Monday, July 17, 2017

খালেদার অবর্তমানে বিএনপির স্টিয়ারিং কার হাতে?

বিএনপির রাজনৈতিক বিশ্লেষক কাজী সিরাজ বলেন, বিএনপি কিভাবে চলবে, সেটা বিএনপিই ভালো বলতে পারে। তবে এককভাবে কাউকে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে দেওয়ার মতো প্র্যাকটিস দলটিতে নেই। তাই খালেদা জিয়াও সেই কাজটি করেননি। প্রযুক্তির যুগে এখন আর অনুপস্থিতিকে সেভাবে ধরা হয় না। বিএনপি'র গঠনতন্ত্রে চেয়ারপারসনের অবর্তমানে কে দায়িত্বে থাকবেন, তার নির্দেশনা নেই। তবে বিএনপিতে গুঞ্জন আছে, খালেদা জিয়া যাদের দিয়ে এতদিন দলের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করাতেন, সেই দুই নেতা এবং বর্তমান মহাসচিবের হাতেই থাকছে দলের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রভাব থাকবে খুবই নগণ্য, যদিও খালেদা জিয়া দলের দেখভালের জন্য স্থায়ী কমিটির সদস্যদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তিনি শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে দলকে সবাই ঐক্যবদ্ধ রাখবেন। কোনোভাবেই যেন দলে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, সেই বিষয়ে আপনাদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। তাছাড়া সরকারের গতিবিধির ওপর নজর রাখবেন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন গেছেন। জানা গেছে চিকিৎসার কারণে তাকে দীর্ঘদিন থাকতে হবে সেখানে। এই চিকিৎসা শেষ হতে দেড়-দুই মাস সময় লাগতে পারে। দেশে যখন নির্বাচনী হাওয়া বইছে, সেই মুহূর্তে বড় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের অনুপস্থিতিতে দল কিভাবে চলবে বা তিনি কাউকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন কিনা, সেই প্রশ্নে দলীয় সূত্রে জানাগেছে, দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতিতে দল পরিচালনার দায়িত্ব এককভাবে কাউকে দেওয়া হয়নি। তবে খালেদা জিয়া স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
নিয়মটা কী এবং গঠনতন্ত্রে এমন কোনো বিধান আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে দলীয় গঠনতন্ত্রে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। তবে চেয়ারপারসন যেখানেই থাকেন, নিয়ন্ত্রণ থাকবে তারই হাতে। সেক্ষেত্রে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্য নেতারা তাকে সহযোগিতা করবেন। তবে স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বেগম জিয়া শীর্ষ নেতাদের বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। ২০১৫ সালে দীর্ঘ দুই মাস লন্ডনে থাকায় দলের অভ্যন্তরে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। খালেদা জিয়া দেশে ফিরে সেসব বিষয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হন সিনিয়র নেতাদের ওপর। গতবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এবার লন্ডনে থেকেই দলকে দেখভালের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান এবং অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীকে বেশকিছু বিষয়ে দায়িত্ব দিয়ে যান চেয়ারপারসন। সেই বিবেচনায় অনেকে মনে করেন, খালেদা জিয়ার অবর্তমানে বিএনপির স্টিয়ারিং থাকবে এই তিন নেতার হাতে।
তবে বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানাগেছে, তিন নেতার হাতে বিএনপি থাকবে, এটা বলা ঠিক নয়। কারণ, চেয়ারপারসন যাদের দিয়ে এতদিন কাজগুলো করাতেন, সেই কাজ আপাতত স্থগিত থাকছে। দল পুনর্গঠনের দায়িত্ব চেয়ারপারসন দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। তবে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান কার্যক্রম ৫১টি টিমের সদস্যদের মাধ্যমে করা হবে বলে জানা গেছে। আর সেই কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব ছাত্রদলকে দিয়েছেন। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে বা খালেদা জিয়ার কাছে যখন যে সিদ্ধান্ত দরকার, তখন তাঁকে ফোন করলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া দলের নিয়মিত ব্রিফিং আগে যেভাবে হতো, সেভাবেই চলবে এবং মহাসচিব দলের নিয়মিত কার্যক্রম দেখভাল করবেন।
বিএনপির মতো এত বড় একটি দলের চেয়ারপারসন কাউকে দায়িত্ব না দিয়েই এতদিন দেশের বাইরে থাকবেন, এটা ঠিক নয়। কাউকে না কাউকে সেই দায়িত্ব দেওয়া যেত। তাছাড়া এ বিষয়টি দলের গঠনতন্ত্রে না থাকার ব্যাপারেও নানা সমালোচনা হচ্ছে।আসলে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানকে সব সময় উপস্থিত থাকতে হয়। প্রায় দুই মাস লন্ডনে অবস্থান করলে দলের পরিচালনা বা চেয়ারপারসনের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব কে পালন করবেন,এমন একটি বিষয় বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা উচিত ছিল। তাছাড়া সেই বিষয়ে গঠনতন্ত্রে কিছু উল্লেখ না থাকাটা সত্যিই দুঃখজনক। ওপরদিকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিকট অতীতে এত দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করেননি। আর যদি করেনও, সেক্ষেত্রে একজনকে দলের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে যান এবং তা দলের গঠনতন্ত্রও অনুমোদন করে।

No comments:

Post a Comment