Wednesday, December 28, 2016

কবুতর পালন করে বাজিমাত!

কবুতরের প্রতি ভালোবাসা নেই এমন মানুষের খোঁজ মেলা ভার। শখের বশে আর বাণিজ্যিকভাবেই হোক অনেকে কবুতর পালন করে থাকেন। নিতান্তই শখের বশে কবুতর পালন করতে গিয়ে বাজিমাত করেছেন সজিব দাস। তবে এই তরুণের স্বপ্ন ছিলো নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু করে দেখানো, যা তিনি পেরেছেন।
সজিব দাসের শখ নেশার পর্যায়ে গিয়ে আজ তিনি কবুতর পালনের একজন সফল খামারী। পড়াশোনার পাশাপাশি যুব সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে নিজের পায়ে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। আর তাকে অনুসরণ করে চাটমোহর ও আশেপাশের এলাকার অনেক তরুণ ও যুবক তার দেখানো পথেই হাঁটছেন। সদা হাস্যোজ্বল, বিনয়ী ও সদালাপী সজিব দাসকে অনুকরণ করে চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তরুণ থেকে শুরু সব বয়সীরাই কবুতরের খামার গড়ে তুলছেন। তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতাও করেন তিনি।
চাটমোহর পৌর শহরের ছোট শালিকা মহল্লার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মৃত সুনীল কুমার দাসের ছোট ছেলে সজিব। বড় ভাই মানিক দাস চারুকলা ইনিস্টিটিউট থেকে পাশ করে দেশের অন্য কোথাও চাকরি বা অন্য কিছু না করে নাড়ির টানে ছুটে এসেছেন এলাকায়। আর্ট স্কুলের সাথে সম্পৃক্ত থেকে শুরু করেছেন এলাকার ছোট ছোট শিশুদেরকে আর্ট (অংকন) শেখানো। চাটমোহর এলাকার শিশুদের প্রিয় ‘মানিক কাকু’ হয়েছেন। ছোট ভাই সজিব দাসও স্বমহিমায় স্বাবলম্বী হয়ে এলাকার যুব সমাজের জন্য আইকন হয়ে উঠেছেন। তবে সজিবের ইচ্ছা দেশের বাইরে গিয়ে কোন ভালো চাকরি বা অন্য কিছু করা। 
২০০৮ সালে এসএসসি পাশ করেন সজিব। এরপর চাটমোহর ডিগ্রি (অনার্স) কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে চাটমোহর পলিটেকনিক অ্যান্ড টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউটে (ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং) ভর্তি হন সজিব। এর মাঝে ৬ হাজার টাকা দিয়ে তিতাস নামে সজিবের এক নিকটাত্মীয় তাকে দুই জোড়া সিরাজী জাতের কবুতর কিনে দেন। শখ ছিলো সজিবেরও। এরপর বাড়ি থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ করে কবুতর রাখার জন্য একটি খাঁচা বানান। এখান থেকেই শুরু সজিবের পথচলা। 
পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী। দুই জোড়া দিয়ে শুরু করলেও ৭/৮ বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রজাতি মিলিয়ে প্রায় ৪০ জোড়া কবুতরের মালিক বনে গেছেন সজিব দাস। যার বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। বর্তমানে লংফেস, হলুদ আউল, পলিশ, জ্যাকবিন, স্টেচার, মুন্ডিয়ানো, কর্মনা, মুক্ষি, নান, শোয়াচন্দন, মাপেট, আর্টস এঞ্জেল, উজবেক, সিরাজী, লক্ষ্মা, গিরিবাজ, রেচারসহ বিভিন্ন জাতের কবুতর রয়েছে তার সংগ্রহে। এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ দামের কবুতর হলো ‘লংফেস’ জাতের কবুতর।
সজিব দাস জানান, ঢাকা, বগুড়া, নাটোরের আহম্মদপুর ও মৌ-খাড়া হাট, পাবনার মেরিল রোড ও হাজির হাটে প্রতি সপ্তাহে কবুতরের হাট বসে। বাচ্চা কবুতরগুলো বড় হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা এসে তা কিনে নিয়ে যায়। তবে ব্যাপারীরা দাম কম দেন বলে পাবনার মেরিল রোডে কবুতর হাটে বিক্রি করলে একটু বেশি  দাম পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, বর্তমানে কবুতর বিক্রি করে প্রতি মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। তবে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। বিশেষ করে কবুতর গুলোর খাদ্য সংগ্রহ করা এবং তাদের যত্ন নেয়া।  পড়াশোনার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি সংসারের খরচও মেটানো যায়।
তিনি আরও বলেন, কবুতরের প্রতি ভালোবাসা খারাপ নেশা বা বদ অভ্যাস থেকে দূরে রাখতে পারে তরুন প্রজন্মকে। যে কারণে পড়াশোনার পাশাপাশি সবারই কোন না কোন কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকা উচিত।
এছাড়াও সজীবের শোবার ঘরের পাশে বিশেষভাবে খামার আদলে বানানো একটি ঘরে কবুতরের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখিও রয়েছে। এগুলোর মধ্যে লাভ বার্ড, বাজিরিকা, স্টার ফিন্স, আউল ফিন্স, কোকাটেল, জেব্রা ফিন্স, বেঙ্গলী উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সমাজে এমন সজিব পারেন তরুণ সমাজের পরিবর্তন আনতে। সজিব দাসের মতো তরুণরা পারেন সমাজের সজিবতা আনতে।

No comments:

Post a Comment