বিশিষ্টজনদের অভিমত
চাইলেও সবকিছু পারবেন না ট্রাম্প

অবশেষে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হলেন ডোনাল্ড জন ট্রাম্প। সব সন্দেহ, বিতর্ক ও জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শুরু হলো বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প অধ্যায়। সেই সঙ্গে নতুন করে শুরু হলো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় নানা হিসাব-নিকাশ। বিশেষ করে ক্ষমতায় আরোহণের প্রথম দিনেই সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার রেখে যাওয়া বেশ কিছু কর্মসূচি নির্বাহী আদেশে বাতিল ও স্থগিত করায় এবং নতুন প্রশাসনের বিবেচনায় থাকা আরো দুই শতাধিক নির্বাহী নির্দেশ নিয়ে উদ্বেগে পড়েছে দেশগুলোর প্রধানরা। কী হতে যাচ্ছে, সে নিয়ে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না কেউ।
ট্রাম্পকে ঘিরে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও দারুণ উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, হিসাব-নিকাশ চলেছে দেশের পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশনের পর্দায় ও বৈঠকি আড্ডায়। ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের দিকে সতর্ক নজর রাখছে সরকার। লাভ-ক্ষতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের সফঙ্গ আমেরিকার সরকারের সম্পর্ক, বাংলাদেশের পণ্যের আমেরিকার বাজারে বিশেষ কোনো সুবিধা পাওয়া, লাখ লাখ অভিবাসী বাংলাদেশির জন্য নতুন কোনো সুযোগ বা সংকট, মুসলিম-অধ্যুষিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হবে কি না, আর জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সহযোগিতামূলক সম্পর্ক হবে দেশটিরÑএসব বিষয়ে জানতে বিশেষ কৌতূহল নিয়ে অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের মানুষ ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা। সেই সঙ্গে উ™ভূত সংকট কাটাতে সরকারই বা কী ধরনের কূটনৈতিক কৌশল নিচ্ছেÑতা জানতেও আগ্রহ সবার। গত শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায়) মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন দেশটির ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী চার বছর যুক্তরাষ্ট্রকে চালাবেন রিপাবলিকান দলীয় এই ধনকুবের।
যদিও বাংলাদেশ সরকার মনে করে, ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ধারায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। নির্বাচনে জয় লাভের পর ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে। তা ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক গত কয়েক বছর ধরেই অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। সেই ধারাবাহিকতা রাখবে ট্রাম্প। দুদেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্কের উন্নয়ন হবে। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্থগিত হওয়া জিএসপি সুবিধা চাইব। তা ছাড়া আরো নতুন নতুন বাণিজ্যের বিষয়ে দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চলবে।
অবশ্য বিশ্লেষকরা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতিবাচক ও ইতিবাচক দুটি দিকই বিবেচনায় রেখেছেন। তবে তারা এ কথা বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হওয়ায় ট্রাম্প চাইলেও অনেক কিছুই করতে পারবেন না। সেখানে প্রেসিডেন্ট অস্থায়ী। কিন্তু স্থায়ী হচ্ছে সেখানকার ব্যুরোক্রেসি ও বিভিন্ন সংস্থা। এসব সংস্থাকে পাশ কাটিয়ে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে বিশ্লেষকরা ট্রাম্পকে ‘সেকেলে’ বলেও উল্লেখ করেছেন। তারা স্পষ্ট বলেছেন, পুরনো ধ্যানধারণা নিয়ে ট্রাম্পের পক্ষে এই মুক্ত বিশ্বায়নের যুগে তার অপরিপক্ব অভিলাষ পূরণও সম্ভব নয়। একই সঙ্গে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঝুঁকি ও উদ্বেগের কথাও বলেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, তিক্ত নির্বাচনী প্রচারের পর জনমতের বিভক্তির মধ্যে শপথ নিয়ে দেশকে ঘরে-বাইরে একটি নতুন ও অনিশ্চিত পথে দাঁড় করিয়েছেন ট্রাম্প। ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিয়ে কঠোর বক্তব্য, রাশিয়ার সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কের অভিপ্রায়, অভিবাসন নীতির পরিবর্তন ও ন্যাটোর সমালোচনাÑসবকিছু মিলিয়ে অন্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও নতুন উদ্বেগে ফেলেছে দেশটি। একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে আরো বিচ্ছিন্ন ও সুরক্ষিত করা; তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্কারোপের অঙ্গীকার করে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ঝুঁকির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা এ কথাও মনে করেন, ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ভালো হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ট্রাম্প ব্যবসায়ী হওয়ায় জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তা ছাড়া নেতিবাচক পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না। বরং দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক নতুন ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। তারা অবশ্য এ কথাও বলেছেন, ট্রাম্প চাইলেও সবকিছু পারবে না সেদেশের পররাষ্ট্রনীতির কারণে।
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বাংলাদেশ কী ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেÑতা জানতে গতকাল দেশের তিন কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক এবং অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কথা হয়। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে উ™ভূত ইতিবাচক ও নেতিবাচক নানা দিক।
