Monday, October 31, 2016

ইন্টারনেটে মাত্র এক মিনিটে কী কী হয় শুনলে পিলে চমকে যায়

social
এখন আর দেশান্তরে ছোটার দরকার নেই, ঘরে বসেই জগত্টাকে দেখা যায়। পৃথিবীটা হাতের মুঠোয় এনে ফেলেছে ইন্টারনেট। আধুনিক যুগে ইন্টারনেট না থাকা মানে প্রায় ডায়নোসর যুগে ফিরে যাওয়া। ইন্টারনেটের জোয়ারে সোশ্যাল শব্দের মানেটাই পাল্টে গিয়েছে। পাল্টেছে প্রতিবাদের ভাষা। আমুল পরিবর্তন হয়েছে জীবনযাত্রার। এমন পরিবর্তনশীল জীবনে ইন্টারনেটের উপর আপনি কতখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন জানেন কি? স্মার্ট ইনসাইট, এক্সেলাকম-র মতো কিছু স্ট্যাটিস্টিক ওয়েবসাইটের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রতি মিনিটে আমরা ভয়ঙ্কর ভাবে বুঁদ হয়ে রয়েছি ইন্টারনেটে। 

বারমুডা ট্রায়্যাঙ্গেল-এর রহস্য সমাধান করে ফেললেন বিজ্ঞানীরা?


Bermuda

বারমুডা ট্রায়্যাঙ্গেল নিয়ে নয়া তথ্য

অবশেষে কি সমাধান হল বারমুডা ট্রায়্যাঙ্গেলের রহস্যের? বারমুডা ট্রায়্যাঙ্গেল নিয়ে তৈরি নানা মিথের সদুত্তর কি এ বার পাওয়া যাবে? এই সব প্রশ্নের নয়া সমাধান দিচ্ছেন এক দল বিজ্ঞানী। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম অংশের ত্রিকোণাকৃতি জায়াগায় বিভিন্ন সময় উধাও হয়ে গিয়েছে জাহাজ থেকে বিমান। ‘ডেভিলস ট্র্যাঙ্গল’ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করেও ‘কেন’র উত্তর পাওয়া যায়নি। যদিও এই রহস্য নিয়ে চলেছে বিস্তর আলোচনা। নানা ব্যাখ্যা। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি। সেই রকমই আরও একটি নতুন ব্যাখ্যা সংযোজন করলেন বিখ্যাত আবহবিদ র‌্যান্ডি কারভ্যানি-সহ বেশ কিছু বিজ্ঞানী। তাঁদের দাবি, বারমুডা ট্রায়্যাঙ্গেলের রহস্যের পিছনে রয়েছে এক রকম ষড়ভুজাকৃতি মেঘ (হেক্সাগোনাল ক্লাউড)।  উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বারমুডা দ্বীপে ২০ থেকে ৫৫ মাইল জুড়ে ষড়ভুজাকৃতি মেঘ তৈরি করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু। যার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ মাইল। এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ুকে বলা হয় ‘এয়ার বম্ব’। এই বায়ু প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতার ঝড় তৈরি করতে পারে। যার ফলে বারমুডা  ট্রায়্যাঙ্গেল দিয়ে যাওয়া জাহাজ বা প্লেন উধাও হয়ে যায়। কিন্তু উধাও হয়ে কোথায় তার শেষ ঠিকানা হয় সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট নন। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও জাহাজ বা বিমান এই এলাকা দিয়ে যায় না।  এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বার্মুডা ট্রায়্যাঙ্গেল সম্পর্কে কিছু অবাক করা তথ্য। 

 খানাখন্দ সারাতে রাস্তায় স্নান মডেলকন্যারপ্রতিবাদ

Unique protest

এমনই অভিনব প্রতিবাদের ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

 খানাখন্দে ভরা রাস্তা।বৃষ্টির জেরে তার হাল আরও বেহাল। নজর নেই প্রশাসনের। অগত্যা, প্রতিবাদের এক অভিনব কায়দা মাথা খাটিয়ে বের করেছেন এক তরুণী।
রাস্তার এক জলভরা গর্তে বাবু হয়ে বসে তিনি সেই কাদা মাখা জলে স্নান করলেন। পাম, থাইল্যান্ডের এক জনপ্রিয় মডেল। তাঁর এমনই ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। এ বার তাঁকে অনুসরণ করে একই ভাবে রাস্তায় নেমেছেন ওই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ!
থাইল্যান্ডের তাক প্রদেশের ঘটনা। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত তিরিশ বছর ধরে এলাকার কোনও রাস্তারই মেরামতি হয়নি। বছরের পর বছর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাস্তা ভেঙে খানখান হয়েছে। বাধ্য হয়েই সরকারি দফতরের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু লাভ হয়নি। রাস্তার অবস্থা যেমন, তেমনই।
গা সওয়া এই নিত্য যন্ত্রণার একটি স্থায়ী সুরাহা খুঁজতেই এ বার মরিয়া এলাকার লোকেরা। আর তাঁদের সেই রাস্তাই দেখিয়ে দিয়েছেন পাম। ওই মডেলের কথায়, ‘‘গাড়ি করে ওই রাস্তা দিয়ে প্রায় রোজই যাতায়াত করতে হয়। ওই কয়েক কিলোমিটারের অবস্থা খুবই খারাপ।’’ এর পরেই বিষয়টির দিকে সরকারের নজর টানতে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার কথা ভাবেন তিনি। তাঁর দেখাদেখি থাইল্যান্ডের উত্তরপশ্চিমে এক তরুণীকে খারাপ রাস্তার মাঝে বসে ছবি তুলতে দেখা গিয়েছে। সেখানকার খোন কায়েন প্রদেশেও কয়েক জন বৃদ্ধাকেও একই ভাবে রাস্তার মাঝে একটি জল জমা গর্তে নেমে স্নান করতে দেখা গিয়েছে।
এমন তাক লাগানো প্রতিবাদে সরকারের নজর টানার চেষ্টা এই প্রথম নয়। সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুর রাস্তার বেহাল দশা দেখাতে জলভর্তি গর্তের উপর প্রমাণ আকারের কুমির তৈরি করেছিলেন এক ব্যক্তি। পামের মতোই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা আর একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে ৭৬ বছরের এক বৃদ্ধকে। নিজে হাতেই রাস্তা মেরামতি করছেন তিনি।
তবে পাম বা পিটারের প্রতিবাদ বিফলে যায়নি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। তড়িঘড়ি শুরু হয়েছে রাস্তা মেরামতির কাজও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাম-সহ আরও কয়েক জনের সঙ্গে সরকার যোগাযোগও করেছে। দ্রুত ওই রাস্তা সারিয়ে দেওয়া হবে— প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যে সরকারের তরফেও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ কিছু ছবি পোস্ট করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে রাস্তার গর্ত বোজাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। তিরিশ বছরের না হওয়া কাজ এক স্নানেই সেরে ফেললেন পাম! 

শেষ লগ্নে বাজিমাতের আশা ট্রাম্পের


donald trump

লাস ভেগাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কয়েক দিন আগেই মনে হচ্ছিল দূর অস্ত্। কিন্তু এখন হাই প্রোফাইল প্রতিপক্ষের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ লগ্নে এসে ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝিয়ে দিলেন, তিনি লম্বা দৌড়ের ঘোড়া। এবং দৌড়তে দৌড়তে শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসেও পৌঁছে যেতে পারেন!
একটি সাম্প্রতিক জনসমীক্ষা বলছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার ফারাক মাত্র এক শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। গত সপ্তাহে সেই ফারাকটা ছিল বারো শতাংশ। কী ভাবে এমন হাঁসফাঁস দশা হলো হিলারি শিবিরের?
ডেমোক্র্যাট সূত্রের খবর, ট্রাম্প শিবিরের আগ্রাসী প্রচার তো ছিলই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে এফবিআই ডিরেক্টর জেমস কোমির তদন্ত। হিলারির ই-মেল নিয়ে নতুন করে তদন্তে নেমেছেন কোমি। ভোটে না থেকেও আপাতত তিনিই হিলারির দ্বিতীয় প্রতিপক্ষ। আর এই জোড়া প্রতিপক্ষকে সামাল দিতে দিতেই জেরবার হয়ে যাচ্ছেন প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি। ডেমোক্র্যাটদের দাবি, হিলারির সমর্থনের ঝুলিতে এই হঠাৎ-টান কোমির কারণেই। যা থেকে বাড়তি রসদ নিতে তৎপর ট্রাম্পও। হিলারিকে সরাসরি ‘অপরাধী’ বলেও বিঁধছেন তিনি। প্রায় প্রতিটি জনসভাতেই।
এফবিআই প্রধানের দাবি, সম্প্রতি বেশ কিছু নতুন ই-মেলের হদিস মিলেছে। বিদেশসচিব থাকাকালীন ব্যক্তিগত সার্ভার ব্যবহার নিয়ে হিলারির বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুর ঘোষণা করেছেন তিনি। কয়েক দিন আগেই তদন্ত চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় সার্চ ওয়ারেন্ট পেয়েছে এফবিআই। নতুন পাওয়া ই-মেলে গোপনীয় কিছু আছে কি না, সেটাই খতিয়ে দেখবে তদন্তকারী সংস্থাটি।
অথচ এই জেমস কোমি-ই গত জুলাইয়ে মার্কিন কংগ্রেসকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন, টানা এক বছরের তদন্তে হিলারির বিরুদ্ধে তাঁরা অপরাধমূলক কিছুই পাননি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আট দিন বাকি থাকতে তা হলে এই নতুন তদন্তের ঘোষণা কেন? ‘ষড়যন্ত্র এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’— বলছে হিলারি শিবির। প্রথমে নির্বিকার থাকলেও, শনিবার ফ্লোরিডার সভায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন হিলারি নিজেও। এফবিআই-এর এই পদক্ষেপের ব্যাখ্যা চেয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, ভোটের মুখে বিপক্ষ শিবিরের হাতে অস্ত্র তুলে দিতেই কোমির এই ‘নীতিবিরুদ্ধ’ পদক্ষেপ।
তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করে দিয়েছিলেন হিলারি। একের পর এক যৌন হেনস্থার অভিযোগে ধনকুবের নিজেও যথেষ্ট বিপাকে ছিলেন। কিন্তু হিলারির বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরুর ইঙ্গিতে ট্রাম্প শিবিরের পালেও হাওয়া লেগেছে। গত দু’দিনের জনসভায় এফবিআই ডিরেক্টরের হয়ে গলা ফাটাতেও শোনা গিয়েছে ট্রাম্পকে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘অসামান্য সাহসের পরিচয় দিয়েছেন কোমি।’’
এফবিআই ডিরেক্টরের এই সিদ্ধান্ত যে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা প্রমাণে মরিয়া হিলারি শিবিরও। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে একটি চিঠির কথাও তুলে ধরেছেন তারা। ২০১২ সালে চিঠিটি লিখেছিলেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক হোল্ডার। তাতে বলা হয়েছিল, ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে, প্রশাসন কিংবা তদন্তকারী সংস্থার তরফে এমন কোনও পদক্ষেপই কাম্য নয়। এমনটা চাননি বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেলও। ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, কোমির ঘোষণায় ঠিক সেটাই হয়েছে। ভোটের ঠিক আগে ধস নেমেছে হিলারির জনপ্রিয়তায়।
এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মার্কিন কূটনীতিকদেরও একাংশ। তাঁদের দাবি, তদন্ত জারি থাকলে অথবা তাতে বিন্দুমাত্র বিচ্যুতির লক্ষণ দেখা দিলেই হিলারির পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। দেশের প্রাক্তন বিদেশসচিব হিসেবে নেওয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্তের জন্য হিলারি এমনিতেই বিতর্কিত। নিজের দলের মধ্যেও শতকরা ৩০ শতাংশ তাঁকে হোয়াইট হাউসে দেখতে চায় না।
তবে এমনটা নয় যে, হিলারির সমর্থন কমছে মানেই ট্রাম্পের ঝুলি উপচে পড়ছে। একটি জনমত সমীক্ষা সমানে-সমানে টক্করের কথা বললেও, অনেকেই বলছেন, দলের বাইরে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেশ কম। তাঁর ভরসা হিলারির কেলেঙ্কারি ফাঁসেই।ট্রাম্প তাই চাইছেন, হোক সর্বনাশ। ভোটের আগেই!

