Saturday, February 4, 2017

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

‘বিএনপি পাকিস্তানি দল!’

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিকে ‘বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি’ বলেছে বিশ্বব্যাংক। গত সোমবার প্রকাশিত ‘গভর্ন্যান্স অ্যান্ড দ্য ল’ শিরোনামে সংস্থাটির ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট আপডেট- ২০১৭’ প্রতিবেদনে দলটির এ পরিচয় দেওয়া হয়েছে। ওই দিন সারাবিশ্বে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে বিচারপতিদের বয়স বাড়ানোকে কেন্দ্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ২০০৭ সালের অস্থিতিশীলতার চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপিকে বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বেলুচিস্তান পাকিস্তানের একটি অংশ, যারা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে। আর ইংরেজিতে বিএনপির পুরো নাম- ‘বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি’।
বিশ্বব্যাংকের মতো একটি সংস্থার বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন ভুল প্রসঙ্গে ঢাকায় সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তর ওয়াশিংটন থেকে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন বা ভুলের সঙ্গে সংস্থাটির ঢাকা অফিসের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ওই কর্মকর্তা বলেন, এ প্রতিবেদনটি সব দেশই খুবই গুরুত্ব দিয়ে পর্যালোচনা করে। এটিকে বিশ্বব্যাংকের তরফ থেকেও খুবই উচ্চমানের প্রতিবেদন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এই প্রতিবেদনে বিএনপিকে বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি হিসেবে উল্লেখ করাটা খুবই স্পর্শকাতর একটি ভুল, যা মেনে নেওয়া যায় না।
বিশ্বব্যাংকের ৩০৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের ২০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকার ওপর গুরুত্ব দিয়ে লেখা হয়েছে, ভারসাম্য নষ্ট হলে কোনো আইন দিয়েই কাউকে কোনো কাজে বাধ্য করা যায় না। এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০০৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের বিচারপতিদের বয়স বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এ কারণেই ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং ওই সরকারব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।
প্রতিবেদনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যদিও বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে নিজেদের নিরাপদ রাখতে ক্ষমতাসীনরা কিছু নতুন আইন প্রণয়ন করে। তবে ওই সব আইনের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করে প্রতিযোগীদের প্রতিবাদের তীব্রতার ওপর। যখন ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে না, তখন এ ধরনের আইন কার্যকারিতা হারায়। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল প্রায় সমান ক্ষমতার অধিকারী ছিল। প্রায় সমক্ষমতা ভোগকারী সরকারি ও বিরোধী দল ১৯৯৬ সালে সংবিধান সংশোধন করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রণয়ন করেছিল, যেখানে প্রতিটি সরকার মেয়াদ শেষে তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বলে উল্লেখ ছিল। সংবিধান অনুযায়ী ওই সরকারের প্রধান হবেন সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়তে সহায়তা করে, সামাজিক বিভিন্ন গ্রুপ রাজনৈতিক দল গঠনে উদ্বুদ্ধ হয়। প্রতিযোগিতামূলক স্থানীয় নির্বাচনব্যবস্থা প্রশাসনে বহিরাগত রাজনীতিবিদদের প্রভাব রাখার পথ রুদ্ধ করে। ভারতে বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা রয়েছে। আঞ্চলিক কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় জোট গঠন করে। কিন্তু বাংলাদেশে দুটি বড় দল পুরো রাজনীতিটাই নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ, বাংলাদেশ খুবই কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র। ফলে ব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ সংঘাত রোধে ভারতের নেওয়া নীতিগুলো বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক এই পদ্ধতি ২০০৭ সালে অকার্যকর হয়ে পড়ে, যখন ক্ষমতাসীন বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের অবসরের সময়সীমায় হস্তক্ষেপ করে, তার ফল হিসেবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ ভুল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি আমি দেখিনি। তবে বাংলাদেশের বিএনপিকে যদি তারা বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি বলে থাকে, এটা তাদের দীনতা এবং নিন্দনীয় অপরাধ। তাদের এই ভুল অমার্জনীয়, যা গ্রহণ করা যায় না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন,  বিশ্বব্যাংকের মতো একটি সংস্থার বিএনপিকে নিয়ে এমন ভুল করার কথা নয়। যদি তারা সত্যিই এ ভুল করে থাকে, সেটা আলাদা। আর যদি ভুল না করে ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করে থাকে, তাহলে তারা কোন উদ্দেশ্যে করেছে, সেটা তাদেরই ব্যাখ্যা করা উচিত। তাদের এই ভুল ক্ষমার অযোগ্য।

No comments:

Post a Comment