অপরাধ জগতের আদ্যপান্ত
প্রকাশ্যেই চলছে মাদক গ্রহণ:
বাড়ছে অপরাধ
‘পইলা গাঁজা খাইছি। পরে বাবা (ইয়াবা)। এহন ইনজেকশন (পেথেড্রিন) নেই। সকাল বিকাল দুইডা। তিন ঘণ্টা করে ছয় ঘণ্টা দেহে হ্যাবি জোশ থাকে।’ এভাবেই কথা বলছিল সোহেল রানা ওরফে নাডা সোহেল। বয়স ৩৫। ঢাকা মহানগর নাট্য মঞ্চের পাশে তাঁবু পেতে থাকে। ওয়াসায় ড্রেন পরিষ্কারের কাজ চুক্তিভিত্তিক করে। বাড়ি ফরিদপুরে। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ের সংসার। বড় ছেলের বয়স পাঁচ বছর। এখনো তাকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সামনে ফুটপাতে বসে কথা হয় তার সঙ্গে।
নাডা সোহেল বলে, ‘গ্রামে অন্যের জমি চাষ করতাম। মৌসুম চলে গেলে বেকার থাকতে হতো। চলে আসি ঢাকায়। তবে গ্রামের জীবনটা এমন ছিল না।’
সে আরো বলে, ‘এমন জীবন কার ভালো লাগে বলেন? ঢাকা এসেও কাজ পাইনি। গুলিস্তানে ঘোরাঘুরি করেছি? দিন কেটেছে পার্কে বসে। কোনো দিন খেয়ে, কোনো দিন না খেয়ে কেটেছে। খাবারের টাকা থাকত না, নেশা করে দিন-রাত ঘুমাতাম। আস্তে আস্তে এ লাইনে অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়।’
‘এখন আর বাড়ি যাই না, আমার এ অবস্থা কেউ মেনে নিতে পারে না;আমিও না। পরিবারের সঙ্গে অনেক দিন পর পর দেখা হয়। এখন আর ফেরার পথ নাই।’
সে বলে, কাজে যাবার আগে একটা ইনজেকশন নিয়ে নিলে কাজ পানির মতো সহজ হয়ে যায়। কাজও দ্রুত শেষ হয়। প্রতি ইনজেকশনের দাম ২০০ টাকা। নিজে নিজেই পুশ করি। যেদিন টাকা থাকে না সেদিন দুজনে অর্ধেক করে পুশ করি। ইনজেকশনেই শান্তি আর শান্তি। এ কাজে কামাল নামের একজন সঙ্গী আছে তার। সে গুলিস্তানে দর্জির কাজ করে। প্রায়ই এক সঙ্গে নেশা করে, বিআরটিসি বাসের পেছনে ফুটপাতে বসে।’
সে আরো বলে,‘পেথেড্রিন ইনজেকশনের পানি সিগারেটের সঙ্গে মিশিয়ে নেশা করলে ব্যাপক অনুভূতি। এক বার টান দিলে বার বার দিতে ইচ্ছে করে।’
নাডা সোহেল বলে, ‘সালাউদ্দিন নামের একজন সহযোগীদের নিয়ে মাদক বিক্রি করে। এসব কাজে পথশিশুরাও থাকে। তাদের কাছেই মদ, ভাং, গাঁজা, আফিম, হেরোইন, ফেনসিডিল, সিসা, ড্যান্ডি, ইয়াবা, পেথিড্রিন পাওয়া যায়।
কথা হয় সালাউদ্দিন নামের ওই মাদক বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইনজেকশন (পেথেড্রিন), বাবা (ইয়াবা) দয়াগঞ্জ থেকে সাপ্লাই হয়। এসব মায়ানমার, ভারত থেকে কক্সবাজার হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয় একটি চক্র। আমি খুচরা বিক্রেতা। এক-দুইটা করে বিক্রি করি। বেশি নিলে পাইকারি দিয়ে থাকি।’
তিনি আরো বলেন,‘পুলিশে ধরলে কিছু টাকা দিলেই ছেড়ে দেয়। সঙ্গে মাল বেশি থাকলে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নিলে ‘বড় ভাই’ ফোন দিলেই ছেড়ে দেয়।’
কারওয়ান বাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, দোয়েল চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাইকোর্ট, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম চত্বর, গুলিস্তান, চানখারপুল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল, ঢাকা মেডিক্যাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ নানা বয়সীদের মাদক গ্রহণ করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ড্যান্ডি নামে নতুন ও সহজলভ্য মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে পথশিশুরা। এটি জুতা তৈরি ও রিকশার টায়ার, টিউব তালি লাগানোর কাজে ব্যবহার করা হয় বলে জানায় ওই শিশুরা।