ওষুধ নিয়ে মুনাফাবাজি ও ওষুধনীতি

চিকিৎসাসেবার অঙ্গনে নৈতিকতা ও মানবিকতার মতো মূল্যবোধগুলো প্রাচীনকাল থেকেই পরিস্ফুট। সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্বার্থ, অনৈতিকতা, মুনাফাবৃত্তি বা বাণিজ্যিক চিন্তা স্থান পায়নি। এর কারণ এমন বিবেচনা যে চিকিৎসা পেশা আর পাঁচটা পেশার মতো নয়। এখানে মানুষের জীবনরক্ষা, রোগ থেকে মুক্তি প্রধান বিবেচ্য বিষয়। পেশার সঙ্গে ‘সেবা’ শব্দটি চিকিৎসাব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে প্রথম প্রকাশ পেয়েছে। প্রাচীনকালে চিকিৎসাশাস্ত্রে ‘এথিকস’-এর উদ্ভব ঘটান আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্মদাতা হিপোক্রেটিস। তার হাত ধরে চিকিৎসাশাস্ত্রের করণীয় বিষয় শপথ হিসেবে উচ্চারিত। তবে ভেষজবিজ্ঞানে এই নৈতিকতার প্রকাশ অনেক অনেক পরে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে সাম্রাজ্যবাদী চেতনার সঙ্গে ভেষজ তথা ওষুধব্যবস্থার গভীর আতাত।
দুই
পূর্বোক্ত আদর্শিক ও নৈতিক চিন্তাভাবনা পাকিস্তান আমলে পূর্ববঙ্গীয় বিশেষত ঢাকার চিকিৎসক সমাজের একাংশে প্রধান হয়ে ওঠে। এর প্রকাশ ঘটে ব্যক্তিত্ব ও সাংগঠনিক প্রতিক্রিয়ায় মূলত পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে। জনাকয় চিকিৎসকের আন্তরিক চেষ্টায় এখানে চিকিৎসা পেশার সাংগঠনিক মুখপাত্র গঠিত হয়, কৌশলগত কারণে এর নামকরণ পাকিস্তান ভিত্তিতে, যদিও প্রাথমিক উদ্যোগ ঢাকায়। প্রতিষ্ঠানের নাম ‘পাকিস্তান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, ইস্ট জোন’ (সংক্ষেপে চগঅ-ঊত) পেশাভিত্তিক এ সংগঠন গড়ে ওঠার পেছনে অনেকের সঙ্গে বিশেষভাবে দুজন চিকিৎসকের ক্লান্তিহীন সময় ও শ্রমের অবদান স্মরণযোগ্য—ঢাকা শহরের স্বনামখ্যাত জিপি ডা. এম এন নন্দী ও ডা. টি আলী। দুজনই প্রগতি ঘরানার মানুষ। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এ সংস্থার নতুন নাম ইগঅ (বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন)।
শুরু থেকে এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য ছিল চিকিৎসক সমাজের পেশাগত মানোন্নয়নের পাশাপাশি চিকিৎসাসেবায় নৈতিকতা, সততা ও আদর্শমান সমুন্নত রাখা। পরে বিশেষ কয়েকজনের আগ্রহে চিকিৎসাসেবার এ নীতি ওষুধশিল্পের ক্ষেত্রে প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল (পূর্ববঙ্গ) তখন ওষুধ বাণিজ্যের উর্বরভূমি। গোটা পাকিস্তানের ওষুধ বিপণনের বেশির ভাগ পূর্ববঙ্গে। তার ৮০ শতাংশের বেশি বিদেশি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির দখলে। বাকিটা দেশীয় ওষুধ কোম্পানির হাতে। বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া মুনাফাবাজিতে যুক্তি জোগান দেওয়া হতো এই বলে যে এসব গবেষণাধর্মী ওষুধ কোম্পানির উৎপন্ন (প্রোডাক্ট) মানেই উন্নতমান ও নির্ভরযোগ্য, যার প্রতীক তাদের বিশেষ ‘ব্র্যান্ড নাম’ যেমন গ্ল্যাক্সো, ফাইজার, আইসিআই, পার্ক ডেভিস ইত্যাদি। আরো যুক্তি তাদের উৎপাদন ব্যয় বেশি বলেই তাদের উৎপাদিত ব্র্যান্ডের ওষুধ দামি; কিন্তু কাজে ধন্বন্তরি। গুণগতমানের পরিচয় তাদের নিজ নিজ ব্র্যান্ডে এর বিকল্প নেই, এ-জাতীয় প্রচারে প্রভাবিত চিকিৎসক, প্রভাবিত রোগী অর্থাৎ ওষুধ ক্রেতা।
কিন্তু মনোযোগী বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসব ওষুধ তৈরির কাঁচামালের (জধি সধঃবৎরধষং) মূল্য, অন্যান্য খরচ ও নির্দিষ্ট লভ্যাংশ যোগ করে যে ওষুধের দাম হওয়া উচিত, ধরা যাক ১০ টাকা, বাস্তবে তার বিক্রয়মূল্য ২০ টাকা বা ততোধিক। আর তা জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক বা ইনজেকশনজাতীয় হলে তো কথাই নেই, বিক্রয়মূল্য লাফিয়ে হয়তো ৩০ টাকায় পৌঁছে যায়। কিছু করার নেই। ব্র্যান্ড মহিমা বলে কথা। তা ছাড়া একেক কোম্পানির গবেষণালব্ধ ওষুধ তো অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। তাই নির্ধারিত মূল্য যত বেশিই হোক নিরুপায় রোগীকে তা কিনতে হয়। ব্র্যান্ড খ্যাতির দাম মেটানো এ দেশের নিম্ন আয় বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে কার্যকর ছিল। তবু রোগমুক্তির জন্য কখনো গরিবদের ঘটিবাটি বিক্রি করতে হতো। মুনাফাবাজি এমনই নির্মম, অনেকটা মহাজনী ব্যবসার মতো।
চিকিৎসা ও ওষুধ পেশার কোনো কোনো সচেতন মানুষের পক্ষে অবাধ ও অনৈতিক এ ব্যবসা মেনে নেওয়া সহজ ছিল না। তাই কথা ওঠে ব্র্যান্ড ব্যবসা বিলোপের। ওষুধের মূল ভেষজ নামে (জেনেরিক নামে) ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের। তাতে প্রতিযোগিতা হবে স্বচ্ছ ও নৈতিক। ব্র্যান্ড মাহাত্ম্যের ঊর্ধ্বে। স্বভাবতই উৎপন্ন ওষুধের দাম কমে আসবে, তা সাধারণ মানুষের জন্য সুলভ তথা সহজলভ্য হবে।
কিন্তু বহুজাতিক বিশাল ওষুধ কোম্পানিগুলো একালের করপোরেট পুঁজিবাদের মতো এমনই শক্তিমান যে তাদের সীমাহীন মুনাফাবাজি বন্ধ করা প্রায় অসম্ভবই ছিল। তাদের আগ্রাসী ক্ষমতা এত প্রবল ছিল যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডঐঙ) মতো সাম্রাজ্যবাদ সমর্থক প্রতিষ্ঠানেরও পূর্বোক্ত বিষয়াদি চোখে লাগে। ‘ওষুধ ঔপনিবেশিকতাবাদে’র (ড্রাগ কলোনিয়ালিজম) বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হতে দেখা যায়, যা তৃতীয় বিশ্বের জন্য ছিল শুভ সংবাদ। সে সুবাদে পূর্ববঙ্গীয় চগঅ ও দেশি ওষুধ কোম্পানিগুলোর পক্ষে বহুজাতিক মুনাফাবাজির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামা সম্ভব হয়। কিন্তু মুনাফাবাজির অচলায়তন ভাঙা যায়নি। বিশদ বিবরণ উহ্যই থাক।
তিন
স্বাধীন বাংলাদেশ এ বিষয়ে কিছুটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে, বিশেষ করে মজবুত দেশি কোম্পানিগুলোর জন্য। তাদের দ্রুত শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। বিদেশি কোম্পানিগুলোও তাদের মুনাফা-স্বার্থ বজায় রাখতে সাংগঠনিক পরিবর্তন ঘটায় নয়া অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। তবে তাদের মুনাফা-স্বার্থে বড় আঘাত পড়ে নয়া ‘ওষুধনীতি’ (ড্রাগ পলিসি) অর্থাৎ ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের ফলে। যে আইন মূলত অপ্রয়োজনীয় ওষুধ বাতিলের মতো একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ওষুধের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণে প্রশাসনিক ভূমিকা নিশ্চিত করে। ওষুধনীতি বাস্তবায়নে ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠিত হয় ড্রাগ প্রশাসন অধিদফতর। এদের প্রাথমিক দায়িত্ব পালন প্রশংসার যোগ্য।
কিন্তু ওষুধনীতি প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে ভেতরের বাধাও কম ছিল না। বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি চিকিৎসকদের একাংশেও বিরূপতা ছিল লক্ষ করার মতো। এ জন্য ওষুধনীতি প্রণয়নের উদ্যোক্তাদের কিছু ভুল পদক্ষেপ শেষোক্তদের বিরূপতার অন্তত প্রকাশ্য কারণ। চিকিৎসা পেশাজীবী সংগঠন ‘বিএমএ’কে সঙ্গে নিয়ে কঠিন এ ভেষজযুদ্ধে নামা উচিত ছিল। কারণ ঐক্যবদ্ধ লড়াই সুফল বয়ে আনে। এ নীতিবাক্য তাদের মনে আসেনি। অবশ্য দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে নিঃশর্ত ও লাগাতার সমর্থন জোগায়।
লড়াইটা কঠিন ছিল বলেই কি না জানি না, ওষুধনীতির ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধতা, কিছুটা আপসবাদ প্রাধান্য পায়। প্রথমত, বাজারজাত প্রতিটি ওষুধপণ্যের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করতে না পারা। তাতে মুনাফাবাজির বিরাট একটা সুযোগ থেকে যায়। দ্বিতীয়ত, জেনেরিক তথা ওষুধের মূল নামে সার্বিক ওষুধ বিপণনব্যবস্থা নিশ্চিত করার ব্যর্থতা। অবশ্য স্বীকার্য যে এ লড়াইটা ছিল আন্তর্জাতিক চরিত্রের এবং আগেই বলেছি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে মহাশক্তিমান সদস্য। তাই লড়াই হয়ে ওঠে অনেকটাই সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতার মতোই। তাই এ ক্ষেত্রে ব্র্যান্ড মহিমা ও প্যাটেন্ট স্বত্বের সুবিধার কাছে ওষুধনীতির পরাজয় ছিল রূঢ় সত্য। শক্তিমানকে ছাড় দিতে গিয়ে ব্র্যান্ড নামে ওষুধপণ্য বিপণন মেনে নিতে হয়। জেনেরিক নামে ওষুধপণ্য প্রস্তুত ও বিপণন বাধ্যতামূলক করা যায়নি। নয়া উদ্ভাবিত ওষুধের স্বত্ব ইত্যাদি একাধিক সমস্যাও এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ছিল।
আংশিক বিজয় অর্জিত হলেও ওষুধনীতি কি প্রতিবেশী দেশে, কি আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়, কিছুটা আলোড়ন তোলে। এ নীতি অনুসরণযোগ্য বলেও মনে হয়, বিশেষ করে যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ নীতির প্রতি ঢালাও সমর্থন জানায় মূলত ভোক্তাস্বার্থে। তারা জেনেরিক নামে ওষুধপণ্য বিপণনেরও সমর্থক ছিল। এ নীতি কিছুটা হলেও যে জনস্বার্থসাপেক্ষ তার প্রমাণ বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বড়সড় অংশের ঢাকা থেকে বিদায় গ্রহণ, বাকিরা ভিন্ন কৌশলে টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়েছে এবং টিকে আছে। যেমন ‘আইসিআই’ (এসিআই নামে), ফাইজার (রেনেটা নামে), গ্ল্যাক্সো স্বনামে (সঙ্গে স্মিতক্লাইন) ইত্যাদি। গ্ল্যাক্সোর পণ্যের দাম অবশ্য বরাবরই অপেক্ষাকৃত কম ছিল।
কিন্তু ওষুধনীতির সার্বিক সুফল প্রকাশে বড় বাধা ছিল শর্ষের মধ্যে ভূতের উপস্থিতি। ভেতরেই যদি আদর্শিক বিরূপতা থাকে, তাহলে কোনো সৎ প্রচেষ্টারও সদ্গতি হয় না। হয়নি ওষুধনীতির। শুরুতে কিছুটা সুফল পাওয়া গেলেও পরবর্তী সময়ে এবং বর্তমানে এর গঙ্গাযাত্রাই নিশ্চিত পরিণাম হয়ে উঠছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ একদা পশ্চাৎপদ দেশি কোম্পানিগুলোর বিদেশি কোম্পানিগুলোর মতো বহুজাতিক চরিত্র অর্জন ও অব্যাহত মুনাফাবাজি। এরা আসলে নীতিগত ও মুনাফাগত দুই দিক থেকেই বিদায়ীদের শূন্যস্থান পূরণ করেছে। হয়ে উঠেছে শক্তিমান উত্তরসূরি।
অথচ বহুজাতিক বিদেশি কোম্পানিগুলোর মতো মৌলিক ভেষজ গবেষণায় এদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই, আছে শুধু মুনাফার লোভ। বিদেশি প্রযুক্তি ধার করে মুনাফাবাজিকে নানা শাখায় পল্লবিত করে তোলাই এ দেশে ওষুধ ব্যবসানীতির একমাত্র সত্য। সে ধারায় মাড়োয়ারিদের বহুকথিত ‘বেওসা’ এরা মহাসমারোহে চালিয়ে যাচ্ছে।
সে ব্যবসা অর্থাৎ মুনাফাবাজি সাদামাটা ওষুধপণ্যের খুশিমতো বিক্রয়মূল্য নির্ধারণে যেখানে ওষুধ প্রশাসন নীরব দর্শক। সত্যি বলতে কী, ওষুধ প্রশাসন তার নখদন্ত হারিয়ে এখন একটি বর্জ্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত। তেমনি এ ক্ষেত্রে শাসনযন্ত্রও অন্ধ রাজা যুধিষ্ঠির। তাই বড়সড় ওষুধ কোম্পানিগুলো অবাধ মুনাফাবাজিতে ফুলেফেঁপে উঠছে। সাদামাটা ওষুধ বাদেও বিশেষ প্রযুক্তির ওষুধপণ্যের খেয়ালখুশির উচ্চমূল্য নিজেরাই নির্ধারণ করছে। সেখানে কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। মুনাফা শতগুণ হলেও ক্ষতি নেই, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ দূর-অস্ত। যত কষ্ট নিম্ন আয়ের সৎ মানুষের ও দরিদ্র জনতার।
ওষুধের দাম, কাঁচামালের দাম নিয়ে কত প্রকার যে ফাঁকি তা অন্দরমহলের মানুষ, এ বিষয়ে অভিজ্ঞ মানুষ মাত্রই জানে। আমরা জানি, একদা ওষুধশিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তাই এ লেখা। কিন্তু কে শুনবে কার কথা। তাই দেখতে হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশে ওষুধপণ্যের বাজারে ব্যাপক নৈরাজ্য, মূলত এর মূল্য নির্ধারণে এবং কিছুসংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ীর চাতুর্যের ফলে পকেট কাটা যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছুসংখ্যক নকল প্রস্তুতকারকের ভেজাল ওষুধ ব্যবসা, যার ব্যবহার রোগীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের ওষুধপণ্যের বাজার প্রস্তুতকারক ও ব্যবসায়ীদের কল্যাণে এক অদ্ভুত প্রতারণার নৈরাজ্যিক বাজারে পরিণত হয়েছে। অভিভাবকহীন এ সেবা-ভুবন। সব ন্যায়নীতি এখানে অচল। আছে শুধু মুনাফা। আছে ওষুধের ক্রমবর্ধমান দাম বাড়ার নৈরাজ্য নিয়ে মানুষের তিক্ত অভিমত প্রকাশ। কবে ঘুম ভাঙবে ওষুধ প্রশাসন নামক কুম্ভকর্ণের! এখন দরকার স্বদেশি সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রবল একটি আঘাতের। সে কালাপাহাড়ের অপেক্ষা।
লেখক: কবি, গবেষক ও ভাষাসংগ্রামী

