সড়ক সংস্কৃতি
ব্যস্ত রাস্তার কাহিনি

সংস্কৃতি চলমান। তাই মানুষ যখন কোনো বিষয় নিত্যদিন অনুশীলন বা চর্চা করেন তখন সে বিষয়টি তার মস্তিষ্কে একটি বিরাট ধরনের প্রভাব ফেলে। সঙ্গতকারণেই সে বিষয়টি তার জীবনযাপনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। চর্চাকারীর কাছে তা ভালো, কিন্তু অন্যের কাছে মন্দ- এমন যাই হোক না কেন এটা ঠিক চর্চা যিনি করেন তার কাছে সংস্কৃতি। এভাবে নিজস্ব সৃষ্ট সংস্কৃতি অন্যের জন্য তাই সাংঘাতিক হতে পারে এবং তা অপরের কাছে অপসংস্কৃতিও বটে। কিন্তু দেখুন, Matthew Arnold তার Culture and Anarchy গ্রন্থে বলেছেন, সংস্কৃতি হচ্ছে—Love of perfection; it is a study of perfection. It moves by the force, not merely or primarily of the scientific passion for pure knowledge but also of the moral and social passion for doing good. মোতাহার হোসেন চৌধুরীর মতে, সুন্দর করে কবিতার মতো করে বলতে গেলে সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে, মহৎভাবে বাঁচা। অর্থাৎ সংস্কৃতি হলো শুদ্ধির ভালোবাসা, শুদ্ধির অনুশীলন বা চর্চা। সব মিলে যা পাওয়া যায় তাহলো, সংস্কৃতির আগমন মানুষের সুন্দরতম এবং কল্যাণময় প্রচেষ্টা থেকে, শ্রম থেকে।
আমি রাস্তা বা সড়ক সংস্কৃতির কথা বলব। আর তা বলতে সংস্কৃতিকে টেনে নিয়ে আসতেই হবে। তাহলে বলি- যা মানুষের জন্য কল্যাণকর তা সংস্কৃতি, কিন্তু যা মানুষের জন্য মুগ্ধকর তা সংস্কৃতি নাও হতে পারে। যা কিছু কল্যাণকর তার মধ্যে আত্মতৃপ্তি আছে, আবার যা কিছু মুগ্ধকর তার মধ্যেও আত্মতৃপ্তি আছে। তবে এই দুই তৃপ্তির রস সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী। ধরা যাক, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো অসহায়কে সাহায্য করে বা অসহায়ের প্রতি ভালোবাসা দেখায়, তবে তৃপ্তির স্বাদ সাহায্যকারী ব্যক্তি ষোল আনাই ভোগ করে এবং এটা মুগ্ধকরও বটে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি অশ্লীল ছবি দর্শনে তৃপ্তি লাভ করে তবে সে তৃপ্তির রস তো নেই বরং সেটা তার বিবেককে দংশন করতে বাধ্য যদি সে মানুষ সংস্কৃতিবান হয়ে থাকে। সুতরাং যা কিছু মুগ্ধকর তা শ্রেণিভেদে সংস্কৃতি বা অপসংস্কৃতি, কিন্তু যা কিছু কল্যাণকর তা সবসময় সংস্কৃতি। আবার ধরা যাক, কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো অন্ধ ব্যক্তিকে রাস্তা পারাপারে সাহায্য করে আত্মতৃপ্তি পেলেন এবং এটা কল্যাণকর সেই সঙ্গে মুগ্ধকরও বটে। কিন্তু কেউ যদি রাস্তার মাঝখান দিয়ে মনের সুখে গান গেয়ে তৃপ্তি লাভ করেন, তবে তা অন্যের জন্য মুগ্ধকর বা কল্যাণকর নাও হতে পারে। কারণ তার তৃপ্তির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধে পথিক দুর্ঘটনার শিকার হতেও তো পারেন।
সড়ক সংস্কৃতির বিশ্লেষণে দুই শ্রেণির লোক পাওয়া যায়। প্রথমত, যাত্রী—যিনি নিজেও চালক হতে পারেন। দ্বিতীয়ত, চালক—যিনি নিজেও যাত্রী। কিন্তু মজার ব্যাপার সেখানেই। রাস্তায় বা রাস্তার পাশের ফুটপাতে জমজমাট ব্যবসা, ব্যবসায়ীদের আনাগোনা অর্থাৎ ফুটপাতের বিক্রেতা বা ক্রেতা কেউ কিন্তু সড়ক সংস্কৃতির আওতায় পড়ে না । ফুটপাতে হাঁটা পথযাত্রীদের দুর্দশা ক’জন মনে রাখতে পারেন? ব্যবসার জন্য বা কেনাবেচার জন্য নির্দিষ্ট মার্কেট আছে, বিভিন্ন বাহন মেরামতের জন্য নির্দিষ্ট গ্যারেজও আছে- ফুটপাত বা সড়কে তাদের রাজত্ব কেন? আমাদের সড়কের স্বাধীনতা কোথায়?
