Thursday, December 29, 2016

পাথরের জাদুঘর আছে পঞ্চগড়ে
বিশ্বে একমাত্র বাংলাদেশে পাথরের যাদুঘর নামে পৃথক এক অনন্য প্রতিষ্ঠান গড়ে

উঠেছে।পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অভ্যন্তরে ওই কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ
নাজমুল হক তাঁর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন এই পাথরের যাদুঘর বা রকস
মিউজিয়াম।এ অঞ্চলের মাটির নিচে নানা জাতের পাথরের স্তর সন্ধান পাওয়ার
প্রেক্ষিতে এখানকার ভূখণ্ডে বৈশিষ্টগত ভিন্নতার স্বাক্ষর পাওয়া যায়।অঞ্চলভিত্তিক
এ ভূখণ্ডের বয়স নির্ণয়,ভূ-বৈশিষ্টের অনুসন্ধান,প্রাগৈতিহাসিক কালের নমূনা সংগ্রহ,
দেশীয় ঐতিহ্য,আমাদের সংস্কৃতি এবং পুরাতাত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহে
রাখার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক এই মিউজিয়াম স্থাপন করা হয়।অবস্থানগত
কারনে হিমালয়ের কোলঘেঁষা এ জেলার ভূগর্ভে অল্প গভীরেই রয়েছে প্রচূর নুড়িপাথর
আর বেশি গভীরে আছে প্রচীন শিলাস্তর।এধরনের শিলাস্তরের কালানুক্রমিক নমূনা
নিয়ে এই পঞ্চগড়ে গড়ে উঠেছে রকস মিউজিয়াম বা পাথরের যাদুঘর।

এই যাদুঘরের বাইরের মাঠে রাখা হয়েছে বিশালাকার সব পাথর।সংগৃহীত প্রতিটি
পাথরের নাম ও সংগ্রহ পদ্ধতি।আছে মানানসই সাইনবোর্ড।মিউজিয়ামের ভিতরে
উন্মুক্ত গ্যালারিতে প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে বিভিন্ন আকারের ছোট বড় পাথর।
যেমন আছে,আগ্নেয়শিলা,পাললিক শিলা ও নুড়ি পাথর,সিলিকা নুড়ি ও সিলিকা

বালি,হলুদ ও গাঢ় হলুদ বালি,কাঁচাবালি,খনিজবালি,সাদামাটি,তরঙ্গায়িত চেপ্টা
পাথর,লাইমস্টোন,পলি ও কুমোর মাটি এবং কঠিন শিলা ও এধরনের হরেক রকম
পাথরের সমারোহ।এসব পাথরের আকৃতিও ভিন্ন।কোনটি গোল,কোনটি লম্বা আবার
কোনটি চেপ্টা।এরমধ্যে কোনটির মধ্যে আবার বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন আঁকা।নদী
থেকে পাওয়া দু’টি বিশালাকার প্রাচীন নৌকাও ঝুলিয়ে রাখা আছে মিউজিয়ামে।
এই মিউজিয়ামে একটি জাতিতাত্ত্বিক সংগ্রহশালাও স্থাপন করা হয়েছে।এতে রয়েছে
পঞ্চগড় অঞ্চলের আদিবাসি,উপজাতিদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং নদীর নিচে ও
ভূগর্ভে প্রাপ্ত অশ্মিভূত কাঠ,তিনশ’থেকে দুই হাজার বছরের পুরনো ইমারতের ইট,
পাথরের মূর্তি এবং পোড়ামাটির নকশা।গ্যালারিতে আরো আছে বিশাল আকৃতির সব
বেলে পাথর,গ্রানাইট পাথর,কোয়ার্জাহিট,ব্যাসল্ট,শেল,মার্বেল সহ বিভিন্ন নামের ও
বর্ণের শিলা,সিলিকায়িত কাঠ বা গাছ থেকে রুপান্তরিত পাথর,নকশা করা অলংকৃত
খিলান ও স্ল্যাব পাথর।এছাড়াও আছে বিভিন্ন রেখা,লেখা চিত্রাঙ্কিত শিলা ও ধূসর
কালো রঙের কাদা।
পঞ্চগড় রকস মিউজিয়ামে রক্ষিত কোন কোন পাথরে রয়েছে নান্দনিক সব কারুকাজ।
একটি পাথরে খোদিত রয়েছে তীরধনুক ও দেব-দেবীর চোখের চিত্র।একটি পাথরে
খোদাই করা আছে কিছু তিব্বতি ও চাইনিজ বর্ণমালা।পাথরগুলোর ভিন্নতা ও বৈশিষ্ট্য
বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞগন বলেছেন,পার্শ্ববর্তী দার্জিলিংয়ের সমতলে অবস্থিত পঞ্চগড়
অঞ্চলেও নব্যপ্রস্তর যুগের সংস্কৃতি ও জীবনাচরণ বেশ ভালভাবেই বিস্তার লাভ
ঘটেছিল।সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে অবস্থিত এটি একটি ব্যতিক্রমী জাদুঘর।
প্রাচীনকালের অনেক পাথরের সংগ্রহ রয়েছে এই জাদুঘরে।সকলের জন্য উন্মুক্ত
এই জাদুঘর দেখতে প্রতিদিনই দেশ-বিদেশের উৎসাহী বহু মানুষ এখানে যাতায়ত
করেন,এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠানের টানে।

No comments:

Post a Comment