যে কয়দিন দায়িত্বে ছিলাম, মন্ত্রিত্বের শপথ থেকে বিচ্যুত হইনি : সোহেল তাজ

প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী-সমর্থকের প্রত্যাশা সত্বেও রাজনীতিতে সক্রিয়া না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। শনিবার বিকেলে ফেসবুক পোস্টে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন সোহেল তাজ। এমনকি অনেকে ধারণা করছিলেন, এবারের কাউন্সিলে দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে তাকে আসীন করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত তাকে আওয়ামী লীগের কোনো পদে দেখা যায়নি। অবশ্য কয়েক দিন আগেই সোহেল তাজ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কাউন্সিলে আমি কারো কাছে পদ চাইনি।’
 সোহেল তাজের স্ট্যাটাসট:

‘গত কয়েকদিন ধরে আপনাদের মন্তব্য গুলো আমি মনোযোগের সাথে পড়েছি। আমার প্রতি আপনাদের অনুভুতি, ভালবাসা ও আন্তরিকতা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। আমি যদি আপনাদের কাওকে কোন কারণে কষ্ট দিয়ে থাকি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। সেটা কখনই আমার উদ্দেশ্য ছিল না।’‘আমার কাছে এ-ও প্রতীয়মান হয়েছে যে আপনারা অনেকেই আমার প্রতি ভালবাসার কারনে আমাকে অনেক প্রশংসা করেছেন সে জন্য আমি অভিভুত এবং কৃতজ্ঞ। যদিও জানি না আমি এই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কিনা। ভাল মন্দ, ন্যায় অন্যায়, হাসি কান্না, সুখ দুঃখ, ভুল ত্রুটি, চড়াই উৎরাই নিয়েই একটি মানুষ। আর সেই মানুষকে নিয়েই সমাজ। আমিও সেই সমাজেরই একজন। তবে আমার ব্যাক্তি জীবনে এবং রাজনীতির প্রাঙ্গণে আমি সব সময় চেষ্টা করেছি আমার বাবা ও মার আদর্শ বুকে ধারন করে নিজেকে পরিচালনা করতে।আমি আপনাদের সবার কাছে দোয়া চাই যেন ভবিষ্যৎ জীবনে যা করিনা কেন, চাকরি বাকরি, ব্যবসা বাণিজ্য বা সামাজিক কাজ, তা যেন সৎ, স্বচ্ছভাবে করতে পারি।স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী থেকে পদত্যাগের বিষয়ে সেই বহুল আলোচিত চিঠিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে গড়ে তোলা সুন্দর একটি জীবন ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। কৈশোর বয়স থেকে নিজে দিনরাত কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি। বাবা-মায়ের দেওয়া শিক্ষা, দেশপ্রেম থেকেই দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে সবকিছু ছেড়ে দেশে ফিরে গিয়েছিলাম। প্রথমে সামাজিকভাবে কাজ শুরু করেছিলাম। আর্সেনিক নিয়ে সচেতনতার কাজও অনেক করেছি। গ্রামে-গঞ্জে ঘুরেছি দিনের পর দিন। বাবা ও মায়ের রাজনৈতিক সহকর্মীদের পরামর্শ এবং কাপাসিয়ার মানুষের অনুরোধেই আমার সক্রিয় রাজনীতিতে আসা। তারা আমাকে বুঝিয়েছিলেন, রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থেকে আরো ভালো করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা সম্ভব। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও শরীরে বয়ে চলা বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের রক্তই আমাকে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করেছে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগ দিতে এবং দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে। ক্ষমতা, অর্থসম্পদ, খ্যাতি প্রতিপত্তির জন্য আমি রাজনীতিতে যোগ দিইনি। যদি উদ্দেশ্য তা-ই হতো, তাহলে সবকিছু মেনে নিয়ে এখনো এমপি ও মন্ত্রিত্বের পদ আঁকড়ে থাকতাম। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাকে বাকি জীবন এই লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে রাখেন। নিজের দলীয় ও তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সৃষ্টি করা শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ২০০১ সালের নির্বাচনে কাপাসিয়ার মানুষের ভালোবাসায় প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলাম।দুর্ভাগ্য, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। আমার কাপাসিয়ার মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত জোটের চলতে থাকে একের পর এক হামলা, মামলা ও নির্যাতন। প্রতিবাদে কাপাসিয়ার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলি। বিএনপি-জামায়াতের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন আমার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী যুবলীগের সভাপতি জালাল উদ্দীন সরকার। পুলিশ নির্মমভাবে হত্যা করেছে জামাল ফকিরকে। এসবের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ অনশন করতে গিয়ে বারবার পুলিশের নির্মম হামলার শিকার হয়েছি। বস্তুত বিএনপি-জামায়াতের পাঁচটি বছর হামলা, মামলা ঠেকাতে আমাকে বেশির ভাগ সময় রাজপথ ও আদালত প্রাঙ্গণে সময় কাটাতে হয়েছে। কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যে নিজেকে জড়াইনি। পৈতৃক সম্পত্তি থেকে যা আয় হতো, তাই দিয়েই চলত আমার রাজনীতি।
এমনকি পৈতৃক সম্পত্তিও বিক্রি করেছি রাজনীতির জন্য। খুব সাদামাটা সাধারণ জীবনযাপন করেছি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের কর্মকাণ্ড আমাকে হতাশ করলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের যুগোপযোগী নির্বাচনী ইশতেহার আমাকে রাজনীতিতে আরো বেশি উৎসাহিত করে। যে ইশতেহারটি ছিল প্রগতিশীল ও দিনবদলের একটি ঐতিহাসিক অঙ্গীকার। আশাবাদী হই, একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির। যে সংস্কৃতির মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। জনগণ পাবে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার। যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, জাতীয় চার নেতা, উদীচী ও একুশে আগস্ট হত্যাকাণ্ড, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া ও অহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ড এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। বাংলাদেশ হবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা—সব মিলিয়ে একটি সুন্দর সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলাম। আর তাই যে মন্ত্রণালয় কেউ নিতে চায়নি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসে সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। এই দায়িত্বটি ছিল শুধু মন্ত্রিত্ব নয়, একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব অপরিসীম। আর সুশাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বের অনেকটাই ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। আমার সব সময়ই চেষ্টা ছিল পুলিশ বাহিনীকে একটি সুশৃঙ্খল পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে জনগণের বন্ধু করে তোলা। মন্ত্রিত্বের শেষ দিন পর্যন্ত আমার সেই চেষ্টা অব্যাহত ছিল। কতটুকু পেরেছি বা কেন পারিনি, সে কথায় না গিয়ে শুধু এইটুকু বলতে চাই, আমি আমার মায়ের কাছ থেকে শিখেছি, সব সময় অনিয়ম ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। সেটা যে-ই করুক না কেন। যতটুকু সম্ভব আমি আমার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে চেষ্টাও করেছিলাম। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়াও শুরু করতে সহযোগিতা করেছিলাম। কথার পেছনে অনেক কথা থাকে। অনেক লুকায়িত সত্য থাকে। যা দেশ, জনগণ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে জনসম্মুখে বলা উচিত না। আর তা সম্ভবও নয়। শুধু এইটুকু বলি, আমি ‘সংগত’ কারণেই এমপি ও মন্ত্রিত্বের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। যে কয়দিন দায়িত্বে ছিলাম, মন্ত্রিত্বের শপথ থেকে বিচ্যুত হইনি। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। দুর্নীতি অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত সোচ্চার ছিলাম। যখন মনে করেছি, আমার সীমিত ক্ষমতায় জনগণের প্রতি দেওয়া কমিটমেন্ট আর রক্ষা করা সম্ভব নয়, তখন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। কারণ পদ বা ক্ষমতার লোভে আমি রাজনীতিতে আসিনি। যদি তা-ই হতো তাহলে মন্ত্রিত্বের লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে প্রবাসে চাকরির জীবন বেছে নিতাম না। অর্থসম্পদ বা ক্ষমতার বিন্দুমাত্র মোহ আমার নেই। আমার কাপাসিয়াবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই, সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগের এই সিদ্ধান্ত নিতে আমার অনেক চিন্তাভাবনা করতে হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা, ভালোবাসা, স্নেহ—আমার জন্য এলাকার মানুষের ত্যাগ স্বীকার, আবেগ এই সবকিছু চিন্তা করার পরও বাস্তবতা বিচার করে আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। কাপাসিয়ার মানুষের সম্মান রক্ষার্থে আমার সামনে এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। কারণ কাপাসিয়ার মানুষের মর্যাদা ও সম্মান আমার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি জানি, আমার এই সিদ্ধান্তে আপনারা ক্ষুব্ধ ও অভিমানী হবেন, প্রতিবাদ করবেন।কারণ যে ভালোবাসা ও সম্মান আপনারা আমাকে দিয়েছেন, এই সম্মানের ওপর কোনো কালিমা পড়ুক, তা আমি চাই না। সংগত কারণেই সবকিছু খুলে বলতে পারছি না। এই কাপাসিয়ার মাটি ও মানুষের সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক। এই কাপাসিয়ার মাঠে-ঘাটেই বেড়ে উঠেছেন আমার বাবা বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ। সেই মাটির গন্ধ আমার গায়েও। তার আদর্শ নিয়েই আমার পথচলা। কাপাসিয়ার মানুষের জন্য অনেক কিছু করার স্বপ্ন নিয়েই আমি প্রবাস-জীবনের ইতি টেনেছিলাম।
আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ভালোবাসা ও দোয়া পেয়েছি। এর প্রতিদান হয়তো ততটুকু দিতে পারিনি। তবে সেই চেষ্টা আমার সব সময় ছিল। আমি এইটুকু বলতে চাই, সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করলেও আপনাদের পাশে থাকব সব সময়। হয়তো অন্য কোনোভাবে, অন্য কোনো পথে। এই প্রতিজ্ঞা করছি। সক্রিয় রাজনীতিতে পুনরায় আসার সম্ভাবনা না থাকলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আমার বাবা তাজউদ্দীন আহমদের আদর্শে গড়া আওয়ামী লীগই আমার শেষ ঠিকানা। কারণ এই দলটির সঙ্গে আমার বাবার রক্ত মিশে আছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে তিনি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েছেন। কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করেননি। জীবন দিয়েও তা প্রমাণ করে গেছেন। কাপাসিয়ায় আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী যারা আমার জন্য ত্যাগ স্বীকার, জেল-জুলুম ও অত্যাচার সহ্য করেছেন, তাদের উদ্দেশে বলব, আমি সব সময় যেটা আপনাদের বলে এসেছি, তা হচ্ছে ব্যক্তি-স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতি পরিহার করতে হবে। ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির রাজনীতি বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের মতো নীতি আদর্শের রাজনীতি করতে হবে। ঐতিহ্যবাহী কাপাসিয়ার নেতৃত্ব যেন ভালো মানুষের দ্বারা পরিচালিত হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনাদের ওপর। কাপাসিয়ার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আপনারা সেই পথে এগিয়ে যান। আপনাদের সবার মতো আমিও তাকিয়ে আছি ভবিষ্যতের দিকে।
হয়তো একদিন সুস্থ একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ হবে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী একটি দেশ।
এই প্রত্যাশায়-তানজিম আহমদ (সোহেল তাজ)

