সুস্বাগত ২০১৭...
স্বাগতম! সুস্বাগতম ২০১৭।শনিবারের সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই বিদায় নিয়েছে ঘটনাবহুল একটি বছর; তবে মধ্যরাত অর্থাৎ ১২টা ০১ সেকেন্ডে রাজধানী ঢাকা ২০১৭ সালে প্রবেশ করার পর আনুষ্ঠানিকভাইে কালের আবর্তে ডুবে গেছে ২০১৬। একইভাবে আজ রোববারের নতুন সূর্য নিয়ে আসছে আরেকটি দিনকে। আর এই নতুন বছরকে বরণ করার জন্য জাতি পালন করছে নানা আচার-অনুষ্ঠান। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নববর্ষের প্রথম দিনটি উদযাপিত হচ্ছে বর্ণিল আয়োজনে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ তথা সমগ্র বিশ্বের সুখ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করা হচ্ছে এই দিনটিতে। এই বিশেষ দিনটিকে উপলক্ষ করে গতকাল থেকেই বিভিন্ন ক্ষুদে বার্তা ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু হয়েছে। বিভিন্ন কর্পোরেট, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনও প্রতি বছর নিকটজনদের কাছে শুভেচ্ছা বার্তা প্রদান করেছে। এই দিনটিতে বিদায়ী বছরের সাফল্য ও ব্যর্থতা ফিরে দেখা হয় এবং নতুন বছরে কিভাবে লক্ষ্য অর্জন করা যায়, সেজন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বছরের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্যও কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়।
২০১৬ সাল বাংলাদেশের জন্য ছিল একটি লক্ষ্যণীয় সাফল্যের বছর। রাজনীতি, অর্থনীতি, কৃষি ও পর্যটন ও মধ্যম আয়ের দেশে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির সাফল্য ছিল উল্লেখযোগ্য। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হয়েছে ২০১৬ সাল। আগের বছরগুলোর মতো এ বছরটিতে হরতাল ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ছিল না। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় ছিল সারাটি বছর জুড়ে। ফলে অন্যান্য সময়ের তুলনায় দেশের অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে গেছে এবং ক্ষুদ্র অর্থনীতি নির্দেশকে নতুন অনেক রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে দেখা যায়, বিদায়ী বছরে রেকর্ড পরিমাণ জিডিপি ৭ দশমিক ১১ ও মাথাপিছু গড় আয় সর্বোচ্চ রেকর্ড ১ হাজার ৪৬৫ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত নভেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৩৮, যা ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৮। ব্যাংকের রিজার্ভও ৩২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ছিল, যা একটি রেকর্ড। ২০১৬ সালে কৃষি ক্ষেত্রেও ব্যাপক সাফল্য দেখা গেছে। এ সময় কৃষকরা খাদ্যশস্যে শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদাই মেটায়নি, বিদেশেও তা রফতানি হয়েছে।বাংলাদেশ বিশ্বে সবজি উৎপাদনে তৃতীয় ও মাছ উৎপাদনে ৪র্থ স্থান অধিকার করেছে। এছাড়া কৃষি উৎপাদন ও মূল্য গ্রহণযোগ্য হওয়ায় কৃষক ও ভোক্তা উভয়েই খুশি ছিলেন বিদায়ী বছরটিতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপদেষ্টা ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, ২০১৬ সালে প্রধান অর্থনৈতিক সূচকগুলোই ছিল শক্তিশালী। ২০১৭ সালে যা অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েক বছরের মতো বিদায়ী বছরেও তথ্য প্রযুক্তি খাত বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল। এতে জনগণের সেবার পরিধি আরো বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের জন্য দেশ সম্মানজনক আইটিইউ টেলিকম ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে।‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে ব্যাপক ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ‘আইসিটি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড- ২০১৬’ লাভ করেন। দেশের এমন শক্ত অবস্থানের প্রেক্ষাপটে জাতি আজ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবে। জাতি আশা করবে সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেশ।
নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ১ জানুয়ারির বরণ লগ্ন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া জানান, যে কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ৩১ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা মহানগরকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হবে। এতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য পোশাক ও সাদা পোশাকে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। থার্টি ফার্স্ট-এর নামে আমাদের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে কোন কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
মধ্যরাতে সাড়ম্বরে বর্ষবরণ
স্বাগত! সুস্বাগত ২০১৭! শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে এভাবেই নতুন বছরকে বরণ করে নেয়া হয় রাজধানীতে। বরাবরের মতোই এবারও বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় ও দৃষ্টিনন্দন আয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস-উল্লাসের মধ্যদিয়ে ইংরেজি নতুন বছর- ২০১৭ কে বরণ করলেন শিক্ষার্থীরা। থার্টি ফার্স্ট নাইটে শনিবার দিবাগত রাত ১২টা এবং একই সাথে১ জানুয়ারির প্রথম প্রহর বাজতেই হই-হুল্লোড় করে এ নববর্ষ বরণ করেন তারা। এসময় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অবশ্য সন্ধ্যা থেকেই নববর্ষ বরণের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়। রাত ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জমায়েত হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে পুরো টিএসসি এলাকায় শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।
ভাস্কর্যের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী ঘড়ির কাঁটায় রাত বারোটা বাজতেই উচ্ছ্বাস ও উল্লাসের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করেন শিক্ষার্থীরা। তারপর শুরু হয় বন্ধুদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়। ওঠে ভি চিহ্ন দেখিয়ে সেলফি তোলার জোয়ার। এসময় ‘ভি’ চিহ্নও প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা। উচ্ছ্বাস-উল্লাসে ঢাবিতে ইংরেজি বর্ষবরণ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জয়া মৈত্র, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সানজিদা আনসারি ও নুজহাত ই রহমান এসেছেন এখানে বন্ধুদের সঙ্গে নববর্ষ বরণে।নতুন বছরে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে তারা বলেন, এ বছরে যে প্রত্যাশা ছিল, যা বাস্তবায়ন করতে পারিনি তা পূরণ করার চেষ্টা করবো। আর দেশে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে এ বছর, ২০১৭ সালে তেমন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করি। এদিকে এবার টিএসসিসহ উন্মুক্ত স্থানে বড় অনুষ্ঠান, আতশবাজি ও পটকা ফাটানো নিষিদ্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী তাদের হলে হলে নববর্ষ বরণের আয়োজন করেছেন। মাস্টারদা সূর্য সেন হলে দেখা যায়, হলের ওয়াইফাই জোনের পাশে মঞ্চ বানিয়ে গান পরিবেশনের পাশাপাশি ফানুস উড়িয়ে উল্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। উচ্ছ্বাস-উল্লাসে ঢাবিতে ইংরেজি বর্ষবরণ। অন্যদিকে, নববর্ষকে ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে ক্যাম্পাসে। শাহবাগ মোড়, দোয়েল চত্বর ,পলাশীর মোড় ও নীলক্ষেত মোড়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশি ব্যারিকেড। ক্যাম্পাসে টহল দিতে দেখা যায় সোয়াতের সদস্যদেরও।
পক্ষান্তরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে বহিরাগত প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয় ক্যাম্পাসে। রাত ৮টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত শিক্ষকদের গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-কর্মকর্তারা তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। পুলিশের কাজে সহযোগিতা করতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসির সদস্যরা। নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন পোশাকধারী ও সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও।বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এ এম আমজাদের নেতৃত্বে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এবং শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রবেশপথ পরিদর্শন করেন। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর বলেন, ক্যাম্পাসে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছি।
No comments:
Post a Comment