অদম্য এক সংগ্রামী নারী খবরের ফেরিওয়ালা...

অদম্য সংগ্রামী এক নারীর প্রতিকৃতি হয়ে ধরা দিলেন জান্নাতুল সরকার চম্পা। ৩১ বছর বয়সী হার না মানা এই সাহসীকে অনেকেই চেনেন ‘খবর ফেরিওয়ালা’ হিসেবে। কারণ তিনি ফেরি করেন খবরের কাগজ। আর সে কারণেই জীবনের গল্পে সংগ্রামী এই ‘জয়িতা’ অন্য দশজন থেকে আলাদা। জীবিকার তাগিদে মাইলের পর মাইল ছুটে চলেন বাইসাইকেলে ভর করে। গতিময় পথে অনেক মন্থর অভিব্যক্তিও দেখেছেন তিনি। কিন্তু থামেননি, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে
ক্রমাগত এগিয়ে চলেছেন তিনি। পেরেছেনও বটে। পৌঁছে গেছেন স্বাবলম্বী হওয়ার গর্বিত সীমানায়।
অবশ্য চম্পার বেড়ে ওঠা আর দশটা সাধারণ নারীর মতোই। পড়ালেখা করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। পরিবারের হাল ধরতে বিভিন্ন জায়গায় চাকরিও করেছেন। পেতেছিলেন সংসারও, যা সবার কাম্য। কিন্তু হোঁচট খেয়েছেন । তাই বলে দমে যাওয়ার পাত্রী নন তিনি। নিজের কষ্ট, কান্না, পাওয়া-না পাওয়া ভুলে হাসি ফুটিয়ে চলেছেন পরিবারের অন্য সদস্যদের মুখে। তাদের মুখে খাবার দিতে গ্রাম-শহরে নিরন্তর সাইকেলে ছুটে মানুষের বাড়ি যান খবরের কাগজ নিয়ে। আর এ ভারে ঢেকে গেছে তার নিজের খবরই!
সামাজিক বিভাজনকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এই সংগ্রমী নারী। বললেন, কাজের মধ্যেই সম্মান। কোনো কাজই ছোট নয়। যা করতে হয় সম্মান দিয়েই করতে হয়। তবেই সম্মান মিলবে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতার শুরুতেই তিনি বলেন, বয়স চলে গেছে। চাকরি তো হলো না। তাই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে খবরের কাগজ বিক্রি করছি। সংসার তো চালাতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে বেশ প্রত্যয় নিয়ে চম্পা বলেন, ‘অভাবের কাছ হার মানতে রাজি নই। তাই পত্রিকা বিক্রি করছি।
৪ বছর ধরে পাবনার চাটমোহর সদরের আনাচে-কানাচে ২ চাকার যান নিয়ে ছুটে চলেন চম্পা। প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার সাইকেল চালালেও ক্লান্তির কোনো ছাপ নেই চোখে-মুখে। এ চিলতে হেসে তার সোজা উত্তর, পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি দেখলে কোনো ক্লান্তি থাকে না। জানালেন, উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের মল্লিক বাইন গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মৃত ইসহাক আলী সরকারের দ্বিতীয় সন্তান চম্পা। ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে চাকরি খোঁজা শুরু করেন। ২০০২ সালে নিরাপত্তা হাবিলদার হিসেবে যোগ দেন ঈশ্বরদী আলহাজ টেক্সটাইল মিলে।
অবশ্য চম্পার বেড়ে ওঠা আর দশটা সাধারণ নারীর মতোই। পড়ালেখা করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। পরিবারের হাল ধরতে বিভিন্ন জায়গায় চাকরিও করেছেন। পেতেছিলেন সংসারও, যা সবার কাম্য। কিন্তু হোঁচট খেয়েছেন । তাই বলে দমে যাওয়ার পাত্রী নন তিনি। নিজের কষ্ট, কান্না, পাওয়া-না পাওয়া ভুলে হাসি ফুটিয়ে চলেছেন পরিবারের অন্য সদস্যদের মুখে। তাদের মুখে খাবার দিতে গ্রাম-শহরে নিরন্তর সাইকেলে ছুটে মানুষের বাড়ি যান খবরের কাগজ নিয়ে। আর এ ভারে ঢেকে গেছে তার নিজের খবরই!