ভালো কাজের মাঝেই জন্মের সার্থকতা

বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের জন্মদিন সোমবার। ৭০ বছরে পা রাখলেন তিনি। দিনটি সাদামাটাভাবেই কাটাবেন নূর। অন্যসব দিনের মতোই কিছু রুটিন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, জন্মদিন বিশেষ কোনো ঘটনা নয়। ভালো কাজের মাঝেই জন্মের সার্থকতা। তাই জন্মদিন নিয়ে আলাদা কোনো উচ্ছ্বাস কাজ করে না। প্রতিদিনের মতোই কাজের মধ্যে কেটে যাবে দিনটি।
আসাদুজ্জামান নূরের জন্ম ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর নীলফামারী জেলায়। তার অভিনয় জীবন শুরু হয় মঞ্চনাটকে। দেশের অন্যতম নাট্য সংগঠন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত যুক্ত আছেন। মঞ্চে ‘নূরুল দীনের সারাজীবন’ নাটকে তার অভিনয় এখনো দাগ কেটে আছে অনেকের হৃদয়ে।
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে নাটক নির্দেশনায়ও দেখা গেছে তাকে। নূরের নির্দেশিত নাটক ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ প্রায় চার দশক ধরে মঞ্চায়ন হচ্ছে। নাটকটির এখনো হাউসফুল প্রদর্শনী হয়।
মঞ্চের পাশাপাশি টিভি অভিনয়ে তিনি পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। নব্বইয়ের দশকে জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
আসাদুজ্জামান নূর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। গুণী এই নাট্যব্যক্তিত্বকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদটি পুনঃপ্রবর্তন হওয়া সময়ের দাবি : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদটি পুনঃপ্রবর্তন হওয়া সময়ের দাবি। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার দেওয়া এক বাণীতে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর ওই বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণক্ষমতা রয়েছে। অপর দিকে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের ধীরগতির অন্যতম কারণ। এই অনুচ্ছেদের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি ও শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে এককভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, দ্বৈত শাসনের ফলে বহু জেলায় শূন্য পদে সময়মতো বিচারক নিয়োগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিচারকার্য বিঘ্ন ঘটে এবং বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায়। এ প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদটি পুনঃপ্রবর্তন হওয়া সময়ের দাবি। যাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলাবিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে। ওই বিধানটি পুনঃপ্রবর্তন করলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরো সমুন্নত ও সুসংহত হবে এবং বিচার বিভাগের সার্বিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

Sunday, October 30, 2016

নাসিরনগরে মন্দির ও ঘরবাড়িতে ভাংচুর-লুটপাট

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে। রোববার উপজেলার সদরে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হওয়া এ হামলায় সার্বজনীন চারটিসহ অন্তত ১৫টি মন্দির ভাঙচুরের শিকার হয়। এছাড়া ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে দেড়শ’র বেশি বাড়িঘরে। হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০জন। হামলা থেকে রক্ষা করতে গিয়েও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এসব ঘটনায় পুরো নাসিরনগর জুড়েই এখন হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও বিজিব মোতায়েন রয়েছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসিরনগরের রসরাজ দাস নামে এক যুবক পবিত্র কাবা শরীফের উপর শিব মুর্তি বসিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পুলিশ শনিবার দুপুরে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় নাসিরনগরে দু’টি সংগঠনের উদ্যোগে এ সমাবেশ ডাকা হয়েছিল। সমাবেশ চলাকালে শত শত লোক দা, লাঠি-সোটা নিয়ে হামলায় অংশ নেয়। হামলাকারীদের মধ্যে বেশিরভাগই যুব বয়সের ও তাদের পরণে প্যান্ট শার্ট ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। কেউ একজন ঘোড়ায় চড়ে এসে হামলা চালান। 
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা সদরের দত্তপাড়া, ঘোষপাড়া, গাংকুলপাড়া পাড়া, মহাকাল পাড়া, কাশিপাড়া, নমসুদপাড়া, মালিপাড়া, শীলপাড়ায় হামলা হয়েছে। শ্রী শ্রী গৌর মন্দির, শ্রী শ্রী শিব মন্দির, শ্রী শ্রী জগন্নাথ মন্দির, শ্রী শ্রী কালী মন্দির নামে চারটি সার্বজনীন মন্দির ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। ওই সব এলাকার অমূল্য দাস, জয় কুমার সূত্রধর, নিরঞ্জন গোপ, নিধু ঘোষ, বিনোদ ঘোষ, সুশীল সরকার, গোপাল সূত্র, মোহন লাল, হিরালাল দাস, মন্টু ঘোষ, সুব্রত সরকার, প্রদীপ দাস, সজল সরকার, সুজন দেব, কাজল জ্যোতি দত্তসহ অনেকের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর ও লোটপাটের দৃশ্য চোখে পড়ে। তাদের অনেকের বাড়ির ব্যক্তিগত মন্দিরও ভাঙচুরের শিকার হয়।     
উপজেলা পূজা উদযাপন সমিতির সভাপতি দত্তপাড়ার কাজল জ্যোতি দত্ত জানান, তার বাড়ি ও মন্দিরেও হামলা হয়। শত শত লোক অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় ফেরাতে গিয়ে এলাকার কিছু মুসলিম যুবকও আহত হয়।
সুব্রত সরকার নামে এক ব্যক্তি জানান, তার বাড়িতে হামলা করতে আসা লোকজন প্রথমেই মারধর শুরু করে। মন্দিরে ভাঙচুরের পাশাপাশি তারা মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়। প্রদীপ দাস নামে এক ব্যক্তি জানান, তার ভাই মানিক দাসের একমাত্র সম্বল মাছ ধরার জালটিও পুড়িয়ে দেয়া হয়।
এদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রিজিওন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাশরুর উল্লাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, র‌্যাব-৯ এর কম্পানি কমান্ডার এএসপি মো. আবু সাঈদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তাঁরা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।     
পূজা উদযাপন পরিষদ নাসিরনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হরিপদ পোদ্দার বলেন, ’হামলাকারীরা ১০-১৫টি মন্দিরের পাশাপাশি দেড়শ’র বেশি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। আমরা এলাকায় শান্তি চাই। পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে প্রশাসনসহ সকলের সঙ্গে আলোচনা করব’। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, ’শুরু থেকেই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খোঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে’। 

