Monday, February 13, 2017

পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ কানাডার আদালতে অসত্য প্রমাণ হওয়ায় বিশ্বব্যাংকের 

জবাবের অপেক্ষায় সরকার?

দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলাটি কানাডার আদালতে অসত্য প্রমাণ হওয়ার পর এই বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের জবাবের অপেক্ষায় রয়েছে সরকার। জাতীয় সংসদে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা এবং তাদেরকে তলবের দাবির মধ্যেই  সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একথা বলেন।এখন সব মহলেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে কানাডার আদালতে পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির চক্রান্তের মামলা নাকচ হওয়ার প্রসঙ্গ।প্রমাণিত হয়েছে,পদ্মা সেতু স্বচ্ছতার মধ্যে শুরু হয়েছিল।আঠারো সালের শেষে পদ্মাসেতু চলাচলের জন্য উদ্বোধনও হবে।
পদ্মাসেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র নিয়ে বিশ্বব্যাংকের তোলা অভিযোগের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, কত অপমান, কত অসম্মান হতে হয়েছে। আমরা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিলাম। অনেকেই টিটকারি করেছে, বিদ্রুপ করেছে।কিছু কিছু পত্রিকাও সমালোচনা করেছে। বাদ যায়নি সুশীলরাও। তারাও টিভিতে নানা কথা বলেছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু থেকে সরে যাওয়ার পর আরও ৩ আন্তর্জাতিক সংস্থা জাইকা, এডিবি, আইডিবির ঋণচুক্তিও বাতিল হয়ে যায়। এরপর সরকার নিজ অর্থে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। এরই মধ্যে সেতুর ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজই শেষ হবে বলে জানাচ্ছে সরকার।
২০১৩ সালের জুনে পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। এর আগে ৩ বছর ধরেই সংস্থাটি এই প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলতে থাকে। তাদের দাবি ছিল, কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তাদরা কাজ পেতে ঘুষ দেয়ার চক্রান্ত করেছিল। এই অভিযোগে বিশ্বব্যাংক সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছিল। তবে সরকার তাতে রাজি হয়নি। একই অভিযোগে কানাডার আদালতে মামলা চলছিল এসএনসি লাভালিনের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। স্থানীয় সময় শুক্রবার এই মামলার রায় প্রকাশ হয়। বিচারক তিন আসামিকে খালাস দিয়ে বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ছিল গালগপ্প। গুজবের ওপর ভিত্তি করে এই মামলা করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিচারক।
পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বাতিল করার বিবৃতিতে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, কোথাও দুর্নীতি হলে আমরা চোখ বুঁজে থাকতে পারি না। তবে তাদের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণের পর এ বিষয়ে সংস্থাটি আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। কানাডা আদালতের রায়ের পর সরকারি দলের নেতারা বিশ্বব্যাংকের প্রতি তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন। সংস্থাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় কি না-এই ধরনের প্রশ্নের মধ্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রবিবার সংসদকে বলেছেন, এই ঘটনায় দেশ এবং দেশের বাইরে দুই জায়গাতেই ব্যবস্থা নেয়া যায়। আর কানাডার আদালতের রায়ের কারণে মামলার আসামি কারা সেটাও জানা হয়ে গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি খরচ দেবেন। জাসদ নেতা মইনুদ্দীন খান বাদল বলেছেন, তিনি ও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাদী হতে রাজি আছেন। পরদিন আলোচনায় অংশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছে, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র নিয়ে কানাডার আদালত রায় দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক এখন কী বলে দেখি, তাদের কী বলার আছে তা জানতে চাই। আমরা বিশ্ব ব্যাংকের জবাবের অপেক্ষায় আছি। তিনি বলেন, পদ্মাসেতু আজ আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ, সারা বিশ্বের কাছে সম্মানের বিষয়। আমরা বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, বলেছিলাম নিজ অর্থায়নে সেতু নির্মাণ করবো। আজ প্রমাণ হয়েছে বাঙালি বীরের জাতি, চোরের জাতি না।

No comments:

Post a Comment