আবারো শুরু হয়েছে বার্ড ফ্লু!
কয়েক বছর আগে গোটা বিশ্ব বার্ড ফ্লু আতঙ্কে ছিল। তারপর তা কেটেও যায়। মানুষও ভুলতে শুরু করেছিল বার্ড ফ্লুর ভয়াবহতার কথা। কিন্তু আশঙ্কার কথা হলো বার্ড ফ্লু আবার ফিরে এসেছে। আর ফিরেই পাখিদের জন্য ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।ইতোমধ্যে H5N8 ভাইরাসটি সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই ভাইরাস বন্যপাখিসহ খামারের হাঁস-মুরগিকে হত্যা করে চলেছে। বার্ড ফ্লু’র এই ভয়াবহতা ওই সব দেশের খামারিদের জন্য প্রধান চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসটি মানুষকে আক্রান্ত করার মতো ভয়াবহতা প্রকাশ পায়নি, তবে এটা বিবর্তিত হয়ে চলেছে।
বর্তমান (H5N8) ভাইরাসটি H5N1 থেকে বিবর্তিত হয়ে প্রথমে ১৯৯৬ সালে চীনে হাঁস-মুরগি আক্রান্ত করার মাধ্যমে শুরু হয়। এটি পরে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৪ সালে H5N1 সমগ্র পূর্ব এশিয়ায় হাঁস-মুরগির খামারের মাধ্যমে বিস্ফোরক আকার নেয়। পরবর্তীতে তা পরিযায়ী পাখিদের মাধ্যমে ২০০৬ সালের মধ্যে ইউরোপ ও আফ্রিকাতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকে ভাইরাসটি শুধু হাঁস-মুরগির মাঝেই সুপ্ত ছিল। বিশেষ করে এশিয়ার ফ্লুর টিকা দেওয়া মুরগিগুলোর মাঝে, যেগুলো ভাইরাসটিকে বহন করতে থাকে। হাঁস-মুরগিতে সংক্রমিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হয়ে ৪৫২ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু H5N1 ভাইরাসটি পরিযায়ী পাখির মাধ্যমেও পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যাচ্ছে। ইউরেশীয়ার সব পাখি গ্রীষ্মকালে উত্তর-মধ্য এশিয়ার পাখিদের সঙ্গে মিশে গিয়ে ভাইরাস বিনিময় করে। এরপর তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপে ফিরে যায়। আর সম্প্রতি এভাবেই H5N1-কে অন্যান্য ফ্লুর সঙ্গে উচ্চমাত্রায় বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাকে জুলিও পিন্টো জানান, আমরা জানি না H5s-এর আধিক্যতায় কোন বিষয়টি চালকের আসনে রয়েছে। তবে আমাদের ধারণা, দেশান্তর হওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তন এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।ইউরোপের পোল্ট্রি চাষিরা ক্রিসমাসের জন্য তাদের রাজহাঁস এবং টার্কি পাখিদের মোটাতাজা করছিলেন, কিন্তু এক H5N1-এর সংকরই এখন তাদের সব শান্তি নষ্ট করে তুলেছে।ভাইরাসটি ২০১৪ সালে চীনে দেখা দেওয়ার পূর্বে পরিযায়ী পাখির মাধ্যমে জাপান, কোরিয়া এবং রাশিয়া ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপসহ যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এমনকি ওই সময় বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্তও পৌঁছেছিল। বিশেষজ্ঞরা জানান, ভাইরাসটি তখন উত্তর আমেরিকাতেও পৌঁছে গিয়েছিল।২০১৪ সালে কিছু বন্যপাখি বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের জুন মাসে H5N8-এর কারণে রাশিয়া এবং মঙ্গোলিয়ার মাঝামাঝি অববাহিকায় প্রচুর বন্যপাখি মারা যায়। আশঙ্কার কথা হল, এ অঞ্চলটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য সবসময়ই একটি বিশেষ জায়গা।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যখন পাখিরা ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে বাঁচার জন্যে এসব অঞ্চলে ভ্রমণ করেছিল তখন উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে দেশান্তরিত হওয়ার পথে ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের চারদিকে H5N8 ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বরফাচ্ছাদিত হ্রদ থেকে পাখিগুলো যখন খোলা পানির সন্ধানে বেরিয়ে পড়বে তখনই এই ভাইরাসটি বড় আকারে ছড়িয়ে পড়বে।ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানির কয়েক ডজন খামার ইতোমধ্যেই বার্ড ফ্লুর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে গেছে। মুক্ত পরিবেশের রাজহাঁসদের এখন বন্যপাখি থেকে দূরে রাখার জন্য গৃহে আবদ্ধ করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে হাঙ্গেরিতে একটি খামার সংক্রমিত হয়ে ৯০০০ টার্কি মারা গেছে। ক্রিসমাসের জন্য এ দেশটি প্রচুর পরিমাণে টার্কি ও রাজহাঁস উৎপাদন করে।এই ভাইরাসে রাজহাঁস, শঙ্খচিল এবং গুচ্ছবদ্ধ হাঁসসহ প্রচুর পরিমাণে বন্যপাখিও মারা যাচ্ছে। নেদারল্যান্ডসের ইরাসমাস মেডিকেল সেন্টার থেকে রন ফোচিয়ার বলেছেন, ‘H5N8 বন্যপাখির মাঝে ফ্লুর নতুন প্রজাতির জিন সরবরাহ করেছে, এর ফলে এটি আরো বেশি মারাত্মক হতে পারে।’
মানুষ এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে মুক্ত ছিল। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এর ঝুঁকি থেকে মানুষ এখন আর নিরাপদ নয়। জার্মানিতে একটি সংক্রমণ গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান এবি ওস্থেরাস বলেন, ‘এ ভাইরাস সম্পর্কে আপনার আত্মতুষ্টিতে থাকার কোনো সুযোগ নেই।’ যেকোনো সময় এই ভাইরাস মানুষকেও সংক্রমিত করতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
No comments:
Post a Comment