রাতালগুল আর পর্যটকের চাপ নিতে পারছে না। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুল, বাগবাড়ি ও পূর্ব মহেশখেড় এলাকার ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের বন রাতারগুল। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এ বনে হিজল করচসহ ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ, ১৭৫ প্রজাতির পাখি ও নয় প্রজাতির উভচর প্রাণীর রয়েছে। কিন্তু পর্যটকের অবাধ যাতায়াতের কারণে দিন দিন বনের প্রাণী রক্ষার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট (মিঠাপানির জলাবন) রাতারগুলে পর্যটকদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ। পর্যটকদের জন্য অনলাইনে টিকেটিং ও প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক পর্যটক প্রবেশ করতে পারবে এমন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, যা বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুনিরুল ইসলাম। এ ছাড়া সপ্তাহে দুই দিন বনে প্রবেশ বন্ধ রাখার কথাও বনবিভাগ ভাবছে বলে জানান তিনি।
মুনিরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের অবাধ যাতায়াতের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে রাতারগুলের জীববৈচিত্র্য। বন ছেড়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। এ অবস্থায় প্রাণীদের বসবাস নিরাপদ করতে বনের ওপর মানুষের চাপ কমানো জরুরি। এ জন্য বনে মানুষের ধারণ ক্ষমতা নির্ণয়ের কাজ চলছে। বনের আকার আয়তনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিন কতজন পটর্যটককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে তা বন গবেষণা ইনস্টিটিউট ঠিক করবে বলে জানান তিনি। তবে কবে নাগাদ এ পরিকল্পনা কার্যকর করা হবে তা জানাননি বন কর্মকর্তা মনিরুল।
বনে বাফারজোন ও কোরজোন চিহ্নিত করে শুধু বাফারজোন পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রেখে বন ও বন্য প্রাণীর আবাসস্থল কোরজোনে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে বলেও জানান সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুনিরুল। দীর্ঘ দিন ধরে রাতারগুলের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় পর্যটক নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন সিলেটের পরিবেশবাদীরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম বলেন, মানুষের অবাধ যাতায়াতের কারণে ধ্বংসের মুখে পড়েছিল দেশের একমাত্র মিঠাপানির বনটি। বন রক্ষায় পদক্ষেপ নিতেও এ বনকে পর্যটন কেন্দ্র না করতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। শেষ পর্যন্ত বনবিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে শুনে ভালো লাগছে।
সেভ দ্য হেরিটেজ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সিলেটের প্রধান নির্বাহী আবদুল হাই আল হাদী বলেন, ‘রাতারগুলের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় বনবিভাগের এ উদ্যোগ প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এ বনের অস্তিত্ব রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।’
No comments:
Post a Comment