ট্রাম্পের কারণে দেশের অর্থনীতিতে কেমন পরিবর্তন আসতে পারেÑজানতে কথা হয় দেশের অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর অধ্যাপক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, এটা এখনই বোঝা যাবে না। কারণ নির্বাচনের আগে যেসব কথা বলা হয়, নির্বাচনের পর সেগুলো ঠিক থাকে না। এর উদাহরণ ভারতের নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দেখা গেল তিনি বেশ সহযোগিতা করছেন। তা ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চার বছর পরপর সরকার বদল হয়। সেখানে প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি শক্তিশালী সেখানকার ব্যুরোক্রেসি ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তারা দেশের বিরুদ্ধে যাবে এমন কিছু করতে দেবে না। এরাই এখানকার স্থায়ী শক্তি। এদের হাতে প্রচুর ক্ষমতা।
‘বিশেষ করে অর্থনীতি বা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে খুব একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুব বেশি না। শুধু তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসা। সেখানেও পূর্ণ ট্যাক্স বা অন্য সব শর্ত মেনেই করা হচ্ছে। সুতরাং অর্থনৈতিক দিকে অত চিন্তার কিছু নেই’Ñবলেন এ অর্থনীতিবিদ।
সার্বিক দিক প্রসঙ্গে খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এখন পর্যন্ত ট্রাম্প যা বলেছেন বা করেছেন, তাতে খারাপ কিছু দেখছি না। মধ্যপ্রাচ্যের প্রসঙ্গে যেটি বলেছে আইএস বা জঙ্গি দমন করবে, সেটা করতে পারলে ভালো হবে। অনেক দেশেই শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। রাশিয়ার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে পারলে বিশ্বে শান্তি আসবে, অনেক সমস্যারই সমাধান হবে। সব মিলিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসায় খুব বড় ধরনের পরিবর্তন দেখছি না। এ কথাও ঠিক যে, শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির বিপক্ষে গিয়ে ট্রাম্প চাইলেও তার সব ইচ্ছে পূরণ করতে পারবেন না। কেমন হতে পারে কূটনৈতিক সম্পর্ক জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবীর বলেন, এখনই এত দ্রুত কিছু বলা যাবে না। তবে ভয় নেই এই কারণে যে আমরা বিভিন্ন দেশের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও সে দেশের পররাষ্ট্র নীতিমালার ভিত্তিতেই সম্পর্ক গড়ে তুলি। তবে ট্রাম্প যে ‘ফার্স্ট আমেরিকা’র কথা বলছে বর্তমান মুক্ত বাণিজ্য বা বিশ্বায়নের যুগে সেটি এক ধরনের সংকীর্ণতা। সেটি যদি করতে পারে বা করে, তা হলে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। সত্যি যদি মুক্তবাজার অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে প্রটেকশন বা সংরক্ষণবাদী অর্থনীতির দিকে যায়, তা হলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশই হুমকির মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রেরও ক্ষতি হবে। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাও পেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন ও মুসলমানদের ব্যাপারে যেসব কথা বলছেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করলে অবশ্য ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। বাংলাদেশকে তখন সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।
অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসন কেমন প্রভাব ফেলতে পারেÑজানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্বে মার্কিন ভূমিকা ব্যাপক ও জটিল। গুরুত্বপূর্ণও বটে। দেশটির যে উত্থান, তাতে তাদের পররাষ্ট্রনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে দেশটি যেভাবে বিশ্বের নানা দেশে নানা কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ করেছে, সেটি নেতিবাচক। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ট্রাম্প যে পররাষ্ট্রনীতির কথা বলছেন, একেবারেই ভিন্ন। সেটি করতে পারলে ভালো। কিন্তু আদৌ সম্ভব কি নাÑতা নিয়ে সন্দেহ আছে।
এ বিশ্লেষক বলেন, অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যে নীতির কথা বলছেন ট্রাম্প, তা কট্টর নীতি। শক্তির রাজনীতি। ট্রাম্প যা বলছেন তা যদি হয়, তা হলে সে দেশের মূলধারার কৌশলগত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক করতে পারলে শান্তির পথ বেরোবে। জঙ্গিবাদ নিয়ে যে শঙ্কা, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করতে পারলে ভালো হবে। কিন্তু এ ধরনের পলিসি বাস্তবায়ন করা কঠিন। কোনো দেশের কোনো নীতিতে বা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে নাÑট্রাম্পের এ নীতির ঘোষণা যেমন ইতিবাচক; তেমনি সেটি সম্ভব কি না, তা-ও সন্দেহ রয়েছে। কারণ গত ৬০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যে বিশ্বকে গণতন্ত্রের ধারায় আনার নামে বিভিন্ন দেশে যেভাবে হস্তক্ষেপ করেছে, বর্তমান অবস্থান সেই নীতির পরিবর্তনের কথা বলছে। এটি হলে বিষয়টি ইতিবাচক হবে।
‘কিন্তু কিছু ইস্যু রয়েছে, যেগুলো নেতিবাচক’Ñউল্লেখ করে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, জলবায়ু তহবিলের বিরোধিতা করে পরিবেশ ও অভিবাসনের ক্ষেত্রে যে নেতিবাচক নীতির কথা বলছে, সেটি হলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইসলামকে আলাদা করে দেখছে। এটিও ঠিক না। এগুলো ট্রাম্পের পরিপক্ব চিন্তার প্রকাশ না। আবার ট্রাম্পের নীতিতে স্ববিরোধিতাও আছে। একদিকে উনি মার্কিন বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলছেন, সেটি সংরক্ষণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। নিজেদের কর্মসংস্থানের কথা বলে অন্য দেশে বিনিয়োগ করতে দেবেন না। তার মানে সংরক্ষণবাদী নীতি। অন্যদিকে মুক্ত বাণিজ্যের সময় চলছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ব্যবসা করছে। সেখানে তার এই অর্থনৈতিক চিন্তার বাস্তবায়ন কঠিন। অর্থনৈতিকভাবে চীনকে যে চাপের মধ্যে রাখার চিন্তা করছে, সেটি হলে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ক্ষতির মুখে পড়বে। অর্থাৎ ট্রাম্প পুরনো কথা বলছে, পুরনো ধ্যানধারণায় রয়েছে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে না। এসব আন্তনির্ভরশীল বিশ্বায়নের সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী দর্শন বা চিন্তাভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না।
লেখক: প্রতীক ইজাজ
No comments:
Post a Comment