Monday, January 30, 2017

একুশে বইমেলা উদ্বোধন কাল

অমর একুশে গ্রন্থমেলা চত্বরের চারপাশের পরিবেশকে নান্দনিকভাবে সাজানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে। মেলার সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে প্রথমবারের মতো চত্বরগুলোতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মাধ্যমে শুরু হবে এ মেলা। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। লটারির মাধ্যমে স্টল বরাদ্দের টিকিট পাওয়া লেখক ও প্রকাশকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাংলা একাডেমি চত্বরসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাজে ব্যস্ত স্টল নির্মাণ শ্রকিমরা। সবকটি স্টলের কাজ প্রায় শেষের দিকে।
রোববার সকালে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তে স্টল মালিকরা উপস্থিত থেকে নির্দেশনা দিয়ে স্টল তৈরি করছেন। চারদিকে উৎসব উৎসব ভাব। রিকশা ও ভ্যানগাড়ি ভর্তি করে স্টল নির্মাণে কাঠ-বাঁশ, ইট-বালু-সিমেন্টসহ নির্মাণসামগ্রী আসছে। কাঠমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, আর্টিস্ট ও ইলেকট্রিশিয়ানসহ সবাই কাজে ব্যস্ত। এ সময় দেখা গেল শোভা প্রকাশনীর স্টলে কাজ করছেন কয়েকজন নির্মাণ শ্র্রমিক। তারা বলেন, এবারই প্রথম স্টলের ছাউনিতে ত্রিপলের পরিবর্তে টিন ব্যবহার করা হয়েছে। নিত্যনতুন ডিজাইন করছি। আশা করি, আমাদের সাজানো নতুন ক্রেতা ও পাঠক সহজেই পছন্দ করবেন।
মেলার দুই পাশের প্রাঙ্গণে ৪০১ প্রতিষ্ঠানের ৬৫৯টি স্টলের কাজ চলছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৫ লাখ বর্গফুট জায়গা গ্রন্থমেলার জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে গতবার ছিল ৪ লাখ বর্গফুট জায়গা। একাডেমির অংশে থাকবে বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্টল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকল প্রকাশনীর স্টল থাকবে ।
নিরাপত্তার বিষয়ে মেলা কমিটির সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ জানান, অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যবেক্ষণের জন্য বাড়ানো হচ্ছে আলো। পুরো মেলা ঘিরে থাকছে থ্রি মেগাপিক্সেলের ২৫০টি সিসি ক্যামেরা। প্রতিটি ক্যামেরায় থাকছে নাইট ভিশন প্রযুক্তি। দোয়েলচত্বর থেকে শুরু করে শামসুন্নাহার হল হয়ে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত রাস্তায় এসব সিসি ক্যামেরা এরই মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও শাহবাগ থানায় স্থাপিত তিনটি কন্ট্রোল রুম থেকে এসব ক্যামেরা মনিটর করার জন্য থাকছে ১৭টি ইউনিট। ২২ ইঞ্চি মনিটরে থাকছে ১৬টি ভিউ। এ ছাড়া ডিএমপির কন্ট্রোল রুম থেকে ২৪ ঘণ্টা মেলা মনিটরিং করা হবে।
তিনি আরো বলেন, মেলায় দর্শনার্থীদের প্রবেশপথে থাকছে ২২টি আর্চওয়ে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পহেলা ফাল্গুন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং ছুটির দিনগুলোতে আরো দুটি বিশেষ আর্চওয়ে। এ ছাড়াও মেলায় আগত বিদেশি অতিথিরা চাইলে তাদের সঙ্গে একজন নিরাপত্তাকর্মী দেওয়া হবে। আয়োজক কমিটির সদস্যরা জানান, এবারই প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে লটারির মাধ্যমে গ্রন্থমেলায় ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার মেলায় এক ইউনিট পেয়েছে ১৪২টি প্রতিষ্ঠান, দুই ইউনিট ১১৪টি, তিন ইউনিট ৩১টি, চার ইউনিট ১৯টি ও প্যাভিলিয়ন পেয়েছে ১৩টি প্রতিষ্ঠান।
আয়োজরা বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১২টি চত্বরে ভাগ করে গুচ্ছপদ্ধতিতে সাজানো হয়েছে স্টলগুলো। প্রতিটি চত্বরেই আলাদা রঙের এলইডি বাতির সাহায্যে বর্ণিল রূপ দেওয়া হবে। স্টল সজ্জায়ও সেই বিশেষ রঙের প্রাধান্য দিচ্ছে একাডেমি। কবি, সাহিত্যিক, মনীষীসহ বিশিষ্টজনদের নামে হবে ১২টি চত্বর। মূল দুই প্রবেশপথ দোয়েলচত্বর ও টিএসসি এলাকার দৃষ্টিনন্দন দুটি ফটকে স্থাপিত ইলেকট্রনিক বোর্ডের মাধ্যমে মেলা-সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশিকা উপস্থাপিত হবে।
মেলার সার্বিক বিষয়ে ড. জালাল আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা কাজ করছে। আগের তুলনায় এবার আরো কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণজুড়ে। তিন হাজার পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকছে এবারের মেলায়। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার দুই হাজার সদস্য মেলা প্রাঙ্গণের চারপাশে অবস্থান করবেন।
তিনি আরো বলেন, এবার বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে থাকবে না কোনো আয়োজন। এর জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশেষ একটি মঞ্চ তৈরি করা হবে। এবারের গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি ১০১টি বই প্রকাশ করবে।
বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা জানান, মেলায় অংশ নিতে যাওয়া প্রকাশনীগুলোর বিক্রয়কর্মীদের বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। আইডি কার্ড সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক। প্রকাশনা সংস্থাগুলোর বিক্রয়কর্মীদের দেওয়া তথ্য পুলিশের বিশেষ শাখা সংগ্রহ করে মিলিয়ে দেখবে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রসঙ্গে বলেন, গতবারের চেয়ে এবারের মেলাকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিবছরই। বইমেলা শুধু বই প্রকাশ, প্রদর্শন এবং বিক্রির মেলা নয়, বরং এটা লেখক-পাঠকের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতেও ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাছি।
গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী দিনেই শুরু হবে ‘সম্প্রীতির জন্য সাহিত্য’ প্রতিপাদ্যে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। মেলার সঙ্গে বাংলা একাডেমির আয়োজনে এ সম্মেলনেরও উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে দেশের ছয়জন বিশিষ্ট লেখক-বুদ্ধিজীবীকে ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন লেখক সম্মাননা ২০১৭’ দেয়া হবে। সম্মেলনে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, চীন, রাশিয়া, পুয়ের্তোরিকো ও ভারতের বিশিষ্ট কবি, কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন অধিবেশনে অংশ নেবেন। গত বৃহস্পতিবার মেলা পরিদর্শনে আসেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। মেলার মাঠ পরিদর্শন করেন তারা। স্টল নির্মাণ ও অন্যান্য কাজের খবরাখবর নেন। প্রস্তুতি দেখে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।
লেখক: মুহম্মদ পাঠান সোহাগ

No comments:

Post a Comment