ফ্রিডম হাউসের প্রতিবেদন
বাংলাদেশে ইন্টারনেট স্বাধীনতা কমেছে

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষক ও গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউজের বিচারে গত এক বছরে স্বাধীনভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ফ্রিডম অন নেট ২০১৬ শিরোনামে যে প্রতিবেদন সংস্থাটি সোমবার প্রকাশ করেছে, তাতে ৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে আংশিক মুক্ত দেশের তালিকায়।
ফ্রিডম হাউজের বিচারে ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্কোর এবার ১০০ তে ৫৬। গতবছরের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫১; তার আগের বছর ৪৯। এই সূচকে যে দেশের স্কোর যত বেশি, সেই দেশের মানুষ ইন্টারনেটে তত কম স্বাধীনতা ভোগ করে। একইভাবে স্কোর যত কম হবে, সেই দেশকে ইন্টারনেটে তত উদার বলে ধরতে হবে।
ক. ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০১৬ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে ৬৫টি দেশের তথ্য ব্যবহার করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে ফ্রিডম হাউজ।
খ. ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধার ক্ষেত্রে ২৫, বিষয়বস্তুর ওপর কড়াকড়িতে ৩৫ এবং ব্যবহারকারীর অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ৪০ পয়েন্ট ধরে বিবেচনা করা হয়েছে ১০০ পয়েন্টের এই সূচক।
গ. এই সূচকে ০ থেকে ৩০ পয়েন্টের দেশকে ইন্টারনেটে ‘মুক্ত’; ৩১ থেকে ৬০ পয়েন্টের দেশকে ‘আংশিক মুক্ত’ এবং ৬১ থেকে ১০০ স্কোরের দেশকে ‘মুক্ত নয়’ বিবেচনা করেছে ফ্রিডম হাউজ।
এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইন্টারনেটে সবচেয়ে স্বাধীনতা ভোগ করছে এস্তোনিয়া ও আইসল্যান্ডের মানুষ। দুটি দেশেরই স্কোর ৬। শীর্ষ দশে আরও আছে কনাডা, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্জিয়া।
আর ৮৮ স্কোর নিয়ে ৬৫ দেশের তালিকায় সবচেয়ে নিচে রয়েছে চীন। সবচেয়ে কম স্বাধীনতা ভোগ করছে এমন দশ দেশের মধ্যে আরও আছে সিরিয়া, ইরান, ইথিওপিয়া, উজবেকিস্থান, কিউবা, ভিয়েতনাম, সৌদি আরব, বাহরাইন ও পাকিস্তান।
ফ্রিডম হাউজ বলছে, এবার যে ৬৫ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে তারা প্রতিবেদন করেছে, তার মধ্যে ৩৪টি দেশের অবস্থা গতবছরের তুলনায় খারাপ হয়েছে। স্বাধীনতা সবচেয়ে কমেছে উগান্ডা, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ইকুয়েডর ও লিবিয়ায়।
গতবছরের প্রতিবেদনে ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা আর বিষয়বস্তুর ওপর কড়াকড়িতে আগের বছরের স্কোর ধরে রেখেছিল বাংলাদেশ। পয়েন্ট বেড়েছিল ব্যবহারকারীর অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে। আর এ বছর প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের পয়েন্ট বেড়েছে, অর্থাৎ অবস্থা খারাপের দিকে গেছে বলে ফ্রিডম হাউজ মনে করছে।
গত দুই বছরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট সুবিধাভোগীর হার মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ শতাংশ হয়েছে। কিন্তু সরকারের অ্যাপ ব্লক করা, সোশাল মিডিয়ার কনটেন্ট ব্লক করা এবং ব্লগার ও সোশাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টদের আটক করার প্রবণতায় কেনো উন্নতি ফ্রিডম হাউজ দেখেনি।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে গতবছর ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়, প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন এবং এ বছর সমকামী অধিকারকর্মী জুলহাজ মান্নানকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া মন্ত্রীকে নিয়ে ফেইসবুকের মন্তব্যের জন্য সাংবাদিক প্রবীর শিকদারের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনে মামলা এবং গতবছর নভেম্বরে ফেইসবুক ও বিভিন্ন অ্যাপের পাশাপাশি পুরো ইন্টারনেট সাময়িক বন্ধ রাখার বিষয়টিও তুলে ধরেছে ফ্রিডম হাউজ।
গতবছরের প্রতিবেদনে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আংশিক মুক্ত বলা হলেও এবারের প্রতিবেদনে রাখা হয়েছে ‘মুক্তি নয়’ ক্যাটাগরিতে।ইন্টারনেট স্বাধীনতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পয়েন্ট ৪১, শ্রীলঙ্কার ৪৪, মিয়ানমারের ৬১ ও পাকিস্তানের ৬৯।
No comments:
Post a Comment