মতিঝিল এলাকার ড্যান্ডি নেশা সেবনে অভ্যস্ত কয়েক জনের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলে, ‘ড্যান্ডি সহজলভ্য ও দামে কম। পলিথিনে ফুঁ দিয়ে নাক মুখ চেপে রেখে নেশা নেই। পলিথিনের মধ্যে থাকে হলুদ রঙের নেশা জাতীয় পদার্থ।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান বলেন, ‘পেথেড্রিন গ্রুপের বেশ কিছু ইনজেকশন আছে। সরাসরি ভারত থেকে আনা হয়। এসব মাদক এইচআইভি ও হেপাটাইটিস-বি’র ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। খাদ্যনালী ও ফুসফুসের ক্যানসার, কিডনির রোগ, রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ড্যান্ডিতে টলুইন নামের একটি উপাদান আছে। টলুইন মাদকদ্রব্যের তালিকায় আছে। এটি খেলে ক্ষুধা ও ব্যথা লাগে না। দীর্ঘমেয়াদে খেলে মস্তিষ্ক, যকৃত ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের মনোরোগ চিকিৎসক ড. মোহাম্মদ ফাহমিদ-উর-রহমান বলেন, কম বয়সীরা মাদক গ্রহণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাঁজা ও ইয়াবা গ্রহণকারীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিলে ভালো হয়। অধিক নেশাগ্রস্তরা হেরোইন, প্যাথেড্রিন জাতীয় মাদক গ্রহণ করে। অনেকে চেতনানাশক ওষুধ নিয়ে নেশা করে। নেশা নেওয়ার পর নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করে। তাদের বোঝালেও বোঝে না। নানা রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পর্যায়ক্রমে অবস্থা এত খারাপের দিকে যায় যে, চিকিৎসার পরিবেশ ও সুযোগ থাকে না। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেঘোরে মরতে হয়। তিনি আরো বলেন, প্রথমে নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে। এর প্রভাব পড়ে পরিবারের সকল সদস্যের ওপর।
এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ মাদক সরবরাহ এবং ব্যবহারকারীদের ধরতে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলে। এ ছাড়া বিশেষ অভিযানের জন্য প্রস্তুতি চলছে।
নাডা সোহেল বলে, ‘গ্রামে অন্যের জমি চাষ করতাম। মৌসুম চলে গেলে বেকার থাকতে হতো। চলে আসি ঢাকায়। তবে গ্রামের জীবনটা এমন ছিল না।’
সে আরো বলে, ‘এমন জীবন কার ভালো লাগে বলেন? ঢাকা এসেও কাজ পাইনি। গুলিস্তানে ঘোরাঘুরি করেছি? দিন কেটেছে পার্কে বসে। কোনো দিন খেয়ে, কোনো দিন না খেয়ে কেটেছে। খাবারের টাকা থাকত না, নেশা করে দিন-রাত ঘুমাতাম। আস্তে আস্তে এ লাইনে অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয়।’
‘এখন আর বাড়ি যাই না, আমার এ অবস্থা কেউ মেনে নিতে পারে না;আমিও না। পরিবারের সঙ্গে অনেক দিন পর পর দেখা হয়। এখন আর ফেরার পথ নাই।’
সে বলে, কাজে যাবার আগে একটা ইনজেকশন নিয়ে নিলে কাজ পানির মতো সহজ হয়ে যায়। কাজও দ্রুত শেষ হয়। প্রতি ইনজেকশনের দাম ২০০ টাকা। নিজে নিজেই পুশ করি। যেদিন টাকা থাকে না সেদিন দুজনে অর্ধেক করে পুশ করি। ইনজেকশনেই শান্তি আর শান্তি। এ কাজে কামাল নামের একজন সঙ্গী আছে তার। সে গুলিস্তানে দর্জির কাজ করে। প্রায়ই এক সঙ্গে নেশা করে, বিআরটিসি বাসের পেছনে ফুটপাতে বসে।’
সে আরো বলে,‘পেথেড্রিন ইনজেকশনের পানি সিগারেটের সঙ্গে মিশিয়ে নেশা করলে ব্যাপক অনুভূতি। এক বার টান দিলে বার বার দিতে ইচ্ছে করে।’
নাডা সোহেল বলে, ‘সালাউদ্দিন নামের একজন সহযোগীদের নিয়ে মাদক বিক্রি করে। এসব কাজে পথশিশুরাও থাকে। তাদের কাছেই মদ, ভাং, গাঁজা, আফিম, হেরোইন, ফেনসিডিল, সিসা, ড্যান্ডি, ইয়াবা, পেথিড্রিন পাওয়া যায়।
