Sunday, February 12, 2017

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে

বসন্ত এসেগেছে।গাছে গাছে ফুল ফুটেছে।তবে সব গাছে ফুল ফুটুক বা না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।শীতের রিক্ততা মুছে ফেলে প্রকৃতিজুড়ে আজ যেন কিসের ছোয়া, যেন সোঁদা মাটি আর বহেড়া ফুলের গন্ধ মেশানো। হাওয়াটাও আজ কেমন কেমন! একটু এলোমেলো। মনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে শিমুল-পলাশ-আশোকের রক্তরাগে, তার ঝরা ফুলের গন্ধে।
আজ পয়লা ফাল্গুন। বিপুল ঐশ্বর্যময় ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। পাগল হাওয়ার উত্তরীয় উড়িয়ে বনফুলের পল্ল­বে, দখিন-বাতাসে শিহরণ জাগানোর দিন। উতরোল মৌমাছিদের ডানায় ডানায়, নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে উঠবার আভাসে আর বনতলে কোকিলের কুহুতান বলছে: ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে...।’ কবি কণ্ঠে প্রগাঢ় প্রণতি—‘আজি দখিন দুয়ার খোলা/এসো হে এসো হে এসো হে আমার বসন্ত।’ কিংবা কবির সুস্পষ্ট ঘোষণা—‘ফুল ফুটুক না ফুটুক/ আজ বসন্ত...। গোলাপের সুবাস আজ না ছড়াক/...তবু আজ বসন্ত...।’
এ বসন্তে প্রকৃতি বর্ণচ্ছটায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে। কচি পাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালি তরুণ মনে লাগে দোলা। হৃদয় হয় উচাটন। ফুল ফুটবার পুলকিত দিন বসন্ত। বন-বনান্তে, কাননে কাননে-পারিজাতের রঙের কোলাহল আর বর্ণাঢ্য সমারোহ। কবির ভাষায়—‘ফাগুন এলো বুঝি মহুয়া-মালা গলে/চরণ-রেখা তার পিয়াল-তরুতলে/পরাগ-রাঙা চেলি অশোক দিল মেলি...।’
ঋতুচক্র এখন যেন আর পঞ্জিকার অনুশাসন মানছে না। এবার শীতের রাতে লেপের আদর পাননি নাগরিকরা। কুয়াশার চাদরমোড়া অকাল শীত তার তীব্রতা ছড়াতে না ছড়াতেই বিদায় নিল। প্রকৃতির দিকে তাকালে শীত বরষার মতো বসন্তকেও সহজে চেনা যায়। বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি সেই অনাদিকাল থেকেই। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই পেয়েছে নানা অনুপ্রাস, উপমা, উৎপ্রেক্ষায়। আমাদের ঋতুরাজ বসন্তের আবাহন আর পশ্চিমের ভ্যালেন্টাইন-ডে যেন এক বৃন্তের দুটি কুসুম। এ যেন এক সুতোয় গাঁথা দুই সংস্কৃতির এক দ্যোতনা।
বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। কচিপাতায় আলোর নাচনের মতোই বাঙালির মনেও লাগবে দোলা। আন্দোলিত হবে বাঙালি মন। বাঙালি জীবনে বসন্ত আগমনী বার্তা নিয়ে আসে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র। এ বসন্তেই ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে এক বিশেষ মাহাত্ম্য নিয়ে। বসন্ত হয়ে ওঠে এক অনন্য উৎসব।
এখন শহরের যান্ত্রিকার আবেগহীন সময়ে বসন্ত যেন কেবল বৃক্ষেরই, মানুষের আবেগে নাড়া দেয় কমই। তারপরও আজ বসন্তের পয়লা দিনে নানা আয়োজনে আলোড়িত হবে রাজধানীসহ সারাদেশ। বিশেষত বাসন্তী শাড়ি আর সফেদ-শুভ্র পাঞ্জাবিতে তরুণ-তরুণীরা বইমেলা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, উদ্যানমালা, ক্যাফেতে বসন্ত আবাহন করবে নানা নৈবেদ্যে, নানা অনুষঙ্গে।

No comments:

Post a Comment