আবার ধরা যাক, ফুটপাত কারো দখলে নেই। কিন্তু ফুটপাতে না হেঁটে রাস্তায় হাঁটছেন কেউ। মোবাইলে রসের কথাও চলছে। অন্যের সঙ্গে ধাক্কায় তার মোবাইল ফোনটা ড্রেনে বা রাস্তায় পড়ে ভেঙে গেল, তখন কেমন লাগবে? কিংবা কেউ রাস্তার এ পাশে আছেন ওপাশে কোনো বন্ধুকে দেখা যাচ্ছে। হুট করে দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছেন তিনি। তার দুর্ঘটনায় রাস্তা সংস্কৃতির কেউ কিন্তু দায়ী নয়।
শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ—যে কেউ হোন না কেন মনে করুন, এক রিকশায় দু’য়ের বেশি যাত্রী উঠেছেন। কারণে বা প্রয়োজনে রিকশার ব্রেক চাপলে যে কেউ হুমড়ি খেয়ে পড়ে যেতে পারেন। বাসের ছাদে বসে নাচানাচি, বিজয়সূচক উল্লাস, গান-বাজনা ইত্যাদি কারণে ছাদ থেকে পড়ে যাওয়া, মরে যাওয়া বা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া অবশ্যই সড়ক সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। সড়ক সংস্কৃতি যাত্রীর ক্ষতি চায় কি?
কয়েকজন বন্ধু বা বান্ধবী বা যে কেউ একে অপরের ডানে বামে থেকে রাস্তা বন্ধ করে হেঁটে চলছেন। হাত ধরাধরিতে আহ্লাদে আটখান তারা। এটা তাদের জন্য মুগ্ধকর চলাও হতে পারে। পেছন থেকে বাইসাইকেল আরোহী বেল বাজাচ্ছেন বা বাইসাইকেলে বেল নেই। আবার বন্ধুরাও হাত ছাড়াছাড়ি করছেন না অথবা করছেন। কিন্তু বাইসাইকেল আরোহীর চলনে তো ব্যাঘাত ঘটল। এটি যেমন রাস্তা সংস্কৃতির বিরুদ্ধরূপ, তেমনি আবার বাইসাইকেল আরোহীর বেল না থাকাটাও তাই নয় কি?
পথের মধ্যে ট্রাক দাঁড় করিয়ে মালামাল লোড বা আনলোড করাটা সড়কে বিশাল জ্যামের সৃষ্টি করে। এ কারণে এম্বুলেন্স বাধাগ্রস্ত, অফিসের সময় পার বলে বসের ধমক। কেন, কোনো মন্ত্রী বা নেতা এলে তো এ জ্যাম থাকে না। একে কি সড়ক সংস্কৃতি বলে? সড়ক সংস্কৃতি একেকজনের জন্য একেক রকম হবে কেন? কিংবা সামনে স্পষ্ট জ্যাম। জ্যাম ছাড়তে সময় লাগবে বোঝা যাচ্ছে। অথচ পেছনের কার, মাইক্রো বা অন্যান্য যানবাহনের চালক বারবার হর্ন বাজাচ্ছেন যা অন্যান্য যাত্রীদের জন্য অসহনীয়। রাস্তার মাঝে এ সংস্কৃতি পরিহারে চালক কতটুকু সচেতন?
