Tuesday, June 13, 2017

পাহাড় ধসে নিহতের সংখ্যা ১২৫

গত দু’দিনের টানা বর্ষণে দেশের ৩ পার্বত্য জেলা ভয়াবহ পাহাড় ধসের কবেলে পড়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে- রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রাম। মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত ১৩২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তদের মধ্যে ৪ সেনা সদস্যও রয়েছেন। তারা মানিকছড়ি ক্যাম্পের সদস্য। সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পাহাড় ধসের এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভোর থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৪৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সেনা বাহিনীর সদস্যরা। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুসহ রাঙ্গামাটিতে ৩৮, বান্দরবানে ২৬ এবং চট্টগ্রামে ২৮ জন রয়েছেন।
মঙ্গলবার ভোরে বান্দরবান শহরের লেমু ঝিড়ি পাড়া, কালাঘাটা ও ক্যচিংঘাটা এলাকায় পাহাড় ধসে ৩ ভাইবোনসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- শহরের লেমু ঝিড়ি জেলেপাড়া এলাকার আবদুল আজিজের স্ত্রী কামরুন্নাহার বেগম (৪০), তার মেয়ে সুখিয়া বেগম (৮), কালাঘাটা এলাকার রেবা ত্রিপুরা (২২), লেমুঝিরি আগাপাড়ারলাল মোহন বড়ুয়ার তিন ছেলে-মেয়ে শুভ বড়ুয়া (৮), মিঠু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৫)। স্থানীয়রা জানান, ভোরে কালাঘাটার কবরস্থান এলাকায় পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়েন রেবা ত্রিপুরা নামে এক শিক্ষার্থী। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এসময় আহত হন বীর বাহাদুর ত্রিপুরা, প্রসেন ত্রিপুরা ও সূর্য চাকমা নামে ৩ জন।
এছাড়া লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে নিহত হয় শুভ, মিঠু ও লতা। এসময় গুরুতর আহত হন তাদের বাবা লাল মোহন বড়ুয়া। বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিক উল্লাহ এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এদিকে পাহাড় ধসে এবং গাছচাপায় রাঙ্গামাটিতে এখন পর্যন্ত ৩০ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে- রাঙ্গামাটি শহরের মানিকছড়ি এলাকার সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন তানভির, মেজর মাহফুজ, করপোরাল আজিজ ও সৈনিক শাহিনের নাম জানা গেছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত ৫ সেনা সদস্যকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আনা হচ্ছে।
কাউখালি এলাকার নুড়িয়া আক্তার, আইয়ুস মল্লিক, রুমা আক্তার, অমিত চাকমা, হাজেরা বেগম, লিটন মল্লিক, চুমকি দাস, সোনালী চাকমা ও কাপ্তাই উপজেলার কারিগরপাড়ার নিকি মারমা ও অনুচিং মারমার নাম জানা গেছে। সদর হাসপাতালের আরএমও মং ক্যাচিং সাগর এই তথ্য জানিয়েছেন।
পক্ষান্তরে আজ ভোরে চট্টগ্রামে মোট ১০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি কানগুনিয়া এলাকায় পাহাড় ধসে ৪ জন, হালিশহরের ফইল্লাতলী বাজার এলাকায় দেয়াল ধসে ১ জন, বাকলিয়ার চাক্তাইয়ে বজ্রপাতে ১ জন এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর ও রাজানগর এলাকায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাহাড় ধসে নিহতরা হলেন- ওই এলাকার আজগরের মেয়ে মাহি আক্তার (৩), চি চাও খিয়াংয়ের স্ত্রী মোখাও খিয়াং (৫০), খাই লাও খিয়াংয়ের মেয়ে মি মাও খিয়াং (১৩), চি লাও খিয়াংয়ের মেয়ে খেও চাপ খিয়াং (১০)। আহতরা হলেন চেইন খিয়াং ও ছিলাও খিয়াং।
এছাড়া ঝড়ে ফইল্লাতলী বাজার এলাকার একটি বাড়ির দেয়াল ধসে মোহাম্মদ হানিফ (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহত বাকিদের নাম জানা যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ নিয়ন্ত্রণকক্ষের অপারেটর মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ধোপাছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ধসে ৪ জনের প্রাণহানির খবর শুনেছি। আগ্রাবাদ, পটিয়া ও সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ৩টি গাড়ি ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। একে তো ঘটনাস্থল দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়, তার ওপর বৈরি আবহাওয়া ও রাস্তায় পানি জমে থাকায় পৌঁছাতে দেরি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

No comments:

Post a Comment