Friday, October 21, 2016

হারানো নদীর কথা

এক সময়ের স্রোতস্বিনী নদ-নদী করতোয়া, ইছামতি, বড়াল, মুসাখান, চিকনাই, ভৈরব, ভদ্রা, হিসনা, কালীগঙ্গা, কুমার, চিত্রা, হামকুড়া, হরিহর, বিবিয়ানা, বরাক, ভ‚বনেশ্বর, বুড়িনদী, বামনী, পাগলা, ফকিরনী, মাথাভাঙা, নবগঙ্গা, ফটকি, মুক্তেশ্বরী, ময়নাকাটাসহ অনেক নদী হারিয়ে গেছে। ১৯৬৫ হতে ১৯৬৭ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের নদী বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় ব্যাপক নদী জরিপ করে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয় এবং ১৯৭৫ সনে বিআইডবিøউটিএ কর্তৃক প্রকাশিত মাইলেজ টেবিল এবং ১৯৮৮-৮৯ সনে পুনরায় সমীক্ষা রিপোর্ট ও সর্বশেষ বাস্তব অভিজ্ঞতা হতে সংগৃহীত তথ্যানুসারে বর্তমানে ১১৭টি নদ-নদীর বেশকিছু সম্পূর্ণ মৃত, কোনোটির অংশবিশেষ মৃত এবং অধিকাংশ নদীর নাব্য আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। উপমহাদেশের থর মরুভ‚মি দিয়ে একদিন ‘গঙ্গা’ প্রবাহিত হতো। থর মরুভ‚মির পাকিস্তান অংশে ৫০ থেকে ১০০ ফুট নিচের ভ‚মিস্তর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কয়েক লাখ বছর আগে সেখানে সবুজ বনভূমি ছিল। সে বনভূমি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশও কী আর আছে! চোখের সামনে দেশজুড়ে জালের মতো বিছিয়ে থাকা সব নদী একে একে হারিয়ে যাচ্ছে। পানির অভাবে নদী মরে যাচ্ছে, যা আমাদের দেশকে স্থায়ী মরুকরণের পথে নিয়ে যাচ্ছে। গ্রীষ্মকাল এলে নদী হয়ে পড়ে শুকনো খটখটে। প্রমত্তা পদ্মা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, বিশাল যমুনা পরিণত হয় শুকনো খালে। উজানের পানি প্রবাহ ভয়াবহ ভাবে কমে, নদীতে পলি জমে, জলাধারগুলো ভরাট হয়ে একের পর এক নদী মরে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জীবন প্রবাহরূপী নদীগুলোর এই মরণদশার প্রধান কারণ হলো গ্রীষ্মকালে উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে আসা। বর্ষায় পানির গড় প্রবাহ ঠিক থাকলেও গ্রীষ্মকালে সব নদীর গড় প্রবাহ ভয়াবহভাবে কমে এসেছে।
বাংলাদেশের নদীগুলোর জন্য গঙ্গা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র (জেএমবি বেসিন) এই তিন অববাহিকার পানিই প্রধান ভরসা। বাংলাদেশের নদীর মূল সে গতিধারার প্রধান অংশ আসে ভারত হয়ে। ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে বাংলাদেশের নদীগুলো মরে যাচ্ছে।
ঢাকা শহরের জলাশয় ও খালের সুনির্দিষ্ট কোনো মানচিত্র বা পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নেই খোদ সরকারের কাছেও। তেজগাঁও সাত রাস্তায় অবস্থিত ভ‚মি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা পাকিস্তান আমলে সৃষ্ট ভ‚মির সিএস ও এসএ এবং বাংলাদেশ আমলের আরএস ও মহানগর জরিপের তথ্য-উপাত্ত এবং নকশা সংরক্ষণ করে। কিন্তু নকশা ও বাস্তবতার সঙ্গে মিল কম। এসব নকশায় নদী ও বৃহৎ খাল ব্যতীত অন্যান্য জলাধার দেখানো নেই। সর্বশেষ নকশা তৈরি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এই ক্ষেত্রে মাঠ জরিপের পাশাপাশি গুগল আর্থের সহায়তা নেয় রাজউকের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। ডিজিটাল ফরমেটে তৈরি এ রঙিন নকশায় (ড্যাপ) জলাশয়ের বর্তমান চিত্র এলেও হারিয়ে যাওয়া বা দখল হয়ে যাওয়া খাল ও জলাশয়ের কোনো তথ্য-প্রমাণ এতে উঠে আসেনি।
মোগল আমল থেকে ঢাকায় প্রায় ৫০টি খালের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। অথচ সরকারি নথিতে তা ২৬টির বেশি না। এগুলোর অবস্থাও নাজুক। বিগত ২০১০ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে ঢাকা সিটি করপোরেশন, রাজউক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদফতর এ খালগুলোর দখল হয়ে যাওয়া অংশে উচ্ছেদ অভিযান চালানো শুরু করে। কিন্তু সেই অভিযান খুব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ২৬টি খালের পাশে ১১শ’ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়।
বিআইডব্লিউটিএ বাংলাদেশের নদীগুলোকে ১২ ফুট, ৯ ফুট, ৬ ফুট এবং ৩ ফুটের বেশি নাব্যতা হিসেবে চার শ্রেণিতে ভাগ করেছে। সেই হিসাবে ১৯৭১ সালে দেশব্যাপী ২৪ হাজার কিলোমিটার নদীপথ ছিল। শীতে ৫ হাজার ২০০ কিলোমিটার। বর্তমানে নৌপথের দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটারে। যা শীতকালে এসে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮২৪ কিলোমিটারে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না করে ড্রেজিং করা, পলি জমে ভরে যাবার কারণে নদীর স্রোত কমে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি বলেই অনেকেই মনে করছেন। আরো জানা গেছে, এই মুহূর্তে দেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার নদীপথের নাব্যতা হুমকির মুখে রয়েছে।
আসুন না দেশকে ভালোবাসার মতো ভালোবাসি মায়ের মতো ভালোবাসি। মা যতই খারাপ হোক সন্তানের কাছে মা আল্লাহর পরের স্থানে। এটা অস্বীকার করার মতো কোনো মানুষ দুনিয়াতে থাকার কথা নয়। আসুন দেশ বাঁচাই, মানুষ বাঁচাই আগে নিজে বাঁচার চেষ্টা করি। সবাই মিলে বাঁচি, বাঁচার মতো বাঁচি।

No comments:

Post a Comment