Saturday, March 18, 2017

‘বাংলাদেশ প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’হবে 

বাংলাদেশে কোন দারিদ্র্য থাকবে না, কোন মানুষ গৃহহারা থাকবে না, কোন মানুষ রোগে-শোকে কষ্ট পাবে না, সকলেই তাদের জীবনের মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করতে পারবে। সেভাবেই আমরা দেশকে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে উন্নত, সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করতে শপথ প্রহণের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জাতির পিতার সম্পূর্ণ জীবনটাই ছিল বাংলার মানুষের জন্য নিবেদিত। জাতির পিতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড।রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার ৯৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি একথা বলেন। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী আমরা পালন করবো। ২০২০ সাল জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করবো।... জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করবো, তাঁর জন্মদিনে এটাই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা। তিনি ২০২১ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করতে আওয়ামী লীগের সকল সংগঠন সহযোগী সংগঠনকে এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানিয়ে বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো। বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। আর ২০৪১ সালে হবে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ। 
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভাব নেই উল্লেখ করে পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, রাজনীতি করি বাংলাদেশের জনগণের জন্য, রাজনীতি করি পিতার আদর্শে। জনগণের জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে যেখানে প্রস্তুত, সেখানে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ এনে ভয় দেখাবে, আমি তো ওরকম বাবার সন্তান না। আমি শেখ মুজিবের সন্তান। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন কানাডার সেই ফেডারেল কোর্ট বলে দিয়েছে বিশ্বব্যাংকের সকল অভিযোগ মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট। অন্তত বাংলাদেশের মানুষের সম্মান আমরা রেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌত্ব রক্ষায় যারা অতন্ত্র প্রহরী, বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী- তাদেরকে একটি স্বাধীন দেশের প্রতিরক্ষাবাহিনী হিসেবে আমরা গড়ে তুলেছি এবং জাতির পিতার ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আওতায় আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ গ্রহণ করে উন্নয়ন করে যাচ্ছি। পুলিশ বাহিনী, বর্ডার গার্ড, আনসার ও ভিডিপি, র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রত্যেকটি বাহিনীকে আমরা একটা স্বাধীন দেশের উপযুক্ত করে গড়ে তুলে দেশের মানুষকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের হাত থেকে মুক্ত করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশে কোন জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের স্থান হবে না। যে যেখানে আছেন সেখানেই তাদেরকে সেভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের নেতা-কর্মীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে এজন্য সতর্ক থাকতে হবে, কারো সন্তান যেনো কোনভাবে জঙ্গিবাদের পথে না যায়। কারো এলাকায় কোন জঙ্গি বা সন্ত্রাসী রয়েছে কিনা এ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার আহবান জানান তিনি। তিনি সমাজের সকল শ্রেণী পেশার নাগরিকদের নিয়ে তাঁর সরকারের জঙ্গিবাদ বিরোধী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, ওই সন্ত্রাসী, জঙ্গি এবং মাদকাশক্তি থেকে যেন যার যার সন্তানরা দূরে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাভাই সৃষ্টি করে প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র হাতে নিয়ে পুলিশ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দের মদদে তৎপরতা চালিয়ে যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চালু করা হয়েছিল, তা দমনে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ৫শ’ জায়গায় জঙ্গীরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, ১০ ট্রাক অস্ত্রের চোরাকারবার দেশে ধরা পড়েছে। এর সঙ্গে দেখা গেল খালেদা জিয়ার মন্ত্রীরাই জড়িত। সেটাও আদালতে প্রমাণ হয়ে তারা সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার ছেলে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে বিচারের সম্মুখীন হয়েছে, খালেদা জিয়া নিজে এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে এখন আদালতে গিয়ে মামলা মোকাবিলা করতে ভয় পাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন মামলা আদালতে গিয়ে মোকাবেলার তথ্য তুলে ধরে বলেন, আমরা কিন্তু যেকোন অবস্থা মোকাবেলা করতে জানি। কারণ আমাদের সততার জোর আছে। সততার শক্তি আছে। সততা একজন রাজনীতিবিদের জন্য বড়ো শক্তি আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতই ষড়যন্ত্র করুক না কেন আমরা সততার সঙ্গে রাষ্ট্রপরিচালনা করছি বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে। এই সময় ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দেবার পর কারাগারে থাকার সময় ডায়েরী আকারে লেখা জাতির পিতার ‘কারাগারের রোজ নামচা’ শীর্ষক আরেকটি আত্মজীবনী গ্রন্থ প্রকাশের কথা উল্লেখ করেন তিনি। 

No comments:

Post a Comment