Friday, August 12, 2016

দুপুরে রটল মৃত্যুর গুজব,সন্ধেয় হানিফ সত্যই
চলে গেলেন
----------------
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দীর্ঘতম ইনিংসের মালিক জীবনের দীর্ঘ ইনিংসে এ বার আউট হয়ে গেলেন।দুপুরে হঠাৎ গুজব রটে যায়, হানিফ মহম্মদ আর নেই। মিনিট পনেরোর মধ্যে খবরটা ভুল বলে জানাজানি হতে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল।
সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে নামতেই ফের ছড়াল সেই খবর। তবে এ বার আর গুজব নয়।করাচির আগা খান হাসপাতাল থেকেই সরকারি ভাবে জানিয়ে দেওয়া হল, তিনি সত্যিই নেই। জীবনের ক্রিজে দাঁড়িয়ে এ বার আর ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেলেন না হানিফ মহম্মদ। চলে গেলেন ৮১ বছর বয়সে।
আগা খান হাসপাতালের আইসিইউ-তে যে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রাখা হয়েছিল তাঁকে, তা আর কাজ করছে না— দুপুর একটা নাগাদ এমনই খবর রটে যায় সারা ক্রিকেট বিশ্বে। সোশ্যাল মিডিয়া মারফত তা দাবানলের মতো ছড়িয়েও পড়ে। হানিফ-পুত্র শোয়েব নিজেই সে রকম শুনেছেন বলে ধরা গলায় কথাগুলো ফোনে বলেছিলেন তখন। তাঁর মৃত্যুর গুজব শুনে হাসপাতালে চলে আসেন মুখ্যমন্ত্রী সিন্ধ মুরাদ আলি শাহ। তাঁর চিকিৎসার জন্য দশ লক্ষ টাকার সরকারি অনুদানও ঘোষণা করে দিয়েছিলেন।
পনেরো মিনিট পরে যখন হাসপাতালে গিয়ে শোনা গেল খবরটা ঠিক নয়, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শোয়েবকে বলতে শোনা যায়,‘‘শুনলাম ছ’মিনিটের জন্য নাকি আব্বুর হৃদযন্ত্র থেমে গিয়েছিল। আল্লাহই ফিরিয়ে এনেছেন ওঁকে। সারা দেশের লক্ষ লক্ষ ভক্তের প্রার্থনার জোরে উনি ফিরে এসেছেন।’’হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য সরকারি ভাবে এমন কোনও কথা স্বীকার করতে রাজি হননি। তাঁরা জানান, এটা নিছকই একটা ‘মিসকমিউনিকেশন’। বোধহয় বুঝতে ভুল করেছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তা হলে ছ’মিনিটের জন্য তাঁর হৃদযন্ত্র থেমে গিয়েও তাঁর জীবন ফিরে পাওয়ার খবর কি ঠিক ছিল না? না, এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি আগা খান হাসপাতালের মুখপাত্র। হাসপাতালের অন্য একটি সূত্র জানায়, ওটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া কিছুই নয়।
ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছিলেন বেশ কয়েক বছর ধরে। সপ্তাহ খানেক আগে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ক্রমশ শারীরিক অবস্থার উন্নতিও হয় তাঁর। গত সোমবার রাতে ফের অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউ-তে নেওয়া হয়। তার পর থেকেই তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। বৃহস্পতিবার সেই কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র দিয়েও তাঁকে ধরে রাখা গেল না।
৬ মিনিট হৃদযন্ত্র স্তব্ধ থাকার পর বেঁচে ওঠা সম্ভব? কী বলছে চিকিৎসা বিজ্ঞান
-------------------------------------------------------------------------------
দীর্ঘ ৬ মিনিট সব কিছু স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার পরেই চিকিৎসা বি়জ্ঞানের সেই বিরলতম ঘটনাটি ঘটে যায় সুদূর করাচিতে। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার হানিফ মহম্মদ। টেলিভিশনের পর্দায় সেই খবর ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হইচই পড়ে যায় চিকিৎসকমহলেও। টানা ছ’মিনিট হৃদযন্ত্র বন্ধ থাকার পর ফের চালু হওয়ার কথাটা মানতে অসুবিধা হচ্ছে।সাধারণত সর্বাধিক তিন মিনিট হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হয়ে থাকার পর তা আবার চালু হতে পারে। এবং এতে রোগীও পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারেন। কারণ, দেহে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়ার তিন মিনিট পর্যন্ত মস্তিষ্কের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ হয়ে থাকে।যতক্ষণ মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ চালু থাকে রোগীও বেঁচে থাকে। তা বন্ধ হলেই অক্সিজেনের অভাবে ব্রেন ডেথ হয়। রোগীকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই অবস্থাকে বলা হয় অ্যানক্সিএনসেফালোপ্যাথি।কিন্তু হানিফ মহম্মদের ক্ষেত্রে সময়টা ছিল এর দ্বিগুণ,ছ’মিনিট।তাহলে এক্ষেত্রে কী করে সম্ভব হল?চিকিৎসক অমিতাভবাবু উড়িয়ে দিচ্ছেন না দু’টি সম্ভাবনার কথা। এক, যাঁরা হাইপোথারমিয়ায় ভোগেন তাঁদের ক্ষেত্রে এটা সম্ভব আর দুই, ভেন্টিলেশনে থাকার সময় ঠিকঠাক ম্যাসাজ দিতে পারলে এটা সম্ভব।
হাইপোথারমিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে দেহের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। সে কারণে, দেহের মেটাবলিজম বা বিপাক ক্রিয়া মন্থর হয়। তাই তাঁদের দেহে অক্সিজেনের চাহিদাও কম হয়ে থাকে। সে কারণে, হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার পর হাইপোথারমিয়ার রোগীরা অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি ক্ষণ বাঁচতে পারেন। এই একই ‘অবিশ্বাস্য’ ঘটনা ঘটতে পারে ম্যাসাজের সাহায্যেও। দক্ষ হাতে ম্যাসাজের মাধ্যমে কিছুক্ষণ মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন চালু রাখতে পারা সম্ভব। তবে এই ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্র চালু করা গেলেও বেশিক্ষণ তা স্থায়ী হয় না।বোধহয় এটিই হল হানিফ মহম্মদের ক্ষেত্রে। ৬ মিনিট তাঁর হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে পড়েছিল। পরে ফের তা সচল হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বেশিক্ষণ তা স্থায়ী হয়নি। অবশেষে হাসপাতালেই মারা যান তিনি।
Boost post

No comments:

Post a Comment