সামাজিক বিভাজনকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এই সংগ্রমী নারী। বললেন, কাজের মধ্যেই সম্মান। কোনো কাজই ছোট নয়। যা করতে হয় সম্মান দিয়েই করতে হয়। তবেই সম্মান মিলবে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতার শুরুতেই তিনি বলেন, বয়স চলে গেছে। চাকরি তো হলো না। তাই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে খবরের কাগজ বিক্রি করছি। সংসার তো চালাতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে বেশ প্রত্যয় নিয়ে চম্পা বলেন, ‘অভাবের কাছ হার মানতে রাজি নই। তাই পত্রিকা বিক্রি করছি।
৪ বছর ধরে পাবনার চাটমোহর সদরের আনাচে-কানাচে ২ চাকার যান নিয়ে ছুটে চলেন চম্পা। প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার সাইকেল চালালেও ক্লান্তির কোনো ছাপ নেই চোখে-মুখে। এ চিলতে হেসে তার সোজা উত্তর, পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি দেখলে কোনো ক্লান্তি থাকে না। জানালেন, উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের মল্লিক বাইন গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মৃত ইসহাক আলী সরকারের দ্বিতীয় সন্তান চম্পা। ২০০০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নে চাকরি খোঁজা শুরু করেন। ২০০২ সালে নিরাপত্তা হাবিলদার হিসেবে যোগ দেন ঈশ্বরদী আলহাজ টেক্সটাইল মিলে।
২০০৫ সালে পারিবারিক পছন্দে উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কাঁটাখালী গ্রামের এক যুবককে বিয়ে করেন। এরপর চাকরি নেন একটি বিমা কোম্পানিতে। তবে বছর না যেতেই স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। ফিরে যান বাবার বাড়িতে। এক্ষেত্রে কণ্ঠ কিছুটা ধরে আসে চম্পার। বললেন, বাবার বাড়িরও আর্থিক অবস্থা ভালো না। এরপর বিভিন্ন সময় তাকে বিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আর সংসার পাতিনি। এরমধ্যে মারা যান তার বাবা ইসহাক মিয়া। বড়ভাইও আলাদা হয়ে যান। মা আর ছোট ভাইয়ের দায়িত্বটাও চাপে আমার কাঁধে। এ অবস্থায় কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা, বেশ আবেগ প্রবণ হয়ে ওঠেন সংগ্রামী চম্পা।
নিজেকে সামলে চম্পা বলেন, কোনো কাজকে ছোট করে দেখি না। আমি তো কারো কাছে হাত পাতছি না। অন্যকিছুও করছি না। কাজ করে খাচ্ছি। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথম দিকে অনেকে আমাকে কটূক্তি করেছেন। প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো। কিন্তু এখন আর খারাপ লাগে না। কারণ আমি না খেয়ে থাকলে আমাকে কেউ সাহায্যে করবে না। নারীরা এখন কতো কিছুই তো করছে। ট্রেন চালাচ্ছে, বিমান ওড়াচ্ছে, গাড়ি চালাচ্ছে। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতাও নারী। আমি নারী হয়ে পত্রিকা বিক্রি করলে সমস্যা কী? এ নিয়ে কোনো হীনমন্যতা নেই, যোগ করেন তিনি।
এরমধ্যে ঘুণে ধরা সমাজকে এগিয়ে নিতে এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে ২০১০ সালে ইউপি নির্বাচনেও অংশ নেন এই নারী। মাত্র ৭০ ভোটে হেরে যান। একই ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের নির্বাচনেও। তার ভাষায়, জিততে পারিনি। প্রথমবার হেরে যাওয়ার পর বেশ অভাবেও পড়ি। বাধ্য যোগ দিই একটি কোম্পানির স্থানীয় বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে। তবে দোকানে দোকানে গিয়ে সিগারেট বিক্রি করায় বেশ খারাপ লাগতো। তবুও সংসারের কথা চিন্তা করে অনেকদিন করেছি। কিন্তু ২০১১ সালের শেষের দিকে আমাকে সিরাজগঞ্জে বদলি করা হয়। তখন মা-ভাইয়ের কথা চিন্তা করে সেখানে যাইনি। চাকরিটা ছেড়ে দিই।
চম্পার কোনো জমিজমা নেই। ভাইয়েরাও তার কোনো খোঁজ-খবর নেন না। ২০১২ সালে খবরের কাগজ বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পত্রিকা বিলি করেন চম্পা। তাকে সহযোগিতা করেন ছোট ভাই। বললেন, দৈনিক গড়ে ৩৫০ কপি পত্রিকা (জাতীয় ও স্থানীয় মিলে) বিক্রি হয়। মাসে আয় হয় প্রায় ১০-১১ হাজার টাকা। এ দিয়ে চলে সংসার। ভবিষ্যতে সাইকেলের বদলে একটি স্কুটি চান চম্পা। যাতে আরও দ্রুত খবর পৌঁছে দিতে পারেন মানুষের কাছে।
No comments:
Post a Comment