ডায়েটের যেসব ভুল এড়িয়ে চলা উচিৎ

আপনি হয়তো আপনার বন্ধুবান্ধব বা কলিগদের কাছ থেকে ওজন কমানোর ডায়েটের পরামর্শের কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত। ডায়েট টিপস অনুসরণ করা ও নিয়মিত জিম করার পর ও আপনার অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারছেন না! আপনার ভুল হচ্ছে কোথায়? উত্তরটা খুবই  সহজ- আপনার খাদ্যাভ্যাসেই কোন ভুল হচ্ছে। ডায়েটের এমন কিছু ভুল নিয়েই আমাদের আজকের এই ফিচার।
১। সকালের নাশতা বাদ দেয়া
ওজন কমানোর জন্য অনেকেই সকালের নাশতা বাদ দেন যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সকালের নাশতা বাদ দিলে দুপুরে অনেক বেশি খাওয়া হয়। অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এবং এনার্জির জন্য সকালে স্বাস্থ্যকর নাশতা খাওয়া প্রয়োজন।
২। ক্রাশ ডায়েট করলে
ক্রাশ ডায়েট দীর্ঘদিন মেনে চলা সম্ভব নয়। মুহূর্তেই ওজন কমার জন্য কোন ম্যাজিক ফর্মুলা নেই। ক্রাশ ডায়েটে সুষম খাদ্যের ভারসাম্য ঠিক থাকেনা। ফলে এনার্জি কমে যাওয়া ও মেজাজ খিটখিটে হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
৩। খাবারের পরিবর্তে এনার্জি বার গ্রহণ করা
স্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে এনার্জি বার খাওয়া উচিৎ নয়। এ ধরণের বারগুলোতে কৃত্রিম মিষ্টিকারক যুক্ত থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৪। ওয়ার্ক আউটের আগে না খাওয়া
এই ভুলটি অনেক মানুষই করে থাকে। তারা মনে করে যে না খেয়ে ওয়ার্ক আউট করলে অনেক বেশি ওজন কমাতে পারবে। এর ফলে ওয়ার্ক আউট করার জন্য পর্যাপ্ত এনার্জি থাকেনা, ফলে সঠিকভাবে ওয়ার্ক আউট করাই সম্ভব হয়না অনেকের।
৫। অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স খাওয়া
অফিসে কাজের ফাঁকে ডেস্কে বসে অনেকেই চিপস, চকলেট, বিস্কুট ইত্যাদি স্ন্যাক্সগুলো খায়। এছাড়াও কলিগের জন্মদিনের কেক খাওয়া ও কফি খাওয়াও হয়। এগুলো অনবরত খাওয়া অস্বাস্থ্যকর।
৬। ব্যায়ামের অনেকক্ষণ পরে খাওয়া
এনার্জির জন্য ব্যায়ামের আগে যেমন খাওয়া প্রয়োজন তেমনি ব্যায়ামের পরে খাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।মনে রাখবেন ব্যায়ামের ফলে আপনার শরীরে যে ক্ষয় হয় তা পূরণ করা প্রয়োজন। তাই ব্যায়ামের  কিছুক্ষণ পরেই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হয়।
৭। পর্যাপ্ত পানি পান না করা
পর্যাপ্ত পানি না পান করা ডায়েটের একটি সাধারণ ভুল। গবেষণায় জানা গেছে যে, যারা বেশি পানি পান করেন তাদের ক্যালোরি বেশি পুড়ে।
৮। জাঙ্কফুড খাওয়া
ব্যায়াম করলেই বেশি জাঙ্কফুড খাওয়ায় কোন সমস্যা নেই এমন ভাবা ঠিক নয়। ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধু ব্যায়াম করাই যথেষ্ট নয়। এজন্য স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য খাওয়া অত্যাবশ্যকীয়। তাই আস্ত শস্যদানা, ফল ও শাকসবজি খেতে হবে।
৯। শর্করা বাদ দেয়া
ডায়েটের আরেকটি ভুল হচ্ছে শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া বাদ দেয়া। এনার্জির জন্য শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এজন্য আস্ত শস্যদানার তৈরি খাবার যেমন – গমের রুটি, চাপাতি ইত্যাদি খেতে হবে আপনাকে।  

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল সাকিবের স্যালুট

অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের জন্য বাংলাদেশে বেশ কয়েকবার শিরোনাম হওয়া বেন স্টোকসকে চতুর্থ ইনিংসে সরাসরি বোল্ড করে স্যালুট করে বসেন সাকিব আল হাসান। আর সেই স্যালুট সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল। 
ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে হারের পর তামিমকে ধাক্কা দিয়েছিলেন স্টোকস। টুইটারে সেটা নিয়ে ঝাল ঝেড়েছেন তিনি। এছাড়া প্রস্তুতি ম্যাচেও হাত না মেলানোর মতো অভব্য আচরণ করেন তিনি। তার উপর টাইগাররা মনে মনে ক্ষিপ্ত হয়ে থাকলেও সেটা প্রকাশ করেনি। শেষবারের মতো বাংলাদেশ সফরে ব্যাট করতে নেমে ২৫ রান করে সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে যান স্টোকস। আর সাকিবও নিজের ঝাল ঝাড়ার উপলক্ষ পেয়ে স্যালুট করে বসেন স্টোকসকে। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অলরাউন্ডার মারলন স্যামুয়েলস এই বেন স্টোকসকেই স্যালুট করেছিলেন।
সাকিবের অমন উদযাপন সোশ্যাল মিডিয়া খুব পছন্দ করেছে। ফেসবুক, টুইটার সহ সব জায়গায় মানুষ সাকিবের স্যালুটের ভঙ্গিতে ছবি তুলে স্ট্যাটাস/পোস্ট করছেন। সাংবাদিক ও ব্লগার আরিফ জেবতিকের শেয়ার করা একটি ছবিতে দেখা যায় বাসের সব যাত্রী সাকিবের ভঙ্গিতে স্যালুট। এই ছবিটি ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর ইংল্যান্ড সম্পাদক অ্যান্ড্রু মিলার টুইটারে পোস্ট করে বলেন, এটা অসাধারণ। বাংলাদেশি ভক্তরা বাসের থেকে সাকিবের স্যালুট অনুকরণ করছে।
এছাড়া বাংলাদেশে পুরো ফেসবুকে সাকিবের স্যালুটের ছবিতে ছেয়ে গেছে। অনেকেই নিজের প্রোফাইল ছবি হিসেবে সাকিবের ছবিটি ব্যবহার করছে। এছাড়া অনেকেই সাকিবের ভঙ্গি অনুকরণ করে সেলফি/গ্রুপ ছবি প্রকাশ করছেন। বলা যায় পুরো স্যালুটময় বাংলাদেশের ফেসবুক ওয়াল।

রিকশায় চলে ফাতেমার জীবন

‘১১ বছর আগে এক দিন সাহস করে প্রতিবেশী একজনের রিকশার চালকের আসনে উইঠা পড়ি। কিছুদূর চালানোর পর মনে হইলো, অভাবের সংসার চালানোর চাইতে এ কাজটা আমার কাছে সহজ। গাড়ি একটা বাসার কাছে ফেলায় রাখছে। সাহস করে উইঠা চালাইছি। শিখা হইয়া গেছে। এরপর ফয়স লেক এলাকা থেকে রিকশা নিয়ে ভাড়া মারা শুরু করছি। এখন রিকশা চালাইয়া কোনোমতে দিন চইলা যাইতাছে।’
কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রাম শহরের একমাত্র নারী রিকশাচালক ফাতেমা। তাকে সবাই সম্মানের সঙ্গে ডাকেন ফাতেমা খালা। সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দিতে রিকশার হাতল ধরে দিনভর ছুটে চলেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।
কুমিল্লায় স্বামী-সংসার নিয়ে একসময় ভালোই চলছিলেন ফাতেমা। কিন্তু ১৬ বছর আগে স্বামী আরেকটি বিয়ে করে সংসার ছেড়ে যাওয়ায় ওলটপালট হয়ে যায় সবকিছু। ফাতেমার সর্বশেষ ছেলেটি তখন অনেক ছোট্ট। এর কয়েক বছর পর তিন ছেলেসন্তান নিয়ে ফাতেমা চলে আসেন চট্টগ্রাম শহরে। এত কিছু থাকতে রিকশা চালানো পেশা কেন? সঙ্গে সঙ্গেই উত্তরটা দিলেন ফাতেমা, ‘বাসায় কাম লইছি, দুই হাজারও দেয় না বাবা, ১৫শ দেয়, পোষায় না। নানা খরচা আছে, ঘর ভাড়া আছে, খানার খরচ আছে, পোশাক আছে। গার্মেন্টসে চাকরি করতাছি, তখন তিন হাজার টাকা দিছিল। এই আয়েও পোষায় না দেইখ্যা এই রিকশা ধরলাম। ব্যাটারি রিকশা আছিল না তখন, পায়ে চালাইতাম। বেশি কষ্টের কাম অপুত।’কণ্ঠটা ধরে আসে ফাতেমার। খানিক পর আবার বলা শুরু করেন, এই রকম আছিলাম না তো, তারা (পাশের টং দোকানদাররা) কইতে পারবো। আমার মনে তখন আছিল- যাক কষ্ট হইলেও সন্তানগো খাওন দিতে হইবো, মানুষ করণ লাগবো। সেই জন্য আমি রিকশা চালানো বাইছা নিছি।’
স্মৃতি হাঁতরে ফাতেমা বলেন, ‘রিকশা চালাই অনেক বছর হইয়া গেছে গা। প্রায় ১১ বৎসর। ভাঙা রিকশা চালাইছি। তারাও (পাশের টং দোকানদাররা) জানে। ভাড়ায় চালাইতাম। এরপর ব্যাটারি রিকশা আমিই বাইর করলাম চট্টগ্রাম শহরে, চার-পাঁচ বছর আগে।’১১ বছর ধরে রিকশা চালানোর তথ্য শুনে অনেকেই চমবে উঠবে নিশ্চিত। কেউ কেউ হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইবে না। কিন্তু ফাতেমার এসব কথায় সত্যতা নিশ্চিত করে সাক্ষী দিয়ে দিলেন যে পাশের দুই টং দোকানদার!, ‘হ...হ... চালাইছে, চালাইছে... অনেক বছর ধরে দ্যাখতাছি।’চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার ওয়্যারলেস এলাকার বস্তির ছোট্ট একটি কক্ষে ফাতেমার বসবাস। ভাড়া দিতে হয় মাসে তিন হাজার টাকা। ওই বাসায় একা থাকেন ফাতেমা। তিন ছেলে থাকেন মামার বাড়ি কুমিল্লায়। সন্তান উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করানোর ইচ্ছা রয়েছে ফাতেমার। তিনি বলেন, ‘আমার তিনটা ছেলে লেখাপড়া করে। আল্লাহ বাঁচাইলে বড়টা সামনে মেট্রিক (এসএসসি) দিবো। একটা এইটে, আর একটা নাইনে। ওরা কুমিল্লায় মামার বাড়িতে পড়ে। আমি খরচা পাঠাই দি। আজকেও এক হাজার টাকা পাডান লাগবো।’চট্টগ্রাম শহরের প্রায় সব জায়গায় তিনি রিকশা চালান। রিকশা চালাতে দেখে কে কি বলে- প্রশ্নে ফাতেমার উত্তর, ‘কলেজের পুলারা সালাম দেয়। বলে খালাম্মা আসসালামু আলাইকুম। খালাম্মা ট্যাংকিউ। চালায় যান। আবার কয়েকডা আছে, রাস্তায় চলার সময় কইবো, এই মেয়ায় কি ভাড়া মারবো! এতে কোনো সমস্যা নেই। হুজুররাও উৎসাহ দেয়। পুলিশরাও ধরে না আমারে। সাইড দিয়া দেয়।’মাথায় ক্যাপ দিয়ে রিকশা চালান ফাতেমা খালা। এনিয়ে তার ব্যাখ্যা, ‘রোদ লাগে যে। মাথায় ধুল-বালু কম পরে। রোদ কম পরে। চট্টগ্রাম নগরীর পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায় গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় এ আলাপ চলাকালে হাজির হন রেলওয়ের এক নিরাপত্তাকর্মী। ফাতেমাকে উদ্দেশে করে তিনি জানতে চান, জামাই কোথায়? উত্তরে নিজের রিকশাটি দেখিয়ে বললেন, জামায় এডা। এই যে স্বামী। এইডা আমার স্বামী। এইডা আমার ভাত দেয়।’
‘ফাতেমা খালার জন্য একটি রিকশা’ শিরোনামে ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খুলেছিলেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সৃজিতা মিতু এবং সাংবাদিক মারজিয়া প্রভা। ইভেন্টের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের অনেকেই টাকা পাঠান ফাতেমা খালার জন্য। চলতি বছরের গত ১৭ জুন নগরীর চেরাগী মোড়ে ফাতেমার হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন রিকশা।এখন যেটি চালাচ্ছেন সেটি উপহার দেওয়া রিকশাটি কিনা, জানতে চাইলে একটু চুপ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন ফাতেমা, ‘মাইয়াগুলার গাড়িটা রাখতে পারলাম না, নিয়া গেছে। হিসাব রাখলাম, আজকে ২ মাস ১৩ দিন হইছে। অলংকার মোড়ে যাওয়ার কথা বলে ফিরিঙ্গিবাজার হতে তিনজন উঠল রিকশায়। একটার বয়স ৩০, আরেকটার ২৫, অন্যটার ১৮ হইবো। রাত নয়টা বাজে। আমবাগান পার হইয়া সেগুনবাগানের কাছে নীরব জায়গাটা আছে না, সেখানে যাওয়ার পর রিকশা থেকে তারা নেমে বলে, গাড়ি থেকে নাম। আমি যখন নামছিলাম না, তখন চুরি (ছুরি) বের করে বললো, ঢুকাই দিমু কইলাম... এরপর চাবি লই ফেলাইলো। আমি নামার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি টান দিয়া চইলা গেল।’এরপর অভিযোগ দিতে নিকটস্থ খুলশী থানায়ও যাননি ফাতেমা। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘থানায় গিয়া আর কী করুম। রিকশা না, তারা আমার কপালটাই নিয়া গেল। এক মাস ধরে টেনশনে আমার গাটা শুকায় গেছে। বেশি কষ্ট পাইতেছি বাবা। মাইয়াডা যে গাড়ি দিছে তারে কইছি না। যাক গাড়িডা বড় না, আমার জীবনডা বড়। মাইরা ফেলাইলে কী কইরতাম?’অনলাইনে গ্রুপ খুলে নতুন রিকশা কিনে দেওয়া দুই নারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ঝরে পড়ল ফাতেমার কণ্ঠে, ‘মাইয়াগুলা আমার লাইগা অনেক কাটছে (খেটেছে)। কত মাইনষের কাছে যে গেছে। কত টিয়া উটাইছে... তয় গাড়ি কিনা দিছে। আল্লাহ মাইয়াগুলারে বাছাই রাহক। এখন রাতে আর গাড়ি চালাই না। সন্ধ্যা ৬টার আগেই বাসায় চলে যাই। জীবনডার দাম আছে।’
ফাতেমা বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যাটারি রিকশা চালাই। প্রতিদিন মালিককে ৩০০ টাকা দিয়ে হাতে থাকে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। এতেই কোনোমতে চইলা যাইতাছে সংসার।’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়


