জঙ্গিরা বাইরে বের হতেন না...

জঙ্গি আস্তানার ভিতরে ৫ গ্রেনেড, ২ সুইসাইডাল ভেস্ট

রাজধানীর দক্ষিণখানে আশকোনার জঙ্গি আস্তানার তিনরুমের ওই ফ্ল্যাটের দুই রুমে প্রবেশ করেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল । তবে একটি রুমে এখনও প্রবেশ করতে পারেনি।কারণ ভেতরে এখনও প্রচুর গ্যাস। ওই কক্ষেই কিশোর জঙ্গির লাশ রয়েছে।
রোববার সকালে বোম্ব ডিসপোসাল টিমের সদস্যরা আশকোনার জঙ্গি আস্তানায় প্রবেশ করেন। এরপর তারা দুটি রুমে প্রবেশ করেন। সিটিটিসি ইউনিটের ডিসি প্রলয় কুমার জোয়ারদার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ভেতরে প্রচুর গ্যাস, দুটি রুমে পুলিশ প্রবেশ করতে পারলেও একটিতে এখনও প্রবেশ করা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস গ্যাস নিঃসরণের কাজ করছে। তারপর সেখানে প্রবেশ করা যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘ফ্ল্যাটের ভেতরে পাঁচটি গ্রেনড এবং দুটি সুইসাইডাল ভেস্ট (আত্মঘাতী ভেস্ট) আছে। এর মধ্যে দুটি গ্রেনেড খুবই বিপজ্জনক। সেগুলো নিষ্ক্রিয় করতে বোম্ব ডিসপোসাল টিম প্রবেশ করবে।
শুক্রবার রাত ১২টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট দক্ষিণখান থানার পূর্ব আশকোনার ৫০ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে এক নারী ও এক কিশোর জঙ্গি নিহত হয়েছে। পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে দুই নারী ও তাদের দুই সন্তান। নিহত নারী জঙ্গির আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে আহত হয় তার শিশুকন্যা। ওই শিশুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার আশকোনায় হাজ ক্যাম্পের কাছে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে যে বাড়ি ঘিরে অভিযান চালানো হয়েছে,সেই বাড়ির নিচতলার ভাড়াটেরা বাইরে বের হতো না বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশিরা।শনিবার ওই বাড়ির মালিকের বড় মেয়ে জোনাকি রাসেলও গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তার বাবা মোহাম্মদ জামাল হোসেন বাড়িটির মালিক। তিনি কুয়েতপ্রবাসী। ২ বোনের মধ্যে তিনি বড়। তিনি বাবার বাড়ির কাছেই আরেকটি বাড়িতে থাকেন। বাসা ভাড়া দেওয়া ও অন্যান্য বিষয়ে তিনি বলেন, তার বাবার বাড়িতে টু-লেট টাঙানো ছিল। গত ১ সেপ্টেম্বর মো. ইমতিয়াজ আহমেদ পরিচয় দিয়ে একজন নিচতলার বাসাটি দেখতে আসেন। তখন ওই ব্যক্তি নিজেকে অনলাইন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন এবং বলেন যে বাসায় তিনি, তার স্ত্রী ও এক বাচ্চা থাকবে। মাঝেমধ্যে স্ত্রীর বোন এসে থাকবেন। ১০ হাজার টাকায় তিনি বাসাটি ভাড়া নেন। ৩ সেপ্টেম্বর পরিবার নিয়ে তিনি সেখানে ওঠেন।
বাড়িওয়ালার মেয়ে জোনাকি রাসেল বলেন, বাসা ভাড়া দেওয়ার পর তিনি বেশ কয়েকবার ওই বাসায় গেছেন। বাসায় ল্যাপটপ, খাট, ড্রেসিং টেবিল, ফ্রিজ দেখেছেন। তিনি বলেন, উনারা কখনো বের হতেন না। বাসায় ওঠার সময় বাচ্চার বয়স ছিল ৪০ দিন। কেন বের হন না জানতে চাইলে তারা বলতেন, হিজড়ারা বাচ্চা দেখলে টাকা চায়। সে কারণে বের হন না। তিনি বলেন, মাঝে মাঝে দুজন নারী ওই বাসায় আসতেন। জিজ্ঞেস করলে বলতেন, মা ও এক আত্মীয়। গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছেন।বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় পরিবারটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়েছে, ভাড়াটেসংক্রান্ত ফরম পূরণ করেছে এবং সে ফরম থানায় জমা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান জোনাকি রাসেল। পুলিশের অভিযান শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার রাত ১২টার পুলিশ তার বাবার বাড়িতে নক করে। তার মা নিচে নেমে যান। তখন পুলিশ তার কাছে নিচতলার ভাড়াটে সম্পর্কে জানতে চায়। তখন তিনি পুলিশকে বলেন, তার বড় মেয়ে (জোনাকি) সব জানেন। তখন তার মা পুলিশকে নিয়ে তার বাসায় যান। তখন তিনি ভাড়াটেদের কাছ থেকে নেওয়া সব কাগজপত্র পুলিশকে দেন। এরপর পুলিশ চলে যায়।
এদিকে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে শনিবার বিকেল পৌনে ৪ টার দিকে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে চালানো অভিযান পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, এই অভিযানে ৪ জন আত্মসমর্পণ করেছেন এবং ২ জন্য নিহত হয়েছেন। এ আস্তানায় প্রায় ১২ ঘণ্টার পুলিশি অভিযানে জঙ্গিনেতা তানভীর কাদেরীর ছেলেসহ ওই দুজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আহত অবস্থায় একটি শিশুকে উদ্ধারের পাশাপাশি আত্মসমর্পণ করেছেন নিহত আরেক জঙ্গি নেতা জাহিদুল ইসলামের স্ত্রীসহ ৪ জন।
No comments:
Post a Comment