Thursday, June 1, 2017

৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার

বিশাল ব্যয়ের সর্ববৃহৎ বাজেট!

বাজেটে শেষ পর্যন্ত বহুল আলোচিত ১৫ শতাংশ ভ্যাটই রাখা হয়েছে। মোট ব্যয় মেটাতে নির্ভর করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের করের ওপর। সিংহভাগই আসবে রাজস্ব খাত থেকে। ফলে করের বোঝা বাড়ছে। কর দিতে উৎসাহিত করতে ‘কর বাহাদুর পরিবার’ ঘোষণার প্রস্তাব এসেছে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। কর কাঠামো একই থাকছে। ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। গড় মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। রেন্টাল বিদ্যুৎ থেকে সরে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে মানবসম্পদ খাত। বিমানের টিকিটে দ্বিগুণ শুল্ক বসছে। পরিবর্তন এসেছে পেনশন ব্যবস্থাপনায়। ঘাটতি গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতার সঙ্গে দুটি উৎসব ভাতা যুক্ত করা হচ্ছে।

এ ছাড়া বাজেট বক্তৃতায় উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিনিয়োগকে ৩১ দশমিক নয় শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে ২৩ দশমিক তিন শতাংশ এবং সরকারি বিনিয়োগ আট দশমিক ছয় শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেন।
বাজেট নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘লুটপাটের বাজেট ও বাস্তবায়নযোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন বাম রাজনৈতিক দল বাজেটকে ‘গরিব মারার বাজেট’ হিসেবে উল্লেখ করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা মোটা দাগে এ বাজেটের কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা করেছেন। তবে সতর্ক থাকলে এ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলেও মত দিয়েছেন তারা।
প্রস্তাবিত বাজেট দেশের মোট জিডিপির ১৮ শতাংশ। বিদায়ী বাজেট ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বিশাল এই বাজেটের প্রায় ৭২ শতাংশ অর্থ রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। গতবারের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি কর আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে; ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। এই অঙ্ক বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৩ শতাংশের মতো। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৬৮ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। বিদায়ী মূল বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল দুই লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। কিন্তু শেষপর্যন্ত সংশোধন করে দুই লাখ ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। আয়কর ও মুনাফার ওপর কর থেকে ৮৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা রাজস্ব পাওয়ার আশা করা হয়েছে এবারের বাজেটে। বিদায়ী বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আমদানি শুল্ক থেকে ৩০ হাজার ২৩ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে ৩৮ হাজার ৪০১ কোটি টাকা, রফতানি শুল্ক থেকে ৪৪ কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক থেকে এক হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর ও শুল্ক থেকে এক হাজার ৬৯০ কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

No comments:

Post a Comment