আপনি কোনো বাহন চালাচ্ছেন অথবা কোনো বাহনে যেমন রিকশা বা বাইসাইকেলে চড়ে বসেছেন। বাবুর মতো হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছেন। আপনার ডানে বামে কেউ নেই। চলতে চলতে হঠাৎ কাশি এলো, থুতু ফেলা প্রয়োজন। মন চাইল আর হুট করে ডানে বামের যেকোনো একপাশে তা ফেলে দিলেন। মজার ব্যাপার, বাতাস আপনার মুখোমুখি ছুটছে। আপনার পেছনে দ্রুতগামী মোটরসাইকেল আরোহী। আপনার থুতু গিয়ে পড়ল মোটরসাইকেল আরোহীর গায়ে। আপনার দ্বারা সংঘটিত এ সড়ক সংস্কৃতি মোটরসাইকেল আরোহীর কাছে অবশ্যই মুগ্ধকর নয়, কল্যাণকর নয় বরং তা ভীষণ কষ্টকর।
আপনি মোটরসাইকেল বা বাইসাইকেল আরোহী সেজে পথ চলছেন। জরুরি অফিসে যাবেন। চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোনটি বেজে উঠল। হাত দিয়ে মোবাইলটি পকেট থেকে বের করে কানে ধরলেন এবং একহাত দিয়ে বাহন চালাচ্ছেন। কিংবা দুই হাতে বাহন ধরেছেন ঠিকই, কিন্তু মোবাইল ফোনটি কানে এবং ঘাড়ে চেপে ধরে মাথা ডানে বা বামে কাত করে চালাচ্ছেন বাহনটা। যেকোনো কারণেই মোবাইল ফোনটা কান থেকে পড়ে যেতে পারে বা তাকে সামাল দিতে আপনার দ্বারা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আপনার ভুলের জন্য আপনার ক্ষতি হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সঙ্গে অন্যজনের জন্যও আপনি হানিকর বটে। আপনার জন্য অন্যজন দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হোক, প্রাণের হানি হোক- সড়ক সংস্কৃতি তা কখনো প্রত্যাশা করে না।
গাড়ি চালানোর সময় চালক তা রিকশা-অটো থেকে শুরু করে যেকোনো বাহনের হোন না কেন- মন চাইল অমনি সঙ্গে সঙ্গে রাস্তার যে কোনোখানে বাহনটা থামিয়ে দিলেন। এতে পেছনের বাহনের বা চালকের খুব সামান্য হলেও ব্যাঘাত ঘটে। যাত্রীকে নামিয়ে দিতে বা যাত্রী তুলতে যেমনটি হয় তেমনি অনেকেই রাস্তার পাশে বা রাস্তায় ছোট বড় যেকোন বাহন দাঁড় করিয়ে টুকটাক কাজ বা পান-বিড়ি কেনার কাজটা সেরে নেন। এটি অবশ্যই অপরের জন্য কল্যাণকর নয়। এটি সড়ক সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না।
সামনে রিকশা চলছে। পেছনে একটি বাইসাইকেল বা মোটরসাইকেল আসছে। রিকশাচালক তার যাত্রীর কথামতো হুট করে ডানে বা বামে মোড় নিলেন। পেছনের মোটরসাইকেল বা বাইসাইকেল আরোহী নিজকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। এসব অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার জন্য অনেক সময় যাত্রীরাও দায়ী। অনেক যাত্রী রিকশায় উঠে গন্তব্য না বলে চলন্ত অবস্থায় রিকশাওলাকে এদিক ওদিক যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। এমন নির্দেশক