চট্টগ্রামে বাগে পেয়েও একটুর জন্য ইংল্যান্ডকে হারানো যায়নি। ছিল ২২ রানে হারের আক্ষেপ। কিন্তু ঢাকায় সুযোগটা মিস করল না বাংলাদেশ। তিন দিনেই শক্তিশালী বৃটিশদের ১০৮ রানে হারিয়ে ঐতিহাসিক এক টেস্ট জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। ১০ টেস্টে এই প্রথম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেল টাইগাররা। এই মাপের শক্তিশালী দলের বিপক্ষে টেস্টে আগে জেতেওনি বাংলাদেশ। ৯৫ টেস্টে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অষ্টম জয়। মেহেদী হাসান মিরাজ ইনিংসে ৬ উইকেট ও সাকিব আল হাসান ৪ উইকেট নিয়ে ইংলিশদের দ্বিতীয় ইনিংস ১৬৪ রানে গুঁড়িয়ে দিলেন। সেই সাথে ২ ম্যাচের সিরিজটা ১-১ ড্র করল স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯৬ রান তুলে রবিবারই ইংল্যান্ডের সামনে ২৭৩ রানের টার্গেট দিয়েছিল বাংলাদেশ। পারেনি ইংলিশরা।
এই ম্যাচ কোনো স্বাভাবিক ম্যাচ না। ক্রিকেট বোদ্ধা-বিশ্লেষকদের ভুল প্রমাণ করার টেস্ট। এখানে তিনদিনে পড়ে ৪০ উইকেট। বাংলাদেশের স্পিনাররা নেন ইংল্যান্ডের সবগুলো উইকেট। এই তৃতীয় দিনে ১৭ উইকেটের পতন দেখেছে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৯৬ রান বাংলাদেশের। ইংল্যান্ডের ভয় ধরানো ব্যাটিংয়ের পর মেহেদী ও সাকিবের অমর কীর্তি। মেহেদী ৬ উইকেট নিলেন। ম্যাচে তার ১২ উইকেট হলো। সাকিব চার বলে ৩ উইকেট নেন। ইনিংসে ৪ ও ম্যাচে ৫ উইকেট তার। ইংলিশদের কফিনে শেষ পেরেকগুলো তিনিই ঠুকেছেন। কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০০ রান তোলা ইংল্যান্ড ১৬৪ রানেই অল আউট! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা দশম টেস্টে এসে প্রথম জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। নিজেদের ৯৫ টেস্টের ইতিহাসে এটি মাত্র অষ্টম জয়। মেহেদী ৭৭ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন এই ইনিংসে। ৮২ রানে ছিল ৬ উইকেট প্রথম ইনিংসে। ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা তিনি। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সিরিজেরই সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন মোট ১৯ উইকেট নিয়ে।
এ এক আশ্চর্য টেস্ট! এই মিরপুরেই বাংলাদেশের ২০৯ রান তাড়া করে ২০১০ সালে ৯ উইকেটে জিতেছিল ইংল্যান্ড। এশিয়ায় ওটাই চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ইংলিশদের। তাদের সামনে তাই রেকর্ড জয় করে জেতার চ্যালেঞ্জই দিয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু শঙ্কা তো ছিলই। ইংলিশরা যে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০০ রানে চলে গেল চা বিরতিতে!
কিন্তু চরম নাটকীয়তা ও রোমাঞ্চের অপেক্ষায় ছিল এই ম্যাচ। বাংলাদেশের টেস্ট মানেই হালে এই অবস্থা। চা বিরতির পর টিনএজার অফ স্পিনার মেহেদী প্রথম বলেই আঘাত হানেন। বেন ডাকেট (৫৬) বিদায় নেন। এরপর আঘাত হানতেই থাকেন তিনি। অভিজ্ঞ সাকিবের ঘুর্ণীতে পরে খড়কুটোর মতো উড়ে যান ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ২২.৩ ওভারে ১০ উইকেট নিয়ে দেশের শেষ বিকেলটাই উৎসবে রাঙিয়ে দেয় বাংলাদেশ।

Saturday, October 29, 2016

কৌতুকঃবিয়ারে মহিলা হরমোন!

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিউট অফ টেকনলজির বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষার পর প্রমাণ করতে পেরেছেন যে বিয়ারের মধ্যে অল্প পরিমাণে মহিলাদের হরমোন থাকে। তাঁরা বলেছেন যে হপের মধ্যে থাকা ফাইটোএস্ট্রোজেন এর জন্য দায়ী। প্রসঙ্গতঃ বার্লির হপ থেকেই সাধারণতঃ বিয়ার তৈরী হয়। বিজ্ঞানীরা আরো বলেছেন যে, বেশী পরিমাণে বিয়ার খেলে মেয়েদের হরমোন বেড়ে গিয়ে পুরুষরা মহিলাতে রূপান্তরিত হয়ে যেতে পারেন।


এই পরীক্ষার জন্য তাঁরা দুশ (২০০) জন পুরুষকে বেছে নিয়েছিলেন। এর মধ্যে একশ (১০০) জন পুরুষকে দুঘণ্টায় আট (৮) বোতল বিয়ার এবং বাকী একশ জনকে একই সময়ে সমপরিমাণ কোকাকোলা খেতে দেওয়া হয়।

খাওয়া শেষ হওয়ার পর দেখা যায় যে কোক খাওয়া একশ জনের কোন পরিবর্তন হয় নি। কিন্তু যাদেরকে বিয়ার খেতে দেওয়া হয়েছিল, তাদের ব্যবহারে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিয়ার খাওয়া একশ জনের মধ্যেই দেখা যায় যে -
  • কোন কারণ ছাড়াই নিজেদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু করে দিয়েছে
  • ভুল করেও নিজের ভুল স্বীকার করতে রাজী হচ্ছে না এবং ভুল কাজের জন্য ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করছে
  • ওজন বেড়ে যাচ্ছে
  • কোন বিষয় ছাড়াই আজেবাজে বকবক করে যাচ্ছে
  • সঠিকভাবে গাড়ি চালাতে পারছে না
  • যুক্তিপূর্ণ চিন্তা করতে পারছে না এবং
  • কোন কারন ছাড়াই ইমোশনাল হয়ে পড়ছে
বিজ্ঞানীদের মতে তাঁরা এর পর আর কোন পরীক্ষা করার দরকার আছে বলে মনে করেন নি এই ভেবে যে,
বিয়ার খেয়ে পুরুষরা মহিলাদের মতই আচরন করতে পারে!

