সময়ের অর্থ বদলে দিল যে ঘড়ি
তেরো শতকে তৈরি সুইজারল্যান্ডের ঘড়ি বদলে দিয়েছে সময়ের অর্থ। সুইজারল্যান্ডের বার্নে মধ্যযুগের ঘড়ি জাইটোগ্লগ ৮০০ বছর ধরে স্থানীয়দের সময় জানিয়ে আসছে। এই ঘড়ি দিয়ে জ্যোতির্বিদ্যার সময় জানা যায়। অর্থাৎ জ্যোতিষীরা সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্রের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ইতোমধ্যে এ ঘড়ি স্থান করে নিয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাসক এসে এই ঘড়ির সংস্করণ করেন এবং একেকজন এর একেক রূপ দেন। ঘড়ির টাওয়ার প্রথমে ১৬ মিটার লম্বা ছিল। পরে ৭ মিটার বাড়ানো হয়। ঘড়ির ওপরের দরজা ১৫ শতকে বানানো হয়। শুধু সময় জানান দিয়ে ক্ষান্ত হয় না এ ঘড়ি, প্রতি ঘণ্টায় বিভিন্ন চরিত্র এসে নাচ দেখায়, যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
১৯০৫ সালে এক সন্ধ্যায় বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বার্নে হাঁটতে বের হন। সে সময় এই ঘড়ির ঘণ্টার শব্দ শুনে তিনি এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন। বের করেন বিজ্ঞানের এক অপ্রকাশিত সত্য। তিনি চিন্তা করেন যদি কোনো ট্রাম আলোর গতিতে ঘড়ির টাওয়ার থেকে দূরে চলে যায় তাহলে কী হবে? যদি তিনি ট্রামের ভেতরে বসে থাকেন এবং দূর থেকে টাওয়ারের ঘড়ি দেখেন মনে হবে যে সেকেন্ডের কাঁটা থেমে আছে। কিন্তু তার হাতঘড়ির কাঁটাটা ঠিকই চলছে। এ ঘটনার ছয় সপ্তাহ পর তিনি এক গবেষণাপত্র বের করেন। বিষয় আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব। পরে তিনি দেখান কিভাবে স্থান এবং সময়ের ওপর ভর, শক্তি ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রভাব ফেলে। পরমাণু যুগ ও মহাকাশ ভ্রমণ সম্পর্কে তিনি পূর্বাভাস দেন। কিভাবে গ্রহ-নক্ষত্র কাজ করে সে সম্পর্কে ধারণা দেন।
জাইটোগ্লগের সেই ঘণ্টাধ্বনি আপেক্ষিকতার সূত্র বের করতে সাহায্য করেছিল। সময়ের ধারণাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। যদি কোনো পর্যটক এ ঘড়ি দেখতে আসেন তবে তিনি টাওয়ারের ভেতরে গিয়েও এর কল-কব্জাও দেখতে পারবেন।
No comments:
Post a Comment