হিসেবে কেউ সড়ক সংস্কৃতির মর্যাদা নষ্ট করুন—এটা কাম্য নয়। তিনি যেন তার নির্দেশনাকে অন্য কোথাও কাজে লাগান। অথবা কেউ গন্তব্য অমুকখানে বলে রিকশায় উঠলেও রিকশাওয়ালা রাস্তা ফাঁকা মনে করে ডানে বামে হাত তুলে সংকেত না দিয়েই ঢুকে পড়েন। অথবা হাত তুলে সংকেত দেওয়া মাত্রই সেদিকে মোড় নেন। এটা রীতিমতো সড়ক সংস্কৃতির প্রতি রিকশাচালকের অশ্রদ্ধা। যদি কোনো দিকে মোড় নিতেই হয় তবে তার জন্য সময় নিয়ে ভালোভাবে হাত তুলে সংকেত দিতে হবে যাতে সে সংকেত পেছনে আসা চালকের দৃষ্টিগোচর হয়।
কোনো রাস্তা দুই লেন বিশিষ্ট। একপথে যেতে হয় অন্য পথে আসতে হয়। যাওয়ার পথে কেউ কাউকে অতিক্রম করতে চাইলে অবশ্যই ডান দিয়ে অতিক্রম করতে হবে। কিন্তু অনেক সময় অটো রিকশা বা এমন ধীরগতিসম্পন্ন গাড়ির চালকরা বাম পাশ ফাঁকা রেখে ডান সাইড নিয়ে চলছেন। পেছনে মোটরসাইকেলের হর্ন পেয়েও বামে সরছেন না। তাই বাধ্য হয়ে অনেক মোটরসাইকেল আরোহীকে বাম দিক দিয়ে অতিক্রম করতে হয়। এখানে ধীরগতিসম্পন্ন বাহনের চালক এবং মোটরসাইকেল চালক (যিনি বাম সাইড দিয়ে অতিক্রম করেন) সড়ক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে চলছেন। এটা জনতার সড়কে কখনো প্রত্যাশিত নয়।
অনেক মোটরসাইকেল আরোহী তার পেছনের সঙ্গীর সঙ্গে অথবা কোনো যাত্রী বাসের চালকের সঙ্গে মজার আলাপচারিতায় মেতেও ওঠেন। চলন্ত অবস্থায় এমনটি হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। নিজের জন্য না হোক পরের জন্য সে দুর্ঘটনা একটি পরিবারকে পঙ্গু করতে পারে। চলন্ত অবস্থায় চালকের সঙ্গে কথা বলা নিষেধ। রাস্তার এ সংস্কৃতি কোথায়? তাই কোনো নির্জন মাঠে বসে আলাপ সেরে নিয়ে বাহনে ওঠা উচিত নয় কি?
রাস্তায় অনেকেই রিকশা বা ভ্যান নিয়ে ফেরি করে বেড়ান। কেউ বা ন্যায্যমূল্যে অমুক-তমুক বিক্রির নামে রাস্তায় ট্রাক দাঁড় করিয়ে জনতার লাইন তৈরি করে পণ্য বিক্রি করে চলছেন। কিন্তু ভাবুন, রাস্তা আমাদের ট্রাক দাঁড় করিয়ে চাল ডাল বিক্রির জন্য নয়। আর যারা ক্রেতা লাইন হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েছেন তাদের জন্যও নয়। আবার, অবশ্যই ট্রাকের জন্য রাস্তা—যদি সে চলাচলের জন্য চলে, অবশ্যই লাইনে দাঁড়ানো লোকগুলোর জন্যও রাস্তা- যদি তারা পথিক বা যাত্রী বেশে রাস্তায় নামেন। সুতরাং ক্রেতা বিক্রেতা হয়ে রাস্তায় ব্যাঘাত ঘটানোটা রাস্তা সংস্কৃতি নয়।