আসছে ওয়ান প্লাস এর নতুন ফোন


টেকনোলজিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে  নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে চীনা মোবাইল সংস্থা OnePlus৷ গ্রাহকদের উন্নততর স্মার্টফোন উপহার দিতে ইতিমধ্যেই নানা ধরনের গবেষণা শুরু করেছে এই সংস্থা৷ জানা যাচ্ছে, তাদের আগামী পরিবেশনা OnePlus 3T মোবাইল ফোনটিতে থাকবে স্ন্যাপড্রাগন ৮২১ চিপ৷
এর পাশাপাশি, নয়া এই ফোনটিতে থাকছে অত্যাধুনিক সব ফিচারস৷ জানা গিয়েছে, 821 স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরের পাশাপাশি ফোনটিতে থাকবে 6 GB ব়্যাম, এলসিডি প্যানেল এবং অপটিক অ্যামলেড টেকনোলজি৷
OnePlus 3T ফোনটির আত্মপ্রকাশের আগে থেকেই তার ফিচারস সম্পর্কে গ্রাহকদের উত্তেজনা বাড়ছে৷ এখন এই ফোন সরকারিভাবে লঞ্চ হওয়ার পর কী ধামাকা হয়, তাই এখন দেখার অপেক্ষা৷

দ্রুত বিয়ে করার সিদ্ধান্ত বুদ্ধিমানের কাজ

বিয়ের সঠিক বয়স কোনটি তা নিয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। অনেকেই বলবেন বিয়ে এবং সম্পর্ক আসলে কি তা বুঝে তবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা উচিত। আর এই সাথে অর্থনৈতিক অনেক কিছুই জড়িত থাকে বলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই বিয়ের কথা ভাবেন না। কিন্তু সত্যি বলতে কি, দ্রুত বিয়ে করে ফেলার সিদ্ধান্ত কিন্তু বেশ ভালো বুদ্ধিমানের মতো কাজ। বয়স একটু কম থাকলেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা উচিত, এতে জীবনটা অনেক বেশিই সহজ মনে হবে আপনার কাছে। অনেক ধরণের সমস্যা থেকে অনায়েসেই মুক্ত থাকতে পারবেন। কীভাবে জানতে চান? চলুন জেনে নেয়া যাক।
১) আপনি যদি বয়স ৩০ পার করে বিয়ে করেন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার বয়সের কারণে আপনার মধ্যে যে গাম্ভীর্য চলে আসবে তার জন্য সম্পর্ক খুব বেশি মধুর ও ঘনিষ্ঠ হবে না। ব্যাপারটি বরং এমন হবে বিয়ে করার কথা তাই বিয়ে করেছি। এ কারণে আগেই বিয়ে করে ফেলা ভালো, যখন আবেগ কাজ করে অনেক।
২) বেশি বয়সে বিয়ে করলে কতোটাই বা সময় পান নিজেদের জন্য স্বামী-স্ত্রী? বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সন্তান নেয়ার ঝামেলা ঘাড়ের উপর এসে পড়ে। আর একবার সন্তান হয়ে গেলে দুজনের একান্ত সময় কাটানো আর হয়ে উঠে না। কিন্তু অল্প বয়সেই বিয়ে করে ফেললে সঙ্গীর সাথে অনেকটা সময় পাওয়া যায়। এতে সম্পর্ক অনেক ভালো ও মধুর থাকে।
৩) একজনের চাইতে দুজন ভালো বিষয়টি নিশ্চয়ই না বোঝার কথা নয়। একাই সুখ দুঃখ ভোগ করার চাইতে দুজনে ভাগাভাগি করে নিলে অনেকটা সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। অল্প বয়সেই বিয়ে করলে দুজনের জীবনের সবকিছুই ভাগ করে নেয়া যায় বলে মানসিক চাপটাও কম পড়ে।
৪) সন্তানের জন্য খুব ভালো মাতা-পিতার উদাহরণ হতে পারবেন যদি বিয়ে আগে করে ফেলেন। সত্যি বিষয়টি কেউ মানুন আর নাই মানুন না কেন মানুষের গড় আয়ু কিন্তু কমে এসেছে। আপনি দেরিতে বিয়ে করলে সন্তান মানুষ করার বিষয়টিও পিছিয়ে যাবে এবং আপনার মনমানিসকতাও কিন্তু দিনকে দিন নষ্ট হতে থাকবে।
৫) দুর্ঘটনাবশত বিয়ের সিদ্ধান্ত অনেকের জন্য ভুল হতেই পারে। আজকাল আবার ডিভোর্সের সংখ্যাও বেশি হতে দেখা যাচ্ছে। আগে বিয়ে করার কিন্তু এই দিক থেকেও সুবিধা রয়েছে। যদি অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে অল্পতেই ভেঙে যায় তাহলে জীবনটাকে নতুন করে গুছিয়ে নেয়ার দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া যায় যা দেরিতে বিয়ে করলে পাওয়া সম্ভব হয় না।
৬) এগুলো তো গেল সিরিয়াস বিষয়, এখন শুনুন আগে ভাগে বিয়ে করে ফেলার একটু অন্যরকম সুবিধাগুলো। আগে বিয়ে করে ফেললে আপনার কাছে এসে কেউ ‘কেন বিয়ে করছ না’, ‘কবে বিয়ে করবে’, ‘বয়স বেড়ে যাচ্ছে’, ‘কাউকে পছন্দ আছে কি’ ইত্যাদি ধরণের বিরক্তিকর কথা শোনার হাত থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।

টোকিওতে সার্ফার নাসিমা

দেশের প্রথম নারী সার্ফার নাসিমার সার্ফিং জীবন এবং কক্সবাজারের সার্ফিং নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র নাসিমা নির্বাচিত হয়েছে জাপানে অনুষ্ঠিতব্য মর্যাদাপূর্ণ প্রামাণ্যচিত্র উৎসব ‘টোকিও ডকস’-এ প্রদর্শনের জন্য।
২০১৫ সালের ‘টোকিও ডকস’-এর পঞ্চম আসরে চারটি গল্প অর্থ পুরস্কার পাওয়ার গৌরব অর্জন করে। আরিফ-বিজন জুটির নাসিমা তার একটি। এরপর টানা এক বছর পর কাজ শেষে সম্পন্ন হয় ছবির কাজ। ৬ নভেম্বর জাপানের টোকিও শহরে শুরু হতে যাওয়া ‘টোকিও ডকস’-এর ষষ্ঠ আসরে প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হবে নাসিমা ছবিটি।
টোকিও ডকসের আমন্ত্রণে এবারের উৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে টোকিও যাচ্ছেন আরিফুর রহমান। সেখানে ছবির প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নবীন নির্মাতাদের সামনে নাসিমা নির্মাণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করবেন আরিফ। ছবিটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন গুপী-বাঘা প্রোডাকশন্স লিমিটেডের কর্ণধার আরিফুর রহমান ও বিজন ইমতিয়াজ। এই জুটির প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘মাটির প্রজার দেশে’ চলতি বছরের শিকাগো সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভালে সেরা ছবি নির্বাচিত হয়েছে।
বাংলাদেশে খেলা হিসেবে সার্ফিং একেবারেই নতুন। মূলত বিদেশি পর্যটকদের সার্ফিং দেখে দেখে কক্সবাজারের ঢেউয়ে প্রথমবারের মতো সার্ফিং শুরু করেন জাফর আলম। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এই খেলায় যুক্ত হন নাসিমা। এরপর টানা চারবার ছেলে-মেয়ে উভয়ের মধ্যেই জাতীয় সার্ফিং চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। তবে নাসিমার সার্ফার হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে জীবনজয়ী এক যুদ্ধের গল্প। নাসিমার সেই জীবন-যুদ্ধের ওপর ভিত্তি করেই এগিয়ে যায় ছবির গল্প।
টোকিও ডকসে দেখানো হবে ছবিটির ৩০ মিনিটের একটি সংস্করণ। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য ফেস্টিভালের জন্য ছবির একটি ফিচার ভার্সন তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের সিনেমা হলেও ছবিটি মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নির্মাতাদ্বয়।
"

শিকল পায়ে রাস্তায় দাঁড়ানো মেয়ে, এ কিসের শাস্তি!

রাস্তার পাশে ল্যাম্প পোস্টের পাশে দাঁড়িয়ে বছর আটের মেয়েটি৷ নড়তে চড়তে পারছে না৷ কেননা পা শিকলে বাঁধা পোস্টের সঙ্গে৷ পথচারীরা দেখে চমকে উঠেছেন৷ শিকল খোলার চেষ্টা করেছেন৷ কিন্তু তালা দিয়ে বন্ধ শিকল খোলা সম্ভব হয়নি৷ এমনকী নিরূপায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে পুলিশকেও৷
ঘটনা মালয়েশিয়ার৷ বাচ্চাটিকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখে অবাক হয়ে যান অনেকে৷ জানা যায়, স্কুলে যেতে না চাওয়ার কারণেই তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ স্কুলের পোশাকেই দাঁড়িয়েছিল সে৷ সারা পৃথিবীতেই বাচ্চারা স্কুলে না যাওয়ার ক্ষেত্রে নানা বাহানা করে৷ তার জন্য শাস্তিও দেন মা-বাবা৷ কিন্তু এমন অভিনব শাস্তি কেউ দেখেননি৷ শিকল মেয়েটির পায়ের সঙ্গে আটকে থাকায় পুলিশকেও অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে৷ পরে পুলিশই উদ্যোগ নেয় মেয়েটিকে মুক্ত করার৷ মাকে ডেকে আনা হয়৷ তারপরই পা থেকে শিকল খোলা হয় মেয়েটির৷
জানা যাচ্ছে, এর আগেও মেয়েটিকে এরকম শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ ঘটনায় ক্ষুব্ধ পুলিশ৷ সতর্ক করা হয়েছে মেয়েটির মাকে৷

ওষুধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে রাখুন উচ্চ রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ আমাদের অনেকেরই সমস্যা। উচ্চ রক্তচাপ থেকে শরীরে আনুষঙ্গিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। বেড়ে যায় হৃদরোগের সম্ভাবনা। কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকিও। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের অনেককে ওষুধও খেতে হয়। তবে প্রতিদিন যদি নিয়ম করে আমরা কিছু খাবার খাই, তাহলে কোনো ওষুধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে থাকবে রক্তচাপ।
রসুন: রোজকার খাবারে রসুন রাখুন। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে রসুন ওষুধের মতো কাজ করে। ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকে রক্তচাপ।
পেঁয়াজ ও মধু: এক কাপ পেঁয়াজ রসের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে রোজ খান। রক্তচাপ কমে আসবে।
গাজর ও পালং শাক: দিনে দুবার করে এক গ্লাস গাজর ও পালং শাকের রস খান।
বিট: বিটের রস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খুব উপকারী। দিনে দুবার করে বিটের রস খেলে উপকার পাবেন।

চলন্ত বাসে যৌন লালসার শিকার কিশোরী, বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল তরুণ (ভিডিও)

চলন্ত বাসের মধ্যে দিল্লিতে নির্ভয়ার গণধর্ষণের স্মৃতি এখনও ফিকে হয়ে যায়নি। সেদিন অপরাধীদের হাত থেকে নির্ভয়াকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু দিল্লি হোক অথবা নিউ ইয়র্ক, ছবিটা যে খুব একটা আলাদা নয়, প্রমাণ করে দিল একটি ঘটনা। এক্ষেত্রে ১৫ বছরের কিশোরীকে এক বিকৃতমনস্কের যৌন লালসার হাত থেকে রক্ষা করলেন সহযাত্রী এক তরুণ। 
নিউ ইয়র্কে একটি বাসে করে যাচ্ছিলেন আফ্রো-আমেরিকান যুবক মোইজে মোরান্সি। তিনি একজন পেশাদার হিপ-হপ শিল্পী, লেখক এবং সমাজকর্মী। হঠাৎই তিনি লক্ষ করেন, বাসের মধ্যে বছর ১৫-র এক কিশোরীর শরীরে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি হাত দিচ্ছে। মেয়েটি বিরক্তও হচ্ছিল। বিষয়টি নজরে পড়তেই প্রতিবাদ করেন মোইজে। নিগ্রহকারীর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রথমে এই প্রতিবাদী তরুণকে একটি ঘুষিও মারে। কিন্তু তাতেও দমেননি এই তরুণ। রীতিমতো কলার ধরে ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চেপে ধরে সতর্ক করেন মোইজে। ভবিষ্যতে যেন সে এই ধরনের কাজ না করে, বার বার অভিযুক্তকে সেই কথা বলতে থাকেন ক্ষুব্ধ মোইজে।
এর মধ্যে পুলিশ চলে আসে। অভিযুক্ত ব্যক্তি তখন দাবি করে, মোইজে তাকে খুন করতে চেয়েছিল। পুলিশ প্রথমে দু’জনকেই আটক করে। পরে মেয়েটির জবানবন্দি নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়, তাকে বাঁচাতে গিয়েই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আক্রমণ করেছিলেন মোইজে। এর পরেই পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এমনকী, তার সাহসিকতা এবং প্রতিবাদের জন্য মোইজের প্রশংসাও করেন পুলিশকর্মীরা। মোইজের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন তারা।
গোটা ঘটনাটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন এই প্রতিবাদী তরুণ। কিন্তু যার জন্য তিনি প্রতিবাদ করলেন, সেই মেয়েটি কী করল? সেই কিশোরী মোইজেকে একটি গোলাপ উপহার দিয়েছে। 

