আবারো কমছে জ্বালানি তেলের দাম

আন্তর্জাতিক বাজারে টানা দুদিন ধরে নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। রাশিয়ায় পণ্যটির উত্তোলনসীমা আরোপ নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়ায় দাম কমছে পণ্যটির। একই সময়ে শীর্ষ জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের সদস্য দেশগুলোয় পণ্যটির উত্তোলন বৃদ্ধির খবর দাম কমিয়ে দিতে ভূমিকা রাখছে।
নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের দাম (ডব্লিউটিআই) ব্যারেলে ৬১ সেন্ট কমেছে। নভেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে এদিন ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ডব্লিউটিআই বিক্রি হয়েছে ৫০ দশমিক ১৮ ডলারে। এর আগে সোমবার পণ্যটি ৫১ দশমিক ৩৫ ডলার ব্যারেল দরে বিক্রি হয়েছিল। ফ্যাক্টসেটের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫ সালের জুলাইয়ের পর সেদিন সর্বোচ্চ দরে বিক্রি হয়েছে পণ্যটি। এক বছরে সর্বোচ্চ দরে ওঠার পর রাশিয়া ও ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় উত্তোলন বাড়ার খবরে নিম্নমুখী হয়েছে পণ্যটি।অন্যদিকে ডিসেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে ব্যারেলে ৬০ সেন্ট কমেছে আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্ট অয়েলের দাম। বুধবার লন্ডনের ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক্সচেঞ্জে (আইসিই) ১ দশমিক ১ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫১ দশমিক ৮১ ডলারে। সোমবার পণ্যটি বিক্রি হয়েছিল ৫৩ দশমিক ১৪ ডলারে। ফ্যাক্টসেটের তথ্যানুয়ায়ী, ২০১৫ সালের ৩১ আগস্টের পর সোমবার সর্বোচ্চ দরে বিক্রি হয়েছিল পণ্যটি।
গত মাসে আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখতে সম্মত হয়েছিল ওপেকভুক্ত ও ওপেকবহির্ভূত দেশগুলো। সে বৈঠকে জ্বালানি তেলের দৈনিক উত্তোলন ৩ কোটি ২৫ লাখ ব্যারেল থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে প্রাথমিকভাবে সম্মত হয় শীর্ষ উত্তোলক দেশগুলো। নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় ওপেকের পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।আলজেরিয়ার বৈঠকের পর পরই বাড়তে শুরু করে জ্বালানি তেলের দাম। বৈঠকের আগে পণ্যটির দাম ব্যারেলে ৫০ ডলারের নিচে (ব্যারেলপ্রতি ৪২ থেকে ৪৭ ডলার প্রায়) ওঠানামা করছিল। বৈঠকের পর পণ্যটির দাম ব্যারেলে ৫০ ডলারের উপরে চলে আসে।
ওপেকবহির্ভূত উত্তোলক দেশ রাশিয়া শুরু থেকেই পণ্যটিতে উত্তোলনসীমা আরোপের পক্ষে কথা বলেছে। চীনে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে অন্যতম শীর্ষ উত্তোলক দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে একটি চুক্তিও করেছে। আলজেরিয়ায় ওপেকের বৈঠকেও দেশটির অবস্থান উত্তোলনসীমা আরোপের পক্ষে ছিল। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখনো অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখার পক্ষে বলে জানা গেছে। তবে একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি রোসনেফটের প্রধান ও দেশটির শীর্ষ তেল উত্তোলক ইগর শেচিন উত্তোলনসীমা আরোপের বিষয়ে একমত নন।রোসনেফটের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়ার মোট জ্বালানি তেলের ৪০ শতাংশ এ কোম্পানি সরবরাহ করে। বিশ্বে মোট তেলের ৫ শতাংশ আসে এ কোম্পানি থেকে। বৃহত্ এ কোম্পানি প্রধানের কারণে উত্তোলনসীমা আরোপে রাশিয়ার অবস্থান নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বুধবার প্রকাশিত ওপেকের মাসিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওপেকভুক্ত দেশগুলোয় পণ্যটির উত্তোলন বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে পণ্যটির দৈনিক উত্তোলন হয়েছে ৩ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল, যা আগের মাসের চেয়ে ২ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল বেশি।ওপেকের সর্বশেষ বৈঠকে পণ্যটির দৈনিক সর্বোচ্চ উত্তোলন ৩ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলের মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।একই ধরনের তথ্য উঠে এসেছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) প্রতিবেদনে। মঙ্গলবার আইইএর প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে ওপেকভুক্ত দেশগুলো দৈনিক ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন করেছে, যা আগের মাসের চেয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল বেশি।বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের উত্তোলন বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে পণ্যটির সরবরাহ। আইইএ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরে বিশ্ববাজারে দৈনিক ৯ কোটি ৭২ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল সরবরাহ হয়েছে, যা গত মাসের চেয়ে ৬ লাখ ব্যারেল বেশি এবং গত বছরের চেয়ে ২ লাখ ব্যারেল বেশি। আইইএ বলছে, উত্তোলন ও সরবরাহ বৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে রাশিয়া।নিমেক্সে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের পাশাপাশি দাম কমেছে গ্যাসোলিন ও হিটিং অয়েলের। নভেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে গ্যালনে ২ দশমিক ১২ সেন্ট কমেছে গ্যাসোলিনের দাম। বুধবার প্রতি গ্যালন গ্যাসোলিন ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ১ দশমিক ৪৬২ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে গ্যালনে ২ দশমিক ১ সেন্ট দাম কমেছে হিটিং অয়েলের। এদিন নভেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমে প্রতি গ্যালন হিটিং অয়েল বিক্রি হয়েছে ১ দশমিক ৫৬৭ ডলারে। নভেম্বরে সরবরাহের চুক্তিতে দাম কমেছে প্রাকৃতিক গ্যাসেরও। বুধবার প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট গ্যাস বিক্রি হয়েছে ৩ দশমিক ২১ ডলারে, যা আগের দিনের চেয়ে ২ দশমিক ৭ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ কম।
No comments:
Post a Comment