কথা হয় সালাউদ্দিন নামের ওই মাদক বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইনজেকশন (পেথেড্রিন), বাবা (ইয়াবা) দয়াগঞ্জ থেকে সাপ্লাই হয়। এসব মায়ানমার, ভারত থেকে কক্সবাজার হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয় একটি চক্র। আমি খুচরা বিক্রেতা। এক-দুইটা করে বিক্রি করি। বেশি নিলে পাইকারি দিয়ে থাকি।’
তিনি আরো বলেন,‘পুলিশে ধরলে কিছু টাকা দিলেই ছেড়ে দেয়। সঙ্গে মাল বেশি থাকলে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নিলে ‘বড় ভাই’ ফোন দিলেই ছেড়ে দেয়।’
কারওয়ান বাজার, কমলাপুর রেলস্টেশন, দোয়েল চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, হাইকোর্ট, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম চত্বর, গুলিস্তান, চানখারপুল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল, ঢাকা মেডিক্যাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থানে শিশুসহ নানা বয়সীদের মাদক গ্রহণ করতে দেখা যায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ড্যান্ডি নামে নতুন ও সহজলভ্য মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে পথশিশুরা। এটি জুতা তৈরি ও রিকশার টায়ার, টিউব তালি লাগানোর কাজে ব্যবহার করা হয় বলে জানায় ওই শিশুরা।
মতিঝিল এলাকার ড্যান্ডি নেশা সেবনে অভ্যস্ত কয়েক জনের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলে, ‘ড্যান্ডি সহজলভ্য ও দামে কম। পলিথিনে ফুঁ দিয়ে নাক মুখ চেপে রেখে নেশা নেই। পলিথিনের মধ্যে থাকে হলুদ রঙের নেশা জাতীয় পদার্থ।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারজানা রহমান বলেন, ‘পেথেড্রিন গ্রুপের বেশ কিছু ইনজেকশন আছে। সরাসরি ভারত থেকে আনা হয়। এসব মাদক এইচআইভি ও হেপাটাইটিস-বি’র ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। খাদ্যনালী ও ফুসফুসের ক্যানসার, কিডনির রোগ, রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ড্যান্ডিতে টলুইন নামের একটি উপাদান আছে। টলুইন মাদকদ্রব্যের তালিকায় আছে। এটি খেলে ক্ষুধা ও ব্যথা লাগে না। দীর্ঘমেয়াদে খেলে মস্তিষ্ক, যকৃত ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।’
কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের মনোরোগ চিকিৎসক ড. মোহাম্মদ ফাহমিদ-উর-রহমান বলেন, কম বয়সীরা মাদক গ্রহণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাঁজা ও ইয়াবা গ্রহণকারীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিলে ভালো হয়। অধিক নেশাগ্রস্তরা হেরোইন, প্যাথেড্রিন জাতীয় মাদক গ্রহণ করে। অনেকে চেতনানাশক ওষুধ নিয়ে নেশা করে। নেশা নেওয়ার পর নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে করে। তাদের বোঝালেও বোঝে না। নানা রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পর্যায়ক্রমে অবস্থা এত খারাপের দিকে যায় যে, চিকিৎসার পরিবেশ ও সুযোগ থাকে না। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেঘোরে মরতে হয়। তিনি আরো বলেন, প্রথমে নানা ধরনের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে। এর প্রভাব পড়ে পরিবারের সকল সদস্যের ওপর।
এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ মাদক সরবরাহ এবং ব্যবহারকারীদের ধরতে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলে। এ ছাড়া বিশেষ অভিযানের জন্য প্রস্তুতি চলছে।
লেখক: মুহম্মদ পাঠান সোহাগ
No comments:
Post a Comment