তেষট্টি বছরের বাশিরন নেসার স্কুল যাত্রা

মেহেরপুরের বাশিরন নেসা কখনো পড়া লেখার সুযোগ পাননি। আট বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। তারপরেই সংসারের কাজ, সন্তান লালন পালন, আরো অনেক নারীর মতো এসব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এখন এক ছেলে দুই মেয়ে বড় হয়ে সংসারী হয়েছে। বাশিরন নেসার হাতে এখন অনেক সময়।
হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি আর নিরক্ষর থাকবেন না। ভর্তি হয়ে গেলেন স্কুলে। মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়ার গ্রামের বাসিন্দা বাশিরন নেসা স্কুলের ক্লাসের ফাকে খানিকটা সময় দিলেন। সোজা কথায় বললেন, আমি একটু শিক্ষিত হবো। আর কিছু না। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে। এখন আমি নিজের স্বাধীন মতো কাজ করি।২০১০ সালে প্রথম স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য গিয়েছিলেন হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া স্কুলে। কিন্তু সে বছর তাকে ভর্তি করতে রাজি হয়নি স্কুলের কর্তৃপক্ষ। পরের বছর আবার গেলেন। তার চেষ্টা দেখে এবার আর তাকে ফেরাতে পারেনি স্কুলের কর্তৃপক্ষ।তাকে ভর্তি করে নেয়া হলো। বাশিরন নেসার দুই নাতিও তখন তার সাথেই একই স্কুলে যান। তিনি বলছিলেন, আমি বুড়ো মানুষ। ওরা আমার থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। স্কুল থেকে বেরও হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তার ইসলাম ধর্ম শিক্ষা পড়তে সবচাইতে ভালো লাগে।ছোট বাচ্চাদের সাথে স্কুলে পড়তে কেমন লাগে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলছিলেন, ওদের সাথে আমার খুব ভাব। ভাব না থাকলে হয়। ওরা সবাই আমার বান্ধবী।মাটির মেঝে, টিনের চাল আর বাঁশের চটা দিয়ে বেড়া দেয়া জরাজীর্ণ হোগলবাড়িয়া পূর্বপাড়া স্কুল। সেখানে ২০১১ সালে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে সবগুলো ক্লাস পাশ করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন এবং পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ মাসের ২০ তারিখে পরীক্ষা।স্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, উনি প্রথম যখন আসেন আমরা ভেবেছিলাম বয়স্ক মানুষ। ঠিকমতো কি পারবেন? তাই শুরুতে আগ্রহ দেখাইনি। এখন সকাল ও বিকাল দুই শিফটেই তিনি স্কুলে থাকেন। বাশিরন নেসা সেই সকাল নটায় স্কুলে আসেন আর বিকেল চারটায় ছুটি হলে বাড়ি যান। বাশিরন নেসা সম্ভবত দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের এখন সবচাইতে বেশি বয়স্ক শিক্ষার্থী।
হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, পড়াশোনায় সে মোটামুটি। অনেক বয়স হয়েছে। এই বয়সে ইংরেজি আর অংকটা তার জন্য কষ্টকর। তবে বাংলা সে ভালোই শিখেছে। আর এখন তাকে স্কুলে বাড়তি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে যাতে সে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাটা পাশ করতে পারে।প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে বাশিরন নেসা জানিয়েছেন, এভাবে গল্প করলে হবে? আমার পড়াশোনা করতে হবে না?
সূত্র : বিবিসি।
No comments:
Post a Comment