Sunday, October 16, 2016

অটোমিলারদের নিয়ন্ত্রণের কারণে লবণের দাম বেড়েই চলেছে

dtl image
দেশে বাড়তির দিকে রয়েছে লবণের দাম। অটোমিলাররা ম্যানুয়াল মিলারদের চেয়ে তিন গুণ বেশি দামে পণ্যটি বিক্রি করছেন। এ অবস্থায় দেশে এক বছরের ব্যবধানে লবণের দাম ৬৩ শতাংশ বেড়েছে বলে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে।
কক্সবাজারের লবণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, কৃষক পর্যায়ে বর্তমানে লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০ থেকে ১১ টাকা ২৫ পয়সায়। মধ্যস্বত্বভোগী পর্যায়ে তা ১১ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। আর ম্যানুয়াল মিলাররা পণ্যটি বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ১২ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ১৪ টাকায়। অথচ একই পরিমাণ পণ্য অটোমিলাররা ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি করছেন। আর রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লবণ লেনদেন হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়।ম্যানুয়াল ও অটোমিলের মধ্যে লবণের দামের এ অস্বাভাবিক পার্থক্যের যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কক্সবাজার লবণচাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইদ্রিস। তিনি বলেন, অটোমিলাররা লবণে অস্বাভাবিক মুনাফা করছেন। অটোমিলে উৎপাদিত লবণ কিছুটা সাদা ও মিহি। এছাড়া আর বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। অথচ তারা ম্যানুয়াল মিলের চেয়ে তিন গুণ বেশি দামে লবণ বিক্রি করছেন। এ ব্যাপারে সরকারের নজরদারি জরুরি।টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৮-৪২ টাকায়। এক মাস আগে এর দাম ছিল ২৮-৪০ টাকা। আর এক বছর আগে তা ১৫-২৮ টাকায় লেনদেন হয়েছিল। অর্থাত্ এক বছরের ব্যবধানে লবণের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।লবণচাষীরা জানান, গত বছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে লবণ উৎপাদন কম হয়েছে। এছাড়া সরকার কক্সবাজারের মহেশখালী ও মাতারবাড়ী এলাকায় লবণ চাষের জমি অধিগ্রহণ করায় পণ্যটির উৎপাদন কমে এসেছে। অন্যদিকে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বিভিন্ন কারণে লবণের চাহিদা বেড়েছে। এদিকে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় বড় বড় শিল্প মালিক পণ্যটির আমদানি শুরু করেছেন। সম্প্রতি দেশের ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ তাদের মিলের চাহিদা অনুযায়ী ১২ লাখ টন লবণ আমদানির জন্য ট্যারিফ কমিশনে আবেদন করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় চিনির মূল্যের ওপর প্রভাব পড়ছে।বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছর লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে খাবার লবণ আট লাখ টন। আর শিল্পে ব্যবহূত হয় আট লাখ টন। ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত দেশে অপরিশোধিত লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার টন। আর খাবার লবণ উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টন।বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ সালের দিকে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় বলা হয়, প্রতি কেজি লবণ উৎপাদন থেকে আয়োডিন মেশানো, প্যাকেজিং ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসাব করলে সর্বোচ্চ ৮ টাকার বেশি হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অথচ বাজারে বর্তমানে আয়োডিনযুক্ত লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৮-৪২ টাকা। এতে একদিকে কৃষক উৎপাদন করে ঠকছেন, অন্যদিকে ভোক্তাকেও অতিরিক্ত দামে তা কিনতে হচ্ছে।
জানা গেছে, দৈনিক জনপ্রতি ভোজ্য লবণের চাহিদা রয়েছে ১৪ দশমিক ৫ গ্রাম। এ হিসাবে বার্ষিক চাহিদা নির্ণয় করা হয়েছে। তবে ভোজ্য লবণের পরই শিল্প খাতে সবচেয়ে বেশি লবণ ব্যবহার হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে বার্ষিক ভোজ্য লবণের চাহিদা ছিল ৮ লাখ ৪৮ হাজার, শিল্পে ৩ লাখ ৪৮ হাজার, মত্স্য প্রক্রিয়াজাতে ৬৯, প্রাণী খাতে ব্যবহূত ২ লাখ ২ টনসহ মোট ১৬ লাখ ৮ হাজার টন।

No comments:

Post a Comment