষমতার অলিন্দে নতুন যে প্রজন্মের অধিষ্ঠান আজ, পাঁচ দশকেরও বেশি আগে ধ্বনিত সতর্কবার্তার অনুরণন সে প্রজন্মের কর্ণকুহরে নেই হয়তো আর। তাই আরও এক বার মনে করিয়ে দিতে হল কথাটা। আরও এক বার ধরিয়ে দিতে হল গণতন্ত্রের মূল সুরটা। মরূদ্যানের গরিমা নিয়ে বাঁচতে চাইলে, এই উচ্চারণের অনুরণনটা চিরন্তন করে নিতে হবে আমাদেরই।
No comments:
Post a Comment