প্রত্যাহার করা হলো সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ডাকা ধর্মঘট

৩ দফা দাবিতে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে ৩০ অক্টোবর থেকে ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটতে (বিআরটিএ) সড়ক, পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সিএনজি ফিলিং স্টেশনস অ্যান্ড কনভারসন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ খান।
এর আগে বুধবার সিএনজি ফিলিং স্টেশনস অ্যান্ড কনভারসন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজধানীর কাকরাইলের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিন দফা দাবিতে ৩০ অক্টোবর থেকে লাগাতার ধর্মঘটের হুমকি দেন সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকরা। 
সিএনজি অ্যাসোসিয়েশনের তিন দাবি হলো- সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ইজারা মাশুল অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব প্রত্যাহার এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন।

অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে বিমান

গত ২০ বছরের মধ্যে বিমান লাভের মুখ দেখেছে মাত্র সাত বছর। ১৫টি উড়োজাহাজের মধ্যে এখন সচল রয়েছে ১৩টি উড়োজাহাজ। বাকি দুটির অবস্থা খুবই নাজুক। অবশিষ্ট ১১টি উড়োজাহাজ দিয়ে বিদ্যমান ১৫টি আন্তর্জাতিক ও সাতটি অভ্যন্তরীণ রুট পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। প্রতিনিয়তই কাটছাঁট করতে হচ্ছে ফ্লাইট সিডিউল। আবার নির্দিষ্ট ফ্লাইটও ছাড়তে পারছে না সময়মতো। ফলে দিন দিন যাত্রী ভোগান্তি বাড়ছে। কমছে যাত্রীর সংখ্যাও। আর এভাবেই বছরের পর বছরের লোকসানেই থাকতে হচ্ছে বিমানকে।
বিমান সংশ্লিষ্টরা অবশ্য উড়োজাহাজের স্বল্পতা বা বিকল হয়ে থাকার পাশাপাশি বিমানের লোকসানের জন্য এ সেক্টরে কর্মরত অদক্ষ লোকবল ও অব্যবস্থাপনাকেও দায়ী করেছেন। তাদের মতে, বিভিন্ন সময় বিমানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছচারিতা ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি বিমানের লোকসানের বড় একটি কারণ। এ ব্যাপারে বিমান বিশেষজ্ঞ আবদুস সাত্তার বলেন, বিমানে উন্নতি না হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, এ সেক্টরে যারা যে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা সেই বিষয়ে কিছুই বোঝে না। শিক্ষার অভাব এবং সবকিছুতে দুর্নীতির প্রবণতা বিমানকে এতকাল ডুবিয়ে রাখা হয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নন বিমানের চেয়ারম্যান এনামুল বারী। তিনি বলেন, বিমানের উন্নতি হচ্ছে না কথাটা শতভাগ ঠিক নয়। আগে কি হয়েছে, না হয়েছে জানি না; তবে আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সবকিছুতে স্বচ্ছতা আনার জোর চেষ্টা করছি। এখন আগের থেকে অনেক উন্নতি করেছে বিমান। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বিমান বাংলাদেশ এয়াললাইনস এ খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বিমানের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ‘আকাশে শান্তির নীড়’ নামে ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের সময় যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ বিমান। কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক হবে এবং দেশের সম্মান রক্ষা করবে। কিন্তু প্রায় ৪৪ বছর আগে শুরু করা বিমান তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। ডুবে ছিল লোকসান, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায়। শেষ পর্যন্ত লাভে আনতে ২০০৭ সালে কোম্পানিতে রূপ দেওয়া হয়। উন্নতি করতে নেওয়া হয় ব্যাপক পরিকল্পনা। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। বরং একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে আন্তর্জাতিক রুট। ছোট হয়ে এসেছে বিমানের আকাশ।
সূত্রমতে, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনস এর বহরে ১৫ টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি চলছে কোনমতে খুড়িয়ে, আর তিনটি অকেজো পড়ে রয়েছে। উড়োজাহাজ স্বল্পতার কারণে সর্বশেষ প্রায় ৮ হাজার হজ্জ যাত্রী পরিবহন করতে না পেরে হাতছাড়া হয়েছে বিমানের নিশ্চিত আয়। এর শতবাগ সুবিধা নিয়েছে বিদেশি উড়োজাহাজ কোম্পানিগুলো।
বিমানের আয়-ব্যয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, গত ২০ বছরে বিমান লাভের মুখ দেখেছে মাত্র সাত বছর। এর মধ্যে ২০০৩-০৪ সালে তিন কোটি ৫০ লাখ, ২০০৭-০৮ সালে পাঁচ কোটি ৯১ লাখ এবং ২০০৮-০৯ সালে ১৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং সর্বশেষ গত বছর বিমান লাভ করে ২৭১ কোটি টাকা। অবশ্য বিমান চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়েছিলেন চলতি বছর ৫০০ কোটি টাকা লাভ হবে। তবে সূত্র জানায়, সিডিউল বিপর্যয় ও যাত্রী কমে যাওয়ায় লাভ কিছুটা কম হলেও এ বছরও বিমান লাভে থাকবে।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের লোকসানের আরেকটি কারণ ‘বিমান লিজ নেওয়া’। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই বিমান কর্তৃপক্ষের। সূত্রমতে, এ বছরের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেঘদূত ও মূয়ুরপঙ্খী নামে বিশ্বসেরা বোয়িং কোম্পানি থেকে কেনা বোয়িং ৭৩৭ ও বোয়িং ৮০০ উড়োজাহাজ দুটি উদ্বোধন করেন। এর পাশাপাশি আরো একটি বিমান লিজ নেয় বিমান কর্তৃপক্ষ। কথা ছিল এসব বিমান নিয়ে আরো ছয়টি নতুন আন্তর্জাতিক রুটে যাবে বাংলাদেশ বিমান। কিন্তু সে কথা পুরোপুরি রাখতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত বিমানে আন্তর্জাতিক রুট মাত্র ১৫টি। এর মধ্যে ইয়াঙ্গুন ও কলম্বো দুটি আন্তর্জাতিক রুট এ বছর চালু করে বিমান। আর ২০১৭ সালের পরিকল্পনায় রয়েছে আরও চারটি আন্তর্জাতিক রুট। এগুলো হলো নিউইয়র্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নারিতা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী দুই বছরের মধ্যে বিমানের লক্ষ্য ২৫টি আন্তর্জাতিক রুটে যাওয়া। বোয়িং কোম্পানির ছয়টি নতুন কেনা উড়োজাহাজ এখন বিমানের বহরে আছে। আরও চারটি নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত হবে বিমানবহরে। বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিসে বিদেশি পার্টনার সংযোগের কথা রয়েছে। সেটি হলে লাগেজ হ্যান্ডেলিংয়ে যাত্রী দুর্ভোগ থাকবে না। আর এয়ারক্রাফট হ্যান্ডেলিংয়েও বিমান হবে আন্তর্জাতিকমানের।
কিন্তু বাস্তবচিত্র ভিন্ন। সূত্র জানায়, বহরে মোট ১৫টি উড়োজাহাজের মধ্যে এখন সচল আছে মাত্র ১৩টি। ভাড়ায় আনা দুটি বোয়িং মাসের ১৫ দিন অচল থাকছে। বাকি ১১টি উড়োজাহাজ দিয়ে ১৫টি আন্তর্জাতিক ও ৭টি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে বিমান। এ অবস্থায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ফ্লাইট কাটছাঁট করতে হচ্ছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় গত মাসে বিমান বহর থেকে বাদ দেয়া হয়েছে দুটি উড়োজাহাজ। এই দুটি উড়োজাহাজের আসন ছিল ২২০টি করে। এছাড়া চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মঙ্গোলিয়া থেকে আনা একটি বোয়িং ৭৬৭ উড়োজাহাজও চলতি মাসে বহর থেকে বাদ পড়েছে। এর বাইরে মিসর থেকে লিজে আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ মাসের অধিকাংশ সময় বিকল থাকছে। অনেকের মতে, এই উড়োজাহাজ দুটি এখন বিমানের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য মাত্র দুটি উড়োজাহাজ থাকায় প্রতিদিন সাতটি স্টেশনের ফ্লাইট সিডিউল ঠিক থাকছে না। গড়ে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা দেরি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোতে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এই অবস্থায় ফ্লাইট ও যাত্রী কমে যাওয়ায় বিমানের আয়ের অংকেও ব্যাপক ধস নেমেছে। এ অবস্থায় আয় বাড়াতে ও রুটগুলো সচল রাখতে আবারো উড়োজাহাজ লিজ নেয়ায় আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে বিমান। কিন্তু নানা অনিয়ম-দুর্নীতি আর কমিশন বাণিজ্যের কারণে উড়োজাহাজ কোম্পানিগুলো বিমানের কাছে জাহাজ ভাড়া দিতে চাচ্ছে না।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আবদুস সাত্তার বলেন, অবৈধ আয়ের সবছেড়ে বড় বাণিজ্য হচ্ছে লিজ বিমান। একটা শ্রেণি বারবার বিমান লিজ নেয়ার জন্য তোড়জোড় করে। কিন্তু কেন লিজ নিতে হবে। লিজের টাকায় যদি নতুন বিমান কেনা যায় তাহলে সমস্যা কোথায়। আসলে ৭ বছর দায়িত্বপালনকালীন বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন সাহেব বিমানটাকে শেষ করে দিয়েছেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি উড়োজাহাজকে গ্রাউন্ডেড করার পর বহরে নতুন দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ শিগগিরই ভাড়া নেয়ার কাজ শুরু করেছে। পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন পেলে আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে বিমান বহরে বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের দুটি উড়োজাহাজ যুক্ত হবে বলে জানান বিমান বাংলাদেশের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ। তিনি বলেন, এটি পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে বর্তমানে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেলের চারটি, বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর মডেলের দুটি, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের চারটি, ড্যাস মডেলের দুটিসহ মোট ১২টি বিমান রয়েছে।
বিমানকে লাভজনক করতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন বিমান সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমান এয়ারলাইনস এর এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বিমান সিডিউল ঠিক রাখতে পারছে না। সরকার ইচ্ছা করলে বিমানকে লাভজনক করতে পারে। সে জন্য দরকার বিদেশি অনুদান। আর বিমানে দুর্নীতির ও অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বর্তমানে বিমান শত শত কোটি টাকা হারাচ্ছে আর প্রাইভেট ও বিদেশি বিমানগুলো একচেটিয়া ব্যবসা করে নিচ্ছে।
অবশ্য বর্তমানে বিমান ব্যবস্থাপনায় কিছুটা হলেও দক্ষ লোকবল রয়েছে মন্তব্য করে বিমান বিশেষজ্ঞ আবদুস সাত্তার বলেন, বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ভালো লোক। তারা বিমানটাকে বুঝতে শিখেছে। আগে কেউই তা করেনি। আমরা দুই লাখ কোটি টাকা দিয়ে বিমান বন্দর তৈরি করার চিন্তা করি, অথচ এই আন্তর্জাতিক শাহজালাল বিমানবন্দর এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। লিজে বিমান এনে বারবার ঠিক করবে আর ইনকাম করবে—এ প্রবণতা কমাতে হবে। এখন ফুয়েলের দাম কম হওয়ায় বিমান লাভের মুখ দেখছে। এ বিমান ভবিষ্যতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে। তবে এর জন্য দরকার যারা বিমানকে বোঝে তাদের দিয়ে চালানো।