ওই দেখুন, মাইকিং শোনা যাচ্ছে—সর্বসাধারণের জন্য সুখবর, শোক সংবাদ, বিরাট মূল্য ছাড়, ফ্রি ক্লাস, অমুকখানে অমুক জনদরদির জনসভা ইত্যাদি। রিকশা, টেম্পোতে মাইক বেঁধে যেভাবে চিৎকার চলছে তা তো সড়ক সংস্কৃতির অংশ হতে পারে না। কারণ সে মাইকের সাউন্ড ত্রিশ-চলিশ ডেসিবেলের ঊর্ধ্বে। চালক, পথিক বা যাত্রী সবার জন্যই তা ক্ষতিকর। তাহলে কল্যাণকর সড়ক সংস্কৃতি কোথায়? কেউ মাইকিং করতে চান শব্দের সীমা ত্রিশ-চল্লিশ ডেসিবেলের নিচে নামিয়ে সড়ক সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করুন।
অনেক সড়ক বা মহাসড়কের দু’ধারে সবুজ ক্ষেত বা ফাঁকা মাঠ। ক্ষেতের ফসল ওঠানোর পর রাস্তার ধারের গাছে কেউ বা গরু ছাগল বেঁধে রাখেন। মাটি থেকে দুই তিন ফুট উঁচুতে বাঁধা গরুর রশিটি যাত্রী, বাহন বা চালকের জন্য বিরাট হুমকি। রাস্তার এ পাশের গাছে গরু ছাগল বাঁধা, কিন্তু সে গরু ছাগল রাস্তার ওপারে ঘাসে মত্ত। ধরুন, মোটরসাইকেলটি রাস্তা দিয়ে যাবে। যেই দড়িটা অতিক্রম করবে গরুটা সরে যেতেই দড়িতে টান পড়ল। মোটরসাইকেল আরোহীর কী হতে পারে ভেবেছেন কি? অথবা মোটরসাইকেল আরোহী ক্ষতির আশংকা ভেবে গাড়িটাকে সাবধানে ধীরে পার করে নিলেন। কেন এরূপ ঝামেলার শিকার হবেন তিনি? সুতরাং রাস্তার পাশে যেসব প্রাণীকে বাঁধা হয় এবং যারা বাঁধেন তাদের দু’শ্রেণির মিল-অমিল খোঁজার দায়িত্ব কি সড়ক সংস্কৃতির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে?
রাস্তা আমার। রাস্তা জনতার। রাস্তা আমাদের। তাই বলে সে রাস্তায় এত ঘন ঘন র্যালি, সেমিনার কেন? উপরন্তু নববর্ষ বরণে বা বিশেষ দিনে রাস্তার ওপরে স্টেজ সাজানো হয়। নববর্ষকে বা বিশেষ দিনকে পুঁজি করে সে স্টেজে কেউবা গানের ধুম ধামাকা আসর বসিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করছেন। যাত্রী বা বাহন এ পথে এসে এমন অবস্থা দেখে আবার ফিরে অনেক দূর যেয়ে অন্যপথে গন্তব্যে চলে যান। এখানে মুষ্টিমেয় কয়েকজনের আত্মতৃপ্তি অন্য হাজারো জনের জন্য কতটা কষ্টকর ভেবে দেখা দরকার। জনতার সড়কে কারো কারো এমন কর্ম অসহ্য মনে হয় না কি? আবার অনেকেই রাস্তায় স্টেজ না করুন, বিশেষ দিনে বা পর্বে রাস্তায় লাউড স্পিকার বসিয়ে তাদের উৎসব বা পর্ব নামের অপসংস্কৃতির মাধ্যমে সড়ক সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ শ্রদ্ধা তুলে ধরছেন।
এ রকম অনেক বলা যাবে, লেখা যাবে। কিন্তু সচেতনতা আসবে কি? আসলে ভালো। সবার জন্য তা মুগ্ধকর ও কল্যাণকর হবে। সড়ক সংস্কৃতি লালনের মাধ্যমে জীবনের পরিপূর্ণতা উপভোগ্য হবে সবার। সবশেষে বলতে চাই—এসব নমুনা ছাড়াও সড়ক সংস্কৃতির সঠিক প্রয়োগের জন্য সড়ক সংস্কারও জরুরি।
লেখক : সাঈদ সাহেদুল ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক, অভিযাত্রিক সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ, রংপুর
No comments:
Post a Comment