ভাসমান হাসপাতাল!

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার শ্রীমন্ত নদীর পূর্বতীরে ইয়ার উদ্দিন খলিফার মাজার শরীফের ঘাটে নোঙর করেছে ইমপ্যাক্ট ‘জীবনতরী’ নামে ভাসমান হাসপাতাল। প্রতিদিন শত শত মানুষ ছুটছে বিশেষায়িত নৌযান জীবনতরীর দিকে। ভাসমান হাসপাতালের কারণে হাতের নাগালে উন্নত চিকিৎসাসেবা পেয়ে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী। শুধু মির্জাগঞ্জ নয় বরিশালের স্বরুপকাঠি উপজেলা থেকে রোগীরা ছুটে আসছেন এখানে। আর সামর্থ্যহীনদের পাশাপাশি বিত্তবানরাও উন্নত চিকিৎসাসেবার প্রত্যাশায় ছুটে আসছেন। আধুনিক মানের চিকিৎসা সেব শুরু করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে মা ও মেয়ে ছদ্দনাম হাছিনা (১৯) দুজনে এসেছেন মাজার শরীফ জিয়ারত করতে। এ সময়ে মেয়ের কানের মধ্যে একটি বড় আকারে আরশোলা (তেলাপোকা) ঢুকে পড়ে। মেয়ের মা বলেন, প্রথমে আমার মেয়ে বলে কানের ভিতরে পিপঁড়া ঢুকেছে। যন্ত্র শুরু হতে থাকে আস্তে আস্তে। মাজার ঘাটে জীবনতরী হাসপতাল দেখে টিকিট কেটে উঠে পড়েন। অতি সহজে বিজ্ঞ চিকিৎসক মেয়ের কান থেকে তেলাপোকাটি বের করে আনেন।
প্রথম দিনে প্রায় দুই শতাধিক রোগী সেবা দিয়েছে জীবনতরী। অন্যান্য কর্মকাণ্ডের পর চিকিৎসাসেবা গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। সরকারি ছুটি ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯ থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে চিকিসাসেবা। চোক, কান, নাক, ঠোঁট কাটা, প্রতিবন্ধী ও গলাসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা ও দরিদ্র রোগীদের মধ্যে বিনামূল্যে ওষধ বিতরণ করা হচ্ছে। ৪০ টাকার বিনিময়ে বহিবির্ভাগে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হচ্ছে। অপারেশনে অংশ নিচ্ছেন দেশের ও বাইরে থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও।
জীবনতরীর ফাইনান্স ও এডমিনিস্টারিভ অফিসার এসকে গোলাম ইয়াজদানি বলেন, ব্রিটিশ নাগরিক স্যার উইলসন প্রতিষ্ঠিত ইউকে ইমপ্যাক্টের অর্থায়নে পরিচালিত ইমপ্যাক্ট ‘জীবনতরী’ নামের ভাসমান হাসপাতালটি আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের সজ্জিত। ৪০মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থের তিনতলা নৌযানটি ১৯৯৯ সাল থেকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মনসুর আহমদ চৌধুরী ও ডা. রেজাউল হক হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। হাসপাতালটি নদীতে ভেসে ভেসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ বিতরণ এবং সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে।
১৫ শয্যার হাসপাতালটিতে সার্বক্ষণিক তিনজন চিকিৎসক, দুজন মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, পাঁচজন নার্সসহ ৩৬জন স্টাফ রয়েছেন। হাসপাতালে রয়েছে লিফট, একটি এ্যাম্বুল্যান্স ও দুটি স্প্রিডবোট। এতে রোগীদের আনা-নেয়ার কাজ করা হয়ে থাকে। প্রথমদিনে এখানে দুই শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment