Saturday, October 15, 2016

সুপ্রিমকোর্টে অসমর্থ বিচারপ্রার্থীদের বিনা খরচায় আইনি সেবা

dtl image
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টে অসমর্থ বিচার প্রার্থীরা বিনা খরচায় আইনি সেবা পাচ্ছেন।এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের কো-অর্ডিনেটর এডভোকেট রিপন পৌল জানান, গত এক বছরে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার সুপ্রিমকোর্ট ইউনিট অসমর্থ বিচারপ্রার্থীদের ৩৫০টি মামলা নিয়েছে।এরমধ্যে ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯৬টি মামলা। গত এক বছরে লিগ্যাল এইডে আবেদন পড়ে ৩৯৭টি। এর বেশির ভাগ জেল আপিল, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আপিল ও রিভিশন, রিট ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন)। এছাড়াও গত এক বছরে ৩৯৫ জনকে মৌখিক আইনী পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানান রিপন।
গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি সুপ্রিমকোর্টে লিগ্যাল এইড স্থাপন করেছেন। এ লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে সরকারি খরচে আইনি সেবা দেয়া হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম।সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে অসহায় ব্যক্তিদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা ও পরার্মশ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি। দিনে দিনে এ সেবার কার্যক্রম আরো গতিশীল হচ্ছে এবং কার্যের পরিধিও বাড়ছে। তিনি বলেন, জেলখানায় আটক বন্দীদের আইনি সেবার মানোন্নয়নে দেশের প্রত্যেকটি জেলার কারাগারগুলোতে চিঠি প্রেরণ করে তথ্য বিনিময়ের পাশাপাশি জেল আপীল মামলাগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখার অনুরোধও জানানো হয়েছে। 
এদিকে সুপ্রিমকোর্টে লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত মামলাসমূহে ওকালতনামার ফি মওকুপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি (সুপ্রিমকোর্ট বার) কর্তৃক এ সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট বার-এর এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ি লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত মামলায় ওকালতনামায় লিগ্যাল এইড অফিসের একজন অথরাইজড কর্মকর্তার সীল ও স্বাক্ষর এবং সুপ্রিমকোর্ট বার এর ‘ওকালতনাম ফি মওকুপ সীল’-রয়েছে।সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য সচিব টাইটাস হিল্লোল রেমা জানান, বিচারিক (নিম্ন) আদালতের কোনো রায় বা আদেশে সংক্ষুব্ধ কোনো ব্যক্তি যদি সুপ্রিমকোর্টে মামলা পরিচালনা করতে আগ্রহী হন, আর সেক্ষেত্রে যদি ওই ব্যক্তির বার্ষিক গড় আয় দেড় লক্ষ টাকার নিচে হয়, তাহলে তিনি সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে আইনি সেবা নিতে পারছেন। অসমর্থ বিচারার্থীদের আইনি সেবা দিতে সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবী নিযুক্ত রয়েছেন। দেশে বিচার ব্যবস্থায় অতীতে আইনগত সহায়তার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মানুষের সব মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি বিচার পাওয়ার অধিকারও প্রতিষ্ঠিত করতে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে।চলতি বছর ২৮ এপ্রিল দেশে চতুর্থবারের মতো ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস’ পালিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে “জাতীয় আইনগত সুবিধা প্রদান দিবসের” অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী লিগ্যাল এইড কল সেন্টার জাতীয় হেল্পলাইনের উদ্বোধন করেন। এ হেল্পলাইনে ১৬৪৩০ নম্বরে ফোন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন দেশের স্বল্প আয়ের ও অসহায় বিচারপ্রার্থী নাগরিকরা।আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায় সম্ভলহীন, অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন-২০০০’ প্রণয়ন করে। ২০০০সালে তৎকালীন শাসন আমলে আইনটি প্রনয়ন করে আওয়ামী লীগ। তারপরের সরকার গুলো আইনটি কার্যকরে উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্টিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর আওয়ামীলীগ দরিদ্র ও অসচ্ছল জনগণের বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিতে আইনটি কার্যকরে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
২০০০ সালে প্রনীত আইনটি অনুযায়ি “জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা” গঠন করা হয়। রাজধানীর ১৪৫, নেউ বেইলী রোডে এ সংস্থার প্রধান কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এর ব্যাপ্তি সুপ্রিমকোর্ট, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত নেয়া হয়। জেলা কমিটি গঠন, প্রতিটি জেলা জজ আদালতে এর কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এতে দরিদ্র-অসচ্ছল ও অসহায় জনগণ বিচারপ্রাপ্তিতে সুবিধা পাচ্ছে। নানা প্রচার, প্রচরণা, সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ সেবা বিষয়ে জনসচেতনতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সূত্র: বাসস

No comments:

Post a Comment