Thursday, March 15, 2018

বিমানবন্দর নয় এ যেন মৃত্যুফাঁদ

ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা বাংলাদেশ, নেপালসহ বিশ্বব্যাপী আলোচিত ও সমালোচিত হচ্ছে। শোকাবহ করেছে সর্বস্তরের মানুষকে। শোক জানিয়েছে জাতিসংঘ, বাংলাদেশ, নেপাল, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংগঠন। ঢাকা থেকে কেবিন ক্রুসহ ৭১ জন যাত্রী নিয়ে নেপালের উদ্দেশে আকাশে উড়েছিল বিমানটি। একপক্ষের মতে, ১২ মার্চ দুপুর প্রায় ২টায় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন এয়ারপোর্টের কন্ট্রোল রুমের ভুল নির্দেশনা ও সিদ্ধান্তের কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। পাইলটসহ নিহত হন ৫১ জন।
হিমালয়কন্যা নেপালের এই ত্রিভুবন এয়ারপোর্টে বিমান দুর্ঘটনা এই প্রথম নয়। ভয়ংকর অতীত আজো ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে আছে। এ যেন এক মৃত্যুফাঁদ। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর পাহাড়ের কোলঘেঁষে গড়ে ওঠা এই বিমানবন্দর বহু দুর্ঘটনার সাক্ষী। ১৯৫৬ সাল থেকে ১২ মার্চ ২০১৮ দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত মোট ১০টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে। কন্ট্রোল রুমের ভুল নির্দেশনা ও বৈরী আবহাওয়া প্রায় সব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরই পাইলটকেই দোষারোপ করেন।
৩১ জুলাই ১৯৯২ সালে থাই এয়ারওয়েজের একটি এয়ারবাস অবতরণ করার জন্য বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। এতে ১১৩ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন। একই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি এয়ারলাইনস বিধ্বস্ত হয়। এতে নিহত হন ১৬৭ জন। ৭ জুলাই ১৯৯৯ সালে লুফ?টহানজা কার্গো বোয়িং ৭২৭ আকাশে ওড়ার পাঁচ মিনিট পড়ে চম্পাদেবী পর্বতে বিধ্বস্ত হয়। ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ সালে নিকন এয়ার ফ্লাইট ১২৮ পোখারা থেকে কাঠমান্ডু যাওয়ার সময় বিধ্বস্ত হয়। বিমানে থাকা ১০ যাত্রী এবং ৫ জন ক্রু সবাই নিহত হন এই দুর্ঘটনায়।
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে সীতা এয়ার ফ্লাইটের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৯ জন। ২০১৬ সালে নেপালের বিমান ভেঙে মৃত্যু হয় ১৮ জন যাত্রীর। ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্তের আগ পর্যন্ত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে টারা এয়ারল্যান্স বিমান দুর্ঘটনায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
সর্বশেষ ১২ মার্চ বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান ইউএস কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট সংলগ্ন ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় কেবিন ক্রু, পাইলটসহ নিহত হন ৫১ জন। যার বেশির ভাগই বাংলাদেশি। ক্রমাগত বিমান দুর্ঘটনা নেপাল এয়ারলাইনসকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কন্ট্রোল রুমে থাকা কর্মকর্তাদের উদাসীনতা কিংবা সেখানকার আবহাওয়াগত সমস্যার কারণেই দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। নেপাল গণমাধ্যম এ দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণের জন্য কমিটি গঠন করেছে। শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে দেশটির সরকার।
নেপাল সরকারের প্রতি আহ্বান, কেবল শোক ও দুঃখ প্রকাশের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে এয়ারপোর্টটির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে এখন মনোযোগী হওয়ার সময় এসেছে। বিশ্বের শোকার্ত মানুষের আর্তির দিকে তাকিয়ে নেপাল সরকার নিশ্চয়ই সে আর্তির প্রতি মনোযোগী হবেন—এটাই প্রত্যাশা।

No comments:

Post a Comment