সুচির শাস্তির দাবি নিয়ে দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতেই তারা বাংলাদেশমুখী

মিয়ানমারে দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গাদের স্রোত ঠেকাতে সীমান্তি রক্ষী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যেও ফাঁক-ফোকর গলে অনেক রোহিঙ্গাই ঢুকে পড়েছেন বাংলাদেশে। তাদেরই একজন মিয়ানমারের মংডুর পোয়াখালী এলাকার ইসলাম মিয়ার স্ত্রী আজ্জ বেগম। বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঢুকে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন টেকনাফের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের এক আত্মীয়ের ঘরে।প্রায় ৫০ বছর বয়সী আজ্জ মিডিয়াকে বলেন, সেনাবাহিনী ও রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন লুটপাট ও ভাংচুর চালিয়ে পুরো পাড়ার সব বাড়িতে আগুন দিয়েছে। ঘরের দরজা বন্ধ করে আমার ছেলের বৌ সনজিদা আক্তারকে (২৭) পুড়িয়ে মেরেছে।সেনারা তার এলাকায় পাঁচজনকে হত্যা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেনা অভিযানে পুরো এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়েছে। লোকজন প্রাণ বাঁচানোর জন্য যার যার মতো আত্মগোপন করেছে। আমি মা-হারা চার শিশু নাতিসহ পরিবারের ১১ সদস্যের মধ্যে ৭ জনকে নিয়ে ছয়দিন পায়ে হেঁটে সীমান্ত পার হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি। এখনও পরিবারের অপর সদস্যদের হদিস নেই।
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় নয় সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলোতে শুরু হয় সেনা অভিযান।রাখাইন রাজ্যে যা হয়েছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের ভাষ্য। অভিযানে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলে এলেও নির্যাতনের খবর অস্বীকার করে যাচ্ছে মিয়ানমার। তবে বাংলাদেশ পানে রোহিঙ্গাদের স্রোত মিয়ানমারের বক্তব্যের অসারতা স্পষ্ট করছে।কয়েক দশক ধরে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ সরকার নতুন করে শরণার্থী না নেয়ার অবস্থান নিয়েছে। সেজন্য সীমান্তে কড়া পাহারা চলছে। তবে তার মধ্যেও রোহিঙ্গারা ঢুকে পড়ছে এবং এই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের দাবি। এদের অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন আগে শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আসা স্বজনদের কাছে।আজ্জ বেগম বাংলাদেশি এক দালালকে মাথাপিছু ২ হাজার টাকা দিয়ে বেতবুনিয়া সীমান্ত পার হয়েছেন বলে জানান। ওপারে মিয়ানমারে দালালদের টাকা দিতে হয়েছে তাকে।পুরো পরিবার নিয়ে কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন ফাতেমা আক্তার, গোলবাহার, শামসুদ্দিন, কামাল উদ্দিন, সাইফুল ইসলামসহ অনেকে। সীমান্ত পার হতে চাহিদামতো টাকা দিতে না পারায় দালালরা সোনার গয়না ও মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নিয়েছে বলে জানালেন শামসুদ্দিন।
গত ৩০ নভেম্বর দমদমিয়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে টেকনাফের নয়াপড়া অনিবন্ধিত শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন মংডুর বড় গজ্জিরবিল এলাকার তিন বোন। তাদের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর।তারা জানান, সেনা অভিযানে তাদের এলাকার বাড়িঘর লুটপাট, আগুন দেয়া হয়, ধর্ষণ করা ২০-৩০ তরুণীকে। তারা তিন বোনও ধর্ষিত হন। আমাদের বাবা-মাকে সেনারা তালাবদ্ধ করে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। পরিবারের ১৩ সদস্যের মধ্যে ৯ জন এখানে আশ্রয় নিয়েছি। আসার আগে অন্য দুইজন নিখোঁজ হয়। এখনও তাদের খোঁজ নেই, বলেন বড় বোন।এরআগেও একাধিকবার সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন বলে জানান তিন বোন। তারপর দালালদের সহযোগিতায় আসতে পেরেছেন বলে তারা জানান। দালালদের সহযোগিতায় তাদের সঙ্গে সেদিন আরও সাতটি পরিবারের ৮০ জন দমদমিয়া সীমান্ত পাড়ি দেন।গত ২৫ নভেম্বর কক্সবাজারে সীমান্ত পরিদর্শনে এসে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সীমান্তের দুই পাশে দালাল এবং বাংলাদেশে আগে থেকে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের স্বজনদের মাধ্যমে অরক্ষিত ও দুর্গম পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটছে।
সীমান্তের কয়েকটি দুর্গম পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গাদের ঢোকাতে দালালদের তৎপরতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার। বলেন, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহায়তার অভিযোগে বুধবার সকালে উখিয়ার বালুখালী থেকে চারজন দালালকে আটক করা হয়েছে।রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ। বলেন, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহায়তাকারী দালালদের ৫১ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উখিয়া ও টেকনাফ থেকে ৩১ জন দালালকে আটক করেছে।
এদিকে মানবতা ভূলুন্ঠিত মিয়ানমরের নির্বাচিত শাসক নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত অং সান সুচি সবে মূখ খুলেছেন।এভাবে তিনি নির্যাতনের সব আলামত অস্বীকার করে এই গণহত্যার দায় কিছুতেই এড়াতে পারবেন না।মানবতা ভূলুন্ঠিত মিয়ানমারের করুন পরিনতির জন্য বিশ্ব মানবতার কছে তাঁকে জবাবদিহি করতেই হবে।শুধু নোবেল শান্তি পুরুস্কার ছিনিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে তাঁকে রেহাই দেওয়ার আর কোন সুযোগ নেই।এজন্য আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ তুলে এই গণহত্যাকারী পিচাশিনী সুচির উপযুক্ত বিচারে অবশ্যই তাঁর মৃত্যুদণ্ড চাইতে হবে।
No comments:
Post a Comment